নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।

আমি সত্যে অবিচল।

আনোয়ার আলী

যত অপ্রিয়ই হোক, সত্য বলতে আমি দ্বিধা করি না। আমি সদাই সত্যে অবিচল। অন্যের কাছে থেকে কিছু জানা আমার শখ।

আনোয়ার আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুসলমানেরা কেন নাস্তিক-মুরতাদ হয় ?

০৩ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৯

মামুন হিমু রবি নামের এক ব্লগার লিখেছেন, আমি একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসেবে ছোটকাল থেকেই পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম। তাবলীগ জামাতের সাথেও জড়িত ছিলাম। হুজুরেরা যা বলতো মূগ্ধ হয়ে শুনতাম। আর মনে মনে মুসলমান হয়ে জন্মানোর জন্য গর্ব অনুভব করতাম। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে জিকিরে বসতাম দল বেঁধে। শুধু আল্লাহ আল্লাহ করলেও মনে কেমন জানি এক নির্বোধ প্রশান্তি আসতো।
আমাদেরকে শেখানো হতো দুনিয়ার সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান কোরান থেকে আসছে, তাই বেশি বেশি কোরান এবং ইসলামী সাহিত্য পড়তে হবে। কাফের বেদ্বীনদের কোন লেখা পড়া যাবেনা। আমার মনে আছে আমাদের স্কুলের ধর্মশিক্ষক ক্লাসে এসে রবীন্দ্রনাথ কে কিছুক্ষণ গালাগালি করতো আর আমাদেরকে রবীন্দ্রনাথের কোন লেখা না পড়ার জন্য উৎসাহিত করতো। আমাদেরকে কবি ইকবালের ঊর্দু শায়েরী শোনাতো, আর বলতো এই না হলে মহাকবি।
তখনো সাহিত্যের হাতেখড়ি আমার হয় নাই। তাই স্যারের কথা নাক কান বুজে বিশ্বাস করতাম। আর রবীন্দ্রনাথ কে মালাউন কবি বলে কটাক্ষ করতাম।
একদিন শুক্রবারের নামাজের খুত্বায় হুজুর ইহুদি, নাসারা আর পশ্চিমা দুনিয়া পাপে ভরা, ওদের কোন ধর্ম নেই, ওরা পশু সমতূল্য ইত্যাদি বলে গালি দিচ্ছিল। এটা শুনে আমার কেমন জানি খটকা লাগা শুরু হলো, যে ওই পশুসমতূল্য মানুষগুলোর জন্যই আমরা প্রাসাদ-তূল্য এ,সি, মসজিদে বসে তাদেরকে গালি দিতে পারছি। নইলে আমাদের খেজুর পাতার মসজিদের উপরে যাওয়ার মত প্রযুক্তিগত ক্ষমতা ছিল না।
একদিন হুজুর বেহেশতের বর্ননা করতেছিল যে ওখানে ইমানদারের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী সুখ। সেখানে কিছু খাইতে মন চাইলেই সামনে এসে হাজির হবে। আমি চিন্তা করলাম যেখানে কোন পরিশ্রম নেই, কোন কষ্ট নেই, সেখানে ক্ষুধাই-বা লাগবে কেন? আর সে ক্ষুধা নিবৃত্তির তৃপ্তিটাই বা কি? আবার হুজুর যখন বললেন বেহেশতবাসীর জন্য ৭২টা করে হুর দেয়া হবে, তাদের যৌনবাসনা নিবৃত্তির জন্য, তখন আমার খুব লজ্জা লাগতো। ভাবতাম আমার বাবা বোন যখন বেহেশতে যাবে আর আমি তাদের সামনে ৭২ টা হুর নিয়ে ঘুরবো? আমার কোরানে বর্নিত বেহেশতটা কে খুব নোংরা মনে হতে লাগলো।
আমি কোরানের বাংলা অনুবাদ ও তাফসীর যোগাড় করে পড়া শুরু করলাম। কারন আমার তখন মনে হয়েছিল যে, নিজে কোরান বুঝে ধর্মকর্ম করাই সেরা। আর আমি কোরানের আগে একমাত্র ক্লাসের বই আর দুই চারটা গল্প উপন্যাস ছাড়া আর কিছু পড়িও নাই। যাইহোক যেদিন থেকে কোরান পড়াা শুরু করলাম অর্থবুঝে, সেদিন থেকেই আল্লাহর অস্তিত্বের সন্দেহের বীজ আমার মনে রোপন হলো। আমি তাফসিরে মারেফুল কোরান নামক সৌদি সরকারের দেয়া তাফসীর গ্রন্থটা পড়ে শেষ করলাম; কয়েকবার করে পড়লাম ওইটা। পড়ার পর আমার মনে প্রশ্ন তৈরি হলো --
এটা যদি আল্লাহ লিখে থাকে, তাহলে উনি নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত সবসময় খালি ভয় অথবা চরম সুখের লোভ দেখিয়ে খালি নিজের ইবাদত করাতে চান। এতে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে তার লাভ টা কি?
এটা যদি আল্লাহর কিতাব হয়, তাহলে খালি সমসাময়িক ঘটনাবলীতে কোরান ভরা কেন?
কোরান নাকি আল্লাহ আগেই লিখে রাখছিলো তাহলে কোরানের বর্ননারীতি এইরকম কেন যে নবীর যখন যে কথাটা দরকার তখন সেই কথাটাই নাযিল হলো? আগে থেকে লিখে রাখা কোরানের তাহলে কি হলো?
দুনিয়ার সবকিছুই আল্লাহর নির্দেশে হয়, তাহলে একজন মানুষ হিন্দু খ্রিস্টান অথবা নাস্তিক এতো তার ইচ্ছায়-ই হয়েছে। তাহলে মানুষের দোষ টা কোথায়?
আমি এইসব প্রশ্ন দুই-একটা একজন হুজুর কে জিঞ্জাসা করছিলাম সে তো পুরো চোখমুখ গরম করে আমারে প্রায় মারার অবস্থা। তার কথা আল্লাহকে বিনাপ্রশ্নে মেনে নিতে হবে; কোন প্রশ্ন করা যাবেনা; যে প্রশ্ন করবে সে কাফের মূর্তাদ; তাকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে।
সেদিন-ই ধর্মের ওপর থেকে সমস্ত আস্থা আমার শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেদিন থেকে নিজেকে মুক্ত লাগা শুরু হলো। ধর্ম বিষয়ের বাইরে আমি বিভিন্ন বই পড়া শুরু করলাম -- জানলাম বিবর্তনবাদ, জানলাম দর্শন, গ্রহণ করলাম বিশ্বসাহিত্যের আস্বাদ। আর এভাবেই ধর্মের নামে ছোটকাল থেকে আমার যে মস্তিষ্ক ধোলাই করা হচ্ছিল, তা থেকে ধিরে ধিরে বের হতে শিখলাম। এখন আমি গর্ব করেই বলি আমার কোন ধর্ম নেই; আমি একজন মানুষ -- এইটাই আমার চূড়ান্ত পরিচয়।’
