নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।

আমি সত্যে অবিচল।

আনোয়ার আলী

যত অপ্রিয়ই হোক, সত্য বলতে আমি দ্বিধা করি না। আমি সদাই সত্যে অবিচল। অন্যের কাছে থেকে কিছু জানা আমার শখ।

আনোয়ার আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিবর্তনবাদ প্রাণীজগত থেকে সৃষ্টিকর্তার হাত কেটে দিয়েছে!

২২ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:৪২

বাংলার নাস্তিকেরা নেটজুড়ে দাবী করে আসছেন যে, বিবর্তনবাদ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় প্রাণীজগত সৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্তার কোন হাত নেই এবং বিবর্তনবাদ এই মহাজগতে আল্লাহর অস্তিত্বকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। এক্ষেত্রে বাংলার ইন্টারপাশ বিজ্ঞানে অজ্ঞ কিন্তু বিজ্ঞানের ঢেঁক তোলা নাস্তিকেরা সবসময়ই এককাঠি এগিয়ে। কেবল বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করেই এরা ‘বিজ্ঞান মনস্ক’ ‘যুক্তিবাদী’ নামধারী নাস্তিক। তারা বিজ্ঞান পড়ে নাস্তিক হননি। বিজ্ঞানের কোথাও নাস্তিকতা নেই। বিজ্ঞানে কখন প্রমাণ হয়েছে বিবর্তনবাদ সত্য?
এটা বলাই বাহুল্য যে, বৈজ্ঞানিকভাবে কখনোই বলা সম্ভব নয় যে, প্রাণীজগত আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। সেটা বিজ্ঞানের ধর্মের মধ্যে পড়ে না। বিবর্তনবাদই একমাত্র বস্তুবাদী ব্যাখ্যা যা প্রকৃতিতে ব্যবহারের জন্য সহজেই পেশ করা যায়। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একজন প্রখ্যাত জীন তত্ত্ববিদ, খোলাখুলি বিবর্তনবাদী হিসেবে পরিচিত, রিচার্ড সি. লিওনটিন স্বীকার করেছেন যে তিনি ”সর্বাগ্রে একজন বস্তুবাদী এবং তারপর একজন বিজ্ঞানী ”। তিনি বলেনঃ এটা এমন নয় যে, বিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি এবং প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পৃথিবীর বস্তুবাদ ব্যাখ্যা গ্রহনে কোন ভাবে বাধ্য করেছে, বরং, উল্টো, পার্থিব জিনিসের প্রতি আমাদের নিজেদের প্রধান মোহ থাকার কারণে আমরা কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার সরঞ্জাম ও কিছু ধারণার সেট তৈরী করতে বাধ্য হয়েছি যেগুলো বস্তুগত ব্যাখ্যা প্রদান করে, তা যতোই হোক অন্তর্জ্ঞানের পরিপস্থী কিংবা যতোই ধাঁধাঁ লাগানো হোক তা অদিক্ষীতদের জন্য - তাতে আমাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই।
অধিকন্তু বস্তুবাদই আসল ও সবকিছু, তাই আমরা আমাদের দোরগোড়ায় স্বর্গীয় পদচারণা মেনে নিতে পারি না।”

ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী চালর্স ডারউইন বস্তুবাদী চিন্তাধারায় ১৮৫৯ সালে এ সম্পর্কে সাধারণভাবে গ্রহনযোগ্য বিবর্তন তত্ত্বটি প্রকাশ করেন তার " The Origin of Species " বইতে। তার বইয়ের কোথাও প্রাণীর উৎপত্তি নিয়ে কিছু বলা নেই। কিন্তু অনেক জীববিজ্ঞানী এবং পদার্থবিজ্ঞানীর মতে দৈবাৎ স্বয়ংক্রিয় ঘটনার মধ্য দিয়ে অজৈব পদার্থ থেকে এককোষী সরল জীব সৃষ্টি হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মে। ডারউইনের তত্ত্ব হলো এককোষী সরল জীব প্রাকৃতিক নির্বাচন ও বেঁচে থাকার সংগ্রামে কোটি কোটি বৎসরের ব্যবধানে ক্রমে জটিল হয়ে ও এলোমেলো বিবর্তনের মাধ্যমে আজকের প্রাণীজগতের সৃষ্টি হয়েছে। ডারউইনের এই তত্ত্ব প্রকাশের সাথে সাথে পৃথিবীজুড়ে হৈচৈ পড়ে গেলো এ কারনে যে এটা বাইবেলের কাহিনীর সম্পূর্ণ বিপরীত। এ তত্ত্ব সত্য হলে বাইবেলের কাহিনী মিথ্যা হয়ে যায়। আর মজাটা জমে উঠলো এখানেই। নাস্তিকদের গড হয়ে উঠলেন ডারউইন। যদিও ডারউইন নিজে নাস্তিক ছিলেন না এবং তার বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে তিনি নিজেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। ডারউইনই যে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব প্রথম চিন্তা করেছিলেন না নয়। ডারউইনের অনেক আগে থেকেই বিবর্তনের নানা তত্ত্ব বাজারে প্রচলিত ছিল। তবে খুব সাজিয়ে গুছিয়ে ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ সহ বিবর্তনকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তিনিই প্রথম উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। The Survival of the fittest -এর ধারনা তিনি পেয়েছিলেন ম্যালথাসের অর্থনীতির থিওরী থেকে। ডেন নার্ডোর বই দ্রষ্টব্য) ডারউইন Natural Selection ও The Survival of the fittest টার্ম দুটোকে সমার্থক হিসাবে ব্যবহার করেছেন। মজার ব্যাপার হলো, ম্যালথাস যেখানে জনসংখ্যার বিষ্ফোরন নিয়ে লেখায় খাদ্যের প্রতিযোগিতা ও যোগ্যতমের টিকে থাকা নিয়ে আলোচনা করেছেন, ডারউইন সে ধারনাকে বিবর্তন তত্ত্বের পক্ষে পুরা জীবজগতের উপর প্রয়োগ করেছেন। যদিও বিবর্তনকে বিজ্ঞানের জগতের মনোযোগের বিষয়ে পরিণত করা হয় ফ্রান্সের জীব-বিজ্ঞনিী জন ব্যাপটিষ্ট ল্যামার্ক তার Zoological Philosophy গ্রন্থে বিবর্তন সম্পর্কিত বিস্তারিত দর্শন প্রকাশ করার পর।
তুর্কী দার্শনিক হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,
“(বিবর্তনবাদের) ধারণাটি প্রাচীন গ্রিসের কতিপয় নাস্তিক বহুশ্বেরবাদী দার্শনিক প্রথম প্রস্তাব করেন। কিন্তু সৌভাগ্যবশত সে সময়ের বিজ্ঞানীরা এমন একজন স্রষ্টায় বিশ্বাস করত, যিনি সমগ্র মহাবিশ্বের স্রষ্টা, ফলে এ সকল দার্শনিকদের ধারণা টিকতে পারেনি। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর বস্তুবাদী চিন্তাধারার অগ্রগতির সাথে সাথে বিবর্তনবাদী চিন্তা পুনর্জীবন লাভ করে।
গ্রিক মাইলেশিয়ান দার্শনিকরা, যাদের কিনা পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা কিংবা জীববিদ্যার কোন জ্ঞানই ছিল না, তারাই ডারউনইবাদী চিন্তাধারার উৎস। থেলিস, অ্যানাক্সিম্যানডার, এমপোডোক্লেসদের মতো দার্শনিকদের একটি মত ছিল জীবন্ত বস্তু প্রাণহীন বস্তু থেকে তথা বাতাস, আগুন এবং পানি থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এ তত্ত্ব মতে প্রথম জীবন্ত জিনিসটিও পানি থেকে হঠাৎ এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয় এবং পরে কিছু জীব পানি থেকে মাটিতে উঠে এসে বাস করতে শুরু করে।
