নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যত অপ্রিয়ই হোক, সত্য বলতে আমি দ্বিধা করি না। আমি সদাই সত্যে অবিচল। অন্যের কাছে থেকে কিছু জানা আমার শখ।
একথা সত্য যে, উনিশ শতকের কিছু উদ্যোমী স্কলার ধর্মীয় কাজের অংশ হিসাবে সওয়াবের নিয়তে পবিত্র কোরআন অনুবাদে হাত দেন। তারা মুলতঃ কোরআনের আক্ষরিক অনুবাদ পেশ করেন। যদিও তাদের খেদমতকে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই, তথাপি এই বৃহৎ কাজে ভাষার পূর্নাঙ্গতা ও অভিব্যক্তি বোঝার অযোগ্যতা তাদের অনুবাদকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। আরবী ভাষার ক্ষেত্রে একই বাক্যের বা শব্দের অনেক প্রতিশব্দ আছে। এটা কেবল আরবী নয়, বাংলা ইংরেজী সবক্ষেত্রেই আছে। একই বাক্য বিপরীত এবং আক্ষরিক অর্থের বিপরীত অর্থও বহন করে। যেমন, কোন চাকর চা বানাতে গিয়ে চা-এর কাপ ভেঙ্গে ফেললো। তখন মালিক তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘খুব ভালো করেছ।’ এখানে মালিক কি আসলে তা বলেছেন? মালিক ‘খুব ভালো করেছ’- দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন তার বিপরীতটাই। সাত সমুদ্র তের নদী বলতে ৭টি সমুদ্র আর ১৩টি নদী বোঝানো হয় না। অনেক বেশী দুরত্ব বুঝাতে এটা ব্যবহার হয়। ভাষার এমন মারপ্যাচ পৃথিবীর সকল ভাষাতেই আছে। সে কারনে ভাষা ভালভাবে না বুঝে বা মুল ভাবার্থ অনুধাবন না করে তার আক্ষরিক অনুবাদ পরবর্তীতে নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে- এটা বলাই বাহুল্য। দুঃখজনক হলেও কোরআন অনুবাদের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। যেমন, আরবী শব্দ ‘আইয়াম’ অর্থ হলো ‘সময়কাল’। কিন্তু বাংলা অনুবাদে বলা হয়েছে ‘দিন’। অনেক অনুবাদকারীই কোরআনের ৭ম সুরার ৫৪ তম আয়াতের অনুবাদ করেছেন, ‘‘আল্লাহই তোমাদের প্রভু, যিনি আকাশসমূহ এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ছয় দিবসে।’’ খৃষ্টানদের ৬ দিবসের ধারনা থেকে এই অনুবাদ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। সাধারন সময়ের হিসাব বোঝাতে আরবীতে যে শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, সেই ‘ইয়াওম’-বহুবচনে ‘আইয়াম’-শব্দটি এখনো বহু অনুবাদক ‘দিন’ অর্থে ব্যবহার করছেন। ‘আইয়াম’ শব্দ দ্বারা দিবস সমূহ নয় বরং এর অর্থ সূদীর্ঘ সময়। সুরা ৩২, আয়াত ৫: ‘-- সময়কালের (ইয়াওম) মধ্যে যার হিসাব তোমাদের গণনায় সহস্র বৎসর।’
তেমনিভাবে আরবীতেই কেবল নয়, রোমান এবং গ্রীকেও ‘বহু সংখ্যক’ বা ‘অগুনিত’ বোঝাতে ‘সাত’ শব্দটি ব্যবহার হয়। আমি সাত আসমান সৃষ্টি করেছি। এর অর্থ কিন্তু ৭ টি আসমান নয়, প্রকৃত অর্থ হলো, বহু আসমান বা পৃথিবী। [সুরা ২, আয়াত ২৯, সুরা ২৩, আয়াত ১৭, সুরা ৬৭, আয়াত ৩, সুরা ৭১, আয়াত ১৫-১৬, সুরা ৭৮, আয়াত ১২-১৩]।
And we have made the earth egg shaped’ [Al-Quran 79: 30]
