নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এ বিশ্বে ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই

অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী

যখন মনে আসে ছন্দ তখন লিখি বসে পদ্য

অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পছন্দের ম্যাসাঞ্জোর

২৬ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:১০





জীবনে একবারই গেছিলাম ম্যাসাঞ্জোরে। ঐ একবার গিয়েই তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তবে আশা আছে আবার একবার যাবো। ম্যাসাঞ্জোরের পাহাড় ম্যাসাঞ্জোরের ড্যাম আর ময়ূরাক্ষী নদী ----- আহা, এক কথায় অসাধারণ!

যারা খুব প্রকৃতি ভালোবাসেন তাদের কাছে ম্যাসাঞ্জোর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ স্থান। এখানকার প্রকৃতি এত সুন্দর যে এখানে না এলে বোঝা যাবে না। ম্যাসাঞ্জোর ড্যামটা ঠিক যে জায়গায় অবস্থিত তার চারিদিকেই পাহাড়। এই ড্যামটি ময়ূরাক্ষী নদীর উপর অবস্থিত। ময়ূরাক্ষী নদীর উপর ড্যাম তেরি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

ম্যাসাঞ্জোরের প্রধান আকর্ষণ হল এই ড্যামটি। এই ড্যামটি ভারত সরকার ও কানাডা সরকারের মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি করা হয়েছে তাই এই ড্যামটিকে অনেকে 'কানাডা ড্যাম'ও বলে থাকেন।

ম্যাসাঞ্জোর জায়গাটি ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত। যারা নির্জনতা পছন্দ করেন যারা নিরালায় থাকতে ভালোবাসেন তাদের কাছে এমন জায়গা আদর্শ। তবে এখানে এসে একদিন কী দুদিন থাকতে হবে না হলে জায়গাটির সৌন্দর্যতা ভালোভাবে উপভোগ করা যাবে না। মানে শুধু ঐ গিয়ে একটু ঘুরে চলে এলাম ওতে অতটা ভালো নাও লাগতে পারে। তাই সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে দেখলে দেখার ইচ্ছা আরও বাড়বে ভালোও লাগবে কারণ এখানকার প্রকৃতি সবসময় নানা ভূষণে সেজে আছে। অনুপম তার সৌন্দর্য।

ম্যাসাঞ্জোরের পাহাড়গুলি ছোটনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত। ড্যামের উপরে উঠলে চারপাশের সিনারি অপরূপ সুন্দর দেখতে লাগে। ড্যামের এ মাথা থেকে ও মাথা মানে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত অব্দি হেঁটে যাবার রাস্তা আছে। আবার সেই রাস্তায় মোটোর-সাইকেল, বাই-সাইকেলও চলে। বিশেষত বিকাল বেলায় এই ড্যামের উপর এলে আরও সুন্দর দেখতে লাগে। কারণ তখন সূর্য অস্ত যাওয়ার পথে রওনা দেয় আর সূর্যের আলো ময়ূরাক্ষী নদীর জলে পড়ে ফলে জল চিকচিক করে ওঠে। সেটা দেখার মতো। তবে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ড্যাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নিয়ম আছে কারণ, চারপাশের পাহাড় এতটাই নির্জন যে নানান হিংস্র বন্য পশু রাতের আঁধারে নাকি চলাফেরা শুরু করে। তাই এই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

ড্যামেতে ছবি তুলে দেওয়ার জন্য স্থানীয় কিছু ছেলে ক্যামেরা নিয়ে ঘোরে। ওদের কাছে ছবি তুলে নেওয়া যায়। এতে ওদের দুটো পয়সাও হয়। ড্যামের উপর থেকে দেখলে একদিকে দেখা যাবে নদীর জল কেমন ধরে রাখা হয়েছে আর তার বিপরীত দিকে জল কেমন ছাড়া হচ্ছে জোরে শব্দ করে।
যেখানে জল ধরে রাখা হয়েছে সে জায়গা যে কত গভীর তা আমার ধারণায় নেই। হয়ত দশ মানুষ সমান উঁচু হতে পারে। আর যেখান থেকে জল ছাড়া হচ্ছে সেখানে জল কেমন সাদা। আসলে এত জোরে টারবাইন ঘুরিয়ে জল ছাড়া হয় যে সফেদ ফেনার মতো জলের রঙ দেখায়। তারপর সেই জলই আবার বেরিয়ে যাচ্ছে নদী হয়ে। মানে নদীর বুকে এই ড্যামটি গড়ে তুলে একদিকে জল জমিয়ে অপর দিক থেকে জোরে জোরে টারবাইন ঘুরিয়ে জল ছাড়া হচ্ছে। তার ফলেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে।