ডারউইনের মৃত্যুর ১৫০ বৎসরে এই তত্ত্ব প্রমাণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। বিবর্তনে সময় লেগেছে কোটি কোটি বৎসর। তার মানে বিবর্তন কোনভাবেই পর্যবেক্ষণযোগ্য নয়। জীব বিজ্ঞানীরা বিবর্তন প্রমাণ করার জন্যে ফসিল ইতিহাস এবং ডিএনএ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন এবং কিছু কল্পনার আশ্রয় নিয়ে এটাকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ব্যাখ্যা করে চলেছেন। মাথার খুলির ফসিল ইত্যাদির বিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে একে ৫টি ভাগে ভাগ করেছেন। সেগুলি হলো:
১। অস্ট্রালোপিথেকাস: ২০ থেকে ৩০ লক্ষ বৎসর আগে এরা দক্ষিন আফ্রিকায় বিচরণ করত। এরা সম্পুর্ন বানর ছিল।
২। হোমো হাবিলিস: বানর থেকে মানুষের বিবর্তনে এরা অনেকটা এগিয়ে যায়। এসব বানরের মস্তিষ্ক সময়ের আবর্তনে বৃদ্ধি পেয়েছিল। পায়ের হাড়ও। বিবর্তনবাদীরা মনে করেন এরা হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস আফরিকানাসের উত্তরসূরী।
৩। হোমো ইরেকটাস: এটা হোমো হাবিলিসের পরের পর্যায়। ৫ থেকে ১০ লক্ষ বছর পূর্বে এদের আবির্ভাব হয়েছিল। এরা প্রায় পুরো পৃথিবী জুড়েই বাস করত। জাভা, চায়না এবং আফ্রিকায় এদের মাথার খুলি, চোয়াল ও দাঁতের ফসিল পাওয়া গেছে। এদের কিছু উরুর হাড়ও পাওয়া গেছে যা দেখতে মানুষের হাড়ের মত। এদের মাথার হাড় শিম্পাঞ্জি, গরিলা এবং ওরাংওটাং এর মত।
৪। হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস: জার্মানীর নিয়ান্ডার্থাল নামক স্থানে এই প্রজাতির ফসিল প্রথম পাওয়া যায়। প্রায় ২ থেকে ১ লক্ষ বছর পূর্বে এদের আবির্ভাব হয়। এরা মূলত ইউরোপের বাসিন্দা ছিল। ফসিল রেকর্ড থেকে বোঝা যায় এরা আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর পূর্বে হঠাৎ করেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
৫। হোমো সেপিয়েন্স (পূর্ণাঙ্গ মানুষ) ঃ সর্বশেষ হোমো সেপিয়েন্স অর্থাৎ আধুনিক মানব। এদের সাথে নিয়ান্ডার্থালদের এবং এদের সমসাময়িকদের পার্থক্য বিস্তর। ফসিল রেকর্ড ইঙ্গিত দেয় হোমো ইরেকটাস থেকে বিবর্তিত হয়ে হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস থেকে আধুনিক মানুষের এত বেশি যে, অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন হোমো নিয়ান্ডার্থালেনসিস থেকে মানুষর উদ্ভব হতে পারে না। এ পরিবর্তনের কোন ফসিল রেকর্ডও নেই। ফসিল রেকর্ড প্রমান করে প্রায় ৩৫ হাজার বছর পূর্বে হঠাৎ করেই সমস্ত নিয়ান্ডার্থাল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক জেনেটিক এনালিসিস সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রমান করেছে যে, মানুষ নিয়ান্ডার্থালেনসিস থেকে উদ্ভুত হয়নি। কল্পিত প্রাণীর পায়ের ছাপ দিয়েও বিবর্তনবাদ প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি পোল্যান্ডে ৩৯৫ মিলিয়ন বছরের পুরাতন পায়ের ছাপ আবিস্কৃত হয়। এটা নাকি জল থেকে ডাঙ্গায় উঠে আসা বিবর্তিত প্রাণীর পায়ের ছাপ। বিজ্ঞানের নামে কি অদ্ভুত কল্পকাহিনী।
