নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শখের গল্প লেখক

মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ

শখের বশে গল্প লিখি

মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিজ্ঞান কল্পকাহিনীঃ আমি এবং ও

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:২১


ছবিঃ AI Generated

দুপুর থেকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে তারপরেও থামার লক্ষণ নেই। বাসায় এই মুহূর্তে আমি একা। আম্মু আব্বু নানু বাড়ি গিয়েছে সকালে। সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসার কথা কিন্তু এই বৃষ্টির কারণে তারাও আঁটকে গেছে। ফোন করে বলে দিয়েছে আজকে রাতটা থেকে কাল সকালে চলে আসবে। আমার বাসায় একা থাকার অভ্যাস আছে। নিজেদের বাসা। কোনো ভাড়াটিয়াও নেই। এর আগেও প্রয়োজনে একা থেকেছি পুরো বাসায়। তাই এইটা নতুন কিছু না। সকালে বুয়া এসে দুপুর আর রাতের খাবার রান্না করে রেখে গেছে। তাই খাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই। তাছাড়া এই ঝুম বৃষ্টিতে বেশ ভালও লাগছে। আজ শুক্রবার বলে এমনিতেই রাস্তা ঘাট ফাঁকা। সারাদিন একটানা বৃষ্টিতে আরো বেশি শুনশান হয়ে গেছে। বৃষ্টির একটানা ঝমঝম শব্দ ছাড়া আর কিছুই নেই।

বিপত্তিটা বাঁধল বিকট শব্দে বাঁজ পড়ে ইলেক্ট্রিসিটি টা চলে যাওয়ায়। চার্জার লাইটটা জ্বালিয়ে রাখলাম। পুরো বাড়িতে শুধু এই চার্জার লাইটটাই একমাত্র আলো এখন। এতক্ষণ যদিও সব ঠিকঠাক ছিল কিন্তু এখন ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়ায় ব্যাপারটা ভূতুড়ে হয়ে গেল। আমার যদিও ঐসব ভূত টূতের ভয় নেই। বিশ্বাসও করিনা। আজ পর্যন্ত চোখে যা দেখিনি তা বিশ্বাস করিনা। তারপরেও এমন আবহাওয়ায় অন্ধকারে একা গা একটু একটু ছমছম করতে থাকল। মনটাকে ডাইভার্ট করার জন্যে গেম খেলতে লাগলাম মোবাইলে। ইলেক্ট্রিসিটি অনেকক্ষণ পরেও যখন এলো না আর বৃষ্টিও থামার কোনো লক্ষণ পেলাম না, তখন বুঝে গেলাম বজ্রপাতে কিছু একটা গেছে। আজ রাতে আর ইলেক্ট্রিসিটি আসবে না। মোবাইলের চার্জ নষ্ট করা ঠিক হবেনা ভেবে গেম খেলা বন্ধ করে দিলাম। যদিও এতক্ষণে বেশ খানিকটা চার্জ নষ্ট করে ফেলেছি। নিজের উপরেই রাগটা হলো। চার্জার লাইটের আলোতে খাবার গরম করে খেয়ে নিলাম রাতে। রাত প্রায় ১১টা বাজতে গেছে। বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ নেই। বারান্দায় গিয়ে দেখি রাস্তা সহ বাড়ির উঠোন পর্যন্ত ভেসে গেছে। এইদিকে চার্জার লাইটের চার্জ কতক্ষণ থাকবে এইটা নিয়ে চিন্তা শুরু হয়ে গেল। ইতোমধ্যে মিটমিট করা শুরু করে দিয়েছে। মোবাইলেও চার্জ কম। কি একটা অবস্থা! আম্মু আব্বু এর মাঝে ফোন করে আমি খেয়েছি কিনা কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা শুনে নিল। ইলেক্ট্রিসিটি নাই বললেও আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে দিলাম। অহেতুক দূরে থেকে চিন্তা ভাবনা করতে থাকবে।

