![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে করে কিন্তু গুছিয়ে লিখতে পারি না...
প্রায় চার ঘন্টা হলো ভদ্রলোক মারা গিয়েছেন! স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়স্বজন কাউকেই দেখা যাচ্ছে না আশেপাশে। বেঁচে থাকতে যে ছেলেটি তার দেখাশোনা করতো সেও গিয়েছে সকালের নাস্তা করতে বাইরে।
প্রতিদিনের মতো আজ সকালেও ওয়ার্ডাবয় গিয়েছিল রোগীর বিছানার চাদর বদলাতে, গিয়ে দেখে রোগীর অবস্থা ভালো না।সেই দ্রুত ডাক্তার, সিস্টারদের ডেকে নিয়ে আসে।
আমাদের হাসপাতালের নিয়মানুযায়ী কোন রোগী মারা গেলে প্রশাসনিক বিভাগের কাউকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হয়। এবার দায়িত্ব এসে বর্তালো আমার উপর।রোগীর ফাইল ঘেটে একটি ফোন নাম্বার পাওয়া গেল, ফোন করে জানালাম তার মৃত্যুর খবর। ফোনে যার সাথে কথা বল্লাম তিনি মৃত ব্যক্তিটির একজন বন্ধু। ইতমধ্যে সেই ছেলেটি চলে এসেছে নাস্তা সম্পন্ন করে। তার কাছ জানতে পারলাম মৃত ভদ্রলোকটি ছিলেন বারডেম হাসপাতালের প্রাক্তন ডাক্তার। ফাইল থেকে আগেই জেনেছিলাম ভদ্রলোকের নাম মোহাম্মদ সোহরাব (ছদ্মনাম )। স্ত্রী গত হয়েছেন প্রায় এক যুগ। তাই একাকিত্ব থেকে মুক্তি দিতে চাকরি থেকে অবসরের পর তার ছেলেরা তাকে রেখে এসেছিল বৃদ্ধাশ্রমে। দুই ছেলের পক্ষে সম্ভব নয় বাবার সাথে থাকা কারন তাদের বসবাস সুদূর আমিরিকাতে।উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি অর্জন করেছেন আমেরিকার নাগরিকত্ব। তাই সম্ভব হয়নি সেই জীবন ছেড়ে বাবার সাথে এসে বসবাসের। তেমনি বাবারও সম্ভব হয়নি বয়স হয়ে যাওয়ায় ছেলেদের কাছে গিয়ে থাকার। অতঃপর বাবার আবাসস্থল হয়েছিল বৃদ্ধাশ্রম! ধানমন্ডি ১৯ নাম্বারের ৫ তলা বাড়িটি দেখাশোনা করার কেউ নেই বলে ভাড়া দেয়া হয়েছে একটি প্রাইভেট কলেজকে। সেই ভাড়া থেকেই প্রতিমাসে পরিশোধ করা হতো বৃদ্ধাশ্রমের নির্দিষ্ট ভাতা। ডাক্তার সোহরাবের বন্ধুদের অনুরোধে রুবেলকে নিযুক্ত করা হয়েছিল তার সার্বক্ষনিক দেখাশোনার জন্য , মূলত তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য। এ জন্য অবশ্য রুবেল বেশ মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক পেত, প্রবাসি ছেলেদের বাবা বলে কথা ! কথা বলতে বলতে রুবেল কাঁদছিল আর বলছিল, " জানেন আপা, আমার বাবা বেঁচে নেই। এই কথা জানার পর আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, আজ থেকে আমিই তোমার বাবা। আর কখনো বলো না তোমার বাবা নেই, তাই বাবা বলেই ডাকতাম। আপা, আমার বাবার মৃত্যুর সময় আমি খুব ছোট ছিলাম তাই সেদিন বাবা হারানোর ব্যাথা বুঝতে পারিনি কিন্তু আজ বুঝতে পারছি! আমাকে অনার্স পাশ করতে তিনিই সহায়তা করেছেন,উৎসাহ দিয়েছেন। বলতেন, আমি তো বাবা সারাজীবন বেঁচে থাকবো না তাই লেখাপড়াটা শেষ কর যাতে ভবিষ্যতে চাকরি করে তোর মা'র দায়িত্ব নিতে পারিস।" ছেলেটি কাঁদছিল আর বলছিল, " বাবা আমাকে দিয়ে শপথ করিয়েছিলেন কখনো কোনদিন যেন আমার মা'কে অবহেলা না করি, বৃদ্ধাশ্রমে রেখে না আসি।" এসব শুনছিলাম আর অপেক্ষা করছিলাম ডাঃ সোহরাবের ছেলেদের আগমনের।
ডাক্তার সাহেবের মৃত্যু সংবাদে তার সমসাময়িক বারডেমের প্রায় সকল ডাক্তার, সহকর্মীরা চলে এসেছিলেন ।তাদের সকলের উপস্থিতিতে বুঝতে পারলাম ডাক্তার সাহেব তার সহকর্মীদের কাছে ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়ভাজন একজন ব্যক্তি।এত মানুষ আসলেও, আসছিলেন না কেবল তার ছেলেরাই!
