নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যত অপ্রিয়ই হোক, সত্য বলতে আমি দ্বিধা করি না। আমি সদাই সত্যে অবিচল। অন্যের কাছে থেকে কিছু জানা আমার শখ।
বিজ্ঞানের পক্ষে একথা বলা সম্ভব নয় যে, মহাবিশ্ব আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। এটা কোরআনের এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের কথা। তবে মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে, সে কথা বিজ্ঞান বলতে পারছে। ‘কে করেছে’ সে প্রশ্নে বিজ্ঞানের উত্তর হলো-আপনা আপনি, স্বয়ংক্রিয় এবং স্বতস্ফূতভাবে কোন বাহ্যিক শক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়া। কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশনের মাধ্যমে শূণ্য থেকে বস্তু সৃষ্টি হতে পারে। শক্তির কোন সৃষ্টি বা বিনাশ নেই। মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ শূণ্য। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং কসমোলজির চিরন্তন সুত্র অনুসরণ করে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে যা ঘটে তাকে কোন না কোন সুত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা চলে। প্রাকৃতিক সুত্রাবলীর কোন ব্যতিক্রম হয় না। ছায়াপথ, মহাবিশ্ব পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মেরই সৃষ্ট। বিজ্ঞানের মডেলগুলো তৈরী হয়েছে আমাদের জানাশোনা পদার্থ বিজ্ঞানের নীতি অনুসরণ করেই। মোদ্দা কথায় পদার্থ বিজ্ঞানের সুত্র মতেই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে।
বিগব্যাং-এর আগে সময় বলে কিছু ছিল না। সময়-এর সৃষ্টি বিগব্যাং-এর পরে। বিজ্ঞানের ভাষায়, সময়ই যখন ছিল না, তখন কোন সৃষ্টিকর্তা থাকারও প্রয়োজন ছিল না। হাল আমলের বিজ্ঞানী ষ্টিফিন হকিন্স বলেছেন, সময় না থাকলে সৃষ্টিকর্তা থাকা অসম্ভব। সময় চিরন্তণ বা স্থায়ী নয়। সময়ের শুরু আছে। আবার শেষও থাকবে। বিগব্যাং থিওরী অনুযায়ী মহাবিশ্ব একটা বিন্দুতে মিলিত হয়েছিল শূণ্য সময়ের ব্যবধানে। তখন সময় বলে কিছু ছিল না। সময় ছিল শূণ্য। কেননা তখন কিছুই ঘটেনি। কিছু ঘটতে হলে সময় লাগে। তখন সময় ছিল না, ভর ছিল না, ঘটনা ছিল না, ছিল কেবলই অসীম শক্তি। অসীম ঘনত্ব আর অসীম শক্তির কারনে আজ থেকে ১৫০০ কোটি বৎসর পূর্বে ঘটে বিগব্যাং ঘটনা। আর এর পরেই বিশ্বজগত সহ অন্যান্য সবকিছুর সাথে সময়ের সৃষ্টি। সময় স্থির থাকলে কোন ঘটনা ঘটবে না। ঘটা সম্ভবও নয়। যেহেতু বিগব্যাং-এর আগে সময় ছিল না, ঘটনা ছিল না, কাজেই সৃষ্টিকর্তাও ছিল না। মহাবিশ্ব অনন্তকালের নয়, বিগব্যাং-এর পরেই এর জন্ম। কতেক বিজ্ঞানীর ভাষায় যেহেতু বিগব্যাং-এর আগে কিছুই নেই, বিগব্যাং-এর পরে সৃষ্টিকর্তার জন্ম হওয়াও সম্ভব নয়।
