নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই ঘরটির জন্য আমরা কোন স্পেশাল ক্যারেক্টার / ইমোটিকন গ্রহন করছি না।\nশুধুমাত্র সংখ্যা ও যে কোন সাধারন ক্যারেক্টার ব্যবহার করুন।\n

আমি মিন্টু

আমি মিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আন্দীয় সভ্যতা এর ইতিহাস

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৪৮


পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা হল দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালা। সেই পার্বত্য ভূভাগে পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত কিছু প্রাচীন সভ্যতার উদ্ভব ঘটেছিল । যাদের মধ্যে কতগুলি হল অতি প্রাচীন কালের । সম্মিলিতভাবে সেসব সভ্যতাকেই মূলত আন্দীয় সভ্যতা বলা হয়ে থাকে। উত্তরে আজকের কলম্বিয়া থেকে দক্ষিণে আতাকামা মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত এক বিশাল ভূভাগে সেই সভ্যতাগুলির বিকাশ এবং বিস্তৃতির সাক্ষ্য পাওয়া যায়। বিশেষ করে এখনকার পেরু ছিল এইসব প্রাচীন সভ্যতার বিকাশের কেন্দ্রভূমি । অবশ্য তার বাইরেও তিওয়ানাকু কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতার অস্তিত্বর কথাও জানা যায়। ইনকা সাম্রাজ্য ছিল পেরুর স্পেনীয় বিজয়ের পূর্বে এই অঞ্চলের প্রাচীন আমেরিন্ডিয়ান অধিবাসীদের শেষ স্বাধীন রাজনৈতিক অস্তিত্ব। এমনকী তাদের সাম্রাজ্যেও কিন্তু দেখা যায় বহু জাতি, ভাষা এবং সভ্যতার আলাদা আলাদা অস্তিত্ব বজায় ছিল। তারা যদিও সবাই ইনকাদের শাসনের অধীনেই ছিলেন, সকলের তাদের প্রতি সমান আনুগত্য ছিলেন না, তেমন সকলের সংস্কৃতিও একইরকম ছিল না। যেমন চিমুরা মুদ্রার ব্যবহার করতো, কিন্তু ইনকা সাম্রাজ্যে তার ব্যবহার ছিল না। সেখানে বিনিময় প্রথার মাধ্যমেই বাণিজ্য চলতো। আবার চাচাপোয়ারা ইনকাদের অধীনতা মানতে বাধ্য হলেও বাস্তবে তাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্নই রয়ে গিয়েছিল। এই কারণেই স্পেনীয়দের সাথে তাদের লড়াই শুরু হলে চাচাপোয়া অভিজাতদের একটি বড় অংশ ইনকাদের পরিবর্তে স্পেনীয়দেরই সাহায্য করেন ।১৫২০ দশকের প্রায় শেষের দিকে সেই অঞ্চলে স্পেনীয়দের আবির্ভাব হয়েছিল এবং তারপর থেকেই তাদের উপনিবেশের ক্রমাগত বিস্তারের ফলে সেই অঞ্চলে সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক যে বিরাট পরিবর্তনের সূচনা ঘটে তার ফলেই সেই অঞ্চলের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন ঘটে এবং ইউরোপীয় ধারার সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটতে শুরু করে।

