নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যত অপ্রিয়ই হোক, সত্য বলতে আমি দ্বিধা করি না। আমি সদাই সত্যে অবিচল। অন্যের কাছে থেকে কিছু জানা আমার শখ।
কোরআনের আয়াতের কোন শানে নুজুল ব্যতীত আয়াতের একাংশের বাংলা অনুবাদ নিয়ে নাস্তিকেরা ব্লগে ঝড় তুলছেন। আর নাস্তিকদের কথাই বলি কেন, আমাদের দেশের কাঠমোল্লারাও এ নিয়ে নানা বিদ্বেষ ও হিংসা ছড়াচ্ছেন, যা ইসলামের মুলে কুঠারাঘাত করছে। আসুন সুরা আল-মায়েদার ৫১ নং আয়াতের বাংলা অনুবাদটি দেখি-
হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদের বন্ধু এবং অভিভাবক রূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু এবং অভিভাবক। এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ তাদের [বন্ধু এবং অভিবাবকরূপে] গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না। (কোরআন ৫:৫১)
কোরআনের বাংলা অনুবাদে অনুবাদকগণ 'বন্ধু' ও 'অভিভাবক' শব্দ দুটি ব্যবহার করলেও মূল আরবীতে এই শব্দ দুটির প্রতিশব্দ রূপে দেয়া আছে 'আউলিয়া’ [অলি শব্দের বহুবচন]। বন্ধু আরবীতে সাদিক। কিন্তু আল্লাহপাক সাদিক ব্যবহার না করে আউলিয়া ব্যবহার করেছেন। আউলিয়া মানে অভিভাবক, তত্ত্বাবধায়ক, নিরাপত্তাদানকারী।
কোরআনের কোন আয়াতের কেবল বাংলা অনুবাদ পড়লে হয় না, মুল আরবীর সাথে মিলিয়ে দেখতে হয়। আয়াতের শানে নুজুল তথা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও জানতে হয়। এ সংক্রান্তে ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। আসুন এবার দেখি এ আয়াতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষপট তথা কখন, কোথায় কি প্রেক্ষাপটে এ আয়াত নাজিল হয়েছিল। মুশরিকদের ক্রমাগত অত্যাচারে মুসলমানদের মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছিল। মদিনা নগরীর অন্যান্য জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সাথে একটা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তির শর্ত ছিল, এই নগরীর কোন গোত্র বা ধর্মীয়গোষ্টী বহিরাগত দ্বারা আক্রান্ত হলে সকলে মিলে তা প্রতিহত করবে। একে অপরের সহিত যুদ্ধ করতে পারবে না এবং কেউ চুক্তি ভঙ্গ করতে পারবে না। কিন্তু ইহুদীদের মধ্যে বানু কাইনুকাইরা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে মুসলমানদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়।
ইসলাম-পূর্ব সময় থেকে মদিনার অনেক মুশরিক গোত্রের সাথে এই ইহুদী বানু কাইনুকাদের মৈত্রীতা ছিল। তাদের মিত্রতার শর্ত ছিল- কাইনুকাইরা আক্রান্ত হলে তাদের মিত্ররাও এগিয়ে যাবে। কিন্তু মদীনার মুশরিকরা ইসলাম গ্রহণের ফলে বানু কাইনুকাদের সমর্থনে তারা এগিয়ে যায়নি। নও-মুসলিমরা ইসলামী মিল্লাতের অংশ হয়ে যায়। এ অবস্থায় নও-মুসলিমদের করনীয় সম্পর্কে আল্লাহপাক এ আয়াত নাজেল করেন। এখানে কোন ব্যক্তিগত মিত্রতার কথা বলা হয়নি। বরং ঐসব চুক্তিভঙ্গকারী ইহুদী-খৃষ্টানদের নিরাপত্তা প্রদানকারী (Protectors) রূপে গ্রহণ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
সুরা মায়েদার ৫৭ নং আয়াতেও বলা হয়েছে, দ্বীনকে যারা খেল তামাশার বস্তুতে পরিণত করেছে, তাদেরকে বন্ধু বানিও না।
আল-কোরআনের সূরা মুমতাহিনার ১৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
হে বিশ্বাসীগণ! যে সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহ্ রুষ্ট হয়েছেন, ‘তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। ইতিমধ্যে তারা পরলোক সম্বন্ধে নিরাশ হয়েছে, যেমন নিরাশ হয়েছে অবিশ্বাসীরা তাদের কবরের সাথীদের বিষয়ে।’ (কোরআন ৬০:১৩)
