![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আজ তার বার্ধক্যে এসে পড়েছে, শৈশব পেড়িয়ে যৌবন ও সে হারিয়েছে, তাই বৃথা আনন্দ করো না, ক্ষণিকের সময় হাতে, নশ্বর এ পৃথিবী যেন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। সে মৃত্যু আসার আগে আজ তীর্থে ভ্রমণ করো, পবিত্র জলে হে পৃথিবী তুমি অবগাহন করো। ধুয়ে ফেলো তোমার গায়ের শত কালিমা, সাজিয়ে নাও বিদায়ের আগে আবার আঙিনা।
তালাক /বিবাহ বিচ্ছেদ :
বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ এই পোস্টের উদ্দেশ্য মোটেও তালাকে উদ্বুদ্ধ করা নয় বা তালাক প্রচার করা নয়, বরং যথাযথ দলিল প্রমাণের আলোকে তালাক সম্পর্কে নির্ভেজাল তথ্য তুলে ধরা ।
প্রাচীন সংস্কৃতি ও সভ্যতায় বিবাহ বিচ্ছেদ:
বিবাহ বিচ্ছেদ একটি আইনি প্রক্রিয়া, যার হাজার বছরের পুরনো দীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময় ইতিহাস রয়েছে। প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রথার উপর ভিত্তি করে প্রতি যুগেই বিবাহ বিচ্ছেদের আইন ও প্রক্রিয়ায় নানা পরিবর্তন হয়েছে। ব্যাবিলন, মিশর ও গ্রীকের মত প্রাচীন সভ্যতায় বিবাহ বিচ্ছেদ স্বীকৃত ছিল। যদিও তা কেবল ধনী ও ক্ষমতাশীলদের জন্য অনুমোদিত এবং শুধুমাত্র ব্যভিচার ও নৃশংসতার মত অপরাধের জন্য প্রযোজ্য ছিলো। যেহেতু সেসময় নারীরা পুরুষদের সম্পদ হিসেবে গণ্য হতো তাই তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ করার কোন অধিকার ছিল না। রোমান সাম্রাজ্যের নারীরা বিবাহ বিচ্ছেদের ঊদ্যোগ নিতে পারতো যদি তাদের স্বামীরা বৈবাহিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হতো। মধ্যযুগে বিবাহ ও বিচ্ছেদের বিষয়ে ক্যাথলিক চার্চের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিলো। বিবাহ বিচ্ছেদ তখন স্বীকৃত ছিল না, একমাত্র উপায় ছিল বিবাহকে বাতিল ঘোষণা করা, যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে করা হত এবং কেবলমাত্র ধনী ও ক্ষমতাশীলদের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। (The History of Divorce: A Look Back at the Evolution of Marriage Dissolution)
ভারতবর্ষে বিবাহ বিচ্ছেদ:
প্রাচীন ভারতবর্ষে হিন্দুধর্মে আপস্তস্ব ধর্মসূত্র মতে, যে স্বামী স্ত্রীকে ত্যাগ করে তার কঠোর দণ্ড হতে পারে, কিন্তু যে স্ত্রী স্বামীকে ত্যাগ করে, প্রায়শ্চিত্তের দ্বারা তার শুদ্ধি হয়। বন্ধ্যা নারী দশ বছর পরে আইনত পরিত্যাজ্য হত, যে নারী মৃত্যুবৎসা বা শুধু কন্যাসন্তানের জন্ম দেয়, সে বারো বছর পর পরিত্যাজ্য হত, এবং কলহপরায়ণা তৎক্ষণাৎ পরিত্যাজ্য।’বিবাহ বিচ্ছেদ পাশ্চাত্য অর্থে স্বীকৃত ছিল না। যদিও এমন শাস্ত্রগ্রন্থও আছে, যেখানে নিয়ম আছে যে, প্রতিকুল পত্নীকেও ত্যাগ করা যাবে না। কিন্তু পারস্পরিক দ্বেষ থাকলে দম্পতি বিচ্ছিন্ন হতে পারে। অর্থশাস্ত্র-তে আছে ‘স্বামী যদি স্ত্রীর দোষে বিচ্ছেদ চায়, তবে সে স্ত্রীর কাছ থেকে যা পেয়েছে তা ফেরত দেবে। যদি অনুরূপ কারণে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে মুক্তি চায়। তবে স্বামী তার কাছ থেকে যা পেয়েছে তা ফেরত দেবে না। ধর্মবিবাহে বিবাহ বিচ্ছেদ নেই।’ এই গ্রন্থে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিদ্বেষের কারণে উভয়পক্ষকে বিচ্ছেদের অধিকার দিয়েছে, কিন্তু বিচ্ছেদের বিষয়ে পুরুষের স্বাধীনতা সম্মান পেলেও নারীকে অর্থনৈতিক দণ্ড ভোগ করতে হয়েছে, কারণ সে তার স্ত্রীধন হারাচ্ছে। (প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ)
হিন্দু সমাজে বিবাহকে “অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক” হিসেবে দেখা হয়। ঋষি মনুর মতে, স্ত্রীর কর্তব্য এমনকি মৃত্যুর পরও চলতে থাকে এবং তার দ্বিতীয় স্বামী থাকতে পারে না। এই ধারণার ভিত্তিতে বাংলাদেশে হিন্দুদের জন্য তালাকের কোনো বৈধতা নেই। ভারতে ১৯৫৫ সালে প্রণীত হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী নিম্নলিখিত কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ সম্ভব: ১. ব্যভিচার (Adultery)। ২. নিষ্ঠুরতা (Cruelty)। ৩. ত্যাগ করা (Desertion)। ৪. মানসিক ব্যাধি বা দুরারোগ্য রোগ। ৫. ধর্ম পরিবর্তন করা। ৬. সাত বছর ধরে নিখোঁজ থাকা। এই আইনের আওতায় ভারতীয় হিন্দুরা আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স নিতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে এই আইন কার্যকর নয় বলে এখানকার হিন্দুরা এই সুবিধা পান না। (SPARK ADVOCATES)
পাশ্চাত্যে বিবাহ বিচ্ছেদ:
পাশ্চাত্যের ইংল্যান্ডের সংস্কৃতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ ছিলো খুব জটিল এবং প্রভাবশালী লোকদের মাঝে সীমাবদ্ধ। তাই তারা স্ত্রীর কাছ থেকে মুক্তি লাভের জন্য তাদের দড়ি বেঁধে নিলামে বিক্রি করে দিতো। ক্ষেত্রবিশেষে নামমাত্র মূল্যের বিনিময়ে হলেও। এটি ১৭ শতাব্দীতে ব্যাপক প্রচলিত প্রথা ছিলো যার প্রমাণ বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেও পাওয়া যায়। ১৯১৩ সালে একটি আদালতে এক মহিলা মামলা দায়ের করেন যে, তার স্বামী নিজের সহকর্মীর নিকট এক ইউরোর বিনিময়ে তাকে বিক্রি করে দেয়। ইংলিশ দার্শনিক John Locke ফরাসি বিজ্ঞানী Nicolas Toinard এর নিকট স্ত্রী বিক্রির পরামর্শ করে একটি চিঠি লেখেন যা হুবহু তুলে ধরা হলো, "Among other things I have ordered you a beautiful girl to be your wife. If you do not like her after you have experimented with her for a while, you can sell her, and I think at a better price than a man received for his wife last week in London where he sold her for four sous a pound; I think yours will bring 5 or 6 pounds because she is beautiful, young, and very tender and will fetch a good price in her condition."