সোহরাব সাহেবের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিষ্টার কাউন্টারে এসে জানতে চাইলেন হাসপাতাল কতৃপক্ষের যে কাজগুলো ছিল সেগুলো সম্পন্ন হয়েছে কীনা। জানালাম, হাসপাতালের বিল তৈরিই আছে ডেথ সার্টিফিকেটও লেখা শেষ। অপেক্ষা কেবল তার ছেলেদের জন্য। বন্ধুটি জানালেন, বাবার অসুস্থতার খবর জানিয়ে তার ছেলেদের ফোন করা হয়েছিল বেশ কয়েক মাস আগেই, কারন অনেক বছর ধরেই ডাঃ সোহরাবের শারিরীক অবস্থা ভালো ছিল না। কাজের চাপে বাবাকে একনজর দেখতে বাংলাদেশে আসতে পারেনি ছেলেরা।দুই দিন আগে বাবার অন্তিম অবস্থার কথা জানিয়ে ফোন করা হয়েছিল, আজ ভোরেই নাকি বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা তাদের। যার সাথে কথা বলছিলাম, এ সময় বেজে উঠলো তার মোবইল ফোনটি। " হ্যালো,কে? ও, সাব্বির। বলো বাবা। হ্যাঁ হ্যাঁ, হাসপাতালের কাগজপত্র সব তৈরিই আছে।তোমরা আসলেই ওরা সব তোমাদের বুঝিয়ে দিবে।ও, তোমাদের হাসপাতালে আসতে আরো ২ ঘন্টা লাগবে।" অবাক বিস্ময়ে আমার সামনের লোকটির ফোনের কথোপকথন শুনছিলাম। ভাবছিলাম, বাবা মারা গিয়েছেন জানার পর তাদের তো কথা ছিল এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হাসপাতালে চলে আসার। আরো বিস্ময় যেন অপেক্ষা করছিল আমার জন্য। ডাঃ সোহরাব মারা গিয়েছেন সকাল ৮টায়, তার ছেলেরা হাসপাতালে এসে পৌঁছালেন দুপুর ১২টায়। এসেই তাদের অভিযোগ এখনো কেন টাকা পরিশোধ হয়নি, ডেথ সার্টিফিকেট বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। তার বাবার বন্ধুদের মধ্য থেকেও তো কেউ পারতো হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে দিতে। পরে তারা সেটা দিয়ে দিত। কী আজব, এ যে দেখি " চোরের মার বড় গলা।" যাই হোক, অবশেষে টাকা পরিশোধ করলেন তারা। ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে শুরু করলেন আরেক নাটক। বড় ভাই বলছেন উনি রিসিভ করবেন ডেথ সার্টিফিকেট আর ছোট ভাই বলছেন হাসপাতালের বিল যেহেতু তিনি দিয়েছেন তাই ডেথ সার্টিফিকেট রিসিভের অধিকার কেবল তারই। আমরা পড়েছি মহা বিপদে! যাই হোক, এহেন অবস্থা থেকে আমাদের উদ্ধার করলেন ডাঃ সোহরাবের বন্ধুরা।তাদের মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্ত হলো ছোট ভাই'ই রিসিভ করবেন বাবার ডেথ সার্টিফিকেট। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম, এর মাঝে একবারও তারা তাদের বাবার মৃত মুখটা দেখলেন না। তাদের অনেক তাড়া! যত দ্রুত বাবার দাফন-কাফন সম্পন্ন হবে তত দ্রুত তারা ফিরে যেতে পারবে তাদের কর্মস্থল তথা আবাসস্থলে। তাই বাবার মৃত মুখ দেখে নষ্ট করার মতো সময় তাদের নেই। যে বাবা তাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য, সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন সেই বাবার প্রাপ্তি ছিল এই! ভালই হয়েছে, মারা গিয়েছেন ডাঃ সোহরাব। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ছেলেদের চরম অবহেলা থেকে মুক্তি মিলেছে তার। অচেনা, অজানা এক রুবেলের মধ্যে ডাঃ সাহেবের জন্য যে ভালোবাসা, আন্তরিকতা দেখেছি তার বিন্দুমাত্রও ছিল না তার ছেলেদের মধ্যে।
প্রার্থণা করি আমার মা-বাবাকে যেন কখনো যেতে না হয় ব্রদ্ধাশ্রমে। আমার যা আছে, যতটুকু আছে তা দিয়েই আমি আগলে রাখতে চাই আমার আম্মু-আব্বুকে, আল্লাহ আমাকে সেই তৌফিক দান করুন।
২| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৫৩
আহমেদ জী এস বলেছেন: বিকেলে ভোরের ফুল ,
এমন গল্পে (?) বলার তেমন কিছু থাকেনা ।
তবে শেষের লাইনটিতে লেখিকার কামনার কথা ভালো লাগলো । সৃষ্টিকর্তা লেখিকাকে যেন সে তৌফিক দান করেন !
৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:০৯
টারজান০০০০৭ বলেছেন: খারাপ লাগলো। বুড়া হইতে ভয় লাগে !
৪| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:১১
বিকেলে ভোরের ফুল বলেছেন: ধন্যবাদ । দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমার মনের আশা পূরন করেন...
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:০২
সুমন কর বলেছেন: মন খারাপ করার মতো লেখা। ভালো লিখেছেন।