| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |

গত কিছুদিন যাবৎ আরাফের মনে হচ্ছে কিছু একটা তার সাথে ঠিক নেই। সেই কিছু একটা কি সেটা সে কোনভাবেই বুঝতে পারছেনা। তার নিজের কিছু কাজ বা অভ্যাস বা আচরণের মধ্যে এমনকিছু পরিবর্তন হঠাৎ সে নিজেই টের পাচ্ছে যেগুলো তার আগে ছিলোনা। যেমন সে কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ রেগে রেগে যাচ্ছে। রাগ তার আগেও ছিল কিন্তু অকারণে রাগতো না। এখন সে অকারণে রেগে যায়। পরিবারের মানুষের সাথে অল্পতেই সে রেগে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। গতকাল যেমন সে তার নিজের স্ত্রী শিউলির সাথে রাগ দেখালো এই কারণে যে সে পানির বোতলটা কেন তার স্টাডি টেবিলে রেখেছে! এরকম আরো অনেক তুচ্ছ কারণে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথেও রাগারাগি দেখাচ্ছে। সবাই তার হঠাৎ এমন পরিবর্তনে খুবই অবাক। আগে আরাফ রাত বেশি গভীর করে ঘুমাতো না। আগে আগে শুয়ে পড়তো এবং সকাল সকাল উঠে অফিসে যেত। এখন অবিশ্বাস্য ভাবে রাত অনেক গভীর হলে তারপর সে ঘুমায়। সকালে উঠে অফিসে ঠিকই যায়, তবে এই কারণে ঘুমের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। তারপরেও রাতে তার আগে আগে ঘুম আসেনা। ছোট একটা বাচ্চা আছে আরাফের। সেই বাচ্চার সামান্য হইচই শব্দ শুনলে তার খুবই বিরক্ত লাগে। নেহাত ছোট বাচ্চা আর তার প্রতি প্রচুর ভালবাসা আর মায়া থেকে তাকে কিছুই বলেনা, কিন্তু নিজের স্ত্রীকে এটা নিয়েও রাগ দেখায় যে সে কেন তাকে থামাতে পারছেনা!
এরকম আরো অনেক ছোটখাটো ব্যপার নিয়ে সে নিজেকে নিয়ে চিন্তিত। আজ গভীর রাতে ঘুম না আসায় স্টাডি রুমে এসে বসে এইগুলা নিয়ে চিন্তা করতে থাকে সে। নিজের এসব পরিবর্তন কেন হচ্ছে সে নিজেই কনফিউজড। তবে আরেকটা জিনিস সে বুঝতে পারে, তার সবসময় মনে হতে থাকে তার সাথে সাথে কিছু একটা আছে। সেই কিছু একটা সবসময় যে সে ফিল করে এমন না। তবে তার বাড়ির মধ্যে চলাফেরা করার সময় প্রায়ই সে কিছু একটা আশেপাশে আছে এমনটা অনুভব করতে পারে। স্টাডি রুমে বসে এই চিন্তা করতে করতে আরাফের গায়ের রোম দাঁড়িয়ে গেল। সে এখনো চুপচাপ বসে বুঝার চেষ্টা করছে এমনকিছু তার আশেপাশে আছে কিনা। কিন্তু এমনকিছুই সে টের পেলোনা। হঠাৎ সে কি মনে করে মোবাইল হাতে নিয়ে সিসি ক্যামেরার অ্যাপ এ ঢুকলো। আরাফ আর শিউলি দুজনেই চাকুরীজীবী হওয়ায় বাচ্চার জন্যে একজন ন্যানি রেখে দিয়েছে, কিন্তু সাথে বাসায় কিছু সিসি ক্যামেরাও লাগিয়ে রেখেছে যেন অফিস থেকে বাচ্চাকে মাঝেমধ্যে দেখতে পারে। আরাফ এখন অ্যাপ থেকে বারান্দার সিসি ক্যামেরা তে ঢুকলো। আরাফের বাড়িটা একটু পুরনো ধাঁচের হওয়ায় রুমের সামনে বড় একটা বারান্দা আছে সামনে গ্রিল লাগানো।
ক্যামেরায় ঢুকে আরাফ যা দেখলো তার জন্যে সে কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলোনা। বারন্দায় রাতে কোনো আলো না থাকায় ক্যামেরার ইনফ্রারেড আলোতে তে সে দেখতে পেল ঠিক তার মতো কেউ একজন বারান্দার ঠিক মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে আছে। ক্যামেরা উপর থেকে হওয়াতে সে লোকটার মুখ দেখতে পাচ্ছে না, কিন্তু শরীরের গঠনটা স্পষ্টই তার মতো। মাথার চুলও ঠিক তার মতো ঝাঁকড়া কোঁকড়ানো। লোকটা বারান্দার ঠিক মাঝখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে গ্রিলের দিকে ফিরে, যেন বাইরে কি একটা দেখছে অপলক দৃষ্টিতে। হঠাৎ করে লোকটা আস্তে আস্তে মাথা ঘুড়িয়ে ক্যামেরার দিকে তাকালো। এবার আরাফ যা দেখলো একটুর জন্যে তার হৃদপিণ্ডটা গলায় উঠে আসেনি। লোকটা আর কেউ নয় সে নিজেই। নিজের চোখকে আরাফ কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না। হঠাৎ তার মনে হলো এই লোকটা তার সাথে থাকা কোনো জ্বীন না তো? আরাফের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বেয়ে গেল। তবে একই সাথে সে এটাও বুঝতে পারছে যে তার জীবনে যতো সমস্যা তা এর জন্যেই হচ্ছে। তার যতো পরিবর্তন তা এই জ্বীনের কোনো প্রভাবেই হচ্ছে। হঠাৎ করে আরাফের মধ্যে একটা জিদ চলে আসে। তার মনে হতে থাকে আজ এর একটা বিহিত করা প্রয়োজন। এই ভেবে সে মোবাইলে সিসি ক্যামেরা দেখতে দেখতে স্টাডি রুম থেকে বের হয়ে বাইরে বারান্দায় বের হয়ে আসে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখে সেখানে কেউই নেই। সে আবার মোবাইলে ক্যামেরার দিকে তাকালো এবং দেখলো তার মতো দেখতে লোকটা এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এবং সেই লোকটা এখন ক্যামেরার দিকে না তার দিকে তাকিয়েই মিচকি হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেন আরাফের অপেক্ষাতেই সে ছিল এতক্ষণ। আরাফ বুঝতে পারে ক্যামেরায় ইনফ্রারেড আলোতে কোনোভাবে তাকে দেখা গেলেও বাস্তবে তাকে দেখা সম্ভব হবে না। আরাফ তখন মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে চোখ রেখে ধীরে ধীরে বারন্দার সেই জায়গাটার দিকে এগিয়ে গেল। কাছাকাছি গিয়ে সে এক হাত দূরত্বে গিয়ে সে দাঁড়িয়ে সোজা সামনে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “তুমি কে? আমার জীবনে কেন এসেছো?”
কিন্তু আরাফ কোনো উত্তর শুনতে পায়না। সে এবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় সামনে দাঁড়ানো তার মতো দেখতে লোকটা হঠাৎ তার দিকে হাত বাড়ায়। আরাফ মারাত্মক ভয় পেয়ে যায়। লোকটা তার দিকে হাত বাড়িয়ে হঠাৎ তার একটা হাত ধরে ফেলে। এবং আরাফ সত্যি সত্যি তার হাত ধরার মতো একটা কিছু অনুভব করে। সাথে সাথে সে একটা হ্যাঁচকা টান অনুভব করে এবং তার হাত থেকে মোবাইলটা ছিটকে নিচে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে সে আবিষ্কার করে সে একটা অন্ধকার স্থানে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে মোবাইলটাও নেই। কোনো আলোও নেই। সে অনুভব করে তার সামনে পিছে উপরে নিচে কিছুই নেই। সে এক অতল অন্ধকারে কোনো একভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সে খুবই ভয় পেয়ে যায় আর চিৎকার করে উঠে। শিউলিকে সে জোরে জোরে ডাকতে থাকে। কিন্তু সেই আওয়াজ যেন এই জগৎ থেকে বের হতে পারছেনা। সে জোরে বলতে থাকে, “আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছ? আমাকে এখান থেকে বের করো!”
আরাফ এবার দেখতে পায় তার মতো দেখতে সেই লোকটা এবার তার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে চিৎকার করে বলে, “আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছ? আমাকে নিয়ে চলো আমার বাড়িতে।” সামনে দাঁড়ানো মানুষটা এবার অবিকল আরাফের কন্ঠে বলে ওঠে, “তোমাকে তোমার বাড়িতেই নিয়ে এসেছি আমি।”
আরাফ অবাক হয়। “মানে!”
