নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Mahbub Seyam

Mahbub Seyam › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিতে হোস্টেল

৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৩৯

গতকাল সকালে যখন রুমমেট বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিলো তখন আমি পিছন থেকে তার চলে যাওয়া দেখছিলাম আর ভাবছিলাম পরের দিন আমাকেও এভাবে কলেজ হোস্টেলের সব কিছু চেড়ে চলে যেতে হবে।
শব্দ না করে চোখের পানি ফেলাটা খুব কষ্টের হয়, বুক ফাটা কষ্ট।
রাতে যখন ল্যাগেজ গুচ্ছাচ্ছিলাম চোখ ভিজে জাচ্ছিলো। রাতে ঠিকমত ঘুমাতেও পারিনি। সারারাত শুধু হোস্টেলে কাটানো সব স্মৃতিগুলো চোখের সামনে আনাগোনা করছিলো।
এই চার বছরে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি সবার কাছে, অনেক স্নেহ পেয়েছি, অনেক যত্ন পেয়েছি, অনেক রাগ অভিমান, চাওয়া পাওয়া, হারানো, অভিজ্ঞতা সব কিছুই পেয়েছি।
কষ্ট লাগছে, অনেক প্রিয়মুখ দেখতে পারবো না হয়ত কিছুদিন, হয়ত দীর্ঘদিন, হয়তবা আর কখনো না।



এই চার বছরের কলেজ লাইফে সবচেয়ে সুমধুর স্মৃতি গড়ে উঠেছিলো হোস্টেল কে ঘিরে হোস্টেলের সব মানুষদেরকে ঘিরে।
কখনো কখনো সামান্য জ্বর সর্দি হলে হোস্টেলের বন্ধু মহল থেকে মেডিকেলে ঠেলে পাঠানো হতো।
কারো কোনো মেয়ে পছন্দ হলে সবাই মিলে মেয়ে পটিয়ে দিতাম।
কারো গার্লফ্রেন্ড খাবার পাঠালে আমরা সবাই মিলে খেতাম।
শুক্রবার সবাই মিলে একসাথে বাথরুমে গোসল করতাম।
হোস্টলের ছাদে সবাই মিলে বসতাম, গান গাইতাম, আড্ডা দিতাম।
ডাইনিং রুমে খাওয়া বাদ দিয়ে সবাই সবাইকে নিয়ে মজা করতাম।
সব ডাল খেয়ে ফেলতাম কয়েকজন মিলে।
সেমিস্টার ব্রেকের পর হোস্টেলে সবার আগে আসার প্রতিযোগিতা হতো।
পরীক্ষার আগের রাতে পড়ালেখা বাদ দিয়ে কার্ড খেলতাম।
রাতে লাইট অফ করে দিয়ে সবাই মিলে উড়াধুরা নাচানাচি করতাম।
ঝড়ের রাতে কারেন্ট চলে গেলে লিচু চুরি করতে যেতাম।
এত সব বলতে গেলে বড়সড় দুই চার পাঁচ টা উপন্যাস তৈরি হয়ে যাবে।
আর যাইহোক, এমন কাটানো দিনগুলো চিরন্তন ভাবে আর পাবো না।
কিছু স্মৃতি রেখে যাচ্ছি।
কিছু স্মৃতি নিয়ে যাচ্ছি।

আমার স্পষ্ট মনে আছে, হোস্টেলে যখন প্রথম উঠি তখন বড় ভাই রা ১১৬ টা রুলস কান দিয়ে মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলো।
চুল কেটে ছোট করে ফেলতে হয়েছিলো, গরম লাগলেও শার্টের বোতাম লাগিয়ে রাখতে হয়েছিলো, যখন তখন বড় ভাইদের সিগারেট নিতে বাইরে পাঠাতো, বড় ভাইদের সালাম দিতে দিতে মুখের ফ্যানা বের করে দিতে হয়েছিলো।
সময়টা খুব কষ্টের ছিলো।
ফার্স্ট ইয়ারে ব্যাপক র‍্যাগ খেয়েছি, সেকেন্ড ইয়ারে র‍্যাগ খেয়েছি র‍্যাগ দিয়েছি, থার্ড ইয়ারে মার খেয়েছি মার দিয়েছি, ফাইনাল ইয়ারে এসে র‍্যাগ দিয়েছি কষ্ট পেয়েছি।
কিন্তু কসম করে বলছি, সত্যিই মিস করি জিনিসগুলো।
শিক্ষাগুলো খুব কাজে দিচ্ছে, ভবিষ্যতেও দিবে।

ছোটভাই গুলা, তোরা সবাই মিলেমিশে ভালো থাকিস। হোস্টলে টাকে দেখে নিয়ে থাকিস। কারো সাথে মারামারি ঝগড়া বিবাদে জড়াইস না। আমরা বড়রা যেসব ভূল করেছিলাম তোরা সেসব ভূল করিস না। আমাদের ভালো জিনিসগুলো গ্রহণ করিস।
আর তোদের সিয়াম ভাইকে ভূলে জাস না।
এতদিন তোদের কাছে আমি শুধুমাত্র হোস্টলের বড় ভাই এই পরিচয়ে ছিলাম এখন বড় ভাই পরিচয়ে থাকবো।

এই কিছুক্ষন আগেই সবার সাথে বুক মিলেয়ে হোস্টেল থেকে বের হয়েছি।
সত্যিই কান্না করতে চাইনি আমি, কিন্তু মানুষগুলোকে বুকে নিতেই চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গিয়েছে।
যাওয়ার সময় পিছন ফিরে তাকানোর সাহস পাইনি আমি।
মানুষগুলো হয়ত তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে।

স্ট্যাটাস লিখতে লিখতে চলেই এলাম রংপুরে।
আর একটু পরে বাস থেকে নামতে হবে আমাকে। আব্বু অপেক্ষা করছে বাস স্টপেজে।
আল্লাহ, আমি দিনাজপুর ছেড়ে চলে এলাম...?


মাহবুব আল হাসান সিয়াম
১৪ মে, ২০১৮

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.