দশ মিনিট পর চার্জার লাইটটা চার্জ শেষ হয়ে নিভে গেল। ভয় পাচ্ছিনা কিন্তু অন্ধকারে কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে রাখলে এইটারও চার্জ শেষ হয়ে যাবে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে শুয়ে আছি। বাইরে এখনো একাধারে ঝুমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। কোনো বিরাম নেই। বিছানায় শুয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি আর একটু পরপর বিদ্যুৎ চমকানো দেখছি। একবার হঠাৎ অনেক তীব্রভাবে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো আর মনে হলো বিছানার শেষ প্রান্তে আমার পায়ের কাছে একটা ছায়া দাঁড়িয়ে আছে। বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠলেও নিজেকে শান্ত রাখলাম। শুয়ে থেকে হয়তো তন্দ্রা এসে গেছিল তাই এমন দেখেছি। আর বারবার বিদ্যুৎ চমকানোর আলো আঁধারিতে অনেক রকম চোখের ভুল হয়ে থাকে। আরো কিছুক্ষণ সেইদিকে তাকিয়ে থেকে আর কিছু দেখতে পেলাম না। বাইরের বিদ্যুৎ চমকানোর আলোটাই আমার একমাত্র আলো এখন। মোবাইলে বিপবিপ শব্দ শুনে হাতে নিয়ে দেখি চার্জ শেষ এর সংকেত দিচ্ছে। সব শেষ এইবার। পাঁচ মিনিট পর একা একাই বন্ধ হয়ে গেল মোবাইল।

মনে মনে অনেক সাহস নিয়ে আল্লাহ্-র নাম নিতে নিতে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু এইবার ঘনঘন বজ্রপাত হতে শুরু করলো। সেই শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে চুপচাপ জানালার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অস্বাভাবিক ভাবে ঘনঘন বজ্রপাত হতেই থাকল। মনে হচ্ছে মেঘ কেটে দিয়ে সব বজ্রগুলো মাটিতে ফেলছে কেউ। হঠাৎ পুরো বাড়ি কেঁপে উঠে ঠিক মাথার উপর বজ্রপাতের শব্দ হলো। বুঝলাম হয়তো ছাঁদের ডিশ এন্টেনার উপর পড়েছে বাঁজ। শোয়া থেকে উঠে বসলাম। আম্মু আব্বুকে ফোন করার কোনো উপায় নেই। তারাও ফোন করলে আমাকে পাবেনা। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে আর আলোতে আমার ঘর ভরে গেল। মনে হলো যেন পুরো ব্জ্রপাতটা জানালা ভেদ করে আমার ঘরের মধ্যে পড়েছে। চোখ ধাঁদিয়ে গেল আমার। পুরো পনের সেকেন্ডের মতো চোখ বন্ধ করে বসে থাকলাম। নাকে পোড়া একটা গন্ধ আসছে। আস্তে আস্তে চোখ খুলতে দেখি পুরো অন্ধকার ঘরে আমার পায়ের কাছে একটা নির্দিষ্ট আকৃতির আলো। সেই আলোর ঠিক মাঝে একটা মানুষ আকৃতির কেউ দাঁড়িয়ে আছে। চোখে সবকিছু কিছুটা সয়ে এলে অস্বাভাবিক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে দেখি সামনের মানুষটা আর কেউ না আমি নিজে। হুবহু আমি নিজে। একইরকম হাইট, ফিগার, চুলের কাট সবকিছু। কিন্তু পড়নের জামাটা অস্বাভাবিক। অনেকটা সাইন্স ফিকশন মুভিতে দেখা স্পেস স্যুটের মতো। মানুষটা আমার দিকে অনেকটা শয়তানের মতো একটা ভয়ঙ্কর মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি আতংকে একদম জমে গেছি। সামনের মানুষটা আমাকে বলল, “বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াও।” গলার আওয়াজ আমারই মতো কিন্তু খুব গম্ভীর। আমি জানিনা কেন কিন্তু কেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। সামনের ‘আমি’ টা আস্তে আস্তে আমার কাছে এলো আর আমার মাথায় একটা তারের মাথা থেকে একটা প্রব লাগিয়ে দিল। তারের অপর মাথায় আরেকটা প্রব তার নিজের মাথায় লাগালো। আমি জানিনা কেন কিন্তু নড়তে পারলাম না। কেমন জানি প্যারালাইজড হয়ে গেছি। আমার মনে হচ্ছে আমার মাথা থেকে কিছু একটা ঐ তারের মধ্যে দিয়ে সামনের ‘আমি’র মাথায় চলে যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে সামনের ‘আমি’ কথা বলে উঠলো,
“তুমি কিছু বুঝতে পারবে না এইটাই স্বাভাবিক। তোমাদের জগতটা এখনো এতোটা উন্নত হতে পারেনি তাই তোমরা কিছু জানোনা। তবে তোমার প্যারালাল ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে কিছুটা ধারনা আছে আমি সেইটা জানি। হ্যাঁ, আমি সেই প্যারালাল ওয়ার্ল্ড থেকেই এসেছি। তোমাদের ধারনা সত্যি কিন্তু তোমরা এখনো এর প্রমাণ পাওনি। আমার পৃথিবীতে ইন্টার ডাইমেনশনাল ট্রাভেল একেবারেই নিষিদ্ধ করে দেয়া হলেও আমাকে এখানে পালিয়ে আসতে হয়েছে। হ্যাঁ আমি পালিয়ে এসেছি, কারণ আমার পৃথিবীতে আমি একজন কিলার। নয়টা খুন করার পর আর সেখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমি সবার অগোচরে এখানে চলে এসেছি। আমি কিলার হলেও একজন বিজ্ঞানী। আমি এমন সব প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছি যা দিয়ে আমি আমার ডপ্লিগেঙ্গার বা অনুরূপীদের উপর নজর রাখতে পারি আমাদের পৃথিবী থেকেই। এবং আমি তোমার উপর নজর রেখেছি বহুদিন ধরে। আমি এখন এই পৃথিবীতে তুমি হয়েই বেঁচে থাকবো এবং আমাদের দুই পৃথিবীর কেউ কখনো জানতেও পারবে না। তোমার মাথায় যেটা লাগিয়েছি সেই ডিভাইসটার মাধ্যমে তোমার পুরো ব্রেইনের নিউরাল কপি আমার ব্রেইনে চলে আসছে। পুরোটা চলে এলে তোমার জীবন এখানেই শেষ।”