প্রাক কলম্বীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সভ্যতার অংশ
কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার সমগ্র আমেরিকার ইতিহাসেই ধারাবাহিকতার মাঝে এক ছেদের কাজ করেছিল। দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ অঞ্চলও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ১৬০০ শতাব্দীর প্রথমভাগে এই অঞ্চলে স্পেনীয়দের পদার্পণ এতটাই প্রভাববিস্তার করে যে তার আগে পর্যন্তও এই অঞ্চলের মানুষের সভ্যতার সুদীর্ঘ ধারা এর ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। বহুক্ষেত্রে ভাষা সংস্কৃতি থেকে পুরো জাতি পর্যন্ত এর ধাক্কায় বিলুপ্ত হয় । তাদের আগেকার সভ্যতা সংস্কৃতির সাথে সমস্ত সম্পর্ক হারিয়ে ফেলেন। ফলে আজ যখন ঐতিহাসিকরা আবার ওই অঞ্চলের ইতিহাস পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন দেখা গেছে স্পেনীয়দের আগমণের সময়ে মূলত স্পেনীয়দেরই লেখা কিছু বিবরণ ও স্পেনীয় ভাষা শিখে সেই ভাষাতেই লেখা আমেরিন্ডীয়দের অতি সামান্য কিছু বিবরণ ছাড়া তাদের হাতে আর বিশেষ কিছুই এসে পৌঁছয়নি। ফলে কলম্বাসের অভিযানের পূর্বের ইতিহাস উদ্ধারের ক্ষেত্রে মূলত প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণের উপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। সেই কারণেই আন্দীয় অঞ্চলের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলেও কলম্বাস-পূর্ব প্রত্নতাত্ত্বিক সভ্যতা ও স্পেনীয়দের আগমণের সমকালীন সভ্যতা এই দুইভাগে ভাগ করে আলোচনা করাই ভাল। দ্বিতীয় ক্ষেত্রের ইতিহাসের উপকরণ তুলনামূলকভাবে বেশি তাই তার বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনাও তুলনায় অনেক বেশি বিস্তারিত।
কারাল সভ্যতা
কারাল সুপে সভ্যতা এখনও পর্যন্ত জানা সবচেয়ে প্রাচীন আন্দীয় একটি সভ্যতা। এই সভ্যতা বহু ক্ষেত্রে নর্তে চিকো সভ্যতা নামেও পরিচিত।এর প্রথম নামটি এসেছে পেরুর সুপে উপত্যকায় অবস্থিত কারাল অঞ্চলের নাম থেকেই। সেইস্থানেই এই সভ্যতার সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্তূপটি আবিস্কৃত হয়েছিল। তাছাড়াও এই অঞ্চলটি যতদূর বোঝা গেছে এই সভ্যতায় একটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান বলেও বিবেচিত হয়েছিল । অন্যদিকে পেরুর এই অঞ্চলকে কথ্য ভাষায় বর্তমানে নর্তে চিকো স্পেনীয় অর্থ উত্তরের ছোট্ট স্থান বলা হয়। তা থেকেই এই দ্বিতীয় নামটির সৃষ্টি। খ্রিস্টজন্মের ৯০০০ বছর আগেই এই সভ্যতার সূচনা হয়েছিল । তবে খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০থেকে ৩০০০ অব্দকে এই সভ্যতার সবচেয়ে বেশি বিকাশের সময় বলে মনে করা হয় । উত্তর মধ্য পেরুর সমুদ্র উপকুলে এই সভ্যতার অন্তত ৩০টি কেন্দ্র খুঁজে পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে কারাল, আসপেরো, উয়ারিকাঙ্গা, কাবালেত, প্রভৃতি স্থলে খননকার্যের মাধ্যমে এই সভ্যতার প্রচূর নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে পাথরে তৈরি সম্ভাব্য বড় বড় মন্দিরের উঁচু প্ল্যাটফর্ম, বসবাসের জন্য তৈরি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ, বেশ কিছু ঢিবি, প্ল্যাটফর্মের উপর খাওয়াদাওয়ার চিহ্ন, হাড়ের তৈরি বেশ কিছু বাঁশি, প্রভৃতি। তবে নব্যপ্রস্তর যুগের এই সভ্যতায় ধাতুর ব্যবহার জানা ছিল না। এমনকী মৃৎপাত্র তৈরি বা ব্যবহারের কোনও নিদর্শনও এখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য থেকে এখানে যথেষ্ট জটিল একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্রিয়াকলাপের অস্তিত্ব পরিষ্কার বোঝা যায়। কালের বিচারে এই সভ্যতার সর্বোত্তম বিকাশের সময়টি ছিল পুরনো পৃথিবীর সুমের সভ্যতার থেকে হাজার বছর পরে কিন্তু মিশরে যে সময়ে পিরামিডগুলি নির্মাণ হয় তার সমসাময়িক। পশ্চিম গোলার্ধের অপর প্রাচীন সভ্যতা কেন্দ্র মেসোআমেরিকার থেকে এই সভ্যতা অন্তত ২০০০ বছর প্রাচীন।
পৃথকভাবে সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল পৃথিবীর এমন ছয়টি কেন্দ্রের অন্যতম এবং আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে পুরনো নগরসভ্যতা এই কারাল সভ্যতার কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। সাধারণভাবে অত্যন্ত শুষ্ক এই অঞ্চলের বুক দিয়ে বয়ে গেছে সুউচ্চ আন্দিজ পর্বতমালা থেকে নেমে আসা প্রায় ৫০টি ছোট ছোট নদী। এদের ধার বরাবর প্রতিষ্ঠিত এই সভ্যতার কেন্দ্রগুলিরও মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। কিন্তু তারা চাষ করতো কোনও খাদ্যদ্রব্য নয় মূলত তুলো। সেই তুলো দিয়ে মাছ ধরার জাল তৈরি করে সরবরাহ করা হত সমুদ্রতীরে অবস্থিত এই সভ্যতার কেন্দ্রগুলিতে। এই কেন্দ্রগুলিতে সংগৃহীত মাছ এবং সামুদ্রিক নানা খাদ্যদ্রব্যই ছিল এই সভ্যতার মানুষের মূল খাদ্যদ্রব্য। জালের সাথে মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক খাদ্যদ্রব্যের বিনিময়ই ছিল সেই অর্থে এই সভ্যতার ভিত্তি। অবশ্য সঙ্কীর্ণ নদী উপত্যকাগুলিতে কিছু ফল এবং সবজি চাষের নিদর্শনও পাওয়া যায়। এই ধরণের সভ্যতার অন্য কোনও প্রাচীন নিদর্শনের কথা এখনও পর্যন্ত জানা নেই।আজ থেকে প্রায় ৩৮০০ বছর আগে ভূমিকম্প বা এল নিনো জাতীয় কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এই সভ্যতার পতন ঘটে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ।