‘এবং আমি পৃথিবী তৈরী করেছি ডিম্বাকৃতিতে’। এখানে উল্লেখ্য, আরবী শব্দ দাহাহা মানে ডিম্বাকৃতি। সমস্যা হলো, এটা বর্ধিত (সম্প্রসারিত) হওয়াকেও বুঝায়। ‘দাহাহা’ শব্দটা এসেছে ‘দুহিয়া’ থেকে যার অর্থ বিশেষভাবে অষ্ট্রিচ পাখির ডিম যেটা geospherical সাইজের। একই শব্দের একাধিক অর্থ থাকাতে বিস্ময়ের বা অস্বাভাবিকতার কিছু নেই। প্রকৃত ভাষাজ্ঞানীরা কোন ধাঁধায় না পরলেও, অনুবাদকারীরা বিভ্রান্তিতে পড়া অস্বাভাবিক নয়। অন্যদিকে বিজ্ঞানে কোন প্রতিশব্দ নেই।
আর নাস্তিকদের ব্যবসা এখানেই। কেন একই শব্দের একাধিকরূপ। কেন আক্ষরিক অর্থ মানা হবে না, কেন আগে এক ব্যাখ্যা পরে এক ব্যাখ্যা, কেন আগেরটির পরিবর্তন হলো, কেন অনুবাদকে যুগের সাথে মিলিয়ে প্রকাশ করা হলো, কেন বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সাথে কোরআনের আয়াত মিলে গেলো? আক্ষরিক ও বিভ্রান্তিকর অনুবাদ থাকলে সেটাকে আধুনিক মানুষের সামনে মিথ্যা প্রমাণ করা সহজ হয়ে যায়। আর এখানেই তাদের যত গোস্সা।
কোরআনের অনুবাদ করার জন্যে তার শানে নুজুল বা আয়াত নাজিল হওয়ার কারণ জানা একান্ত আবশ্যক। এর দ্বারাই আয়াতের আসল অর্থ স্পষ্ট হয়। শানে নুজুল না জানলে আসল অর্থ বুঝা যায় না। ইংরেজীতে যখন বলা হয়, It is raining cats and dogs এর সঠিক অর্থ হলো মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আক্ষরিক অনুবাদ যদি করা হয়, তাহলে হচ্ছে বিড়ালে কুকুরে বৃষ্টি হচ্ছে। এখানে আসলে বিড়াল কুকুরের কোন সম্পর্কই নেই।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুষ্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরন করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে তৎমধ্যকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেন: আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এসবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহন করে না।’ [আল-কোরআন, ৩ঃ ৭]
কোরআনের এমন কিছু আক্ষরিক অনুবাদ নিয়ে নাস্তিকেরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কোরআনের গ্রহনযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইলেও, তাদের দাবীর অসারতা সম্পর্কে তারা ভাল করেই জানেন।
ভাষা ও শানে নুজুল না জানার কারনে কোরআনের আক্ষরিক অনুবাদ সমুহ দেখে নাস্তিকেরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন এবং বলেন যে, দেখ কোরআন কত অবৈজ্ঞানিক! তারা কোরআনে বিজ্ঞান খুঁজে একে অবৈজ্ঞানিক প্রমাণে শত প্রচেষ্টায় লিপ্ত হলেও, কোন বৈজ্ঞানিক আবিস্কার কেউ কোরআনের সাথে মিলিয়ে দেখলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলেন, আবিস্কারের আগে কেন সেটা কোরআনে থাকেনি? বিজ্ঞান তো কোরআনকে খুঁজে না, কোরআন কোন বিজ্ঞানকে খুঁজে? ভাবখানা এমন যে বিজ্ঞান যেন তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। কোরআনের আক্ষরিক অনুবাদ ও ভুল ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের কারণে শুধু নাস্তিক কেন, মুসলমানদের মধ্যেও নানা মতভেদের সৃষ্টি হয়ে আছে। তবে আল কোরআনের সুরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে মানুষের মতভেদের বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, মতভেদ হলে আল্লাহ ও রাসুলের দিকে ফিরে যেতে।