কথা গুলো বলে শেষ করার পর আমার সামনের মানুষটা আমার মাথা থেকে প্রবটা খুলে নিল। পুরোটা সময় আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম এখনো আছি। হয়তো আমার ব্রেইনের নিউরাল কপি নিয়ে নেয়ার কারণেই আমি আর নিজে থেকে কিছু করতে পারছিনা। প্রবটা খুলে নেয়ার পর আমি হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম প্রচণ্ড ক্লান্তিতে। মাথা তুলে শুধু দেখলাম সামনের ‘আমি’টা তার কোমড় থেকে একটা বেঢপ আকৃতির পিস্তল বের করলো।

** নিজেই নিজেকে মেরে ফেলা সবথেকে কঠিন একটা কাজ। এই পৃথিবীর ‘আমি’র পুরো নিউরাল কপি আমার ব্রেইনে নিয়ে নেয়ার পর আমিই ‘ও’ হয়ে গেছি। কিন্তু আমার এই পৃথিবীতে নিরাপদে বেঁচে থাকতে হলে আমার এই ডপ্লিগেঙ্গারকে মেরে ফেলতেই হবে। তাই পকেট ব্লাস্টারটা বের করে ওর দিকে তাক করলাম। এটা শুধু ওকে মেরেই ফেলবে না পুরো নিশ্চিহ্ন করে দিবে। লাশ গুমের কোনো ঝামেলা নেই। ট্রিগারটা চেপে ধরার আগে ওর চোখের মারাত্মক আতংক আর মৃত্যুভয় নিজের মধ্যে একবার অনুভব করলাম।

