![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই পর্বে আবার একটি নতুন প্রবাদবাক্য ও সেটির উৎপত্তি এবং পিছনে থাকা মূল পৌরাণিক কাহিনীটি আপনাদের সামনে পরিবেশন করতে চলেছি ।
আজকের প্রবাদবাক্যটি হল “ জড়ভরত” ।
“ জড়ভরত” এই প্রবাদ বাক্যটির ব্যাবহারিক অর্থ হল কুঁড়ে বা অলস প্রকৃতির মানুষ। যদিও এটির উৎপত্তির গল্পের সঙ্গে ব্যাবহারিক অর্থ বেমানান, কিন্তু কালক্রমে লোকমুখে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান প্রবাদ বাক্যটি আমাদের মাতৃভাষায় যুক্ত হয়ে ভাষার ভাবপ্রকাশক ভঙ্গীকে আরও জোরদার করেছে এ বিষয়ে সন্ধেহের কোন অবকাশ নেই।
এবার আসা যাক জড়ভরত কে ছিলেন সেই প্রসঙ্গে,
জড়ভরত সম্পর্কে আমরা জানতে পারি "মহাভারত" থেকে ।
প্রাচীন কালে ভরত নামে একজন সত্যনিষ্ঠ রাজা ছিলেন , পরবর্তীতে তাঁর নাম অনুসারে ভারতবর্ষ নামটির সৃষ্টি হয়। এই ভরত রাজা ছিলেন খুব ধার্মিক , তিনি রাজা রুপে অভিসিক্ত হবার কিছুকাল পড়ে সংসার ত্যাগ করে নিরালায় ঈশ্বর এর উপাসনা করতে লাগলেন , এই রূপ কিছুকাল অভিহিত হবার পর যখন তাঁর সংসারের প্রতি মোহ প্রায় কেটে যেতে বসেছিল , সেই সময়ে এক আকস্মিক ঘটনা তাঁর জীবনের মোর ঘুরিয়ে দিল।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল যে সনাতন ধর্মালম্বিরা মনে করেন যে মৃত্যুর পর আবার পুনরজন্ম লাভ হয় অর্থাৎ আমার মৃত্যু হলেও ‘আমি’ থেকে যায় এবং কর্ম অনুসারে সেই ‘আমি’ রূপ আত্মা নতুন দেহ লাভ করে মর্তে জন্ম নেন। যাই হোক এই প্রসঙ্গে আর একদিন আলোচনা করা যাবে। এবার আসা যাক সেই আকস্মিক ঘটনা প্রসঙ্গে , তো এইভাবেই ভরত রাজা ইশ্বর চিন্তায় কালপাত করতে থাকলেন ।
একদিন তিনি নদীতে স্নান করতে গিয়ে দেখলেন যে একটি হরিণ শিশু স্রোতে ভেসে যাচ্ছে , এই দেখে তাঁর মনে খুব দয়া হল এবং তিনি সেই মৃগ শিশুটিকে অতি যত্ন সহকারে জল থেকে তুলে তাঁর আশ্রমে নিয়ে এসে সেবা শুশ্রূষা করে লালন পালন করতে থাকলেন, এমন ভাবে দিনে দিনে তাঁর সেই হরিণ শিশুটির প্রতি অন্ধ মায়া এমনই প্রবল হল যে সর্বদা তার চিন্তা করতে করতে একদিন তিনি ঈশ্বর চিন্তা প্রায় ত্যাগ করে বসলেন।
এই রূপ সংসারের মোহ ত্যাগ করলেও তাঁকে একটি হরিণ শিশু মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলল , একদিন যখন সেই মৃগটি বনের মধ্যে চরতে চরতে সিংহের কবলে পড়ে মারা গেল তখন ভরত রাজা খুব দুঃখ পেলেন এবং শেষ জীবনে রাতদিন হরিণের জন্য শোক করে মারা গেলেন এবং পরজন্মে হরিণ রুপে জন্মলাভ করলেন । এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল যে গীতার একটি শ্লোকে আছে, যার বাংলা সারমর্ম হল মৃত্যুর আগে যে যেমন চিন্তা করে সে পরবর্তী জীবনে সেই রূপ লাভ করে। এই ক্ষেত্রে পরবর্তী জন্মে ভরত রাজা একটি হরিণ রুপে জন্মলাভ করলেন ।