কোরআনের প্রচলিত অনুবাদগুলো পড়লে মনে হবে না তাতে কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে। মৌমাছি এবং পিপঁড়ার বেলায় আল্লাহ স্ত্রী লিঙ্গ ব্যবহার করেছেন। ১৪৫০ বছর পূর্বে এ পৃথিবীর মানুষ যেভাবে বুঝতো, যেভাবে শুনতো, যেভাবে অনুভব করতো কোরআনে সেভাবে বর্ণিত হয়েছে, যাদের কোন বৈজ্ঞানিক ধারনাই ছিল না। কিন্তু কোরআন বর্ণিত হয়েছে এমনভাবে যাতে সেযুগের লোকজনও বুঝতো এবং বর্তমানে আধুনিক লোকজনও তা রিসার্চ করতে পারছে এবং ভবিষ্যতেও পারবে। কোরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই আকাশগুলো এবং পৃথিবীর সৃষ্টি এবং দিন-রাতের আবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। [৩:১৯০]
২| ১২ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৫৪
মীর মোহাম্মদ উল্লাহ বলেছেন: কোরআনের ব্যখ্যা করার জন্য ভাষা জ্ঞানের পাশাপাশি আমলদারও হতে হয়- তা না হলে মুল সেমান্টিক তারা বুঝতে পারে না।
৩| ১২ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:১৩
আরাফাত নিলয় বলেছেন: আমলধারী হতে হয় কথাটা সত্যি। কিন্তু আন্তরিকভাবে মানব কল্যাণের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কেউ আসতে চাইলে তা মোটেও খারাপ নয়। আমাদের দেশে ধর্ম শিক্ষার মধ্যে ব্যাপক গোলযোগ রয়েছে।
আমি ক্লাস টু থেকে কোরআন শরীফ পড়তে পারি। আমার বাবা-মা বরিশাল চরমোনাইয়ের একজন হুজুর দ্বারা আমাকে কোরআন সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে উচ্চারণ ও টান সহ রিডিং পড়া শিখিয়েছেন। কিছুকাল হলো বুঝতে পারছি, আমি শুধু মন্ত্রের মতো রিডিং ই পড়তে পারি, কিন্তু আল্লাহ কি বলতে চেয়েছেন তা কিছুই বুঝি না।
বাবা-মা যদি রিডিং এর পাশাপাশি ইংরেজি যেভাবে মানুষ অর্থসহ বুঝার চেষ্টা করে, সেভাবে বুঝানোর চেষ্টা করতেন, তবে আজকে আমি বাংলা, ইংলিশের পাশাপাশি আরবিতেও রিডিং, টকিং ও রাইটিং করতে পারতাম।
কিন্তু আমাকে সাহা্য্য নিতে হয় বাংলা অনুবাদের। পুরো সমাজ ব্যবস্থাই কুরআনকে অর্থ না বুঝে রিডিং পড়ানোর মতলব করছে। অন্ধ ভক্তি থেকে বিশ্বাস আসে না, ভয় আসে। সমস্ত বাচ্চাদেরকে আজ শুধুমাত্র পরকালের রক্ষাকবচ পড়ানোর জন্য কুরআন রিডিং পড়ানো শিখানো হচ্ছে। বাবা-মা ও চাইছেন এসব শিখিয়ে নিজেরা জান্নাতে যাওয়ার গতি তরান্বিত করবেন! হাস্যকর ব্যাপার। আমি যদি আমার সৃষ্টিকর্তার কথাই বুঝতে না পারি, বা বোঝার চেষ্টা না করি, তবে আমার সাথে সৃষ্টিকর্তার সম্পর্ক আর মানুষের সাথে একটা ইদুরের যে সম্পর্ক তার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না।
কাজেই সমাজ যখন মন্ত্রের মতো আরবি অর্থসহ না পড়িয়ে শুধু রিডিং পড়া শিখাচ্ছে, তখন নি:সন্দেহে এখানে কয়েকজন দক্ষ স্কলার প্রয়োজন যারা একটা গ্রহণয়োগ্য বাংলা অনুবাদ আমাদের প্রজন্মকে দিতে পারবেন। এখন এগিয়ে আসবেন কে এ সেবায় সেটাই দেখার বিষয়।
৪| ১২ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮
আনোয়ার আলী বলেছেন: ঠিক বলেছেন। কোন কিছু না বুঝলে সেটা মানার প্রশ্ন আসে না। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনা জরুরী। আমাদের মাবাবা করেননি। আমাদেরই সেটা করতে হবে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
