![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যতক্ষন খোলা আছে দুচোখ, বিদঘুটে চিন্তা গুলোও উন্মুক্ত হোক!! নশ্বর পৃথিবী, নশ্বর আমি, তবুও এতেই নিজেকে খুজে ফিরি...
প্রথম পর্বঃ
রিকশায় উঠার সাথে সাথেই আমার মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। আসলেই এমন মেয়েকে বিয়ে করা যায় কিনা। ওরে বাহবা! প্রথমেই যে মুডি ভাব দেখালো, মনে হলে যেন একদম নবাবজাদী!!
কি রকম আশ্চর্যজনক ভাবে আমার সাথে কথা বলল। একদম পায়ের উপর পা তুলে! মনে হল মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম, নাকি চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়ে ছিলাম আল্লাহ ই ভাল জানেন। কি রকম বিহ্যাভ রে ভাই!
যেন উনি টিচার আর আমি প্রাইমারীর পুচকে ছোট্ট পুচকে বাচ্চা। সত্যিকার অর্থেই আমি অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় ই পরেছিলাম প্রথম দিকে। যদিও আমার এ অবস্থায় এই সত্যিকার পুরুষের জীবন মানে এই ব্যাচেলর জীবন টা শেষ করার কোন ইচ্ছেই ছিলনা। কিন্তু ফ্যামিলির হিসেবের মারপ্যাঁচ এ আর ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আর আম্মার জোরাজুরিতে আমাকে এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতেই হল। সম্মতি দিতেই হল।
রিকশা থেকে নেমেই আমি আপন মনে হাটছি। ভারা আমার দেবার কথা ছিল। কিন্তু আমি সেটা খেয়াল না করেই চলে গেছি। আব্বা অবশ্য সেটা দিয়ে দিয়েছেন। আমি শুধু শুনলাম। আব্বা আম্মা কি নিয়ে যেন দুজনে কানাঘুষো করে চলছেন। হঠাত পিছন থেকে আম্মার ডাক শুনলাম, আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
-রনি, মেয়ে কেমন দেখলি?
(প্রশ্নটা শুনেই মনে মনে বলে উঠলাম, মেয়ে একটা, বদমাইশ, বেয়াদব, শয়তানি, হারামি, ছাগলি, খারাপ আত্মা ডাইনী) কিন্তু সামনাসামনি বললাম,
_ দেখলাম ত। লম্বা ই। চিকনা। আচ্ছা মা ওদের বারিতে মনে হয় ঠিক মত ভাত রান্না হয় না, তাই না?
আমার প্রশ্নটা শুনেই মা অনেকটা চমকে উঠল! সে কিরে ভাত রান্না হয় মানে। ভাত দিয়ে কি করিস তুই?
তোর মেয়ে পছন্দ হইসে কিনা সেটা বল?
আমি বলে দিলাম, মেয়েত দেখতে খারাপ নাহ। সুন্দর ই।
এই কথা বলার কারন হল, কারন মা'র এই মেয়েটাকে খুবই পছন্দ। এবং তিনি মনে প্রানে চাচ্ছেন যেন এই মেয়েকেই আমি বিয়েটা করি। এই মেয়ের মা হল, আমার মায়ের প্রাইমারী স্কুল থেকে থেকে মা'র বান্ধবী।
কিন্তু সবচেয়ে ভাল ব্যাপারটি হল, তাদের এই বন্ধুত্বটা আসলেই অনেক গভীর। তাই আমি যদি ব্যাপারটায় সম্মতি না দেই তবে, তাদের মধ্যে অবশ্যই একটা ঝামেলার সৃষ্টি হবে। আর সেই সাথে মায়ের দেয়া গত চার বছরের কথাটাও অপমানিত হবে। অর্থাৎ নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, মা অনেক কষ্ট পাবেন। অনেক বড় একটা ধাক্কা খাবেন।
আর সত্যিকার অর্থেই মেয়েটা খুব সুন্দর। প্রথম দৃষ্টিতেই ভাল লাগার মত। যদিও প্রথম সাক্ষাতে যতটুকুন বুঝে গেছি যে মেয়েটা আসলে একটা বজ্জাত মাইয়া।
বাসায় ঢুকে, ফ্রেশ হয়ে দেখলাম মায়ের মুখে হাসি। যেন অনেকটা প্রশান্তির। আমি বুঝে গেছি তিনি কেন হাসছেন। আসলে তিনি অনেক বড় একটা বিপদ থেকে উদ্ধার পাবেন আমি যদি বিয়েটা করেই ফেলি........
হুম, মা ঝামেলা থেকে মুক্ত হবে, সেটা সব সন্তানের ই অনেক কাম্য। কিন্তু যেমন দেখলাম, তাতে আমার ভয় ই লাগছে অনেক। আর, আমার বারবার মেয়ের সাথে কথাগুলা মনে পরলেই কেমন জানি মেজাজের বারোটা বেজে জাচ্ছে। আমার খুব ভালভাবেই মনে পরছে, মেয়ে দেখার সময় নিহি নিজ থেকেই বলল যে আমার সাথে আলাদা রুমে কথা বলবে।
আমি ভাবলাম আসলেই কথা বলা নেয়া দরকার। কে জানে আবার কখন বলে উঠে আমার ৬ প্রেমিকের মধ্যে শেষ টাকে অনেক ভালবাসি, ওকে ছাড়া বাচবোনা। আপনি চলে যান। এ নিয়ে পরে বহুত ঝামেলাও হইতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের প্রাদুর্ভাবে এগুলা যে হারে ঘটছে, তাতে আশ্চর্যান্নিত হবার কিছু নেই। যেভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে!