বিজ্ঞান মহাবিশ্ব সম্পর্কে যে ধারনা ও তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছে, তার সারাংশ হলো, শূণ্য থেকেই মহাবিশ্বে শক্তি সঞ্চার হয়ে বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়ে ক্রমে প্রসারিত হয়ে চলেছে। এই তথ্য কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কোরআনে বিগ ব্যাং-এর স্বীকৃতি আছে। আবার আল্লাহপাকও বলেছেন, ‘তিনি শূণ্য থেকেই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন হও, আর তা হয়ে যায়, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়।’ [‘আল্লাহ সব কিছুর সৃষ্টি করেছেন শূন্য থেকে’ ২:১১৭।] কি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয় আল্লাহ তা বলেননি। তার দৃষ্টিতে সৃষ্টির জন্যে সময়ের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এই ‘হও’-কে আমরা সময়ের মাধ্যমে দেখি। এই গ্রহবাসীর হিসাবে তা হাজার কোটি বৎসর হতে পারে। এই গ্রহবাসীর দৃষ্টির সীমা যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু হয়েছে অসীম আকাশ-গঙ্গা। কোথায় এর শেষ কেউ বলতে পারছে না। মহাবিশ্ব সৃষ্টি সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়ের আলোচনা ডঃ মরিস বুকাইলী রচিত ‘বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান’ বইতে বিস্তারিত আছে। আমি এখানে কেবল এটাই বলতে চাচ্ছি যে, মহাবিশ্বের সৃষ্টি সংক্রান্তে বিজ্ঞানের সাথে কোরআনের সাংঘর্ষিক কিছুই নেই। সাংঘর্ষিক কেবল এক জায়গাতেই, তা হলো, বিজ্ঞান বলছে পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রানুযায়ী সবকিছুই আপনাআপনি সৃষ্টি হতে পারে। কোরআন বলছে, আল্লাহই তা করেছেন। আর এই জায়গাটাতেই আছে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ব্যাপার।
কোরআন বলছে, আল্লাহ বহু পৃথিবীর সৃষ্টিকারী। তিনি জ্বিন জাতি সৃষ্টির কথাও বলেছেন। আর বিজ্ঞান বলছে, আমাদের এই গ্যালাক্সীতেই আছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্র। আর ১০০ বিলিয়নেরও বেশী গ্যালাক্সী আছে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে। আছে কোটি কোটি গ্রহ উপগ্রহ। বিজ্ঞানী ড. ফ্রাঙ্ক ড্রেকের সমীকরনে যদি ক্ষুদ্রতম মানও বসানো হয় তাহলেও আমাদের এই গ্যালাক্সীতেই ১০০০টি গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণধারনকারী গ্রহ থাকার কথা। আমাদের গ্যালাক্সীর ব্যাস ১ লক্ষ আলোকবর্ষ। ড. ড্রেকের হিসাব মতে, প্রতি ১০০ আলোকবর্ষের মধ্যে বুদ্ধিমান প্রাণী আছে এমন গ্রহ থাকবে। আজকের প্রযুক্তি পর্যন্ত এসবের খোঁজ যদিও আমরা পাইনি, তবে কোন এক সময় যে পাওয়া যাবে না তা নয়। বিজ্ঞানের হিসাবে ১৩৭৫ কোটি বৎসর পূর্বে বিগব্যাং-এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে কিছু ছিল না। কোরআন বলছে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগেও আল্লাহ ছিলেন এবং আছেন। আল্লাহর ইচ্ছাতেই শূণ্য থেকে সবকিছুর সৃষ্টি হয়েছে। মহাবিশ্বের সৃষ্টি সংক্রান্তে বর্তমান বিজ্ঞানীরা শূণ্য তথা ভ্যাকুয়াম কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশনের কথা বলায় ইসলাম ধর্মের সৃষ্টি তত্ত্বের সাথে এটা এখন আর সাংঘর্ষিক নেই।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে আল-কোরআন:
কোরআনে এমন কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য নেই যা এই বিংশ শতাব্দীতেও ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। অতীতে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে মানুষ কিছু বিভ্রান্তিতে ছিল, ক্রমে তা সত্যের আলোয় উদ্বাসিত হয়েছে। মহাবিশ্ব সম্প্রসারনশীল-এটা এই সেদিন বিজ্ঞান জানতে পেরেছে। অথচ এটা কোরআনে ১৪৫০ বৎসর পূর্বেই বলা আছে। আসুন মহাবিশ্বের সৃষ্টি সংক্রান্তে কোরআনের কিছু আয়াত দেখি