সমাপ্ত।দুপুর থেকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে তারপরেও থামার লক্ষণ নেই। বাসায় এই মুহূর্তে আমি একা। আম্মু আব্বু নানু বাড়ি গিয়েছে সকালে। সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসার কথা কিন্তু এই বৃষ্টির কারণে তারাও আঁটকে গেছে। ফোন করে বলে দিয়েছে আজকে রাতটা থেকে কাল সকালে চলে আসবে। আমার বাসায় একা থাকার অভ্যাস আছে। নিজেদের বাসা। কোনো ভাড়াটিয়াও নেই। এর আগেও প্রয়োজনে একা থেকেছি পুরো বাসায়। তাই এইটা নতুন কিছু না। সকালে বুয়া এসে দুপুর আর রাতের খাবার রান্না করে রেখে গেছে। তাই খাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই। তাছাড়া এই ঝুম বৃষ্টিতে বেশ ভালও লাগছে। আজ শুক্রবার বলে এমনিতেই রাস্তা ঘাট ফাঁকা। সারাদিন একটানা বৃষ্টিতে আরো বেশি শুনশান হয়ে গেছে। বৃষ্টির একটানা ঝমঝম শব্দ ছাড়া আর কিছুই নেই।

বিপত্তিটা বাঁধল বিকট শব্দে বাঁজ পড়ে ইলেক্ট্রিসিটি টা চলে যাওয়ায়। চার্জার লাইটটা জ্বালিয়ে রাখলাম। পুরো বাড়িতে শুধু এই চার্জার লাইটটাই একমাত্র আলো এখন। এতক্ষণ যদিও সব ঠিকঠাক ছিল কিন্তু এখন ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়ায় ব্যাপারটা ভূতুড়ে হয়ে গেল। আমার যদিও ঐসব ভূত টূতের ভয় নেই। বিশ্বাসও করিনা। আজ পর্যন্ত চোখে যা দেখিনি তা বিশ্বাস করিনা। তারপরেও এমন আবহাওয়ায় অন্ধকারে একা গা একটু একটু ছমছম করতে থাকল। মনটাকে ডাইভার্ট করার জন্যে গেম খেলতে লাগলাম মোবাইলে। ইলেক্ট্রিসিটি অনেকক্ষণ পরেও যখন এলো না আর বৃষ্টিও থামার কোনো লক্ষণ পেলাম না, তখন বুঝে গেলাম বজ্রপাতে কিছু একটা গেছে। আজ রাতে আর ইলেক্ট্রিসিটি আসবে না। মোবাইলের চার্জ নষ্ট করা ঠিক হবেনা ভেবে গেম খেলা বন্ধ করে দিলাম। যদিও এতক্ষণে বেশ খানিকটা চার্জ নষ্ট করে ফেলেছি। নিজের উপরেই রাগটা হলো। চার্জার লাইটের আলোতে খাবার গরম করে খেয়ে নিলাম রাতে। রাত প্রায় ১১টা বাজতে গেছে। বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ নেই। বারান্দায় গিয়ে দেখি রাস্তা সহ বাড়ির উঠোন পর্যন্ত ভেসে গেছে। এইদিকে চার্জার লাইটের চার্জ কতক্ষণ থাকবে এইটা নিয়ে চিন্তা শুরু হয়ে গেল। ইতোমধ্যে মিটমিট করা শুরু করে দিয়েছে। মোবাইলেও চার্জ কম। কি একটা অবস্থা! আম্মু আব্বু এর মাঝে ফোন করে আমি খেয়েছি কিনা কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা শুনে নিল। ইলেক্ট্রিসিটি নাই বললেও আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে দিলাম। অহেতুক দূরে থেকে চিন্তা ভাবনা করতে থাকবে।