অপরপক্ষে একজন নারীর জন্য বিবাহ বিচ্ছেদের দাবী করা ছিলো খুবই লজ্জাজনক কারণ তাকে আদালতে প্রমাণ করতে হতো তার স্বামী একজন অক্ষম পুরুষ। এমনকি প্রয়োজনে আদালতের প্রতিনিধিদের সামনে তাদের সঙ্গম করে দেখাতে হতো। (How English Men Used To Organize Wife-Selling Auctions)
বর্তমানে পাশ্চাত্য সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের হার অত্যাধিক মাত্রায় বেড়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব তথা ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর বিবাহ-বিচ্ছেদ আইন অনুযায়ী, দুইজন ব্যক্তি একে অপরের সহিত বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার দিন থেকে বিবাহ-বিচ্ছেদের দিন পর্যন্ত, তাদের মধ্যে অধিক উপার্জনশীল ব্যক্তিটি যেই পরিমাণ অর্থ ও সম্পদের মালিক হবেন, বিচ্ছেদের পর অপরজন অল্প-উপার্জনশীল বা উপার্জনহীন ব্যক্তিটি সেই অর্থ ও সম্পদের অর্ধেক পাওয়ার অধিকার রাখেন। বিচ্ছেদ-পরবর্তী সময়ে প্রাক্তন স্ত্রীকে দীর্ঘ সময় ধরে বড় অঙ্কের খোরপোশ (Alimony) দিতেও আইনগতভাবে বাধ্য হন পুরুষরা। এছাড়াও প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে সন্তান থাকলে সাধারণত সন্তানদেরকে হস্তান্তর করা হয় তাদের মায়ের কাছে, তারপর প্রতি মাসে তাদের বিচ্ছেদ-কৃত বাবার থেকে আদায় করে মায়ের হাতে তুলে দেয়া হয় বিশাল অঙ্কের Child Support,এই অর্থগুলো দিতে কোনও রকম হেরফের হলেই প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে দিতে পারে প্রাক্তন স্ত্রীরা, যার ফলাফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাক্তন স্বামীকে কারাবন্দি হতে হয়। বাবার কাছে সন্তান হস্তান্তর বা উভয়ের Shared Custody-ও হয়, কিন্তু তা ঘটে অনেক কম। ফলস্বরূপ পাশ্চাত্যে বিয়ের প্রতি মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে এবং পরকিয়া ও লিভ টুগেদারের প্রতি মানুষ ঝুঁকে পড়ছে। (AID For MEN)
আরবের বিবাহ বিচ্ছেদ
জাহেলি যুগে আরবের সংস্কৃতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিয়ে ও বিচ্ছেদ উভয়ক্ষেত্রেই ছিলো পুরুষদের স্বেচ্ছাচারিতা, নারীদের প্রতি এক নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা ছিল। পুরুষেরা ইচ্ছামত বিয়ে করতো তেমনি যখন ইচ্ছা তখনই তালাক দিতো। এক স্ত্রীকে শতবার তালাক দিতে পারতো। একবার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিত, তারপর যখন ইদ্দত শেষ হওয়ার উপক্রম করত তখন প্রত্যাহার করে নিত, যাতে স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ করতে না পারে। তারপর তার হক আদায়ের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে বরং কিছু দিনের ভেতর আবারও তালাক দিত এবং ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে আগে প্রত্যাহার করে নিত। এভাবে সে বেচারি মাঝখানে ঝুলে থাকত- না অন্য কোনো স্বামী গ্রহণ করতে পারত, আর না বর্তমান স্বামীর কাছ থেকে নিজ অধিকার আদায় করতে পারত। সে সময় নারীদের বিবাহ বিচ্ছেদের কোন অধিকার ছিলো না। (কালের কণ্ঠ)
ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ বিচ্ছেদ:
ইসলাম এমন এক শাশ্বত জীবন ব্যবস্থা যেখানে আল্লাহ তায়ালা এমন এক বিধান নাজিল করেছেন, যাতে স্বামী স্ত্রী কেউ স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে না। বিবাহ বিচ্ছেদের এমন নিয়ম দান করেছেন যা উভয়ের জন্য সহজ ও কল্যানকর। বিয়েতে যেমন সুনির্দিষ্ট কিছু বিধান রয়েছে তেমনি বিচ্ছেদের বেলায়ও আল্লাহ সুস্পষ্ট বিধান নাজিল করেছেন।
ইদ্দত হিসাব করে তালাক :
