![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বখাটেদের উৎপাত, বিচার সালিস আর অপমান সইতে না পেরে গাইবান্ধায় এক মেধাবী স্কুলছাত্রী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। মৃত্যুর আগে পাঁচ পৃষ্ঠার এক সুইসাইড নোট লিখে গেছে। তাতে রায়হান নামের এক বখাটের সঙ্গে জোর করে বিয়ের আয়োজন আর মাতবরদের কাছে অপমানিত হওয়ার বিষয় উল্লেখ করেছে। শেষে সে লিখেছে, ‘মা আর বাবা, আমি চলে গেলাম তোমাদের ছেড়ে। বখাটের কারণে আমি মানুষ হতে পারলাম না।’
গত ১৫ আগস্ট রাতে আত্মহননের পথ বেছে নেয়া ওই কিশোরীর নাম আমিনা বেগম। সে গাইবান্ধা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং গাইবান্ধা সদরের দুলালের ভিটা গ্রামের আবদুর রউফ মিয়ার মেয়ে। বখাটের নাম রায়হান। সে শহরের জুম্মপাড়ার কুঠিপাড়ার তারা মিয়ার ছেলে।
বখাট রায়হানের কারণে মেধাবী ছাত্রীর আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার ঘটনায় বিদ্যালয় ও শহরে তোলপাড় শুরু হয়। এরপর বিদ্যালয়ের অন্তত ১০ ছাত্রী বখাটেদের উৎপাত থেকে রেহাই পেতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে। এ ঘটনার পরদিন থানায় বখাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগটি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হলে পুলিশ নড়েচড়ে বসে। তারা বখাটে পাকড়াও করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। পাহারা বসায় বিদ্যালয়ের যাতায়াতের রাস্তা, বিভিন্ন মোড় আর মেয়েদের স্কুলের সামনে।
অবশেষে মঙ্গলবার ভোরে পুলিশ অভিযুক্ত বখাটে রায়হানকে গ্রেপ্তার করে। এরপর আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
গাইবান্ধা সদর থানার ওসি রাজিউর রহমান জানান, নিয়মিতই স্কুলে উপস্থিত থাকতো মেধাবী ছাত্রী আমিনা। কিন্তু সুন্দরী বলে চোখের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় বখাটে রায়হানের। স্কুলে যাতায়াতের সময় সে তাকে উত্ত্যক্ত করতো ও কু-প্রস্তাব দিত। আমিনা ভয় আর লজ্জা সঙ্কচে বাবা মাকে ঘটনা খুলে বলেনি। গত ৭ আগস্ট বিকেলে আমিনা শহরের একটি কোচিং সেন্টারে কোচিং করে বাড়ি যাচ্ছিলো। মডার্ন স্কুলের সামনে ওঁৎ পেতে থাকা বখাটে সন্ত্রাসী রায়হান তার সহযোগীদের নিয়ে আমিনাকে জোর করে একটি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায় গরেরবাতা নামক নির্জন স্থানে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর শেষ বিকেলে আমিনার পরিবারের সদস্যরা রায়হান ও আমিনাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসে। খবর পেয়ে রাতে রায়হানের পরিবারের লোকজন স্থানীয় ও শহরের প্রভাবশালী মাতবরদের সহযোগিতায় রায়হানকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমিনাদের বাড়িতে এসে সালিস বৈঠকে বসে।
আমিনার মা শিল্পী বেগম বলেন, বৈঠকে রায়হানের পক্ষে আসা মাতবররা আমিনার সঙ্গে রায়হানের বিয়ের দেয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপ দেয়। একপর্যায়ে ১৬ আগস্ট সন্ধ্যার পর রায়হানের সঙ্গে আমিনার বিয়ে দেয়ার দিন নির্ধারণ করে। জোর করে বিয়ের দিনতারিখ ঠিকঠাক করে রাতে রায়হানকে নিয়ে যায় মাতবররা।
এদিকে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া আর গ্রাম্য সালিশকারীদের অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া বিয়ে মেনে নিতে পারেনি আমিনা। কারণ সে পড়ালেখা করে বড় হতে চায়। তাই তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে রাগে ক্ষোভে অপমানে বিয়ের আগের রাতে আমিনা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। মৃত্যুর আগে ৫ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট লিখে যায়।
আমিনার মা শিল্পী বেগম জানান, বখাটের সঙ্গে জোর করে বিয়ের ব্যবস্থা করায় আর স্থানীয় মাতবরদের দ্বারা অপমান হওয়ায় কথা লিখে লিখে যায় সে। এরপর তার বাবা মাকে উদ্দেশ করে লেখে, মা- আব্বা আমি চলে গেলাম তোমাদের ছেড়ে। বখাটের কারণে আমি মানুষ হতে পারলাম না।
©somewhere in net ltd.