- “মানে তুমি তোমার আসল জগতেই চলে এসেছো এবার। অনেকদিন পর তোমাকে বাগে পেয়েছি। এবার আমি যাবো আমার আসল বাড়িতে।” শান্ত কন্ঠে জবাব দিল সামনে থাকা আরাফের প্রতিরূপ।
আরাফ অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। সামনে থাকা আরাফের প্রতিরূপ বলতে থাকে, “মনে পড়ে সেদিনের কথা যেদিন ঠিক এভাবেই আমার হাত ধরে আমাকে এই জগতে নিয়ে এসেছিলে? হ্যাঁ, আমিই আসল আরাফ। আর তুমি এই জগতেরই বাসিন্দা। আমাকে এই জগতে নিয়ে এসেছিলে তুমি এভাবেই আমার পিছে লেগে থেকে। আমাকে এই জগতে নিয়ে এসে ঠিক এইভাবেই তুমি আমাকে অতল অন্ধকারে রেখে আমার বাড়িতে গিয়ে আমার জীবন নিয়ে চলা শুরু করেছিলে। এবং এক সময় তুমি তোমার আসল রূপ আসল জীবন ভুলে গিয়ে আমার জীবনকে এমনভাবে অনুভব করা শুরু করেছিলে যে নিজের আসল পরিচয়টাই ভুলে গিয়েছো তুমি। কিন্তু ভিতর থেকে তুমি তো আর আমি নও। সেই জন্যে আমার জীবনের অনেক কিছুই তুমি সহ্য করতে পারো না। তাই তুমি সবার সাথে তুচ্ছ ব্যপার নিয়ে রাগ দেখাও। আমার দৈনিক জীবনের কোনো অভ্যাসেই তুমি অভ্যস্থ হতে পারোনি। তাই তুমি কখনোই আমি হতে পারোনি।”
হঠাৎ করেই সবকিছুই আরাফের মনে পড়ে গেল। সে কে। সে আগে কোথায় ছিল, কিভাবে এই জগৎ থেকে সে আসল আরাফের জগতে গিয়ে নিজের সবকিছু ভুলে গিয়েছিল সব মনে পড়লো। কিন্তু সে তো এ জগতে থাকতে পারবেনা বলেই আরাফের জগতে গিয়েছিল। এই অন্ধকার জগতে সে অনন্তকাল ধরে ছিল। সামনেও অনন্তকাল থাকতে হবে। সেটা সে হতে দিবেনা। তাই সে সামনে থাকা আরাফকে আঘাত করতে হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু কোনো এক কারণে সে আসল আরাফকে ছুঁতে পারলো না। আসল আরাফ একটু হেসে বলল, “আমি যখন তোমাকে ধরে এখানে নিয়ে এসেছি সাথে সাথে তুমি এই জগতে আঁটকা পড়ে গেছো। তুমি আর আমাকে ছুঁতে পারবে না। এরপর তুমি আমাকে তখনি ছুঁতে পারবে যখন আমি আমার আসল জগৎ থেকে তোমার কাছে যাব। আর আমি কখনোই তোমার দিকে ধরা দিতে যাব না। কথা দিলাম তোমাকে। তোমার মতো আমার এই স্মৃতি মুছেও যাবেনা, কারণ আমি মানুষ, আর তুমি মানুষ নও।” তারপর আসল আরাফ পিছিয়ে গিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
*** আরাফ যখন বাস্তব জগতে তার নিজের বাড়িতে বারান্দার সেই জায়গাটায় ফিরে এলো তখনও মোবাইলটা ফ্লোর স্পর্শ করেনি। অর্থাৎ সময় এখানে বলতে গেলে এক ন্যানো সেকেন্ডও পার হয়নি। আরাফ এখানে পা রাখার সাথে সাথে মোবাইলটা সশব্দে ফ্লোরে পড়লো। দ্রুত মোবাইলটা তুলতে তুলতে দেখে তার স্ত্রী বেডরুম থেকে বের হয়ে আসছে। জিজ্ঞাসা করলো, “কি হল? কি পড়ে গেল?” আরাফ দ্রুত এগিয়ে গিয়ে তার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে। যেন কতদিন তাকে একটু স্পর্শ করেনা। শিউলি অবাক হয়ে বলে, “কি হয়েছে তোমার?” আরাফ কিছু না বলে শুধু তাকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
৩১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২৯
মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ বলেছেন: ধন্যবাদ।
২|
০২ রা নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।
০২ রা নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৯
মোঃ আরিফুজ্জামান আরিফ বলেছেন: হাহা! পোস্টের রিচ কম। তেমন কেউ মনে হয় পড়েনি।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:০০
রাজীব নুর বলেছেন: আরাফ শিউলির গল্প ভালো লাগলো।
সুন্দর গল্প।