মৃগ পরবর্তী জন্মে তিনি এক জাতিস্মর হিসাবে একটি ব্রাহ্মন বংশে জন্ম গ্রহন করেন এবং এই জন্মেও তার নাম হয় ভরত । জাতিস্মর হবার কারনে অর্থাৎ পূর্ব জন্মের কথা স্মরন থাকার কারনে তিনি এই জন্মে একই ভাবে ঈশ্বর চিন্তা নিয়ে এমন মগ্ন হলেন যে সংসারের সব কিছু থেকে তিনি নিজেকে প্রায় সরিয়ে নিলেন যাতে তার ঈশ্বর চিন্তায় কোন ব্যাঘাত সৃষ্ট না হয় । তিনি রাত দিন ঈশ্বর চিন্তাতে এতই সমর্পিত ছিলেন যে সংসারের কোন বিদ্যাই রপ্ত করে উঠতে পাড়েন নি,এমনকি কথাবার্তাও বলতেন খুব কম এবং তাও জড়ানো স্বরে । এই রূপ স্বভাব এর জন্য তাঁকে কম অত্যাচার সইতে নয় নি । সংসারের কোন কাজে না লাগাতে তার ভাইয়েরা তাঁকে শেষ মেশ মাঠে মাঠে পশুপাখি তাড়ানোর কাজে নিযুক্ত করলেন , এবং তার নাম হয়ে গেল জড়ভরত। যেহেতু সাধারণ মানুষ তাঁকে অলস ভেবেছিলেন । তিনিও অবিরাম ঈশ্বর চিন্তা করে গান করে হাততালি দিয়ে পাখি তাড়িয়ে তার কাজ করে চললেন ।
একদিন এক রাজা কপিল মুনির আশ্রমে দীক্ষা নিতে পালকি করে যাচ্ছিলেন, সেই পথ এর ধারে জড়ভরত বসে ঈশ্বর এর নাম করছিলেন , এমন সময়ে তার একজন পালকি বাহক আসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি হুকুম করলেন যে আর একজন কে খুঁজে নিয়ে আসতে । রাজার অনুচরেরা এদিকে ওদিকে খুঁজে শেষমেশ জড়ভরত কে বসে থাকতে দেখে তাঁকে নিয়ে এলেন এবং তিনিও কোন বাক্যব্যায় না করে পালকি কাঁধে নিয়ে অন্যদের সঙ্গে চলতে থাকলেন । কিন্তু পালকি প্রবল ভাবে দুলতে শুরু করল , রাজা মশাই তো বেহারাদের উপর রাগ করতে লাগলেন , তিনি বললেন – এ কি, কেমন করে চলছ তোমরা ? ফেলে দেবে নাকি !
বেহারারা বললেন প্রভু – আমরা আগেও যেমন চলছিলাম এখনও তেমনি চলছি কেবল মাত্র পালকি দুলছে ঐ নতুন লোকটির কারনে !
ব্যাপারটি হল – জর ভরত ছিলেন প্রবল ধার্মিক এবং অহিংসবাদী ! পাছে তার পায়ের চাপে পথের পিঁপড়ে, পোকামাকড় মারা যায় তাই তিনি লাফিয়ে লাফিয়ে চলছিলেন । রাজা মশাই তার কাণ্ড দেখে বললেন , ভাল করে পালকি বইতে পার না ? কাকে তুমি বইছো জান না ?
এতো ক্ষণ জর ভরত এর মুখে কোন কথা ছিল না , যেন তিনি কিছুই শুনতে পারেন নি । এবার তিনি প্রতি উত্তরে বললেন – রাজন তাহলে শুনুন কে কাকে বহন করে ? এই পৃথিবী আমাদের পা গুলিকে , পা বহন করে উরুকে, উরু বক্ষ কে , বক্ষ গ্রীবা আর গ্রীবা মস্তিষ্ককে । আপনি তো পালকিতে বসে আছেন , আমি তো আপনাকে বহন করছি না , আমি করছি পালকীটাকে ।
নেহাত সাধারন মানুষের মুখে রাজা এমন কথা শুনে বুঝলেন ,ইনি সাধারন মানুষ নন – নিশ্চয়ই কোন ছদ্মবেশী তপস্বী । এই রূপ সেই রাজন জড় ভরত এর কাছ থেকে ঈশ্বর তত্ত্ব শুনে তার কাছে দীক্ষা গ্রহণ করে দেশে ফিরে গেলেন। এই কাহিনী থেকে বোঝা যায় ,জর ভরত যদিও সাংসারিক কাজকর্মে বিমুখ ছিলেন , কিন্তু সে অর্থে আমরা এই প্রবাদটির ব্যাবহার করে থাকি সেই অর্থে নয়- তিনি মোটেই কুঁড়ে বা অলস ছিলেন না।
কৃতজ্ঞতা : বন্দনা গুপ্ত
বাংলা প্রবাদের আড়ালে রূপকথা ।পর্ব ১
বাংলা প্রবাদের আড়ালে রূপকথা । পর্ব ২
বাংলা প্রবাদ এর আড়ালে রূপকথা। পর্ব ৩
১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২২
সিস্টেম অ্যাডমিন বলেছেন: ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১০
মামুন রশিদ বলেছেন: সুন্দর পোস্ট । ভালো লেগেছে ।