নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আব্রাহাম মন্ডল

ইব্রাহিম মন্ডল

পাঠ করতে পছন্দ করি

ইব্রাহিম মন্ডল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মের ব্যবহার ও অপব্যবহার

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৬

জগতে যত কিছু মানুষের কল্যাণে সব কিছুকে ব্যবহার করাই যুক্তিসঙ্গত। যখনই অপব্যবহার হয় তখনই তা অকল্যাণ বয়ে আনে। সাম্প্রতিক সময় বা এর পূর্ব থেকেই আমাদের দেশে ধর্মের অপব্যবহার হচ্ছে, একে নিজের স্বার্থে শাসকদল থেকে শুরু করে স্টাবলিস্টম্যান্ট প্রক্রিয়াগুলো সবসময় সুযোগে কাজে লাগায়। আমরা এসব দেখি কিন্তু বুঝি অথবা না বোঝার ভান করি।



রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের জন্ম একটি সাম্প্রদায়িক অবকাঠামোর ভেতর। তার উত্থানও সেই রূপে ঘটেছে। সোহরাওয়ার্দি-শেখ মুজিব এরা সাম্প্রদায়িক দোষে দুষ্ট ছিলেন। ক্রমশ তাদের রাজনীতিকে সেই ধারা থেকে সরিয়ে আনতে সচেষ্ট হলেও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণগত দিকগুলো খুব একটা বদলায়নি। অর্থাৎ শ্রেণীচরিত্র একই তিমিরে থেকে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যদি আওয়ামী-চিন্তার ফসল ধরা হয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধকে আমরা কোনোদিন একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনা বলতে পারবো না। জনগোষ্ঠীর ভেতর আওয়ামী লীগের বেশি সমর্থন থাকা আর অসাম্প্রদায়িক হওয়া এক জিনিস নয়। মূলত আওয়ামী লীগের বিপুল জনমসর্থনকেই মুক্তিযুদ্ধের অসম্প্রদায়িক চেতনার নেতৃবৃন্দ সময় মতো ব্যবহার করতে পেরেছেন - এটা তাদের দূরদর্শিতা হলেও নেতৃত্বকে ধরে রাখতে পারেননি নিকট-সাম্রাজ্যবাদী বা বন্ধু-সাম্রাজ্যবাদীদের কারণে। মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী দেশ আমাদের স্বাধীনতায় মিত্রবাহিনী হলেও দেশটি নেতৃত্বের দিকে থেকে তাদের চাইতে শার্প হোক কিংবা সেই দিকে ধাবিত হোক তারা চায়নি। অনেকেই বলবেন তাতে তাদের কী লাভ। লাভ তো একটা আছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সম্ভাবনাময় হুমকি কী বা কোথা থেকে আসতে পারে তা তারা পূর্বেই ধারনা করতে পারে। বাঙালির স্বাধীনতার প্রতি যে স্পৃহা এটা যেমন তারা জানে আবার নৃ-ভাবে এ জাতীর শাসনক্ষমতার ইতিহাসও তাদের পঠিত হয়েছে। পাল সাম্রাজ্যের পতনের পর যখন এই প্রথম বাঙালি নৃ-গোষ্ঠী জেগে উঠেছে - এ থেকে এমন কোনো সর্বনাশা জাগরণের ডাক যদি আসে তাহলে ভারতকে ভাসিয়ে নিয়ে কাশ্মির সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে ঠেকাতে পারে। ভারতীয়পন্ডিতরা কিংবা জওহরলাল নেহরী এসব পাঠে যথেষ্ট ঋদ্ধই নন তারা এ নিয়ে প্রচুর গ্রন্থও লিখেছেন।

বাঙালির এই উত্থানকে পূর্বেই খর্ব করে দেয়া হয়েছে সাম্প্রদায়িক আবহে। অর্থাৎ নেতৃত্বকে চলমান স্রোতের সঙ্গে হাটতে দেয়া হয়নি যা সময়ের দাবী ছিল। অপরদিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনাধারী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শক্তি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের কাছে মার খেয়ে নিজেরাই একটি সাম্প্রদায়িক দলের ভেতর নিজেদেরকে আকণ্ঠ ডুবিয়ে রেখেছেন। ফলে তাদের যেসব সাংস্কৃতিক আন্দোলন বা উদচীচী মার্কা সংগঠনগুলো - এসব সংগঠন ক্রমশ পদানত গোষ্ঠীতে পরিণত হতে বাধ্য হয়। এখন তারা যে নৃ-সংস্কৃতির চর্চা করছেন সেটি হলো, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, রাজনৈতিক নৃ-চিন্তা, রাজনৈতিক সমাজ বিশ্লেষন - যেসব কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই একটি জনগোষ্ঠীর চিন্তা-ভাবনার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। তাদের এই কৃত্রিম সাংস্কৃতিক চর্চা নগরের চারদেয়াল ডিঙাতে পারেনি। এটি সেই সেনসাম্রাজ্যের নগরকেন্দ্রীক সাংস্কৃতিকচর্চার সাথেই তুলনা করা যায়। যেটি একটি বর্ণগোষ্ঠীর রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই আবর্ত হতো। এই দেয়ালের বাইরে যত জনগোষ্ঠীর বাস তারা সবাই নমশূদ্র বলেই গণ্য হতো।