দশ মিনিট পর চার্জার লাইটটা চার্জ শেষ হয়ে নিভে গেল। ভয় পাচ্ছিনা কিন্তু অন্ধকারে কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে রাখলে এইটারও চার্জ শেষ হয়ে যাবে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে শুয়ে আছি। বাইরে এখনো একাধারে ঝুমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। কোনো বিরাম নেই। বিছানায় শুয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি আর একটু পরপর বিদ্যুৎ চমকানো দেখছি। একবার হঠাৎ অনেক তীব্রভাবে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো আর মনে হলো বিছানার শেষ প্রান্তে আমার পায়ের কাছে একটা ছায়া দাঁড়িয়ে আছে। বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠলেও নিজেকে শান্ত রাখলাম। শুয়ে থেকে হয়তো তন্দ্রা এসে গেছিল তাই এমন দেখেছি। আর বারবার বিদ্যুৎ চমকানোর আলো আঁধারিতে অনেক রকম চোখের ভুল হয়ে থাকে। আরো কিছুক্ষণ সেইদিকে তাকিয়ে থেকে আর কিছু দেখতে পেলাম না। বাইরের বিদ্যুৎ চমকানোর আলোটাই আমার একমাত্র আলো এখন। মোবাইলে বিপবিপ শব্দ শুনে হাতে নিয়ে দেখি চার্জ শেষ এর সংকেত দিচ্ছে। সব শেষ এইবার। পাঁচ মিনিট পর একা একাই বন্ধ হয়ে গেল মোবাইল।

মনে মনে অনেক সাহস নিয়ে আল্লাহ্-র নাম নিতে নিতে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু এইবার ঘনঘন বজ্রপাত হতে শুরু করলো। সেই শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে চুপচাপ জানালার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অস্বাভাবিক ভাবে ঘনঘন বজ্রপাত হতেই থাকল। মনে হচ্ছে মেঘ কেটে দিয়ে সব বজ্রগুলো মাটিতে ফেলছে কেউ। হঠাৎ পুরো বাড়ি কেঁপে উঠে ঠিক মাথার উপর বজ্রপাতের শব্দ হলো। বুঝলাম হয়তো ছাঁদের ডিশ এন্টেনার উপর পড়েছে বাঁজ। শোয়া থেকে উঠে বসলাম। আম্মু আব্বুকে ফোন করার কোনো উপায় নেই। তারাও ফোন করলে আমাকে পাবেনা। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে আর আলোতে আমার ঘর ভরে গেল। মনে হলো যেন পুরো ব্জ্রপাতটা জানালা ভেদ করে আমার ঘরের মধ্যে পড়েছে। চোখ ধাঁদিয়ে গেল আমার। পুরো পনের সেকেন্ডের মতো চোখ বন্ধ করে বসে থাকলাম। নাকে পোড়া একটা গন্ধ আসছে। আস্তে আস্তে চোখ খুলতে দেখি পুরো অন্ধকার ঘরে আমার পায়ের কাছে একটা নির্দিষ্ট আকৃতির আলো। সেই আলোর ঠিক মাঝে একটা মানুষ আকৃতির কেউ দাঁড়িয়ে আছে। চোখে সবকিছু কিছুটা সয়ে এলে অস্বাভাবিক বিস্ময়ে লক্ষ্য করে দেখি সামনের মানুষটা আর কেউ না আমি নিজে। হুবহু আমি নিজে। একইরকম হাইট, ফিগার, চুলের কাট সবকিছু। কিন্তু পড়নের জামাটা অস্বাভাবিক। অনেকটা সাইন্স ফিকশন মুভিতে দেখা স্পেস স্যুটের মতো। মানুষটা আমার দিকে অনেকটা শয়তানের মতো একটা ভয়ঙ্কর মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি আতংকে একদম জমে গেছি। সামনের মানুষটা আমাকে বলল, “বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াও।” গলার আওয়াজ আমারই মতো কিন্তু খুব গম্ভীর। আমি জানিনা কেন কিন্তু কেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। সামনের ‘আমি’ টা আস্তে আস্তে আমার কাছে এলো আর আমার মাথায় একটা তারের মাথা থেকে একটা প্রব লাগিয়ে দিল। তারের অপর মাথায় আরেকটা প্রব তার নিজের মাথায় লাগালো। আমি জানিনা কেন কিন্তু নড়তে পারলাম না। কেমন জানি প্যারালাইজড হয়ে গেছি। আমার মনে হচ্ছে আমার মাথা থেকে কিছু একটা ঐ তারের মধ্যে দিয়ে সামনের ‘আমি’র মাথায় চলে যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে সামনের ‘আমি’ কথা বলে উঠলো,
“তুমি কিছু বুঝতে পারবে না এইটাই স্বাভাবিক। তোমাদের জগতটা এখনো এতোটা উন্নত হতে পারেনি তাই তোমরা কিছু জানোনা। তবে তোমার প্যারালাল ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে কিছুটা ধারনা আছে আমি সেইটা জানি। হ্যাঁ, আমি সেই প্যারালাল ওয়ার্ল্ড থেকেই এসেছি। তোমাদের ধারনা সত্যি কিন্তু তোমরা এখনো এর প্রমাণ পাওনি। আমার পৃথিবীতে ইন্টার ডাইমেনশনাল ট্রাভেল একেবারেই নিষিদ্ধ করে দেয়া হলেও আমাকে এখানে পালিয়ে আসতে হয়েছে। হ্যাঁ আমি পালিয়ে এসেছি, কারণ আমার পৃথিবীতে আমি একজন কিলার। নয়টা খুন করার পর আর সেখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমি সবার অগোচরে এখানে চলে এসেছি। আমি কিলার হলেও একজন বিজ্ঞানী। আমি এমন সব প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছি যা দিয়ে আমি আমার ডপ্লিগেঙ্গার বা অনুরূপীদের উপর নজর রাখতে পারি আমাদের পৃথিবী থেকেই। এবং আমি তোমার উপর নজর রেখেছি বহুদিন ধরে। আমি এখন এই পৃথিবীতে তুমি হয়েই বেঁচে থাকবো এবং আমাদের দুই পৃথিবীর কেউ কখনো জানতেও পারবে না। তোমার মাথায় যেটা লাগিয়েছি সেই ডিভাইসটার মাধ্যমে তোমার পুরো ব্রেইনের নিউরাল কপি আমার ব্রেইনে চলে আসছে। পুরোটা চলে এলে তোমার জীবন এখানেই শেষ।”

