![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে শিশুদের দমন পীড়ন করে হত্যা করা যেন সহজ সাধারণ এক ঘটনা। গত বুধবার দুটি শিশু হত্যার খবর বেরিয়েছে। খুলনায় পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছে, ১২ বছরের শিশু মো. রাকিবকে আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কম্পাউন্ডে লাগেজের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক শিশুর লাশ। পুলিশ বলেছে, শিশুটির শরীরের বিভিন্ন ¯’স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও আয়রনের ছ্যাঁকার দাগ রয়েছে। অভাবের তাড়নায় স্কুলের পড়া ছেড়ে গ্যারেজে কাজ নিয়েছিল শিশু রাকিব। কাজ করে ঠিকমতো পয়সা পেত না। পান থেকে চুন খসলেই গালাগালি, মারধর জুটতো। সইতে না পেরে আরেকটি গ্যারেজে কাজ নিয়েছিল। বলা হয়েছে, এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে গ্যারেজ মালিক শরীফ ও তার সহযোগীরা শিশুটিকে ধরে মোটর সাইকেলের চাকায় হাওয়া দেয়ার কমপ্রেসার মেশিনের নল ঢুকিয়ে দেয় তার মলদ্বারে। এরপর চালু করে দেওয়া হয় কমপ্রেসার। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ¯’স্থানীয় থানার ওসি জানিয়েছেন, রাকিবের শরীরে অস্বাভাবিক পরিমাণ হাওয়া প্রবেশ করানোর কারণে তার নাড়িভূঁড়ি ছিঁড়ে যায় ও ফুসফুস ফেটে যায়। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অকেজো হয়ে গেলে সে মারা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, হতভাগা রাকিব সোমবার বিকেলে রঙ কেনার জন্য পিটিআই মোড় থেকে টুটপাড়া কবর¯’স্থানের মোড়ের একটি দোকানে গেলে তার পাশে থাকা শরীফের গ্যারেজের মিঠু রাকিবকে ধরে নিয়ে যায়। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গত মঙ্গলবার এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চারজনের মধ্যে দু’জন কলেজ ছাত্র। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে, গত জুলাই মাসে ৮৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৫ জন। আর ধর্ষণের পর হত্যা ৯ জনকে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৯ জনকে। শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে ১০ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার সংখ্যা একজন। ১ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় এক কর্মজীবী তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে তার পুরুষ সহকর্মীসহ অন্যান্যের দ্বারা ধর্ষিত হয় সে। ২১মে রাজধানীর কুড়িল এলাকায় এক কর্মজীবী মহিলা গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল। সোমবার গভীররাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ সংলগ্ন নার্সিং কলেজের সামনে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া লাগেজের শিশুর লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক বিভাগের সিনিয়র সহকারী অধ্যাপক ডা. আবু সামা জানিয়েছেন, ধারাবাহিক নির্যাতনের ফলেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। সারা শরীরের চামড়া ওঠানো ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া মলদ্বারে বড় একটি ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। হত্যার আগে তাকে বলৎকার করা হয়ে থাকতে পরে বলেও তিনি মনে করেন। সিলেটে নির্মম আঘাত ও নিপীড়নে নিহত ১৩ বছরের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনের হত্যার সাথেও কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থকরণের বিষয়টি যুক্ত হয়ে আছে। খুলনার আলোচ্য হত্যাকা- কেবলমাত্র বর্ণিত ঘটনার জন্যই ঘটেছে কি না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অব¯’াদৃষ্টে মনে হয়, অভিযুক্ত শরীফ এভাবে এই একটিমাত্র ঘটনাই হয়তো ঘটায় নি। পেটে বাতাস ঢুকিয়ে মেরে ফেলার খবর বিরল হলেও বর্বর শরীফের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে তার কাছে এটা নতুন কিছু নয়। রাজিবের চিৎকারে তাকে কেউ বাঁচাতে না এলেও রাকিবের আর্ত-চিৎকারে লোকজন গ্যারেজে গিয়ে রাকিবকে উদ্ধার করে ¯’স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে গিয়েছিল। সংগত প্রশ্ন হচ্ছে, কেন সমাজে এই বর্বরতা? একজন প্রশ্ন তুলেছেন, আমরা নিজেদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছি না আমরা কি মানুষ! আমরা কাদের হত্যা করছি? রাষ্ট্র-প্রশাসনে নৈতিকতা মূল্যবোধের চর্চা না থাকলে সাধারণের মধ্যে তা আশা করা নিরর্থক। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত একশ্রেণির সদস্যের মধ্যে দুর্নীতি, দুর্বৃৃত্তপরায়ণতা এমন মাত্রায় বিস্তার লাভ করেছে যে তার সর্বগ্রাসী থাবা সর্বত্র পড়তে শুরু করেছে। আলোচ্য অপরাধগুলোর মতো নানা অপরাধে উল্লেখিত শ্রেণির জড়িয়ে পড়ার বহু ঘটনা রয়েছে। সমাজ বিশ্লেষকরা যেমনি বলছেন, তেমনি সাধারণ মানুষও মনে করে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার কারণেই সমাজে এ ধরনের অপসংস্কৃতির চর্চা বেড়ে গেছে বা যেতে পারার মতো প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এ কথাও বিভিন্নভাবে বারবার বলা হয়েছে এবং হ”েছ সমাজে বিচারহীনতা, সুবিচারের অভাব, ন্যায়বিচার না থাকা তথা সামগ্রিকভাবে সুশাসনের অভাব সমাজকে একটি নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যা”েছ, যা অত্যন্ত ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক। যাঁরা রাষ্ট্র সমাজ নিয়ে ভাবেন তাদের এনিয়ে ভাববার সময় এসে গেছে। রাষ্ট্র-প্রশাসনে যাঁরা রয়েছেন তাদেরও বিবেচনায় থাকা উচিত দু’একটি ঘটনার বিচার মানেই সমস্যার সমাধান নয়। শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আলোচ্য বর্বরতার উৎস উৎপাটনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
©somewhere in net ltd.