ফসিল রেকর্ড পুর্নাঙ্গ তো নয়ই, বরং চরম ত্রুটিপূর্ণ। কিছু মাথার খুলির ফসিল দিয়ে বিবর্তনবাদকে মাথায় রেখেই কাল্পনিক প্রাণীর বিশ্লেষন করা হয়েছে। আধুুনিককালের বিবর্তনবাদীরা ডিএনএ রেকর্ড দিয়েও বিবর্তনবাদকে প্রমাণ করতে চান। শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং-এর সাথে মানুষের ডিএনএ ৯৮.৯৬% মিল আছে। কিন্তু এর দ্বারা কিভাবে প্রমাণ হলো, মানুষ আর শিম্পাঞ্জি একই সাধারণ পূর্বপূরুষ থেকে এসেছে? পৃথিবীর প্রতিটি প্রজাতির ডিএনএ সম্পূর্ণ আলাদা। এক প্রজাতির ডিএনএ অন্য প্রজাতির কাছাকাছি হতেই পারে।
ফসিল রেকর্ড এবং ডিএনএ রেকর্ড দিয়ে মানুষের সৃষ্টি বিবর্তন নিয়ে এসেছে কিনা বিরাট এক প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
প্রাণীজগতের সৃষ্টি সম্পর্কে ডারউইন এর বিবর্তন তত্ত্বটির চাইতে গ্রহনযোগ্য আর কোন তত্ত্ব এখনো কেউ দিতে পারেননি। এটাকেই বিজ্ঞান বলেই চালানো হচ্ছে। যদিও কল্পনার কোন স্থান বিজ্ঞানে নেই। বিবর্তনবাদে কল্পনা করে নিতে হয়ে এককোষী অনুজীব সৃষ্টির। এলোমেলো বির্বতনের। কোটি কোটি বৎসরের ইতিহাসে ঘটে চলা বিবর্তনের কল্পনা করে নিতে হয়। নাস্তিকতার পক্ষে এটি একটি দারুণ অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ডারউইনকে নিয়ে অতিমাত্রায় মাতামাতি হচ্ছে। অন্য কোন বিজ্ঞানীর দিবস পালিত না হলেও ডারউইন দিবস পালিত হচ্ছে। ধর্মের, বিশেষতঃ খৃষ্টধর্মের মুলে এটা আঘাত হেনেছে। সেই ১৮৫৯ সালে চার্লস ডারউইন এবং অ্যালফ্রেড ওয়ালেস যখন প্রথম বির্বতনের তত্ত্বটি প্রস্তাব করলেন, তখন চার্চের বিশপের স্ত্রীর মুখ মুখ থেকে যে আতঙ্কবাণী বের হয়ে এসেছিল, তা যেন আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিত বলে মনে হয়। তিনি আর্তনাদ করে বলেছিলেন, ‘‘বনমানুষ থেকে আমাদের বিবর্তন ঘটেছে! আশা করি এইটা যেন সত্য না হয়। আর যদি একান্তই সত্য হয়ে থাকে, তবে চলো আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি সাধারন মানুষ যেন এটা কখনোই জানতে না পারে।’’
[Skybreak, A. 2006, The Science of Evolution and The Myth of Creationism, Insight Press, Illinois, U.S.A]
বিবর্তন তত্ত্ব স্বীকৃত বিজ্ঞান না হলেও, বিবর্তনবাদের মুল মজা তো এখানেই। ধর্মকে জুৎসইভাবে আঘাত করা যায়। নাস্তিকতা প্রচারে এটা ভাল কাজে লাগে। আমেরিকা-বৃটেনের কিছু জনপ্রিয় নাস্তিক যেমন, রিচার্ড ডকিন্স, ড্যান বার্কার, স্যাম হ্যারিস, ড্যান ডেনেট, ক্রিস্টোফার হিসেন্স, মাইকেল শের্মার প্রমুখ বিজ্ঞানের নামে আব্রাহামীয় ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। যদিও বিবর্তন তত্ত্ব বা বিবর্তন দ্বারা সৃষ্টিকর্তা না থাকার প্রমাণ হয় না, এটাতে নাস্তিকতারও কিছু নেই, তবুও সুবিধাবাদী নাস্তিকেরা এটাকে তাদের মত করে প্রচার প্রপাগান্ডায় কাজে লাগিয়ে আসছে বিগত ১৫০ বৎসর ধরে। মজার ব্যাপার হলো যাকে নাস্তিকেরা তাদের গড সমতুল্য জ্ঞান করেন সেই চার্লস ডারউইন কিন্তু নাস্তিক ছিলেন না। তিনি বলেছেন, There is grandeur in this view of life, with its several powers, having been originally breathed by the Creator into a few forms or into one…

বর্তমান কালে বিবর্তন তত্ত্বকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন এটা গাছ থেকে ফল পড়ার মতই সত্য। নানা ডকুমেন্টারী ও টিভি ফিচারে বিবর্তনবাদকে ধ্রুব সত্য হিসাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। মানুষকে এমন একটা ধারণা দেয়া হয় যেন এটা নিয়ে কোন প্রশ্ন চলে না। অনেক বাস্তবতাকে নানাভাবে আড়াল করা হয় কথার কারুকাজ দিয়ে। কোটি কোটি বৎসরের ইতিহাস এমনভাবে বর্ণনা করেন যেন তারা নিজেরাই এর সাক্ষী। পাঠক ভাবেন আরে সত্যিই তো সবকিছু বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে। সৃষ্টিকর্তা বলে তো তাহলে কিছুই নেই। আর এভাবেই দূর্বল ঈমানের মানুষেরা ঈমান হারা হচ্ছেন।
ডারউইনীয় বিবর্তনবাদকে মুসলমানেরা অবজ্ঞা করেন কোন ধর্মীয় কারনে নয়, বরং এটা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য না হওয়ায় এবং একে নাস্তিকতার প্রচারে ব্যবহারের কারনে। কোরআনে বিবর্তনের যে স্বীকৃতি আছে, তা তো অস্বীকার করা সম্ভব নয়। নাস্তিকেরা এজন্যে মারাত্মক নাখোস। বাইবেলে নেই, তবে এসব কেন কোরআনে থাকবে? বাইবেলের মত আব্রাহামীয় সৃষ্টিতত্ত্বের পুরো কাহিনী কেন কোরআনে নেই? পৃথিবী যে গোল একথা সরাসরি কেন কোরআনে নেই? পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র সবকিছু তার নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে এটা কোরআনে থাকলেও, আলাদাভাবে পৃথিবী সুর্যের চারিদিকে ঘুরছে একথা কেন নেই? অতএব কোরআন অবৈজ্ঞানিক-ঘুরে ফিরে একথাই বলতে চান তারা। বিবর্তনবাদ দিয়ে ইহুদী-খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের যেভাবে নাস্তানাবুদ করা গেছে, তার সিকি অংশও মুসলমানদের করা যায়নি। বিবর্তনবাদকে নাস্তিকেরা ও মাক্সবাদীরা একযোগে ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচার করছেন। এটাকে একটা মিশন হিসাবে নিয়েই তারা মাঠে ময়দানে ইন্টারনেটে জাল বিস্তার করে চলেছেন। বিবর্তনবাদীদের দাবী অনুযায়ী বিবর্তন ঘটতে যেহেতু কোটি কোটি বৎসর সময় লাগে, তাই এটা পর্যবেক্ষণযোগ্য নয় বলে যেমন ইচ্ছা তেমন কাহিনী বানানো যায়।
এবার আসুন বিবর্তন কিভাবে ঘটছে সে প্রসঙ্গে। কিছু দিন আগের সোয়াইন ফ্লু বা বার্ড ফ্লু-র কথাই ধরুন। এই ফ্লু এক সময় সোয়াইন এবং বার্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ক্রমে এই ফ্লু বা জীবানু শক্তিশালী হয়ে মানুষকেও আক্রান্ত করছে। অনেক জীবানুই ক্রমে শক্তিশালী হয়ে এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যাচ্ছে। মশা মাছি থেকে শুরু করে অনেক জীবানুই ক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং জীবানু নাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। পরিবেশ এবং পরিস্থিতির কারনেও প্রাণীজগতের মধ্যে সহ্য শক্তির তারতম্য হচ্ছে। এক এলাকার প্রাণী যে পরিবেশে বেঁচে থাকার শক্তি অর্জন করেছে, অন্য এলাকার প্রাণী তা পারে না। এগুলোই বিবর্তন। ডারউইনীয় বিবর্তনবাদের সাথে একে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির মিল খুব কাছাকাছি হলেই ঐ প্রজাতি থেকে এ প্রজাতির বিবর্তন ঘটেছে এমনটা বলা অবৈজ্ঞানিকই শুধু নয়, বলা চলে কল্পকাহিনী। পৃথিবীতে প্রজাতির সংখ্যা প্রায় দশ লাখের মত। এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতিতে রূপান্তরের আগে মধ্যবর্তী কিছু একটা থাকা উচিত। যেটাকে ট্রাঞ্জিশনাল বা মিসিং লিংক বলে। কিন্তু এরকম কোন মিসিং লিংকের ফসিল বিবর্তনবাদীরা দেখাতে না পারলেও, কথার ফুলঝুড়িতে মিসিং লিংক পুরন করে ফেলছে।
বিবর্তন কি কোন ধর্ম বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব সংক্রান্ত বিজ্ঞান? বিবর্তন কেবল পরিবেশের সাথে জীবের অভিযোজনের মাধ্যমে প্রজন্ম পরম্পরায় তার প্রাপ্ত জৈব বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তনের কথা বলে। নাস্তিকেরা এটাকে নিয়ে মাতামাতি করে বাজার মাত করছে এবং প্রাণীজগত থেকে ঈশ্বরের হাত কেটে দিয়েছে বলে দাবী করছেন। ধর্ম এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে স্বল্পজ্ঞানের অধিকারী অসচেতন মানুষই তাদের টার্গেট। মুসলমানেরা বিশ্বাস করেন, আল্লাহ যেভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেভাবেই পৃথিবীতে বিবর্তন ঘটে চলেছে।
মুসলমানদের কোরআনে বিবর্তনকে সমর্থন করা হয়। তবে বুঝতে হবে যে সেটা ডারউইনীয় বিবর্তনবাদ বা বিবর্তন তত্ত্ব-কে নয়।