কথা গুলো বলে শেষ করার পর আমার সামনের মানুষটা আমার মাথা থেকে প্রবটা খুলে নিল। পুরোটা সময় আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম এখনো আছি। হয়তো আমার ব্রেইনের নিউরাল কপি নিয়ে নেয়ার কারণেই আমি আর নিজে থেকে কিছু করতে পারছিনা। প্রবটা খুলে নেয়ার পর আমি হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম প্রচণ্ড ক্লান্তিতে। মাথা তুলে শুধু দেখলাম সামনের ‘আমি’টা তার কোমড় থেকে একটা বেঢপ আকৃতির পিস্তল বের করলো।

** নিজেই নিজেকে মেরে ফেলা সবথেকে কঠিন একটা কাজ। এই পৃথিবীর ‘আমি’র পুরো নিউরাল কপি আমার ব্রেইনে নিয়ে নেয়ার পর আমিই ‘ও’ হয়ে গেছি। কিন্তু আমার এই পৃথিবীতে নিরাপদে বেঁচে থাকতে হলে আমার এই ডপ্লিগেঙ্গারকে মেরে ফেলতেই হবে। তাই পকেট ব্লাস্টারটা বের করে ওর দিকে তাক করলাম। এটা শুধু ওকে মেরেই ফেলবে না পুরো নিশ্চিহ্ন করে দিবে। লাশ গুমের কোনো ঝামেলা নেই। ট্রিগারটা চেপে ধরার আগে ওর চোখের মারাত্মক আতংক আর মৃত্যুভয় নিজের মধ্যে একবার অনুভব করলাম।

সমাপ্ত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.