"হে নবী, (বল), তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে, তখন তাদের ইদ্দত অনুসারে তাদের তালাক দাও এবং ‘ইদ্দত হিসাব করে রাখবে এবং তোমাদের রব আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা তাদেরকে তোমাদের বাড়ী-ঘর থেকে বের করে দিয়ো না এবং তারাও বের হবে না। যদি না তারা কোন স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমারেখাসমূহ অতিক্রম করে সে অবশ্যই তার নিজের ওপর যুলম করে। তুমি জান না, হয়তো এর পর আল্লাহ কোন পথ তৈরী করে দিবেন। (সুরা তালাক :১)
# আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বর্ণনা করেন যে, তিনি তার স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দিয়েছিলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গোচরীভূত করলে তিনি খুব নারায হয়ে বললেনঃ তার উচিত হয়েয অবস্থায় তালাক প্রত্যাহার করে নেয়া এবং স্ত্রীকে বিবাহে রেখে দেয়া। এই হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার পর আবার যখন স্ত্রীর হায়েয হবে এবং তা থেকে পবিত্র হবে, তখন যদি তালাক দিতেই চায়, তবে সহবাসের পূর্বে পবিত্র অবস্থায় তালাক দিবে। এই ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক প্রদানের আদেশই আল্লাহ তা'আলা (আলোচ্য) আয়াতে দিয়েছেন৷ [বুখারী: ৫২৫১, মুসলিম: ১৪৭১]#
তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ঋতুবর্তী হওয়ার কাল অতিক্রম করে গেছে, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা যদি সংশয়ে থাক এবং যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদের ইদ্দতকালও হবে তিন মাস। আর গর্ভধারিনীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।(সুরা তালাক:৩)
তালাকের বিষয়ে সাক্ষী রাখা :
"অতঃপর যখন তারা তাদের ইদ্দতের শেষ সীমায় পৌঁছবে, তখন তোমরা তাদের ন্যায়ানুগ পন্থায় রেখে দেবে অথবা ন্যায়ানুগ পন্থায় তাদের পরিত্যাগ করবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে ন্যায়পরায়ণ দুইজনকে সাক্ষী বানাবে। আর আল্লাহর জন্য সঠিক সাক্ষ্য দেবে। তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনে এটি দ্বারা তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন।" (সুরা তালাক :২)
ইদ্দতচলাকালীন স্ত্রীর সাধ্যমত ভরণপোষণ করা:
"তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর তাদেরকেও সেরূপ গৃহে বাস করতে দিবে ; তাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে না সঙ্কটে ফেলার জন্যে ; তারা গর্ভবতী হয়ে থাকলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের জন্যে ব্যয় করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্য দান করে তবে তাদেরকে পারিশ্রমিক দিবে এবং তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি নিজ নিজ দাবিতে অনমনীয় হও তা হলে অন্য নারী তার পক্ষে স্তন্য দান করবে। "(সুরা তালাক:৬)
"আর মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে, (এটা) তার জন্য যে দুধ পান করাবার সময় পূর্ণ করতে চায়। আর পিতার উপর কর্তব্য, বিধি মোতাবেক মায়েদেরকে খাবার ও পোশাক প্রদান করা। সাধ্যের অতিরিক্ত কোন ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করা হয় না। কষ্ট দেয়া যাবে না কোন মাকে তার সন্তানের জন্য, কিংবা কোন বাবাকে তার সন্তানের জন্য। আর ওয়ারিশের উপর রয়েছে অনুরূপ দায়িত্ব। অতঃপর তারা যদি পরস্পর সম্মতি ও পরামর্শের মাধ্যমে দুধ ছাড়াতে চায়, তাহলে তাদের কোন পাপ হবে না। আর যদি তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে অন্য কারো থেকে দুধ পান করাতে চাও, তাহলেও তোমাদের উপর কোন পাপ নেই, যদি তোমরা বিধি মোতাবেক তাদেরকে যা দেবার তা দিয়ে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।" (সুরা বাকারা:২৩৩)