লাস ভেগাস সংস্কৃতি
দক্ষিণ আমেরিকার অন্য এক সুপ্রাচীন সংস্কৃতি হল লাস ভেগাস সংস্কৃতি। প্রাচীন এই সংস্কৃতির বিকাশকাল মোটামুটি ৪৬০০থেকে ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে । তবে অত্যন্ত ছোট ছোট মূলত পরিবারকেন্দ্রিক উৎপাদনভিত্তিক এই সংস্কৃতি তখনও তেমন কোনও কেন্দ্রীয় প্রশাসন যতদূর সম্ভব গড়ে তুলতে পারেনি। সেই কারণে সভ্যতা শব্দটির তুলনায় সংস্কৃতি শব্দটি তাদের বর্ণনায় বেশি উপযুক্ত। নৃতত্ত্ববিদ কারেন ই স্টোটার্ট'এর মতে ইকুয়েডরের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল অঞ্চলের জটিল জীববৈচিত্রের সাথে সাথে সুন্দরভাবে খাপ খাইয়ে এরা এদের বসতিগুলি গড়ে তুলেছিল । সেই অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া প্রায় ৩১টি সুপ্রাচীন বসতির অবশেষ থেকে পাওয়া জিনিসপত্রের রেডিওকার্বন পরীক্ষায় তাদের বয়সের প্রাচীনত্ব সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত হয়েছে।সেখানকার মানুষ ছিল মূলত শিকারী এবং সংগ্রাহক তবে তারা মাছ ধরতে জানতো। পরবর্তীকালে আদিম পদ্ধতিতে চাষও শুরু করেন তারা। কাঠ, বাঁশ, লম্বা ঘাস ও গাছের ছাল এরা নানা কাজে ব্যবহার করতেন। তবে মৃৎপাত্র তৈরির পদ্ধতি তাদেরও জানা ছিল না।তারা ছোট ছোট দলে বাস করতেন। তবে আশেপাশের নানা অঞ্চলের মানুষের সাথে তাদের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রায় ৩০০০ বছরের মধ্যে তাদের জীবনযাপন পদ্ধতিতে খুব সামান্যই পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল। বর্তমান ইকুয়েডরের সান্তা এলেনা অঞ্চলের সুম্পাতে তাদের সবচেয়ে বড় বসতিটি আবিস্কৃত হয়েছে।