বিবর্তন সম্পর্কে আল-কোরআন:
‘কালের পরিক্রমায় মানুষের উপর এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন সে (এবং তার অস্তিত্ব) উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না।’ [সূরা আদ-দাহর, আয়াত-১]
‘অথচ তিনিই তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন পর্যায়ক্রমে ’ [সূরা নূহ, আয়াত- ১৪]
‘আমি তোমাদেরকে একটি ব্যক্তিসত্তা থেকে সৃষ্টি করেছি, তারপর তা থেকে জুড়ি সৃষ্টি করেছি এবং তার থেকে বহু সংখ্যক নরনারী ছড়িয়ে দিয়েছি’ [ আন-নিসা, আয়াত-১]
‘আমিই তোমাদের বানিয়েছি, তারপর আমিই তোমাদের বিভিন্ন আকার-অবয়ব দান করেছি’ [ আল-আরাফ, আয়াত-১১]
‘আমি এর আগে কত জনপদের ধ্বংস সাধন করেছি যার অধিবাসীরা ছিল পাপী এবং তাদের জায়গায় সৃষ্টি করেছি অন্য জাতি’।[সুরা আম্বিয়া, আয়াত-১১]
‘কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এক সময় ওৎপ্রোতভাবে মিশেছিল, অতঃপর আমিই উভয়কে আলাদা করে দিয়েছি এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ [সুরা আম্বিয়া, আয়াত-৩০]
‘তিনি এ জমিন হতে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তাতেই তিনি তোমাদের বসবাস করিয়েছেন। [সুরা হুদ, আয়াত ৬১]
‘তোমরা আল্লাহর জমিনে পরিভ্রমন কর এবং দেখ কিভাবে আল্লাহ তার সৃষ্টিকে প্রথমবার অস্তিত্বে আনেন এবং (একবার ধ্বংস হয়ে গেলে) কিভাবে আবার তিনি তা পুনর্বার সৃষ্টি করেন’ [সুরা আনকাবুত, আয়াত-২০]
‘তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। [সূরা আল ইনফিতার, আয়াত ৭]