ইদ্দত পরে প্রাক্তন স্বামীকে পুনঃ বিবাহকরণ:
"আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে অতঃপর তারা তাদের ইদ্দতে পৌঁছবে তখন তোমরা তাদেরকে বাধা দিয়ো না যে, তারা তাদের স্বামীদেরকে বিয়ে করবে যদি তারা পরস্পরে তাদের মধ্যে বিধি মোতাবেক সম্মত হয়। এটা উপদেশ তাকে দেয়া হচ্ছে, যে তোমাদের মধ্যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে। এটি তোমাদের জন্য অধিক শুদ্ধ ও অধিক পবিত্র। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।" (সুরা বাকারা:২৩২)
প্রত্যাহারযোগ্য তালাক দুইবার:
"তালাক দু’বার। অতঃপর বিধি মোতাবেক রেখে দেবে কিংবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দেবে। (সুরা বাকারা:২২৯)
"অতঃপর যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে বিবাহ না করে। অতঃপর সে (স্বামী) যদি তাকে তালাক দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যে, তারা একে অপরের নিকট ফিরে আসবে, যদি দৃঢ় ধারণা রাখে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে। আর এটা আল্লাহর সীমারেখা, তিনি তা এমন সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট করে দেন, যারা জানে।" (সুরা বাকারা:২৩০)
সহবাসের পূর্বাবস্থায় তালাক :
"তোমাদের কোন অপরাধ নেই যদি তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এমন অবস্থায় যে, তোমরা তাদেরকে স্পর্শ করনি কিংবা তাদের জন্য কোন মোহর নির্ধারণ করনি। আর উত্তমভাবে তাদেরকে ভোগ-উপকরণ দিয়ে দাও, ধনীর উপর তার সাধ্যানুসারে এবং সংকটাপন্নের উপর তার সাধ্যানুসারে। সুকর্মশীলদের উপর এটি আবশ্যক।" (সুরা বাকারা:২৩৬)
"আর যদি তোমরা তাদেরকে তালাক দাও, তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে এবং তাদের জন্য কিছু মোহর নির্ধারণ করে থাক, তাহলে যা নির্ধারণ করেছ, তার অর্ধেক (দিয়ে দাও)। তবে স্ত্রীরা যদি মাফ করে দেয়, কিংবা যার হাতে বিবাহের বন্ধন সে যদি মাফ করে দেয়। আর তোমাদের মাফ করে দেয়া তাকওয়ার অধিক নিকটতর। আর তোমরা পরস্পরের মধ্যে অনুগ্রহ ভুলে যেয়ো না। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।" (সুরা বাকারা :২৩৭)
"হে মুমিনগণ, যখন তোমরা মুমিন নারীদেরকে বিবাহ করবে অতঃপর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক দিয়ে দেবে তবে তোমাদের জন্য তাদের কোন ইদ্দত নেই যা তোমরা গণনা করবে। সুতরাং তাদেরকে কিছু ভোগের সামগ্রী প্রদান কর এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে বিদায় দাও।"( সুরা আহযাব:৪৯)
স্ত্রী নিজে বিবাহের বন্ধন মুক্তকরণ:
"আর তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ, তা থেকে কিছু নিয়ে নেবে যদি না উভয়ে আশঙ্কা করে যে আল্লাহর সীমারেখায় তারা অবস্থান করতে পারবে না। সুতরাং তোমরা যদি আশঙ্কা কর যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে না তাহলে স্ত্রী যা দিয়ে নিজকে মুক্ত করে নেবে তাতে কোন সমস্যা নেই। এটা আল্লাহর সীমারেখা। সুতরাং তোমরা তা লঙ্ঘন করো না। আর যে আল্লাহর সীমারেখাসমূহ লঙ্ঘন করে, বস্তুত তারাই যালিম"। (সুরা বাকারা:২২৯)
*ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, সাবিত ইবনু কায়সের স্ত্রী নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! চরিত্রগত বা দ্বিনি বিষয়ে সাবিত ইবনু কায়সের ওপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি ইসলামের ভেতরে থেকে কুফরি করা (অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পছন্দ করছি না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? (সাবেত মোহরানা হিসেবে তাকে বাগান দিয়েছিল) সে বলল, হ্যা। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাবিতকে বলেন, তুমি বাগানটি গ্রহণ করো এবং ওই নারীকে এক তালাক দিয়ে দাও। (বুখারি, হাদিস, ৫২৭৩)*
অর্থাৎ ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক একজন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে চাইলে প্রথমে স্ত্রীকে মৌখিকভাবে অবগত করবে এবং বন্ধনমুক্ত করার জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। মেয়াদ চলাকালীন স্ত্রীকে স্বামীর বাসগৃহেই রাখবে কিন্তু শারীরিক সম্পর্ক রাখবে না এবং সমস্ত ব্যয়ভার বহন করবে, কোন ধরনের কষ্ট দিয়ে পরিস্থিতি জটিল করবে না এবং মোহরানা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না । ইতোমধ্যে স্বামী চাইলে মেয়াদ পূর্ণ হবার পূর্বেই বিবাহ বিচ্ছেদের কথা প্রত্যাহার করে স্ত্রীর সাথে পুনরায় দাম্পত্য জীবন শুরু করবে কিংবা মেয়াদ পূর্ণের সময় স্ত্রীকে সসম্মানে বন্ধনমুক্ত করে দিবে। এবং উভয়ক্ষেত্রেই দুজন নীতিবান সাক্ষীকে অবগত রাখবে যে তাদের মাঝে একবার তালাক হয়েছে। ইদ্দত পূর্ণ হয়ে গেলে স্বামী স্ত্রী পুরোপুরি বন্ধনমুক্ত। এবার তারা যদি উভয়ে পুনরায় দাম্পত্য জীবন শুরু করতে চায় তবে নতুন করে পূর্বের ন্যায় ইসলামের নিয়ম মেনে বিবাহ করতে হবে। আবার যদি কোন সময় বিচ্ছেদ ঘটে তবে সেটা হবে দ্বিতীয়বার এবং প্রথম বারের মত একই প্রক্রিয়ায় পুনঃগ্রহন বা বিচ্ছেদ বা পুনঃবিবাহ সম্ভব। কিন্তু তৃতীয়বার বিচ্ছেদ ঘটলে তাদের মাঝে আর দাম্পত্য জীবন বৈধ নয়। এখন যদি সেই নারী নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ হবার পর অপর কাউকে বিয়ে করে এবং পরবর্তী স্বামীর সাথেও তার বিচ্ছেদ ঘটে আর যদি সে প্রথম স্বামীর নিকটই ফিরে যেতে চায় তাহলেই উভয়ের সম্মতিতে পুনরায় তাদের বিবাহ বৈধ। অপরপক্ষে একজন স্ত্রী চাইলে কেবলমাত্র বিবাহের মোহরানা বা স্বামীর সম্পদ ফিরিয়ে দিয়ে সাক্ষী রেখে বিবাহের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে। কিম্তু নতুন করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ করতে হবে। আর যদি স্বামী স্ত্রীকে স্পর্শ করার পূর্বেই বিচ্ছেদ ঘটাতে চায় তাহলে স্বামী স্ত্রীকে অর্ধেক মোহরানা দিবে আর মোহরানা নির্ধারিত না থাকলেও কিছু ব্যবহার্য সামগ্রী বা মূল্য দিয়ে দিবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্ত্রীকে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
প্রিয় দ্বীনি বোন, শরীয়তে তালাকের বিধান আপনাকে অপমানের জন্য নয়, বরং এটি আপনার সম্মান, অধিকার, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিমিত্তে অবতারিত। আপনার ধর্ম বিবাহ বিচ্ছেদের পর আপনার সন্তানের দায়িত্ব থেকেও মুক্ত রেখেছে যাতে আপনি খুব সহজেই নতুন সংসার জীবনে প্রবেশ করতে পারেন।
প্রিয় দ্বীনি ভাই, জাহেলি কায়দায় নিজের স্ত্রীকে তালাক দেয়া কোন মুমিনের কাজ নয়। আপনার ধর্ম বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়াকে দীর্ঘ রেখেছে যাতে উভয়ে সুস্থভাবে চিন্তা করে দেখতে পারেন। বিবাহ বিচ্ছেদ কোন হারাম বিষয় নয় তবে ইসলাম এ ব্যাপারে উৎসাহ দেয় নি আবার জোর করে সম্পর্ক বয়ে বেড়াতে বাধ্যও করেনি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জুন, ২০২৫ রাত ৩:২৭
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম।