নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শখের গল্প লেখক

মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ

শখের বশে গল্প লিখি

মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

Game - গেম

০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ১:৫৪


ছবিঃ AI Generated

ঘুম ভেঙে চোখ খোলার সাথে সাথেই আমার মনে হল কিছু একটা ঠিক নেই। কি ঠিক নেই জানিনা। কিন্তু মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয় ছাড়াও যে একটা অদৃশ্য ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আছে সেটি আমাকে জানান দিচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কথা মাথায় আসতেই কি ঠিক নেই সেই চিন্তা না করে আমি মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নিয়ে চিন্তা করা শুরু করে দিলাম। ব্যাপারটা কতো অদ্ভুত ভাবে কাজ করে মানুষের মধ্যে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, কারণ এইটা আসলে কি সেইটাও মানুষ আজো বুঝে উঠতে পারেনি। অথচ জিনিসটা আমাদের কতো ভাবেই না কাজে লাগে! যাহোক কিসের থেকে কিসে চলে গেলাম এইটা ভেবেই মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়লাম। ঘুম ভাঙার পর থেকে কোন জিনিসটা ঠিক নেই বলে মনে হচ্ছে আমাকে আগে তাই খুঁজে দেখতে হবে।

বিছানায় বসে চারিদিকে তাকালাম আমি। চারিদিকে অন্ধকার। কিন্তু তার মধ্যেও যেন একটা আবছায়া আলো আছে। আমি যেখানে আছি সেখানে দরজা জানালা সব আটকানো। তাই অন্ধকার। কিন্তু বাইরে থেকে দিনের আলোর একটা নরম আভা জানালা ভেদ করে ঘরে ঢুকে আবছায়া ভাবটা তৈরি করে রেখেছে। মনে করার চেষ্টা করলাম কাল রাতের কথা। আমি তো আমার বাড়িতে আমার ঘরেই আলো নিভিয়ে শুয়েছিলাম। দরজা জানালা সব আঁটকে রাখলেও দক্ষিণের একটা জানালা আমার খোলাই থাকে। ঐদিকে বড় একটা খেলার মাঠ আছে। খোলা মেলা জায়গা আর দক্ষিণের বাতাসে ঘরটা আমার বেশ আরাম দায়ক। কিন্তু ঐটা তো বন্ধ থাকার কথা না। কাল রাতেও খোলা ছিল আর দক্ষিণের বাতাসে আরামে আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন ঐটা বন্ধ কেন? বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমার শরীরে কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে। কি পরিবর্তন সেইটাও এখনো পরিষ্কার হচ্ছে না। ইতোমধ্যে বাইরের সেই আবছায়া আলোতে ঘরের মধ্যে কিছুটা দেখা যাচ্ছে। ঘরটা আমারই। কিন্তু ঘরে কোনো আসবাব পত্র নেই। এমনকি আমি আমার খাটেও শুয়ে নেই। শুয়ে আছি মেঝেতে পাতানো একটা মোটা তোষকে। ভীষণ রকম চমকে উঠলাম আমি। এমন কেন সবকিছু?

জানালা খোলার জন্যে দ্রুত উঠে দাঁড়ালাম। কিন্তু উঠেই আরেকটা ধাক্কা খেলাম। আমার শরীরটা কেমন যেন বেশ হালকা লাগছে। আমি মোটামুটি ভারী স্বাস্থ্যের একটা ছেলে। খুব মোটা না হলেও নাদুস নুদুস বলা যায়। কিন্তু এখন এমন হালকা লাগছে কেন? পিঠে কেমন যেন একটা তীব্র ব্যাথা। তারপরেও দ্রুতো গিয়ে জানালা খুলে দক্ষিনে তাকাতেই আমি মুখটা হাঁ করে তাকিয়ে থাকলাম। আমার সেই দক্ষিণমুখী জানালার সামনে কোনো মাঠ নেই। কেমন যেন ধ্বংসস্তূপের মতো অনেককিছু পড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে একটা ভাঙা বাঙ্কারের মতো। আশেপাশের বিল্ডিংগুলো থেকে কালো ধোঁয়া উঁড়ছে। এতো বিল্ডিং কাল রাতেও দেখেছি কিনা মনে করতে পারছিনা। কিন্তু এখন দেখি সেগুলো থেকে রীতিমত কালো ধোঁয়া উড়ছে। আকাশে বাতাসে কেমন একটা পোড়া গন্ধ। চারিদিকে ভাল করে তাকালাম জানালা দিয়ে। মনে হচ্ছে যেন পঞ্চম বিশ্বযুদ্ধ হয়ে গেছে একটু আগে।