চাভিন সংস্কৃতি
এই সভ্যতার সর্বোত্তম বিকাশের সময়কাল মোটামুটি খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় হাজার বছর ব্যাপী সময়কাল পযন্ত ছিল । তাদের ভাষা আমাদের জানা নেই এবং যতদূর সম্ভব সেই ভাষা আজ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত প্রায় । তাই তারা নিজেরা নিজেদের কী বলতো সে সম্পর্কেও কিছুই তেমন জানা যায়নি।আন্দিজ পর্বতের উপর প্রায় ১০০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পেরুর চাভিন দে উয়ান্তার'এ এই সভ্যতার সব থেকে বড় কেন্দ্রটি আবিস্কৃত হয়েছে বলে সেই জায়গার নাম অনুসারে তাদের চাভিন সংস্কৃতি বলে উল্লেখ করা হয়। কারাল সুপে সভ্যতার আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত এই সভ্যতাকেই দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা বলে মনে করা হয়েছিল। আন্দিজ পর্বতের উচ্চভূমিতে এদের মূল কেন্দ্রগুলি অবস্থিত হলেও উপকূলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল ।

পেরুর বর্তমান রাজধানী লিমার কাছে অবস্থিত এই চাভিন দে উয়ান্তার শহরটি খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ অব্দ নাগাদ নির্মিত হয়েছিল। তবে তার আগেও সেখানে বসবাসের প্রমাণ পাওয়া যায়। এই কেন্দ্রের মন্দিরটিকে চাভিন স্থাপত্যের একটি প্রধান নিদর্শন বলে মনে করা হয়। এটি দীর্ঘদিন ধরে ধাপে ধাপে তৈরি করা হয়েছিল। এই অঞ্চলে প্রচূর বৃষ্টিপাত হয়। তাই বৃষ্টির জলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মন্দিরটিকে ঘিরে অত্যন্ত সুন্দর নিকাশী ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। তাছাড়াও মন্দির তৈরি করতে যে সাদা এবং কালো পাথরের ব্যবহার করা হয়েছিল তা বয়ে আনা হয়েছিল দূর থেকে। এর থেকে এক ধরণের সাংগঠনিক ক্ষমতার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় যা থেকে বোঝা যায় চাভিনদের কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠী ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে তাদের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে তেমন কিছুই আবিস্কৃত হয়নি। চাভিন দে উয়ান্তার ছিল মূলত একটি ধর্মীয় কেন্দ্র। তবে এর অবস্থান ছিল পার্বত্য এবং উপকুলীয় অঞ্চলের যোগাযোগের রাস্তা ও উত্তর দক্ষিণে যোগাযোগের রাস্তার একরকম সংযোগস্থলে। সেই কারণে আন্দাজ করা হয় রাজনৈতিক দিক থেকেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল।চাভিন সভ্যতা ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক। তারা ভুট্টা, কিনোয়া, আলু, প্রভৃতি ফসলের চাষ করতো। চাষের জন্য জল সেচের বন্দোবস্তও ছিল।

চাভিন মৃৎপাত্র
স্থানীয় পশু ইয়ামাকে তারা পোষ মানিয়েছিল। তাদের মাংস খাওয়া হত । পোশাক তৈরির জন্য তাদের লোম ব্যবহৃত হত আবার মালবহনের কাজেও তাদের ব্যবহার করা হত । পূর্ববর্তী কারাল সভ্যতার সাথে তাদের এক উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হল মৃৎপাত্রের ব্যবহার তারা জানতো। উপকুলীয় অঞ্চলে তাদের ব্যবহৃত সুন্দর সুন্দর মৃৎপাত্র আবিষ্কৃত হয়েছে যার থেকে তাদের শিল্পবোধের পরিচয় মেলে। তাছাড়া মন্দিরগাত্রে ও দেওয়ালেও তারা খোদাই করে অনেক শিল্পকর্ম রচনা করেছিল। সেগুলির সাথে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের যোগ ছিল বলে মনে করা হয় । ধাতুবিদ্যাতেও তাদের যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় মেলে। ধাতু গলিয়ে তারা কাজ করতে জানতো। সোনার কাজেও তাদের দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়।