বলাই বাহুল্য, আল-কোরআনের এসব আয়াত সাক্ষ্য দিচ্ছে পৃথিবীতে পরিবর্তন বিবর্তন ঘটেছে এবং ঘটছে। তার মানে বানর বা প্রাইমেট থেকে মানুষের সৃষ্টি বোঝায় না। এটাকে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। ডারউইনের তত্ত্বে কোন বিজ্ঞান নেই, আছে ধর্মকে আঘাত দেয়ার কুমন্ত্রনা। অবশ্য ডারউইন নিজে সেটা করেননি। তার ভাবশিষ্যরাই তার ভাবনাকে গলদ ইস্তেমাল করে চলেছেন। আল্লাহ তো কোরআনে বলেছেনই ‘আমি তোমাদেরকে বিভিন্ন আকার অবয়বে বানিয়েছি।’ ‘অথচ তিনিই তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন পর্যায়ক্রমে ’ [সূরা নূহর ১৪ নং এ আয়াত] রেডিমেট মানুষ তিনি বানাননি। টাইম গ্যাপ আছে। প্রথম জীবন কাদামাটি থেকে শুরু হয়েছে, এরপর পানি পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন অবয়ব, পরবর্তীতে দুটো নরনারী থেকে ছড়িয়ে যাওয়া কোটি কোটি মানুষ। তবে এসব আয়াতকে অনেকেই বিবর্তনের সাথে ‘ইজম’ দিয়ে গুলিয়ে ফেলে ডারউইন-ডকিন্স এর বিবর্তনবাদকে ডিফেন্ড করেন। অথচ ডারউইনের বিবর্তনবাদ কল্পনার উপর নির্ভরশীল কোটি কোটি বৎসরের ইতিহাস বর্ণনা মাত্র। পৃথিবীতে ঘটে চলা সত্যিকারের বিবর্তনের কথা কোরআনে আছে, বিবর্তনবাদে নয়। ডারউইন-ডকিন্সের বিবর্তনবাদ ঠাকুরমার ঝুলির মত কাল্পনিক গল্প বৈ আর কিছু নয়।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৫৯

দধীচি বলেছেন: তাহলে কি বোঝা গেল? বিবর্তনবাদ কি সত্য নাকি মিথ্যা?

২| ১৩ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১১:২২

স্বপ্নাতুর পুরব বলেছেন: প্রিয়তে রেখে দিলাম ।

৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৭

বুনিয়াদি ভ্রমঘাতিকা বলেছেন: বিবর্তন নিয়ে মানুষের অনেক ভুল ধারনা আছে। আমি বিবর্তন নিয়ে একটা সিরিজ লিখছি। চাইলে দেখতে পারেন

বিবর্তন ১০১ (কিউ অ্যান্ড এ)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.