![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আক্ষরিক অর্থেই এ যেন বিষে বিষে বিষক্ষয়! যে বিষ শরীরে ছড়িয়ে পড়লে মৃত্যু অবধারিত সেই বিষের সাহায্যেই এক মারণ রোগকে বধ করার পন্থা উদ্ভাবন করেছেন বলে দাবি করলেন কোলকাতার বিজ্ঞানীরা। শুধু তাই নয়, রোগ সারাতে গিয়ে কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাতে রোগীকে কাবু করতে না পারে, তারও পথ বাতলে দিলেন তারাই। প্রথম দফায় শুধু ব্লাড বা রক্তের ক্যানসারের (লিউকেমিয়া) ওপরেই এর কার্যকারিতা সামনে এসেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। কালকেউটে, চন্দ্রবোড়া, খরিষের মতো বিষাক্ত সাপের বিষ থেকে ক্যানসার ঠেকানোর যৌগ আবিষ্কারের এই দাবি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানীদের। শুধু ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করাই নয়, মানুষের দেহে ওই যৌগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঠেকানোর পথও আবিষ্কার করেছেন তারা। এ ক্ষেত্রে তাদের সহায়ক হয়েছে স্বর্ণচূর্ণের কণা, যা প্রাচীন আয়ুর্বেদের সময় থেকেই নানা রোগ সারাতে ব্যবহার করা হয়। তাদের গবেষণাপত্র একটি বিজ্ঞান জার্নাল ‘নেচার ইন্ডিয়া’য় প্রকাশিত হয়েছে। সাপের বিষ ও সোনার গুঁড়ার যৌথ আক্রমণে ক্যানসারের মতো মারণ রোগকে পিছু হটানো সম্ভব কিনা, তা নিয়ে নানা মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। তবে ক্যানসার চিকিত্সকদের বক্তব্য, এটা একেবারেই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্টনি গোমস জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে তাদের বিভাগে কাজ শুরু হয়। ২০০৫ সালে চন্দ্রবোড়ার বিষের প্রোটিন যৌগ ক্যানসার আক্রান্ত কোষকে মারছে, তা প্রমাণিত হয়। গবেষণার মাধ্যমে কেউটের বিষেও এই ক্ষমতার কথা তারা সামনে আনেন। কিন্তু সমস্যা হলো, যে কোনো কেমোথেরাপির ওষুধের মতো প্রোটিন যৌগেরও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। কী ক্ষতিকর দিক? চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, হৃিপণ্ড এবং স্নায়ুর ওপরে ওই যৌগের বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। সেই কারণেই এই যৌগ থেকে ওষুধ তৈরির বিষয়টি নিয়ে বেশিদূর এগোনো বিপজ্জনক হতে পারে। কিন্তু কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বিজ্ঞানীদের দাবি, সোনার গুঁড়ো ব্যবহার করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানোর পন্থাও তারা আবিষ্কার করেছেন। ইঁদুরের ওপরে তা প্রয়োগও হয়েছে। কীভাবে? অ্যান্টনি গোমস বলেন, এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে ন্যানো প্রযুক্তি। সোনার ন্যানো পার্টিকল তৈরি করে তা মেশানো হয়েছে সাপের বিষ থেকে আহরিত যৌগের সঙ্গে। তারপরে তা ইঁদুরের ওপরে প্রয়োগ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ক্যানসার আক্রান্ত কোষ মরছে, কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তুলনায় অনেকটাই কম। এর আগে কাঁকড়া বিছের বিষ থেকে যৌগ নিয়ে ক্যানসারের ওষুধ আবিষ্কারের কাজ হয়েছে। সাপের বিষ থেকে ক্যানসারের ওষুধ আবিষ্কারের ব্যাপারে কাজ শুরু হয় ১৯৩৩ সাল থেকে। এক ফরাসি বিজ্ঞানী এই কাজ শুরু করেছিলেন। পরে ভারতেও একাধিক গবেষণা শুরু হয়। কলকাতার বিজ্ঞানীরা রক্তের ক্যানসারের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা প্রমাণ করতে পারলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই পরের দফায় কীভাবে এই যৌগের বিষক্রিয়া কমানো যায়, তা নিয়েও কাজ চলছিল। উদ্দেশ্য ছিল মূলত দু’টি। ক্যানসারকে ধ্বংস করার পাশাপাশি বিষক্রিয়া ঠেকানো। বিজ্ঞানীদের দাবি, ‘গোল্ড ন্যানো পার্টিকল’ তৈরি করে ওই যৌগের সঙ্গে জুড়ে দেয়ায় সুফল মিলেছে। বিজ্ঞানী অমিয় কুমার হাটি জানান, সাপের বিষ থেকে শুধু ক্যানসার নয়, হৃিপণ্ড, স্নায়ুতন্ত্রের নানা রোগের ওষুধ তৈরি হয়। তার কথায়, সাপের বিষে অনেক ধরনের প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, এনজাইম রয়েছে। সবটাই যে ক্ষতিকর তা তো নয়। ক্ষতিকর বিষয়গুলো বাদ দিয়ে কীভাবে সাপের বিষকে ওষুধ তৈরির কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। আয়ুর্বেদের সময় থেকে চিকিত্সার কাজে সোনার ব্যবহারও চালু রয়েছে। প্রাচীনকালে বৈদ্যরা সোনার কণা দিয়ে আর্থারাইটিসসহ নানা রোগের চিকিত্সা করতেন। তবে সোনাও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত নয় বলে জানান আয়ুর্বেদ চিকিত্সকরা। তাদের বক্তব্য, সোনা থেকেও কিছু বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ক্যানসারের মতো মারণ রোগের কাছে নগণ্য বলে তাদের অভিমত। ক্যানসার চিকিত্সক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, যদি এমন কিছু হয়, তাহলে স্বাগত। কিন্তু চার দফার পরীক্ষার পরে সাফল্য পেলে তবেই এ নিয়ে আশান্বিত হওয়া যাবে। একই কথা জানান ক্যানসার চিকিত্সক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ও। ক্যানসার চিকিত্সক আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, সাপের বিষে এমন এক ধরনের যৌগ রয়েছে যা লিউকেমিয়ার জন্য দায়ী জিনকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। আমরাও এর ফল দেখার জন্য আশাবাদী।
তথ্যসূত্র
©somewhere in net ltd.