খেয়াল করুন, এখানেও বেঈমান সম্প্রদায়ের সাথে মিত্রতা করতে নিষেধ করেছেন। কোন ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির মিত্রতা নয়। তা-ও ইহুদী খৃষ্টান বলতে সাধারন ইহুদী-খৃষ্টানদের বুঝানো হচ্ছে না। যারা চুক্তিভঙ্গকারী, ইসলামের অনিষ্টকারী, মুসলমানদের ধন-সম্পদ লুন্ঠনকারী এবং ষড়যন্ত্রকারী কেবল তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে। ইসলাম অপর ধর্মাবলম্বীদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করতে হবে তার নির্দেশনা দিয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রে ধর্মের কারনে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না।
কেবল যারা চুক্তিভঙ্গকারী, বিশ্বাসভঙ্গকারী, ষড়যন্ত্রকারী তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না। এরূপ লোক যদি ব্যক্তি পর্যায়ে নিজের ভাইও হয়, তাহলেও সে পরিত্যাজ্য। তার সাথে আত্মিক বন্ধুত্ব হতে পারে না।
কোরআনে বলা হয়েছে,
‘আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম।’ (৬০:৯)
একই সূরার ৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,
‘ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।’ (৬০:৮)
কাজেই কাদের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে আর কাদের সাথে রাখা যাবে না-এ বিষয়ে কোরআন সুষ্পষ্ট করেছে। সাধারন ইহুদী-খৃষ্টান বা অন্য ধর্মাবলম্বীরা এর আওতার মধ্যে পড়েন না। অথচ আমাদের দেশের নাস্তিকেরা এসব বাংলা অনুবাদ তুলে এনে ব্লগে ফেসবুকে সাধারন মানুষের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভাবখানা এমন, কোরআন তো ইহুদী-খৃষ্টান বিরোধী। মুসলমানেরা অসভ্য জাতি। দুঃখজনক হলো, একই সাথে স্বল্প শিক্ষিত মোল্লারা এসব আয়াতের শানে নুজুল না জেনেই অমুসলিমদের বিরুদ্ধে নানা বিষোদগার করছেন, যা মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে কেবল ভুল সংকেতই দিচ্ছে না, ইসলামের মুলেও কুঠারাঘাত করছে। অথচ ইহুদী নাসারাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার না করলে যেন তাদের বক্তৃতাই জমে না।
আল-কোরআনের সুরা মুহাম্মদ-এর ৪নং আয়াতে যুদ্ধের ময়দানে কাফেরদের সাথে কিভাবে যুদ্ধ করতে হবে তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ‘কাফেরদের গর্দানে আঘাত কর’-এ আয়াতের একটা অংশ মাত্র। পুরো আয়াতটা না দিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে নাস্তিকেরা কেবল একাংশ প্রচার করছে এ কারনে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে ইসলাম কাফেরদের গর্দানে আঘাত করতে বলে। ইসলাম বর্বর। এটা একটা অবুঝ শিশুও বুঝে যে, কাফেরদের গর্দানে আঘাত করতেই যদি কোরআন বলতো, তাহলে কোন ইসলামী রাষ্ট্রে কোন কাফের কি বাস করতে পারতো? অথচ ইসলাম সম্পূর্ণ বিপরীত কথাই বলে।
কোন অমুসলিম মারা গেলে কেউ কেউ তার জন্যে বদদোয়া করেন। এটা ইসলামী শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। মুসলমান মরলে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহির রাজিউন’ (আমরা আল্লাহর কাছ থেকেই আসি এবং তার কাছেই ফিরে যাই) পড়ার একটা রেওয়াজ প্রচলিত আছে। এটা কেবল কারো মৃত্যুতে নয়, সকল বিপদ আপদে পড়ার জন্যে আল্লাহ বলেছেন। এটা কোরআনের আয়াত। যত পড়া যায় ততই মঙ্গল। মুসলমানেরা কোন বিপদ ঘটলেই এ আয়াত পড়েন। এর সাথে মুসলিম অমুসলিমের মৃত্যুর কোন সম্পর্ক নেই। অমুসলিম মারা গেলে বদদোয়া করার কথা কোরআন হাদিসের কোথায় আছে?
২| ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৪০
কুয়েটিয়ান পাভেল বলেছেন: কাকে হত্যা করতে হবে সেটা রাষ্ট্র ঠিক করবে। আপনাকে কে হত্যার দায়িত্ব দিল !! আর কাউকে মুসলিম ঘরে জন্ম না দিলেও, ভালো-মন্দ বোঝার মত জ্ঞান বুদ্ধি ত দিছেন। জ্ঞান-বুদ্ধি খাটান আর অবিশ্বাসীদের ইসলামের মনগড়া ব্যাখ্যা আর বানানো আরব্যরজনীর ইসলামীক গল্প আর আরজ আলী টাইপ সেকেলে যুক্তিই শুধু না পড়ে নিজে কিছু ইসলামিক বই কিনে পড়েন। যুক্তি পছন্দ করলে নিজে নিজে পড়ে যুক্তি বের করেন, উত্তর কোন ইসলামিক স্কলারের কাছে জানতে চান, আর সবশেষে কোন যুক্তি পছন্দ না হলে নিজের যা বিশ্বাস করতে পছন্দ হবে সেটা বিশ্বাস করবেন।
ডিজ৪০৩
৩| ২৩ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১০:৩২
জেকলেট বলেছেন: ভাই লেখা্য একটা বড় ভুল আছে "ইহুদী ও খৃষ্টানদের ক্রমাগত অত্যাচারে মুসলমানদের মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছিল।" আসলে হবে মুশরীকদের ক্রমাগত অত্যাচারে মুসলমানদের মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছিল। আশা করি সংশোধন করবেন।
৪| ২৩ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:১৪
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: কোরানের অপব্যাখ্যা কি শুধু নাস্তিকরাই দিচ্ছে নাকি তথা কথিত একশ্রেনীর ধার্মিক ব্যক্তিরাও দিচ্ছে? মতের অমিল হলেই নাস্তিক ট্যাগ দিচ্ছে? কাফের বলছে? ইচ্ছে মতন হারাম, হালালের ফতোয়া দিচ্ছে কারা??
আপনার কাছে প্রশ্ন, আমাদের মুসলিমরা কেন পড়াশোনা ও জ্ঞানচর্চায় বর্তমানে পিছিয়ে আছে? এর কারন কি??
৫| ২৩ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩৩
বুকা ছেলে বলেছেন: আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান এনেছে এমন কোনো সম্প্রদায়কে তুমি কখনো পাবে না যে, তারা এমন লোকদের ভালবাসে যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধাচরন করে, যদি সে লোকেরা তাদের পিতা, ছেলে, ভাই, আত্মীয় কিংবা নিজেদের জাতি গোত্রের লোকও হয়; এ ব্যাক্তিরাই হচ্ছে সেসব লোক যাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান একে দিয়েছেন এবং তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছেন; কেয়ামতের দিন তিনি তাদের এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে ঝর্নাধারা প্রবাহিত হবে, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে; আল্লাহ তাদের ওপর খুশী হবেন এবং তারাও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট হবে; এরাই হচ্ছে আল্লাহর বাহিনী, আর আল্লাহর বাহিনীই সফল হয়। (সূরা আল মোজাদালাহঃ ২২)
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:০৯
ডিজ৪০৩ বলেছেন: আমি সেই মোল্লাদের কাছে জানতে চাই , আল্লাহ্ যদি চাইতেন ত সবাইকে মুসলিম হিসাবে জন্ম দিতেন কেনও অন্য ধর্মে জন্ম দিলেন এবং আমাদের উপর কেনও হত্যার দায়িত্ব দিল ?