ড্যামের উপর থেকে দেখলে চারপাশের দৃশ্য অতি রমণীয় লাগে। ঠিক যেন মনে হবে এমন জায়গা ভারতে নেই হয়ত বাইরের কোনো দেশে আছে। এখানকার পাহাড়গুলো কী সুন্দর। একটা পাহাড়ের গায়ে আরেকটা পাহাড় যে কেমন ভাবে লেগে থাকে তা এখানে এলে ভালোভাবে দেখা যায়।

ড্যামের পাদদেশের দিকে যাবারও রাস্তা আছে। তবে সেটা একটু ঘুরে যেতে হয়ে। ড্যামের শুরুর মাথা থেকে হেঁটে হেঁটে শেষ অব্দি গিয়ে রাস্তা দুইভাগ হয়ে গেছে। তবে দুটোই স্থানীয় গ্ৰামগুলির দিকে চলে গেছে। তার মধ্যে বাম দিকের রাস্তাটা দিয়ে একটু যেতে হবে। এই রাস্তার মাঝখান থেকে একটা পাথুরে পথ জঙ্গলের মধ্যে থেকে নিচে নেমে গেছে। এই পথ দিয়ে গেলেই নির্ধারিত জায়গায় যাওয়া যাবে। স্থানীয় মানুষদের জিজ্ঞাসা করলে ঠিক কোন জায়গাটা থেকে নামতে হবে জানালে তারা বলে দেবে। তবে খুব সাবধানে নামা উচিত কারণ,পাথুরে পথ তো তাই একটু অসাবধানতা হলে পা পিছলে পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

ড্যামের পাদদেশের কাছে এলে দেখা যাবে ছোটো বড়ো নানান আকারের পাথরের চাঁই এদিক ওদিকে ভর্তি। আর তার মাঝখান দিয়ে ময়ূরাক্ষী নদী বয়ে চলেছে। মানে ঐ ড্যাম থেকে ছাড়া ময়ূরাক্ষী নদীর জলই বয়ে চলেছে। সেই পাথরের উপর বসে নয়ত দাঁড়িয়ে ছবি তোলা ভালোভাবে যায়। বহু মানুষ এখানে এসে ছবি তোলে।এখানে এলে দেখা যায় ড্যামটি কতটা উঁচু। দেখে লাগে তাও চার-পাঁচ তলা বাড়ির সামান উঁচু হয়তো তার থেকেও উঁচু হতে পারে। তারমানে কত উঁচু দিয়ে হেঁটে হেঁটে তবে এইখানে আসা হয়েছে। এখানে জলে হাত দিলে জল ঠান্ডা লাগবে। আসলে পাহাড়ী নদী তো। জল ঠান্ডা হবেই।

তারপর যে পথে অসা হয়েছিল ঠিক সে পথ ধরেই উঠে যেতে হবে। এখানে একটা কথা বলে রাখি পাহাড়ী পথে ওঠার সময় খুব ধীরে ধীরে উঠতে হয় কারণ তাড়াতাড়ি উঠলে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু নামাটা অনেকটা সহজ লাগে। কারণ ঢাল ধরে ধরে তো নিচে নেমে যাওয়া। তাই নামাটা সোজা লাগে। কিন্তু নামার সময়ও সবসময় পায়ের দিকে তাকানো উচিত। নাহলে কোন পাথরে পা কখন পড়ছে সেটা বোঝা যাবে না। অসুবিধা একটাই নিচের দিকে না তাকালে সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবার খুব সম্ভাবনা থাকে।

উপরের সেই রাস্তায় উঠে আবার ড্যামের উপর দিয়ে গিয়ে ঠিক যেখান থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল ঠিক সেখানে পৌঁছে যেতে হবে।

আমি বলেছিলাম এই ড্যামেতে বিকাল বেলায় আসতে ভালো লাগে। তবে সকালেও আসা যায়। কিন্তু যদি প্রখর রোদ থাকে তাহলে বেশিক্ষণ রোদে থাকলে মাথা যন্ত্রনা করতে পারে। আর না হলে মেঘলা দিন হলে তো কথাই নেই। তখন দেখা যাবে কাছের দূরের পাহাড়ের গায়ে মাথায় কেমন মেঘ জমে রয়েছে।

এমন ড্যাম থেকে তো চলে যাবার কোনো ইচ্ছাই হয় না। কারণ এত সুন্দর চারপাশের পাহাড় নিচে নদী ---- এমন জায়গা ছাড়তে কি মন চায়? যেদিকে তাকানো যাবে সেদিকেই দেখা যাবে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। উফ, যারা পাহাড় প্রেমী যারা কবিতা লিখতে ভালোবাসেন তারা এমন জায়গা পেলে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই (সঙ্গে একটা খাতা আর কলম আনলে) কত কবিতা লিখে দেবেন তার হিসাব নেই।

কিন্তু চলে তো যেতেই হবে। তাই সন্ধ্যার একটু আগেই ড্যাম ছাড়লাম।

----- অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.