![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুয়োরের বাচ্চারাই সভ্যতার নামে জিতে গেল
আমাদের পুকুর পাড়ের কৃষ্ণচুড়ায় ফুল এসেছে । সিদুরে লাল থোকা থোকা কৃষ্ণচুড়া । যেন লাল রঙের আলোকছটা । কৃষ্ণচুড়া মায়ের বড়ই প্রিয় । মা এখন নেই …।।
শেলফ ভর্তি বইয়ের স্তুপ।দেয়ালে শোভিত মিশরীয় ক্যালিগ্রাফি মাদার’স লাভ। আলনায় এলোমেলো শাড়ি,টেবিলে ভাংগা চশমা,জর্দার কৌটা,শুধু মা নেই । স্বপ্নের চোখে নামে অন্তিম অনিদ্রা, কোথাও আমার মা নেই……
মা এখন কোথাও নেই। আমি তাকে আর দেখিনা । সেই যে আমার মা সকাল সন্ধ্যা জায়নামাযে সিজদারত,সেই যে আমার মা জন্মবধি রান্নাঘরে ব্যস্ত ভীষন। মা আজ নেই।দিগ্বিদিক কোথাও নেই ।মা এখন নিশুতি রাতের তারা ।
মা, তুমি বলেছিলে মানুষ মরে গেলে আকাশের তারা হয়ে যায় । আজ খুব জানতে ইচ্ছে করে তুমি , বাবা , পপি এখন কোন আকাশের তারা হয়ে আছো ? অভিমানে লুকিয়ে আছো সীমাহীন দূরে ? আকাশের এক কোনে বসে বসে তোমাদের এই বাউন্ডুলে ছেলেটাকে দেখছো ?
মা, আমি নচিকেতার গান শুনতাম বলে তুমি বলতে , কি পাগল ছাগলের গান শুনিস ? মা, নচিকেতাতো পাগল নয়।সেতো জীবনের গানই গায় । তুমিইতো বৃদ্ধাশ্রম গানটি শুনে কেদেছিলে ।
প্রতি পুর্ণিমার রাতে আমার বুকে জেগে উঠে করুন কষ্ট ।কি এক নিদারুন যন্ত্রনায় আমি নীল হই সারা রাত ।
জানো মা, আমাদের হোষ্টেলের মাঠের এক কোনে বড় অযত্নে বেড়ে উঠেছে একটি বেলি ফুলের গাছ । রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পরে তখন আমি সেই গাছের নিচে গিয়ে দাড়াই । তখন তোমার কথা মনে হয় । আচ্ছা মা , তোমাদের ওখানে কি বেলি ফুলের গাছ আছে ? নাকি তাও নেই ?
মা, মাঝে মাঝে মনে পড়ে যায় সেই আবছায়া রাতের কথা । তোমার অস্ফুট সুরের গান শুনে আমার ঘুম আসতো ।জানো মা,আমাকে আজ পেটের দায়ে সেই গান পথে পথে বেচতে হয় ।আজ আমার কাছে টাকা ঘুমের চাইতে অনেক দামি ।আজ আর গান গাইতে নিলে কারো মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠেনা । মুখের চাইতে টাকা অনেক দামি। আমার গান শুনে সবাই মজা পায় ,হাসে, আমিও হাসি । তাই কেউ বুঝতে পারেনা এই হাসির আড়ালে কতটা কান্না লুকানো। কেউ জানেনা এই হাসির মাঝেই কাদি আমি । সবাই আমার উচ্ছলতা চঞ্চলতা দেখে,কিন্তু কেউ বুঝেনা , যে যত হাসে তার বুকে ততটাই দুঃখগাথা
মাগো,আমার বুকের জ্বালা ভুলতে আমি দিন রাত গান গেয়ে যাই । সেই গান মাঝে মাঝে পেটের জ্বালাও মেটায়।এতো কষ্টের মাঝেও আমি বিদ্রোহী ।যখন তখন ভেঙ্গে পড়িনা , কাদিনা ।আমি জানি দাড়িপাল্লা দিয়ে যেমন বুকের ব্যথা মাপা যায়না,তেমনি চোখের অশ্রু দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করা যায়না ।
মা, ছুটি হলে সবাই বাড়ি যায়,পড়াশোনার মাঝে মাঝে মায়ের ফোন পায় কিন্তু আমি……।।
ছোটবেলায় যাকে মাটিতে রাখোনি পিপড়ে খাবে বলে,মাথায় রখোনি পড়ে ব্যথা পাবো বলে,বুকের সাথে আগলে রেখে বড় করেছ,সেই আদরের ধন ভুলে গেছে সুখ কি ।রেল লাইনের দু’টো সমান্তরাল যেমন কোনোদিন এক হয়না ঠিক তেমনি আমার জীবনে হয়তো সুখ আসবে না ।
বিশ্বাস করো মা, আমি হৃদয়ের ক্যানভাস থেকে মুছে ফেলেছি চে গুয়েভার বিপ্লবি মুখ।এখন সেখানে কেবল তোমার আসা যাওয়া ।এখন মাথার ভেতরে নেই কোনো কুমারি মেয়ের আনাগোনা,দৃষ্টি জুড়ে নেই নীলাঞ্জনা বা পপি……।রাঙ্গামাটির জ্যইসি চাকমার চিঠি …।এখন সেখানে কেবলি আমার মা । এখন হলুদ ফ্রক পড়া কোনো বালিকার জন্য সারা দিনমান অপেক্ষা নেই পুকুর পারে,রাস্তার ধারে অথবা টিউশনির বাড়িতে । এখন শুধুই অপেক্ষা তোমার জন্য । তুমি আসছতো মা ?
মা,আমি অনেকদিন ভোর দেখিনা , অনেকদিন গ্লাস ভর্তি গরম দুধ খাইনা,জ্বর এলে টের পাইনা । তুমি এসে দেখে যাও মা,তুমি বিহনে আমি কিভাবে বেচে আছি ।
মা,তোমার জন্য আমার কষ্টে বুক ফেটে ভেঙ্গে যায় । তুমি কাদিয়ে রেখে গেলে কিন্তু চোখের পানি মুছিয়ে গেলে না ।তুমি শুন্য আমার বাড়িটা মরুর মতো হাহাকার ।চারিদিকে মা বলে ডাকার মতো কেউ নেই ? মাগো ,কোন কারনে আমাকে রেখে চলে গেছ ? তোমার শুন্যতাকে হৃদয়ে পোষন করে বেচে আছি এই আমি হয়ে একাকার ।
মা………।গো………মা………।গো্…………… মা ……………গো………।মাগো
©somewhere in net ltd.