ভালদিভিয়া সংস্কৃতি
চাভিন সংস্কৃতি যদি এক অর্থে কারাল সুপে সভ্যতার উত্তরাধিকার বহন করে থাকে লাস ভেগাস সংস্কৃতির সরাসরি উত্তরাধিকার বর্তায় ভালদিভিয়া সংস্কৃতির উপর। তবে ধারনা করা হয় এই দুই প্রাচীন সংস্কৃতি সময়ের হিসেবে পরস্পর সরাসরি যুক্ত ছিল না বরং একের বিলোপ এবং অপরের উদ্ভবের মধ্যে প্রায় ৬০০ বছরের ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। বর্তমান ইকুয়েডরের গুয়াইয়াস প্রদেশের সান্তা এলেনা উপদ্বীপের ভালদিভিয়া শহরের কাছে নব্যপ্রস্তরযুগীয় এই সংস্কৃতির কেন্দ্রগুলি প্রথম আবিস্কৃত হয়েছিল বলে তার এই নাম। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ সাল থেকে ১৮০০ সাল এর মধ্যে ইকুয়েডরের পশ্চিম উপকূল বরাবর এই সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। সেই হিসেবে এই সংস্কৃতি ছিল দক্ষিণে বিকশিত ও উন্নত কারাল সভ্যতারই সমসাময়িক। তবে কারাল সভ্যতার মতো এখানে কোনও বৃহৎ শহর গড়ে ওঠা বা জটিল প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের তেমন নিদর্শন পাওয়া যায় নাই।

গুয়াইয়াস, লস রিওস, মানাবি এবং এল ওরো প্রভৃতি প্রদেশে লা সেন্তিনেলা, লা লোরা, পুয়েব্লো নুয়েভো, সান ইসিদ্রো, সান পাবলো, প্রভৃতি স্থানে এই সভ্যতার প্রায় ১৫০টি কেন্দ্র খুঁজে পাওয়া গেছে ।ইকুয়েডরীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ এমিলিও এস্ত্রাদা ১৯৫৬ সালে প্রথম এই সংস্কৃতির নিদর্শন আবিষ্কার করেন। এরা মৃৎপাত্র তৈরি করতে জানতো তাদের তৈরি মৃৎপাত্রগুলিতে প্রথমদিকে সুক্ষতার যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হলেও ক্রমে ক্রমে এরা এতে খুবই দক্ষ হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে তৈরি তাদের রঙীন পালিশযুক্ত এবং সুক্ষ কারুকার্যতে পরিপূর্ণ পাত্রগুলি তার সাক্ষ বহন করে। তাদের জীবনযাত্রার মূল ভিত্তি ছিল কৃষি ও মৎসশিকার। ভুট্টা, কাসাভা, বিনস, স্কোয়াশ, তুলো, প্রভৃতি ছিল তাদের প্রধান ফসল। সমুদ্র উপকুল, খাঁড়ি ও নদী থেকে তারা মাছও ধরতো। তুলো থেকে তারা কাপড় তৈরি করতো।
ভালদিভিয়ার মানুষের থাকার জায়গারও একটি অদ্ভূত বৈশিষ্ট্য আছে।

কোনও একটি জায়গাকে কেন্দ্র করে সাধারণত বৃত্তাকারে বা উপবৃত্তাকারে বাড়িগুলিকে সাজিয়ে তাদের বসতিগুলি গড়ে উঠেছিল। এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় ভালদিভীয় বসতিটি প্রায় ১০ হেক্টর জমির উপর গড়ে উঠেছিল। সেখানে যতদূর সম্ভব প্রায় ৩০০ মানুষ বসবাস করতো। তাদের বাড়িগুলিও ছিল বৃত্তাকার উপবৃত্তাকার বা কিছুটা U এর আকৃতির। তাদের তৈরি ভেনাস মূর্তিগুলিও বিশেষভাবে বিখ্যাত। আরও উল্লেখ্য যে সেই মূর্তিগুলি প্রতিটিই আলাদা আলাদা ব্যক্তির কোন দেবীমূর্তি না। মূর্তিগুলি তারা সাধারণত মাটি দিয়েই তৈরি করতেন।


পারাকাস ও টোপারা সংস্কৃতি
বর্তমান পেরুর পশ্চিমে দীর্ঘ প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের দক্ষিণ অংশে পারাকাস উপদ্বীপ সংলগ্ন ইকা অঞ্চলে মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ থেকে ১০০ অব্দের মধ্যে বিকশিত যে সংস্কৃতির নজির পাওয়া যায় তা পারাকাস সংস্কৃতি নামে পরিচিত। পারাকাস উপদ্বীপে প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষগুলো থেকেই এই সংস্কৃতির মানুষের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানতে পারা গেছে। ১৯২০এর দশকে বিখ্যাত পেরুভীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ হুলিও তেলিও প্রথম সেই সংস্কৃতির বিষয়ে অনুসন্ধান চালান।