এবার মূল প্রসঙ্গের দিকে মুখ ফিরানো যাক। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রথম ও প্রধান দল। কিন্তু এর উত্থান মোটেই সুখের নয়। অথবা বলা যায় ঠিক বাঙালি চিন্তার আদ্রতায় বেড়ে উঠেনি। মূলত এর প্রাণশক্তি ছিল সাম্প্রদায়িক পরিমণ্ডল।

আমাদের জন্য দূর্ভাগ্যজনক হলো এর পরে যে দলটি আওয়ামী লীগের মতোই বিশাল (সংখ্যারক্ষেত্রে) হলেও তারাও চিন্তারক্ষেত্রে খুবই ক্ষুদ্রমানসের একটি দল হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে বলা যাবে না তার রাজনৈতিক দর্শনটাও সেইভাবেই অগ্রসর হচ্ছে। অনেকেই বিএনপির জন্মকে কেন্টনমেন্টে বলে থাকেন। এটি কিন্তু একটি বিএনপির বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডাই বলা যায়। বিএনপি'র জন্ম বরং আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে অনেক স্বচ্ছ। তা সত্যেও কিন্তু বিএনপি নিজেকে স্বচ্ছ রাজনীতিতে আবর্ত করতে পারেনি। কিন্তু বিএনপির রাজনীতির সবচে বড় শক্তি বা প্রাণশক্তি বলা যায়, নিজেকে সে বর্ণবিদ্বেষী রাজনীতির পরিচয়ে আবর্ত করেনি। অর্থাৎ জন্মগতভাবে একজন বাঙালি কিন্তু জাতীয়তাবাদ তার বাংলাদেশী। এই মানুষকে ইরেশনালভাবে প্রমোট করা এটি বিএনপির ধারাই সম্ভব হয়েছে। এটি একটি মৌলিকচিন্তা। একজন চাকমা বা একজন মনিরপুরি সে বাঙালি না হয়েও সে বাংলাদেশী। তাকে রাষ্ট্র ধারণ করতে পারে কেবলমাত্র বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী হওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু তার রাষ্ট্রীয় পরিচয় যদি বাঙালি হয় তাহলে একজন মনিপুরি বা গাড়ো হাজংরা নিজেকে কখনও এই রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত করতে পারবে না। তার নৃ-পরিচয় তখন অপমানিত হয়। তদুপরি এ দলও কোনো না কোনোভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তির সহযোদ্ধা বা সাম্প্রদায়িক শক্তির সম্পূরক হয়ে দাড়িয়েছে। তাহলে আমরা কোনোভাবেই আমাদের বৃহৎ বড় দুটি দলকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক রূপে দেখতে পাচ্ছি না। তাহেল আমরা কোথায় যাবো?

এসবের আলোকে এই জনগোষ্ঠী যদি মাঝেমধ্যে সাম্প্রদায়িক আচরণ করেই ফেলে এর জন্য দায় নিতে হবে মূলত রাজনীতিক দল, ব্যক্তি ও রাষ্ট্রকে। আমাদের রাষ্ট্রও সাম্প্রদায়িক প্রতীক নিয়েই দন্ডায়মান।



০২.

এখন একটি অবজারবেশন সংক্ষেপে এখানে লিপিবদ্ধ করতে চাই। বিষয়টি হলো এই দুই বৃহৎ দল কোনো না কোনোভাবে সাম্প্রদায়িক দোষেদুষ্ট। কিন্তু তারা যখন কোনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় তখন মুসলিম জনগোষ্ঠীকে দেখিয়ে। তাহলে কি তারা মুসলিম নয়? হ্যা, মুসলিম তো বটে কিন্তু তারা যাদের দিকে অ্ঙুলি নির্দেশনা করেন তারা মাথায় টুপি দেয়া মাদ্রাসার কিছু ছাত্র বা মৌলবীসাহেবদের। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ তথা আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় যে যারা বেড়ে উঠেছেন, যাদেরকে বুদ্ধিজীবী না বলে আমি কখনও তাদেরকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি বলেই চিহ্নিত করে থাকি। তারাই সবসময় এদের দিকে সাম্প্রাদায়িক তীরটি ছুড়ে মারেন। কেউ কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, বাংলাদেশের কোনো মাদ্রাসা থেকে মিছিল নিয়ে কোনো মন্দির ভাঙতে দেখেছেন? অথবা কোনো মাদ্রাসার হুজুর কোনো হিন্দুর বাড়ি, ঘর সম্পত্তি দখল করেছে? আমাদের সামনে এসবের কিন্তু কোনো নজির নেই। অথচ এই বোকা হুজুররা আজ পর্যন্ত জানলোই না যে তাদেরকে সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করা হয়। বিশেষ করে সেই সবমানুষজন করে থাকে যারা বড় দলের খায়, বড় দলের গুণকীর্তন করে। রাজনৈতিক দল কেবল লাটিয়ালবাহিনীই পোষে না তারা বুদ্ধিজীবী বা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীও পোষে। তাদের কাজই হলো নিজের দলের সব দোষ অন্যের ঘাড়ে তারস্বরে চাপিয়ে দেয়া।



আমাদের এই অসুখের কারণেই আমরা অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠতে পারছি না।

বি: দ্র: লেখাটি প্রুফ না দেখেই পোষ্ট করা হলো। পরে সময় করে প্রুফ সংশোধন করা যাবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.