![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি চিনি না নিজেকে আমার রাজত্বে রাজা অন্য আরেকজন, করার কিছু নাই, দর্শক বেশে কেবলই তার খেলা দেখে যাই ।
সাত সকাল ঘুম হতে উঠিয়া মনে হইল একখানি স্ট্যাটাস দিই- gud mrning my frnds tomra sobai kmn aso? কিন্তু বন্ধু মহেল ব্যাপক উত্তাপ ও উপরি পাওনা হিসেবে কমেন্টে তাঁদের উপদ্রব এর কথা সরণ করিয়া এ যাত্রায় নিরত হইলাম আর ফেসবুকের সামনে বসিয়া অতীতের সৃতি জাবর কাটিতে লাগিলাম।
একেবারে প্রথম দিকের কথা মনে পড়ে গেল- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছরেই রেকর্ড সংখ্যক ভরাডুবির মাধ্যমে নারী মহলে নিজের অবস্থান এতটাই তলানিতে নিয়া গেলাম যে, প্রেম তো দুরের কথা বন্ধু হওয়াটাই যে কোন আদর্শ রোমিওর চেয়ে কষ্টকর ঠেকিতেছিল। যে স্বপ্ন নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইয়াছিলাম অংকুরেই তাহার যবনিকা পতন কোন মতেই আমার বিপর্যস্ত মন মানিয়া নিতে চাহিতেছিল না। প্রেমের জন্য যে মনে এত এত হাহাকার, সইতে কি পারে সে এত অন্যায় অবিচার। যাই হোক একটি দরজা বন্দ্ব হইলে নাকি আরেকটি দরজা খুলিয়া যায়, তদ্রুপ আমার সামনে ২২ টি দরজা বন্দ্ব হইয়া হাজারটি দরজা খুলিয়া গেল। ফেসবুকের খোলা জানালায় আমি বুভুক্ষু ফকিরের ন্যায় এদিক ওদিক টোকা দিয়া বেড়াইতে লাগিলাম, সাজেশন বক্সে মেয়েদের ছবি দেখামাত্রই আমার মনে হইত-“আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম”! ( ততদিনেও সার্চ দিয়া কেমনে মেয়েদের খুঁজিয়া বাহির করিতে হয় তাহা আয়ত্ত করিতে পারি নাই, তাই সাজেশনে যাহাই আসিত তাহাই মণিহার কাঞ্চন মনে করিয়া রমণীর প্রোফাইল ঘাটিয়া সময় অতিবাহিত করতাম।) অতঃপর নানা কিছু ঘাটাঘাটনির পর প্রতিবারই বন্ধুতের রিকোয়েস্ট পাঠাইবার সময় আমি কিঞ্চিৎ লজ্জা বোধ করিতাম এই ভেবে যে রমণী যদি আমায় বখাটে মনে করে, রমণীর যদি আমার ছবিটা পছন্দ না হয়- হায় খোদা এত লজ্জা এত অপমান আমি রাখি কই!
“ইচ্চা থাকিলে উপায় হয়” বা “পরিশ্রমেই সোভাগ্যের প্রসূতি” এই সদা ধ্রুব কথা গুলা সত্য প্রমান করইয়া আমার জীবনে তাহার আবির্ভাব। নোটিফিকেশনটা দেখিবা মাত্রই আমার মাথায় বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক ডায়লগের ঘুরিতে লাগিল। “ পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ” এর মত Your request has been accepted by Angel Fariah - নোটিফিকেশনটি আমার জীবনের প্রথম রোমান্টিক ডায়লগের মর্যাদা পেয়ে গেল। দিনরাতে যে পরিমাণে তাহার প্রোফাইল চড়িয়া বেড়াইতে থাকিলাম তাহাতে প্রোফাইল যদি জমি হইত ততদিনে তাহা আবাদযোগ্য হইয়া যেত। রুমমেট দিগকে ডাকিয়া সগর্বে তাহার ছবি দেখাইতাম, যেহুতু ফেসবুক সম্পর্কে সবারই জ্ঞান নাবালক পর্যায়ের ছিল তাই সকলেই আমার প্রশংশায় পঞ্চমুখ হইল। ( বলতে গেলে আমার এই তথাকথিত সাফল্যের কারনে আমার হলের অনেক বন্ধু যারা তখনও ফেসবুক সম্পর্কে তেমন ধারনা রাখিত না তারা ইহাতে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সিভি লইয়া আমার শরণাপন্ন হইল।) দিনরাত তাহার ছবি দেখিয়া বেড়াইতাম কিন্তু লাইক বা কমেন্ট করতে গেলেই কেমন যেন একটা লজ্জা বোধ কাজ করিত।
তারপর-
কোন এক শুভক্ষণে
সকাল বেলা তাহাকে পাইলাম অনলাইনে,
দূর করিয়া সংশয়
পণ করিলাম আজিকেই করিব রূপসীর মন জয়।
যতক্ষণে লিখে পাঠাইলাম Hi
ততক্ষণে রূপসী আর অনলাইনে নাই।
বুঝিতে পারিলাম-
তাহাকে হইত পাইব আবার যদি আমি সকালবেলা অনলাইনে থাকি,
রূপসীর সন্ধানে কুম্ভকর্ণ আমি তখন সকালবেলার ভোরের পাখি।