৫| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ১০:৫৪
হানিফঢাকা বলেছেন: Translation of Quran is a big problem as you mentioned. I have not found a single honest translation of Quran in Bengali, and in English there are rare. Bengali translations are the worst of kind I have ever read. The main reasons (in my view) of such translation are the heavy influence of translator's belief in .......
1. Sects
2. Traditions
3. Other religious story
However, there are ways to overcome it. Such as....
1. Before reading Quran, don't be occupied with any pre-convinced idea/belief. This is most important.
2. Use more than two translation to understand the verse. And, if the conflict arise regarding the translation you can do two things........
a. Use Arabian-English Lexicon to find out the meaning of the particular word that causes contradiction.. and
b. Cross check with other verse where it uses the same word
c. Cross check the similar incident.
Since the accurate translation is very difficult to get, in some cases non existence, these steps are one of the few possible way to get the message of Quran.
৬| ১৩ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১১:১০
মো কবির বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন ভাই।
৭| ১৩ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১১:১৪
স্বপ্নাতুর পুরব বলেছেন: হ্যা, কেবলমাত্র আমাদের দেশের অনুবাদিত কোরআনের ভিন্নতা দেখে সবাই বিভ্রান্তিতে পড়ছে । মজার বিষয় হলো, এই বিভ্রান্তিগুলো দলীয়/মাজহাব/মতাদর্শের সাথে সম্পর্কযুক্ত । যে যার মতো করে ব্যবহার করছে । কোরআনের আক্ষরিক বিকৃতি হয় নি ঠিকই, কিন্তু অনুবাদে যথেষ্ট ভুল আছে । আমার তো মনে হয় খোদ সৌদি আরবেও কোরআন বুঝাতে বিকৃতির আশ্রয় নিয়েছে । না হলে তারা কী করে আজও দাসপ্রথাকে বৈধ মনে করছে ! সমাধানটাই এখন মুখ্য । কে নিবে এই উদ্যোগ? কাউকে না কাউকে উদ্যোগটা তো নিতেই হবে ।
৮| ২৫ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:০২
মীর মোহাম্মদ উল্লাহ বলেছেন: @আরাফাত নিলয়।
আপনার সাথে আমি একমত। ছোটবেলা থেকে আমরা যদি ইংরেজী/অন্কের মত ইসলাম/কোরআন পড়াকে গুরুত্ব দিতাম তাহলে আমাদের অবস্থা অন্তত এইরকম হতনা।
৯| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৯
নুর আমিন সুজা বলেছেন: আপনার পোস্ট দেখে বুঝলাম।
"আরবী লিখিত ভাষা এমন যা অন্য ভাষায় লিখে বা বলে প্রকাশ করা যায়না।"
আপনার পোষ্ট এ
‘খুব ভালো করেছ।’
দিয়ে ভালো করনি বুঝাবে না।
"খুব ভালো করেছ!"
দিয়ে ভালো করেনি বুঝাবে।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৪৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি অনুবাদ করুন, সমস্যার শেষ।