জানালার বাইরে থেকে চোখ সরিয়ে নিজের শরীরের দিকে তাকালাম। খালি গায়েই ছিলাম। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। কোথায় নাদুস নুদুস কোথায় কি! রীতিমত জিম করা পেটানো শরীর। সিক্স প্যাক, চওড়া বুকের ছাতি, চওড়া হাতের কব্জি, গরমে ঘামে ভেজা চকচকে মাসল কিলবিল করছে। কেন শরীরটাকে এতো হালকা লাগছে তা এখন বুঝতে পারলাম। কিন্তু এইটা আমার নিজের শরীর কিনা বুঝতে পারছিনা। আশেপাশে তাকালাম এইবার। অন্ধকারে এতোকিছু খেয়াল করিনি। প্রথমেই যেইটা চোখে পড়লো তা হল ঘরের এক কোণে রাখা কিছু অস্ত্র। মুখ হাঁ হয়ে গেল বিঘত খানেক। দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে রাখা দুইটা এ.কে-৪৭, দুইটা এম.পি-৫কে সাবমেশিনগান, একটা মিনি হ্যান্ডগান, একটা পিস্তল, একটা এ.টি-৪ আর আর.পি.জি-৭ রকেট লঞ্চার, একটা কমান্ডো নাইফ আর কয়েকটা হ্যান্ড গ্রেনেড। আরেক কোণে দেখি কিছু ব্যায়ামের জিনিসপাতি রাখা। দেয়ালে তাকিয়ে দেখি একটা বড় ম্যাপ। কোন এলাকার কিসের ম্যাপ তাও বুঝতে পারলাম না। কিন্তু অনেক রকম আঁকিবুঁকি তার উপর। একেক রঙের মার্কারি দিয়ে লাইন টানা, গোল করে মার্ক করে রাখা, কি কি লিখে রাখা, ম্যাপের আশেপাশে দেখি আরো নানা রকমের ছবি। বিভিন্ন জায়গার, বিভিন্ন মানুষের। মানুষগুলোর চেহারা গুলো কেমন যেন! শক্ত পোক্ত, দয়া মায়াহীন চেহারা। তাদের ছবির উপর ক্রস আঁকানো। ঘরের এখানে ওখানে আরো অনেক কিছু ছড়ানো ছিটানো। বিছানার পাশে দেখি একটা টি-শার্ট আর একটা আর্মি জ্যাকেট রাখা। বুঝলাম ঐগুলা আমার। আমার মাথার মধ্যে কেমন চক্কর দিতে লাগলো এইসব দেখে। আমি কিভাবে এইসব অস্ত্রের নাম জানি আমি নিজেও মনে করতে পারছিনা কিছু। আমার ঘরে এইসব কেন? বাইরের পৃথিবীর অবস্থা এমন কেন? আমি নিজে এমন হলাম কিভাবে? আমার বাবা, মা, ভাইয়া, আপু সবাই কোথায়? এরকম হাজার হাজার প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে। মাথায় হাত রেখে আমি বিছানার উপর বসে পড়লাম। মাথার পাশে কেমন দপ দপ করছে। হাজার রকম চিন্তা চলছে মাথায়। একবার ভাবলাম আমি কোনোভাবে সময় পরিভ্রমণ করে ভবিষ্যতে চলে আসলাম কিনা! কিন্তু নিজের কাছেই ব্যাপারটা হাস্যকর লাগলো।

হঠাৎ দরজায় কড়াঘাতের শব্দ। আমি চমকে উঠে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করলাম, “কে?!” কিন্তু নিজের গলার শব্দে নিজেই চমকে গেলাম। কেমন ভরাট আর ভারী গলা আমার! সবথেকে অবাক করা ব্যাপার আমি কিছু চিন্তা না করেই ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করেছি। দরজার নব ঘুরিয়ে ভিতরে ঢুকলো একজন বিশালদেহী লোক। শরীরে কমান্ডোদের মতো কাপড় তার উপর আবার বিশাল একটা ওভার কোট পড়া। মাথায় একটা লাল কাপড় বাঁধা। হাতে একটা এ.কে-৪৭। লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত কন্ঠে ইংলিশে বললো, “কমান্ডার! সর্বনাশ হয়ে গেছে!!” আমি ভুল শুনলাম কিনা বুঝতে পারলাম না। কমান্ডার! আমি!! মানে কি? কিসের কমান্ডার? লোকটা বিরতি না দিয়ে ইংরেজিতে বলে যেতে লাগলো, “কমান্ডার ওরা আমাদের হাইড আউটের খোঁজ পেয়ে গিয়েছে। যেকোনো সময় এইখানে এয়ার স্ট্রাইক হতে পারে। আমাদের এক্ষুনি এইখান থেকে পালাতে হবে সবাইকে।” আমি হাঁ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুই মাথায় ঢুকছে না। লোকটা কি বলছে? কারা আমাদের কি জেনে গিয়েছে? কেন এয়ার স্ট্রাইক হবে? কেন আমাদের পালাতে হবে? লোকটা আমার দিকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে সেই ইংরেজিতেই বলতে লাগলো, “কি হল কমান্ডার? আপনি কিছু বলছেন না কেন? তাড়াতাড়ি উঠুন। আপনি আমাদের আদেশ দিবেন আমাদের কোন হাইড আউটে পালাতে হবে। উঠুন উঠুন! এমন হাঁ হয়ে আছেন কেন কমান্ডার? আপনি ঠিক আছেন তো?” লোকটা এসে আমাকে ধরে তুললো। বিছানার পাশ থেকে আমার টি-শার্ট আর জ্যাকেটটা তুলে হাতে দিয়ে বললো, “কমান্ডার দ্রুত করুন! যেকোনো সময় ওরা হামলা করতে পারে। আমাদের এক্ষুনি পালাতে হবে। সব গুছিয়ে নিন। কমান্ডার!! কমান্ডার!!”

