![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রূপগঞ্জ স্টেশনে আমি বাসের অপেক্ষায়। সময় যাচ্ছে শ্লথে। এক পিচ্চি হাঁক দিয়ে দিয়ে চা বিক্রি করছে। পিচ্চির কাছে চা চাইলো-এক সুবেশী যুবক। পিচ্চি চা কাপে ঢালতে না ঢালতেই আরেক হকারের কুনুইয়ের ধাক্কা খেয়ে ছলাত করে যুবকের শার্টে পড়লো। যুবক পিচ্চিকে এমন জোরে চড় মারলো আমার পুরো অন্তরাত্মাই কেঁপে ওঠলো।
আমার পাশে বসা ভদ্রলোক,সব লক্ষ্য করে বললেন-আহারে যুবক-কেন যে মিছেমিছি চড় মারলে। যা হবার তা তো হয়েই গেছে। আসলে তোমার সুলাইমানের গল্পটা জানা দরকার ছিলো। বলেই আমার দিকে ফিরে থাকালেন। আমার ও সময় কাটেনা। আমি বলি সুলাইমানের গল্পটা কেমন?
ভদ্রলোক অতি আগ্রহে গল্প শুরু করলেন-
একজন নিরীহ প্রাইমারী ইস্কুলের শিক্ষকের ছেলে সুলাইমান এমন জালিম ছিলো-তারপর আবার সাধু হয়ে গেলো একবারে আজব ব্যাপার। সুলাইমান-রিকশা থেকে নেমেই ড্রাইভারকে চড়াতে শুরু করলো একটা টাকা বেশী চাইছিলো বলেই।
বাড়ী এসে দেখে উনুনে এখনো ভাত। সুলাইমানের মাথা গরম ভাতের মতো গরম হয় আর সিদ্ধ ভাতের ধোঁয়ার মতো মাথা থেকে ভাঁপ বের হতে থাকে। রাগের মাথায় মারলো কাজের মেয়ে জরিনারে এক চড়।
আকমল মাস্টার রাতে বাসায় এসে যথারীতি ছেলের একই কীর্তি শুনেন। ভোরে পূবাকাশে আলো ফুটছে। চারদিকে প্রশান্তির বাতাস বইছে,ফুরফুরে হিমেল হাওয়া। আকমল মাস্টার ছেলেকে ঘুম থেকে জাগান। হাত মুখ ধূয়ে বাপ আর ছেলে অল্প কিছু পেটে চালান দিয়ে গ্রামের আল ভরাভর হাঁটতে থাকে গন্জের দিকে। সুলাইমানের বায়ুচড়া মন বড় বেশি উচাটন। বাপ আজ সকাল বেলায় তারে নিয়ে কোথায় রওয়ানা দিলেন।
দুজনে রহমত ব্যাপারীর ভূষিমালের দোকানে আসে। নানারকম সওদা শেষ করে। তারপর,মাস্টার মশাই, সুলাইমানকে বলেন-ছটাক তিনেক পেরেক কিনে নিতে। পূবাকাশের আগুনের গোলা মাথার উপর ওঠতে না ওঠতেই দুজনে বাড়ি ফিরে আসে।
আকমল মাস্টার ছেলে সুলাইমাকে নিয়ে খেতে বসেন। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ছাতিম গাছটার নীচে গিয়ে বসেন। তারপর তিন ছটাকের পেরেকের থলেটি ছেলের হাতে দেন। শান্ত-ধীরে ছেলের মাথায় হাত রেখে বলেন-যখনই তোমার মেজাজ চড়া হবে কারো সাথে অভদ্র ব্যবহার করবে তখনই একটি করে পেরেক এই ছাতিম গাছের বুকে বিধঁবে। তোমার জন্মদাতা বাপ হিসাবে এই অনুরোধটুকু কি বেশী হয়ে যাবে?