এটা একজন নাস্তিকের স্বীকারোক্তি। মোল্লাদের বাড়াবাড়ি রকমের উক্তি তাকে নাস্তিক হতে সাহায্য করেছে। আমাদের দেশে বলেই নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ জায়গাতেই ইসলামকে অত্যন্ত কঠিনভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয়। দুনিয়ার বাস্তব জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করা হয়। অনেকে এই কঠিন আবরন থেকে রেবিয়ে যাওয়ার জন্যে নাস্তিকতায় আশ্রয় খোঁজেন। ইসলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ ধর্ম হলেও, স্বল্পজ্ঞানী মোল্লারা একে বানিয়ে রেখেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন এক ধর্মে। অথচ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্যে আমি তোমার প্রতি কোরআন অবর্তীর্ন করিনি।’ [সুরা ত্বাহা: ১-২] কোরআনে আরো বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদেও জন্যে সহজ করতে চান, তোমাদেও জন্যে কঠিনতা তার কাম্য নয়।’ [সুরা বাকারা: ১৮৫] নবী করিম (দঃ) বলেছেন, ‘তোমাদেও সহজ নীতি অবলম্বনের জন্যে পাঠানো হয়েছে, কঠোর নীতি অবলম্বনের জন্যে পাঠানো হয়নি’ [বুখারী], ‘তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না। সুসংবাদ দাও, বীতশ্রদ্ধ করো না। পরস্পরে মেনে মানিয়ে চলো, মতবিরোধ করো না।[বুখারী] ‘নিশ্চয় দ্বীন সহজ। যে ব্যক্তি অহেতুক দ্বীনে কঠিন বানাবে তার উপর দ্বীন জয়ী হয়ে যাবে। সুতরাং তোমরা সোজা পথে থকো এবং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো। [বুখারী]
আমাদের তথাকথিত ধর্ম বিশেষজ্ঞ মোল্লা-মওলানারা উপরোক্ত কোরআন-হাদীসের কোন কথা মানেন বলে তো মনে হয় না। তারা অনঢ় থাকেন তাদের মনগড়া বিশ্বাসের উপর। বাপদাদার শিখিয়ে দেয়া অন্ধ বিশ্বাসের উপর। ইসলাম সম্পর্কে তাদের মনগড়া ব্যাখ্যা মানুষের মনে প্রশান্তির বদলে ভীতির সঞ্চার করে। যুব সম্প্রদায় এই শিকল ভেঙ্গে বেরিয়ে যেতে চায়। নাস্তিক্যবাদের প্রচার প্রগান্ডা ও যুক্তিসমুহ তাদেরকে নাস্তিকতার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। ধর্ম বুঝার আগেই ধর্ম বিরোধী হয়ে উঠে ওরা।
সৌদি আরবের কথাই ধরা যাক। সেখানে কঠোর অনুশাসন চলছে সেটা বড় কথা নয়। ইসলাম ধর্মকে তারা তাদের নিজেদের ছাঁচে সাজিয়েছেন। রাজকীয় নীতিকেই ইসলাম বলে সাব্যস্থ করার একটা প্রতিযোগিতা সেখানে লক্ষ্যনীয়। গ্রান্ড মুফতিরা ইসলামের নামে যেসব ফতোয়া দেন, তা ইসলাম তো নয়ই, চরম দৃষ্টিকটুও বটে।
‘এক সাথে কাজ করা বৈধ করতে পুরুষ সহকর্মীকে বুকের দুধ খাওয়াবেন নারী’, ‘মিশরের স্বৈরশাসক আল সিসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা নাজায়েজ’, ‘ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ করা নাজায়েজ’, ‘বোরকার ভেতর দিয়ে নারীর সুন্দর চোখ বেরিয়ে পড়া অপরাধ’।
এই সব হাস্যকর ফতোয়া নিয়ে সাধারণ মানুষ যে সমালোচনা বা বিদ্রুপ করেন তা পবিত্র ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে বিমুখ করে দিচ্ছে। রাজতন্ত্র ও সালাফীদের সমালোচনা করতে গিয়ে অনেকেই ইসলামের বিশ্বাস ব্যবস্থাকেও আক্রমণ করছে। যা একটা পর্যায়ে নাস্তিকতায় রূপ নিচ্ছে মর্মে সংবাদ এসেছে।
তবে এর বাইরে মুলতঃ তিনটি কারনে মুসলমানের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা নাস্তিকতায় যোগ দিচ্ছেন। এ কারন বা যুক্তি তিনটি হলো-১। এ মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে পদার্থ বিজ্ঞানের স্বাভাবিক নিয়মে, এত স্রষ্টার কোন হাত নেই। বিগ ব্যাং-এর মাধ্যমে বিশ্বজগতের সৃষ্টি হয়েছে, বিগব্যাং-এর আগে কোন স্থান বা সময় বলে কিছু ছিল না। কাজেই সৃষ্টিকর্তা থাকাও সম্ভব নয়।
২। প্রানীজগতের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন গ্যাসের সমন্বয়ে এককোষী এমিবা সৃষ্টির পর তা থেকে কোটি কোটি বৎসরের নানা এলোমেলো বিবর্তনের মাধ্যমে। যে বিবর্তন এখনো চলছে। কাজেই এতেও সৃষ্টিকর্তার কোন হাত নেই।
৩। সৃষ্টিকর্তার গ্রন্থ নানা অসংগতি, ভুল ও অবৈজ্ঞানিক তথ্যে ভরপুর। কাজেই সৃষ্টিকর্তার ধারনা মানুষের সৃষ্টি। ধর্ম মিথ্যা, ধর্মের কোন প্রয়োজন নেই। সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করেননি, বরং মানুষই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি করেছে মনের ভয় থেকে।
আমরা ধীরে ধীরে তিনটি পয়েন্টেই আলোচনা করব।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