আমি ঘোলা চোখে হাঁ করে তার দিকে তাকিয়েই থাকলাম। হঠাৎ মাথার উপর প্লেনের শব্দ শুনতে পেলাম। সামনের লোকটার চোখ বিশাল আকার ধারণ করেছে। যেন এখুনি কোটর ছেড়ে বের হয়ে আসবে। সেই চোখে স্পষ্ট আতঙ্ক। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “ওরা এসে গিয়েছে কমান্ডার! সব শেষ!” বলেই ঘুরে এক দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমিও যেন হঠাৎ করে সব কিছু বুঝে গেলাম। অন্তত এয়ার স্ট্রাইকের ব্যাপারটা প্লেনের শব্দ শুনেই স্পষ্ট হয়ে গেল। টি-শার্টটা গায়ে দিতে দিতে দৌড়াতে লাগলাম। কিসের কমান্ডার কিসের কি! প্রচন্ড আতঙ্কে বুক ধড়ফড় করছে। প্লেনের শব্দ একদম মাথার উপর। বিকট শব্দ হচ্ছে। হঠাৎ করে “চিইইইইউউউউউউউউউউউউউউউউ!!!!” করে শব্দ হয়ে মাথার উপরের ছাদ কড়াৎ ফুটো করে কি যেন বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেল। প্রচন্ড বিস্ফোরণের আগে এক ঝলকের জন্যে আমেরিকান এফ-২২ র‍্যাপ্টর স্টেলথ ফাইটার প্লেনের জে.ডি.এ.এম. মিসাইলটা দেখলাম মেঝে ফুঁড়ে নিচে চলে গেল। কিন্তু একি?! বিস্ফোরণে গায়ে আগুনের ঝলকা না লেগে পানির ছিটা লাগছে কেন?!

মুখের উপর ঝপাৎ করে পানি পড়ার কারণে ধড়ফড় করে লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসলাম। তাকিয়ে দেখি আপু হাতে খালি জগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলে, “কি রাজপুত্তুর! বেলা কয়টা বাজে? আর কত ঘুমাবি? আব্বা কিন্তু রেগে কাই হয়ে আছে। আমাকে বললো সে এসে মাইর দিয়ে উঠানোর আগে আমি গিয়ে পানি ঢেলে উঠাই যেন তোকে। সারা রাত জেগে গেম খেলবে আর বেলা দুপুর পর্যন্ত ঘুমাবে! কি হাঁ করে কি দেখিস? এখনো দুনিয়ায় ফিরিস নাই? ওঠ দ্রুত!” এই বলে আপু চলে গেল ঘর থেকে। আমি ততোক্ষণে বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে এসেছি। আশেপাশে তাকিয়ে সেই চিরচেনা ঘরটাকে দেখতে পেলাম। ঐযে আমার পড়ার টেবিল, তার উপর বইখাতা, পাশে কম্পিউটার টেবিলে কম্পিউটারটা অফ হয়ে আছে। মাথার কাছে দক্ষিণের জানালা দিয়ে বাতাস আসছে। বাইরে ঝলমলে রোদ। ছুটির দিন বলে মাঠ থেকে বাচ্চাদের খেলার শব্দ ভেসে আসছে। হঠাৎ করে আব্বা বাইরে চিৎকার করে উঠে, “কি নবাবপুত্তুর আর কতো ঘুমাবে?! বেলা কয়টা বাজে খেয়াল আছে?” হুড়মুড় করে উঠতে গিয়ে পিঠে ব্যথা পেলাম খুব। নাহ, এই খারাপ ভাবে শোয়ার অভ্যাসটা আর গেলনা। পিঠে তার জন্যেই ব্যথা হয় এতো। আর গেম! হ্যাঁ এই গেম খেলাটা কমাতে হবে। স্বপ্নের মধ্যে আরেকটু হলেই হার্ট অ্যাটাক হতো।

সমাপ্ত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.