মাস দুয়েক পর-
চৈত মাসের প্রচন্ড গরম পড়েছে। আকমল মাস্টার শীতল বাতাসের টানে ছাতিম গাছটার নীচে এসে বসেন। দেখেন অনেকগুলো পেরেক ছাতিম গাছটায় বিঁধে আছে। সুলায়মানকে ডাকেন। বলেন-ও আরেকটি কথা,যে পর্যন্ত তোমার মেজাজ নিয়ন্ত্রনে থাকবে কারো সাথে ভালো ব্যবহার করবে তখন একটি করে পেরেক এখান থেকে তুলে ফেলবে।
মাস দুয়েক পর আকমল মাস্টার দেখেন ছাতিমের গাছে আর কোনো পেরেক নেই। তিনি ছেলেকে নিয়ে ছাতিম গাছের পাশে যান। তারপর বলেন-আমি খুশী হয়েছি। তোমার মেজাজের পরিবর্তন হয়েছে দেখে। যাদের সাথে প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার করতে রিকসা ড্রাইভার,কাজের মেয়ে, স্বজন, বন্ধু, পরিজন সবার সাথে ভালো ব্যবহার করছো। কিন্তু গাছটার দিকে চেয়ে দেখো-সেই বিঁধে যাওয়া পেরেকগুলো আর নেই কিন্তু দাগগুলো ঠিকই রয়ে গেছে। এ দাগুগুলো কিন্তু কখনোই মুছে যাবেনা। কখনোই না।
শারীরিক আঘাতের চিহ্ন যেমন দাগ রেখে যায় মানসিক আঘাত, খারাপ ব্যবহার, কোনো তাচ্ছিল্য কোনো অবহেলা, অহমিকা, বড়ত্বের অহংকার, রাগের চোটে অসাবধানতাবশত কোনো অর্বাচীন বাক্যও মানুষের মনে চিরস্থায়ী দাগ রেখে যায়।
সেদিন যে ড্রাইভারকে চড় মেরেছিলে বাজারে, মনে আছে? শুনেছি সে আর নেই, ট্রাকের চাপায় পড়ে মারা গেছে। আমার বড় কষ্ট হচ্ছে তোমাকে ক্ষমা করার মতোও আর কেউ পৃথিবীতে রইলো না। তাই সবসময় ভুল করে যে আবার ক্ষমা চাইবে সে সুযোগ ও আর না আসতে পারে।
ইতোমধ্যে আমার বাস এসে দাঁড়িয়েছে। আমি বলি, হুম শুনলাম, আপনার গল্প। আমাকে এবার যেতে হবে।যদি আপনার নামটা বলেন – লোকটি বলেন আমার নাম হলো সুলাইমান। সেই আকমল মাস্টারের ছেলে। বাড়ী ফিরার পথে গাড়িতে বসে আমি চিন্তা করছি এই ছোট জীবনে কত জনের বুকে যে কত পেরেক বিঁধে রেখেছি মুছাতো যাবেনা কিন্তু সব তোলে ফেলার সময় পাবোতো?
২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:১৭
স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
দাগ থেকে যায়.......
সুলাইমানলিপিতে অনেক অনেক ভাললাগা।
+++++
৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:১৯
দালাল০০৭০০৭ বলেছেন: ভাল
৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:২৯
নূর আদনান বলেছেন: আহা ! প্রেসিডেন্ট সাহেব, কি গল্পটাই লিখছেন, সত্যি অনেক দিন পর এমন একখান শিক্ষনীয় গল্প পরলাম। বড়ই ভাল লাগলো।
৫| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩২
আমিনুর রহমান বলেছেন:
অসাধারণ শিক্ষনীয় গল্পত।প্রায় প্রতিটি মানুষের এই গল্প থেকে শিক্ষা নিয়া উচিৎ।
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৫১
মো: আবু জাফর বলেছেন: অসাবধানতাবশত কোনো অর্বাচীন বাক্যও মানুষের মনে চিরস্থায়ী দাগ রেখে যায় ১০০% সহমত