নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন যখন শুকায়ে আসে করুণা ধারায় এসো...................

আরাফাত নিলয়

(I am sympathetic and sensitive to the conventional systems)আমি প্রথাগত ব্যবস্থার প্রতি সহানুভূতিশীল ও সংবেদনশীল

আরাফাত নিলয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

লা মিজারেবল বই এবং সিনেমার মিশ্রণে ভালোই অনুভূতি পেলাম

২৬ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭

Les Misérables (লা মিজারেবল

ভিক্টর হুগো রচিত লা মিজারেবল বা লেস মিজারেবল নামের বইটি আমার পড়া হয় প্রায় দুই বছর আগে। সার্থক ট্রাজিক উপন্যাস বলা যেতে পারে ভিক্টর হুগোর লিখা এই কালোত্তির্ণ বইটিকে। কাহিনী শুরু হয় প্রচন্ড অভাবী দরিদ্র পরিবারের সন্তান জাঁ ভালজা নামের বালককে নিয়ে।
আঠার শতকের দক্ষিণ ফ্রান্সের ব্রাই প্রদেশের এক ছোট্ট কুঠির থেকে ভালজার কাহিনী শুরু। বাবা মার মৃত্যুর পর সে তার বড় বোনের আশ্রয়ে থাকে ও কাজ করে খায়। কিছুদিন পর ভগ্নিপতির মৃত্যু হলে ভালজা তার বোন ও বোনের সন্তানদের নিয়ে মহা বিপদে পড়ে। পঁচিশ বছর বয়সী তখন ভালজা। যৌবনের সব সাধ-আহ্বলাদ উপেক্ষা করে কঠোর পরিশ্রম করেও বোন ও তার সাত সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য যোগার করতে পারে না ভালজা।
ফ্রান্সে তখন খাদ্যের তীব্র অভাব। চারিদিকে দরিদ্র মানুষদের নাভিশ্বাস আর হতচকিত অবস্থা। একদিন ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে এক দোকান থেকে এক টুকরো রুটি চুরি করতে গিয়ে ধরা খায় ভালজা। লোকজন প্রচন্ড মার দেয় তাকে ধরে। ভালজা বারবার বলে যে, একমাত্র বোন ও তার ছোট ছোট সাতটি ছেলে না খেয়ে তার পথ চেয়ে বসে আছে। কিন্তু লোকজনের কোনো করুণা হয় না তাতে।
ফ্রান্সে সে সময় আইন বড় কড়া। ভালজার পাঁচ বছরের জেল হয়ে যায় ক্ষুধার জ্বালায় রুটি চুরির অপরাধে! চার বছর পর অতিষ্ঠ হয়ে ভালজা জেল পালাতে নেয়। তারপর আবার ধরা খায় ও সাজা বাড়িয়ে আট বছর করা হয়। এভাবে বিভিন্ন শাস্তি স্বরূপ ভালজার মোট উনিশ বছরের জেল হয়ে যায়! জেল থেকে যখন সে বের হয়, তখন সে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ। কয়েদী নাম্বার ২৪৬০১, জাঁ ভালজা নামে তার পরিচিতি তখন।
সমাজের কোথাও তার ঠাই হয় না। দাগী আসামী ভালজার নাম শুনলে কেউ আশ্রয় দেয় না, খাদ্য দেয় না, এমনকি কাজ করার সুযোগও দেয় না। ভালজা অসহায়ের মতো ঘুরতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে যখন তার মনে হয় সে সত্যিকার অর্থেই একজন জঘন্য পাপী, তখুনি সে একজন পাদ্রীর সহানুভূতি পায়। এ ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
ভালজা নতুন জীবন শুরু করে। বিস্ময়করভাবে সে একদিন শহরের মেয়র হয়। অর্থ-সম্পদ আর ভাগ্যের চাকার ঘর্ঘর ছুটে চলা ভালজাকে নিয়ে ছুটতে থাকে এমন এক অজানার উদ্দেশ্যে যা ভালজার জীবনকে বারবার পোড় খাইয়ে খাইয়ে অবশেষে চিরশান্তির দেশে ফিরিয়ে আনে। ভালজার অসম্ভব আত্মত্যাগ, সবকিছু হারিয়ে যখন কসেত্তকে সে নিজের আপন মেয়ে ভেবে তাকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিতে চায়, তখনও তার শেষ সম্পদে ভাগ বসাবার জন্য হাজির হয় কসেত্তের প্রেমিক। ভালজার দীর্ঘশ্বাস ভারী হয়ে আসে। এই দিনের ভয় সে সবসময়ই পেতো। তবুও সে নিজের আশ্রিতা মেয়েটির সুখের দিকে তাকিয়ে জীবন বাজী রেখেই তাকে সুখের সন্ধান দিয়ে যায়।
উপন্যাসের সমাপ্তি বিয়োগান্তক হলেও তা মূল চরিত্রের কষ্টের স্বীকৃতি দেয় বলে দীর্ঘশ্বাসের সাথে সাথে অস্পষ্ট এক তৃপ্তিও দিয়ে যায়।
ভিক্টর হুগো-এর এই বইটিকে সিনেমায় রূপদান করেছেন প্রখ্যাত ডিরেক্টর টম হুপার। আর মূল চরিত্র জাঁ ভালজার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন আমার প্রিয় নায়ক হিউগ জ্যাকম্যান। সিনেমাটির চিত্রায়ন আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে কারণ, সিনেমার ডায়লগগুলো গতবাঁধা উপন্যাস বা ট্রাজেডির ডায়লগের মতো না। প্রতিটি ডায়লগই গানে গানে। এমনকি চরিত্রগুলো যখন মৃত্যু বরণ করছে, মারামারি করছে, অনুশোচনা করছে বা হত্যা জজ্ঞে মেতে উঠছে- তখনও গানে গানে তাদের অনুভূতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এবং তা অত্যন্ত সার্থকভাবে। আমাদের উপমহাদেশেও এরকম না হলেও অনেকখানি এরকম স্টাইলে বাংলা সিনেমা তৈরি করেছিলেন সত্যজিৎ রায় তাঁর “হীরক রাজার দেশে” সিনেমাটি।
তবে লা মিজারেবল সিনেমাটি দেখার আগে বইটি পড়ে নিলে অনেক ভালো হয়। বইয়ে জাঁ ভালজার জীবনের প্রাথমিক অংশ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু সিনেমা শুরু হয়েছে ঠিক কারাগার জীবনের শেষভাগ থেকেই।
বইটির ডাউনলোড লিঙ্কঃ
http://www.amarboi.com/…/les-miserables-victor-hugo-bangla-…


মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার রিভিউটি খারাপ লাগে নাই, মুভিটি বেশ চমৎকারই লেগেছে। আপনার কথা শুনে আবারও মনে পড়ল যে হিরক রাজার দেশে মুভিটাও এমন গানে গানে নির্মিত। বইটা পড়ে নিলে বেশি ভালো লাগবে।

এবার একটি ভিন্ন বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করছি, অনুগ্রহ করে ডাউনলোড লিংকটি সরিয়ে নিন, আমরা বর্তমানে পাইরেটেড কোন সাইটের লিংক সংযুক্ত করাকে অনুমোদন করছি না।

২৭ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৭

আরাফাত নিলয় বলেছেন: ধন্যবাদ, দুঃখিত আমি অনেক দেরী করে ফেললাম। আসলে আমার ইন্টারনেট সংযোগ নেই। ইউনিভার্সিটি থেকে ব্লগিং করি। চলে যাওয়ার ফলে এই মন্তব্য অনেক দেরীতে দেখলাম। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আমার উত্তর নজরে পড়লে।
আবারো ধন্যবাদ, কাল্পনিক_ভালোবাসা।

২| ২৬ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৫

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: সুন্দর রিভিউ।

২৭ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৭

আরাফাত নিলয় বলেছেন: মায়াবী রূপকথা কে সাদরে ধন্যবাদ জ্ঞাপন।

৩| ২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:২০

নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নহে বলেছেন: মুভিটি দেখেছি। অনেক সু্ন্দর। পোস্টে ভালো লাগা।

২৭ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৫

আরাফাত নিলয় বলেছেন: হুম, চমৎকার মুভি। ধন্যবাদ উৎসাহ দেয়ার জন্য।

৪| ২৭ শে মে, ২০১৫ রাত ২:০২

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: বইটা পড়েছি, অসাধারন।

২৭ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:১০

আরাফাত নিলয় বলেছেন: ঠিকই বলেছেন আপু, বইটা আসলেই অনেক ভালো লেগেছিলো।

৫| ২৭ শে মে, ২০১৫ রাত ২:৩৮

কালনী নদী বলেছেন: আমার পড়া সেরা একটি বই ।

২৭ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:১২

আরাফাত নিলয় বলেছেন: হুম, ঠিক বলেছেন।

৬| ২৭ শে মে, ২০১৫ রাত ২:৪৮

কালনী নদী বলেছেন: রিভিউটি অনেক সংক্ষেপিত । লেস মিসারেবল বইটা অনেক বড় ও রসে পরিপূর্ন । নেপোলিয়নের পুরো ইতিহাস উপন্যাসটিতে ইতিবৃত্ত করা হয়েছে পাশাপাশি অনেক চরিত্রের আভির্বাভ হয় কেউ বিপ্লব কেউ শহীদ মোট কথায় মানব জীবনের দু:খ দুর্দশার চিত্র সাথে পারিবারিক ও ভালোবাসার আবেগিয় যে ব্যাপারগুলা নিপুনভাবে লেখক ভিক্টর হুগোর সার্থক উপন্যাসিক মনোভাবের পরিচয় দেয় । এই বইয়ের সাথে আমার পড়া আরেকটি বইয়ের কথা মনে পড়ছে যদিও অনেক আগে প্রায় ক্লাস সিক্সে থাকতে বইটি পড়ি নাম দা গ্রেপস অফ দ্য রথ - জন স্টেইন বেক ।

২৭ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৫

আরাফাত নিলয় বলেছেন: সত্যি বলতে কালনী নদী ভাই, আমার আরো লিখার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু পারিবারিক টান-উপেক্ষা, বাস্তবতার টানা-পোড়েন, মানুষের সঙ্কীর্ণতা ও আলোকে অন্ধকার বলে ভুল করা সহ আরো যেসব খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো ছিলো সেগুলো পাঠকই পড়ে দেখুক এই আশা করে লেখেছি। আমি চেষ্টা করি সূচনাটুকু বলে পাঠকদের আগ্রহ তৈরি করে দেয়ার, যাতে তারা নিজেরাই পড়ে ব্যাপারগুলো অনুভব করেন।
তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, রিভিউ লিখতে হলে খুঁটিনাটি ভালো করে লিখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতের জন্য আপনার পরামর্শকে সাথী করলাম। ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.