‘সবগুলো আকাশ এবং পৃথিবীর অস্তিত্বদানকারী তিনি। যখন তিনি কিছুর অস্তিত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তিনি সেটাকে শুধু বলেন, হও, আর তা হয়ে যায়।’ [সুরা বাকারা ১১৭]
আল্লাহ এই মহাবিশ্বের কোন কিছুই ভেলকিবাজি দিয়ে সৃষ্টি করেননি। তিনি ইচ্ছে করলেই তা হয়, সেটা আল্লাহর সৃষ্ট নিয়মে। এখানে সময়ের ব্যাপার যদি বলেন, তাহলে আমরা এই গ্রহবাসীদের হিসাবে সেটা কয়েক হাজার কোটি বৎসর হতে পারে। আমরা সবকিছুকেই সময়ের হিসাবে দেখি।
‘সত্য-প্রত্যাখ্যানকারীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী একসাথে মিশে ছিল। অতঃপর আমি উভয়কে আলাদা করলাম এবং সব প্রাণীকে পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।’ [সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৩০]
‘তিনিই আল্লাহ, যিনি সৃষ্টির পরিকল্পনাকারী, এর বাস্তবায়নকারী-সেই অনুযায়ী রূপদারকারী, সকল উত্তম নাম তারই। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [৫৯: ২৪]
‘তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ও পৃথিবী ছয়টি সময়কালে সৃষ্টি করেছেন।’ [১০: ৩] [অনেকে এটাকে ‘ছয় দিনে’ বলে অনুবাদ করেছেন। আসলে এটা হবে সময়কাল। ডঃ মরিস বুকাইলী এসম্পর্কে তার বইতে বিস্তারিত বলেছেন। বর্তমান বিজ্ঞান ছয়টি সময়কাল বর্ণনা করছে এভাবে-1. Time Zero, 2. Inflation, 3. Annihilation, 4. Proton and Neutron, 5. Atomic Nuclei, 6. Stable atom.
‘তারা কি লক্ষ্য করে না, কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন, অতঃপর তা পূনরায় সৃষ্টি করেন? নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর জন্য সহজ। [২৯:১৯]
‘আমি আকাশ সৃষ্টি করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমিই এর সম্প্রসারনকারী’ [সুরা যারিয়াত ৫১: ৪৭]
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ১২:৩৩
চলেপথিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার লিখেছেন , এটা ঠিক যে সৃষ্টিতত্ত্বের বিষয়ে কুরআনের কিছু আয়াতে বিজ্ঞানেরই প্রতিফলন ঘটেছে । কিন্তু মূল বিতর্ক হছে আল-কুরআন ঈশ্বর বা আল্লাহ্ সরাসরি পাঠিয়েছেন কি না ? না কি তা নবী মুহাম্মদের চিন্তাপ্রসূত বিষয় ।
কারণ প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী পৃথিবিতে যুগে যুগে মেধাবী মানুষদের আগমন ঘটে আর নবী মুহাম্মদ হচ্ছেন ৭ম শতাব্দীর অন্যতম মেধাবী মানুষ । যিনি একি সাথে ধর্ম , সমাজ ও রাজনীতি তিনটি বিষয়ে সফলতা দেখিয়েছেন যা আজ পর্যন্ত কেউ পারেনি ।
যেহেতু মানুষ সামাজিক জীব তাই তাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিভাবান মানুষের প্রয়োজন হয় । স্রস্টা বৈজ্ঞানিক ভাবেই সব কিছুর যোগান দেবেন এটাই স্বাভাবিক । তাই ধর্মের যে বিষয়গুলি কল্পকাহিনী নির্ভর, বিতর্ক কিন্তু সে সব বিষয় নিয়ে । ধর্মের আগমনের মুল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মূলত মানুষের ইহলৌকিক কল্যাণ ।