বড় বড় কবরস্থানে একসাথে অনেক মৃতদেহর সৎকার করা ও মৃতদেহকে মমি করে রাখা এবং জলসেচের জন্য কাটা খালের বিন্যাস, সোনা পিটিয়ে তৈরি অলঙ্কার ও মুখোশ, অবসিডিয়ান ছুরি, মৃৎপাত্র এবং উন্নত রঙীন ও জটিল বয়নশিল্প এই সংস্কৃতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য ।ইকা উপত্যকা অঞ্চলে পারাকাস সংস্কৃতির মানুষদের বসবাস কালেই যতদূর সম্ভব উত্তর থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ অব্দ নাগাদ এক নতুন সংস্কৃতির মানুষদের ওই উপত্যকায় আগমণ ঘটেছিল। তারপর অন্তত এক প্রজন্ম বা তারও কিছু বেশি সময়কাল পারাকাস উপদ্বীপ এবং ইকা উপত্যকা দুই অঞ্চলেই এই দুই সংস্কৃতির মানুষই পাশাপাশি বসবাস করতে থাকেন।

এই নতুন সংস্কৃতির মানুষদের টোপারা বলে অভিহিত করা হয়। পারাকাস ও টোপারা সংস্কৃতির মধ্যে মিশ্রণের ফলেই পরবর্তী নাজকা সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। পারাকাসদের সুক্ষ বয়নশিল্প ও মৃৎশিল্পের দক্ষতা এই নতুন সংস্কৃতিতেও গৃহীত হয়। যদিও পারাকাসদের বয়নশিল্পের যা কিছু নিদর্শন শুষ্ক উপকুল অঞ্চল থেকেই বেশি পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক গবেষণায় যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে যে এই সংস্কৃতির মানুষদের আন্দিজ পর্বতের উচ্চভূমিতেও যাতায়াত ছিল। সেখানেও তারা বসতি স্থাপনও করেছিল।

নাজকা সংস্কৃতিগুলিঃ
নাজকা সংস্কৃতি হল আন্দীয় অঞ্চলের আরেক সুপ্রাচীন সংস্কৃতি। মোটামুটি ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল এই সংস্কৃতির বিকাশের সময়। দক্ষিণ পেরুর শুষ্ক উপকূলে নাজকা শহরের কাছে রিও গ্রন্দে নদীর উপত্যকায় এই সভ্যতা বিস্তার লাভ করেছিল বলে ঐ শহরের নামানুসারে একে নাজকা সংস্কৃতি বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই সভ্যতায় আমরা সহজেই পূর্বসুরী পারাকাস সংস্কৃতিরই ধারাবাহিকতা লক্ষ করে থাকি। কিছু কিছু পরিবর্তন সূচিত হলেও, এদের বয়নশিল্প, সূচিকর্ম বা মৃৎপাত্র অনেকটা একই রকম। তাদের আরও দুটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল পুকুইয়ো এবং নাজকা রেখা। তার মধ্যে প্রথমটি হল মাটির নীচ দিয়ে জলসংবহনের এক বিশেষ পদ্ধতি নাজকারা যার উদ্ভব ঘটিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ৩২টি পুকুইয়ো পাওয়া গেছে। আর দ্বিতীয়টির কারণে নাজকারা আজ পৃথিবী বিখ্যাত। সেগুলি হল মাটির উপর টানা বিশাল বিশাল সরলরেখা এবং তার সমন্বয়ে অঙ্কিত জ্যামিতিক চিত্র এবং নানা ধরনের পশুপাখির ছবি। সেগুলির বিশালত্ব সত্যিই ধারণা করা কঠিন। প্রায়শই রেখাগুলি মাইলের পর মাইল জুড়ে বিস্তৃত এবং এতটাই বড় যে আধুনিক যুগে হেলিকপ্টার বা বিমানের সাহায্যেই একমাত্র তার পূর্ণাঙ্গ ছবি তোলা সম্ভব হওয়ার পর তাদের প্রকৃত চেহারা সম্পর্কে সঠিক ধারণা তৈরি করা গেছে । ড্রেসডেনের জার্মান গবেষিকা মারিয়া রাইখা ওরকম ৫০টি চিত্র এবং ১০০০টিরও বেশি রেখা আবিষ্কার করেছেন যাদের কোনও কোনওটি ২০ কিলোমিটারও লম্বা।