তার চেয়ে বরং আগে থেকেই কথা বলে নেয়া ভাল। কারন বিয়ের পর, প্রেমিকের হাত ধরে বউ চলে গেলে, বন্ধু মহলে ত পচতে হবে, সাথে আরো কত নাকানি চুবানি তার কোন ইয়াত্তা থাকবেনা।
রুমে ঢুকার সাথে সাথেই, মাথার ঘোমটা ফেলে দিয়ে ফেন ছেরে একদম ধপাস করে খাটের উপর বসে পরল।
আমাকে বলল চেয়ারটা টান দিয়ে বসেন।
মনে হল, এতক্ষন যেন সে একটা সিডর সমতুল্য ঝড়ের মধ্যে ছিল। আপাতত নিরাপদ আশ্রয়ে এসে একটু নিস্তার পেয়েছে।
আমাকে দেখেই একদম পায়ের উপর পা তুলে প্রথম প্রশ্ন করে উঠল,
-আপনাকে দেখে ত বাচ্চা মনে হয়! আপনার বয়স কত?
এই প্রশ্ন শুনার সাথে সাথেই মেজাজটা গরম হয়ে গেল। আমি শুধু নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম, ২৪।
নিহি একদম হো হো করে হেসে উঠলো। বলল আমার ত সাড়ে ২৪! তাহলে ত আপনি আমার চেয়ে দেখছি ছোট।
আচ্ছা যাক, আপনি করেনটা কি?
বললাম, কিচ্ছু করিনা, বেকার।
নিহি - আমি যতদুর জানি আপনিত পাব্লিক এ CSE তে পরেন। ভার্সিটিতে যাননা।
আমি-যেতাম! এখন যাই না। ১ মাস ধরে মেশিনের ভিত্রে আছি।
নিহি-হুম! ইন্টার্নি! বুঝেছি। বাই দা ওয়ে, আমি কিন্তু বিবিএ গ্রাজুয়েটেড।
আচ্ছা আপনি যে এত অল্প বয়সে বিয়ে করতে আসছেন, আপনার বউয়ের দেখাশুনা করতে পারবেন তো?
নিহি আবার হঠাত বলে উঠল - আপনি নাচতে পারেন?
নাকি গাইতে পারেন?
আমি ঠিক তখন ই কিছু বলতে যাবো.....
নিহি আবার বলে উঠলো, আচ্ছা আপনি কি মশারী টানাতে পারেন। আচ্ছা যাক লাগবে না।
আপনি কি শপিং এর ব্যাগ ক্যারি করতে পারবেন ঠিকমত?
আমি শুধু উত্তরে বললাম - বউ যদি মানুষ হয়, তবে কন্ট্রোল করা যাবে।
নিহি আবার বলে উঠল - আপনার চুলের কি অবস্থা, আচরান না? সানগ্লাস পরেন? মাঝে মঝে কি স্পাইক করেন চুলে?
আমি আবারো বললাম - না। জিবোনে করি নাই। করবো ও না। যদি কখনো করতে ইচ্ছে হয়, তবে আপনার কথা মনে হবে দেখেই করবো না।
নিহি দেখলাম মনে মনে মিটমিটিয়ে হাসছে। আমার যে কি পরিমান মেজাজ জ্বলছে তা বলে বোঝানো মুশকিল! শালি কোথাকার!!
এবার আমি বললাম - আচ্ছা আপনাদের বাসায় কি ভাত নাই?
নিহি - কেন?
আমি- না দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের মত আপনার শরীর সাস্থ্যের যে অবস্থা তাতে ত তাই মনে হয়।
আচ্ছা, আপনার বাবা কি ঘুষ খায় না?
নিহি- মানে? আপনার সাহস ত কম না।
আমি উঠে গিয়ে তার সামনে গিয়ে বললাম,
উনার পেটার সরি ভুরির যে অবস্থা, তার উপ্রে আবার সরকারি চাকরি করেন। তাই এমন প্রশ্ন করতে হল।
নিহি - আপনি কি জানেন, আপনি যে আসলেই একটা ক্ষেত!
আমি- এই শুনেন, ক্ষেত থেকেই আসলে ফসল হয়, ডোবা থেকে নয়,...... বাই দা রাস্তা আমি কিন্তু আপনাকে কিছু বলি নাই। কিছু মনে করবেন না যেন আবার।
এই বলে যখন ই আমি দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি.. ঠিক তখন ই নিহি আবারো জোরে হাসি দিয়ে উঠলো....
বলে উঠল, শোনেন, আপনি আর যত যাই করেন, বিয়েটা কিন্তু হচ্ছেই....
আসলে সত্যিকার অর্থে আমার ভাগ্যে এমন আর অবস্থা কোনটাই আসতনা যদি না ভাইয়া..........
(চলবে.......
©somewhere in net ltd.