মাঝে দিন চলিয়া গেল অনেক, তাহার আর আমি সন্ধান পাই নাই। সূর্যি মামা তো অনেক দুরের কথা, পাখিদের কিচির-মিচির বা ইমামের ফজরের আযানের আগেই আমি ঘুম হতে উঠিয়া ফেসবুকে লগইন করিয়া বসিয়া থাকিতাম। ঘুমের ঘোরে প্রায়শই ঝিমানি চলে আসত, কিন্তু লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আমি ঘুমের ঘোরে মাঝে মাঝে হেলিয়া পড়িলেও কভুও ভেঙ্গে পড়িনি। এমনি ঘোরে ঘুরিতে লাগিলাম যে মাঝে মাঝে ঘুম হতে লাফ দিয়া উঠিয়া যাইতাম আর হুড়মুড় করে তৎক্ষণাৎ কম্পিউটার খানি খুলিয়া বসিতাম- এই বুঝি সে অনলাইনে আসিল! না অস্তগামী সে সূর্য আর আমার জীবনে প্রভাতের রবি হিসেবে ধরা দেয় নি কিন্তু নিয়মিতই সে ফেসবুকে একখানি স্ট্যাটাস দিত আর তা হইল - gud mrning my frnds tomra sobai kmn aso? অবহেলায় পড়ে যাওয়া কোন এক খাদ্যকনিকার জন্য পিঁপড়ার দল যেমন ভিড় করে তেমনি তাহার অতি উথসাহি বন্ধুর দলও তার সেই স্ট্যাটাসে কমেন্ট করিয়া স্ট্যাটাসটির চেড়া-বেড়া অবস্থা করিয়া ছাড়িত। এতদ সবকিছু আমার কাছে ন্যাকামির পর্যায়ে ঠেকিতেছিল; প্রেম হইবে ইনবক্সে গোপনে স্ট্যাটাসে কমেন্ট ইত্যাদি দিয়া কেন জানাইব সর্বজনে?
অন্যদিকে যে ভরাডুবি নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করিয়াছিলাম তত দিনে তাহার অত্যস্টি ক্রিয়ার একেবারে অন্তিম পর্যায়ে পোছাইয়া গেলাম। ক্লাসে একদিন যাই তো সপ্তাহের হিসাব থাকে না। সকাল বেলা ক্লাস করিতে পারিতেছিনা বিধায় আমি সকলের মাঝে পরিবর্তনের আশা জাগানিয়া বানি ছড়াইয়া বেড়াইতে লাগিলাম; উন্নত বিশ্বের উদাহরণ টানিয়া সকলের কর্ণ কুহরে ইহা আমি পোছাইয়া দিলাম যে শুধু সকালে কেন কিছু ক্লাস তো বিকালে ও করা যাইতে পারে।
যাই হোক বছর শেষে পরীক্ষার ফলাফল হাতে পাইয়া আমার ভগ্নপ্রায় মন টাইটানিক জাহাজের মত ধড়মড় করিয়া দুভাগে ভাঙ্গিয়া গেল- এক ভাগ আমায় সান্ত্বনা ও উৎসাহ দিতেছিল অপরদিকে অন্য ভাগে ভয়ংকর ভাবে জাগিয়া উঠিতেছিল প্রতিশোধস্পৃহা। ক্রোধের বিষাক্ত থাবা অবশেষে আমায় তাড়িত করিল। ফেসবুকে তাহাকে কয়েকটি প্রশ্ন করিলাম বাট বরাবরের মত কোন উত্তর পাই নি। প্রতিদিন সে স্ট্যাটাস দিয়া যায় কিন্তু আমার ম্যাসেজের উত্তর নাই। একদিন দুদিন করিয়া আবারও বেশ কয়েকটা দিন কাটিয়া গেল।
আমার নিরলস ধ্যানে অবশেষে আমি দিব্যজ্ঞান প্রাপ্ত হইলাম- না Angel Fariah কোন উত্তর দেয় নি কিন্তু ভুলক্রমে আমি ইমেজ সার্চ দিয়া দেখিলাম কাছাকাছি চেহারার Angela Angel নামের অন্য এক শুচিস্মিতাকে। অবিকল সেই চোখের চাহনি, দুধে-আলতা গায়ের রঙ, গালে টোল পড়া হাসি- বুঝিতে একটু সময় লাগিলেও আমি অবশেষে বুঝিতে পারিলাম যে দুটোই একই জনের ভিন্ন ভিন্ন ছবি। ভূমিকম্পের অস্তিত্ব ইতিপূর্বে কখনোও টের না পাইলেও নিজের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও শঙ্কা ভূমিকম্পের চেয়েও কোন অংশে কম ঠেকিল না। ইহারা জমজ বোন হইতে পারে এমন আশায় অবুঝ মন নিজেকে সান্তনা দিতে চাহিলেও কোথায় যেন কিছু একটার ঘাটতি রয়ে গেছে, কিছু একটার হিসাব কোন ভাবেই মিলিতেছিল না। পরিশেষে ফেসবুক বিজ্ঞ মুনি-ঋষিদের পরামর্শে জানিতে পারিলাম যে ইহা ডাকআউটে থাকা কোন এক তামিল নায়িকার ছবি- হায় ফেসবুক- হায় Angel Fariah- হায় সেলুকাস! ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে যাওয়ার পর বুঝিতে পারিলাম “পথিক তুমি পথ হারায়েছ” ইহা কোন রোমান্টিক ডায়লগ ছিল না, ছিল একটি সতর্কবাণী!
২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৮
অন্যসময় ঢাবি বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬
শাহরিয়ার নীল বলেছেন: ভাল লাগল