মোচে সংস্কৃতিগুলিঃ
মোচে সংস্কৃতি মোচিকা সংস্কৃতি প্রাক চিমু সংস্কৃতি ইত্যাদি নামেও পরিচিত। পেরুর উত্তরাংশে সমুদ্রোপকূলে আজকের মোচে ও ত্রুহিলিও শহরের কাছাকাছি অঞ্চলে মোটামুটি ১০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে তারাও রাজনৈতিকভাবে কোনও একটি রাষ্ট্র গঠন করে উঠতে পারেনি। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে পরস্পর বিচ্ছিন্ন থাকলেও তারা একটি সাধারণ সংস্কৃতির জন্ম দিতে সক্ষম হন। তাদের তৈরি অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি ও বিশাল বিশাল স্থাপত্যর নিদর্শন আজও পর্যন্ত বিদ্যমান। বিশেষ করে সুন্দর সুন্দর মৃৎপাত্র সোনার কাজ মূলত ইঁটের তৈরি বিশাল বিশাল স্থাপত্য বা উয়াকা এবং জটিল এবং বিস্তৃত সেচব্যবস্থা মোচে সংস্কৃতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য । তাদের সংস্কৃতি বিকাশের সমগ্র যুগটিকে আধুনিক ঐতিহাসিকরা মোটামুটি তিনটি পৃথক উপযুগে ভাগ করে থাকেন প্রাচীন মোচে সংস্কৃতি ১০০ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্য মোচে সংস্কৃতি ৩০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দ এবং অন্তিম মোচে সংস্কৃতি ৫০০ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ।তারা ছিল মূলত একটি কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতি। কৃষির প্রয়োজনেই তারা বিস্তীর্ণ একটি অঞ্চল জুড়ে জটিল সেচব্যবস্থার বিকাশ ঘটায়। তার জন্য তারা প্রয়োজনে নদীস্রোতকে ঘুরিয়ে দিয়ে হলেও ফসলের মাঠে জলের জোগান নিশ্চিত করেন । তবে তাদের হস্তশিল্প সবচেয়ে বিখ্যাত। তাদের তৈরি বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য থেকে তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। শিকার ও মাছ ধরা থেকে শুরু করে মারপিট এমনকী যৌনাচার পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের অত্যন্ত বাস্তবানুগ চিত্র সেখানে পাওয়া যায়। তাদের তৈরি মূর্তিগুলির আরেকটি বিশেষত্ব হল সেগুলি বেশিরভাগই মনে হয় ব্যক্তিবিশেষের কোনও দেবদেবীর মূর্তি না।
মোচেদের তৈরি আরও দুটি জিনিস বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে তাদের ইঁটের নির্মিত বিশাল বিশাল উয়াকাগুলির রঙের ঔজ্জ্বল্য কারুকার্য ও বিশালত্ব সত্যিই বিস্ময়ের উদ্রেক করে। কিন্তু কিছুটা প্রাকৃতিক কারণে কিছুটা স্পেনীয় বিজয়ের সময়ে লুঠপাটের কারণে সেগুলি আজ অনেকটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত। অন্যদিকে তাদের তৈরি সোনা ও অন্য ধাতুর তৈরি শিল্পকর্মগুলি তাদের সুক্ষ্মতার জন্যই বিস্ময়উদ্রেককারী। তারা দক্ষিণে ইকা উপত্যকার নাজকা সংস্কৃতির সমসাময়িক। তাদের উদ্ভবের সাথে পূর্ববর্তী চাভিন সংস্কৃতির যোগাযোগ আছে বলে মনে করা হয়। ওয়ারি ও চিমুদের তাদের উত্তরসূরী বলে সাধারনভাবে ঐতিহাসিকরা মতপ্রকাশ করে থাকেন।

তথ্যসূত্র গুগল এবং ইন্টার নেট

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩

মামুন ইসলাম বলেছেন: চমৎকার হয়েছে মিন্টু ।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮

আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই । :)

২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭

কল্লোল পথিক বলেছেন: চমৎকার পোস্ট।ধন্যবাদ।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৯

আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ কল্লোল পথিক ভাই :)

৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৪

আরিফুন নেছা সুখী বলেছেন: সুন্দর...

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২০

আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ আরিফুন নেছা সুখী আপুনী :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.