শাশ্বত স্বপন বলেছেন: মাগো, আপনার সাহস দেখে, আমি ভয়ে মরি। কিন্তু বন্ধু বানাতে চাই্ আসুন, শাশ্বত স্বপন এর ব্লগে বা ফেইজবুকে। আর লেখাটা প্রিয়তে নিলাম

২| ০৩ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৫

নতুন বলেছেন: ষয়ের বাইরে আমি বিভিন্ন বই পড়া শুরু করলাম -- জানলাম বিবর্তনবাদ, জানলাম দর্শন, গ্রহণ করলাম বিশ্বসাহিত্যের আস্বাদ। আর এভাবেই ধর্মের নামে ছোটকাল থেকে আমার যে মস্তিষ্ক ধোলাই করা হচ্ছিল, তা থেকে ধিরে ধিরে বের হতে শিখলাম।

শুধু বিশ্বাস নিয়ে পড়ে থাকলে কোন সমস্যা হয় না....

কিন্তু যুক্তি দিয়ে দেখা শুরু করলে অনেক প্রশ্ন আসে যা বতমানের ধমের ব্যক্ষা বেমানান..

৩| ০৩ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৪

আহমেদ ফিরোজ. বলেছেন: কূপমন্ডুক মোল্লারাই ইসলামের বেশি ক্ষতি করেছে।

৪| ১০ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:১৫

াজার বলেছেন: নব্য আবু জাহিল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.