![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আল্লাহতায়ালা যত প্রাণী দুনিয়াতে সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহর দৃষ্টিতে মানুষ ২ প্রকার। মুসলিম ও অমুসলিম।
এই অমুসলিম আবার কয়েক প্রকার। যথা- ইহুদি, নাসারা, কাফের, মুশরিক ইত্যাদি। এদের বেলায় আল্লাহতায়ালার ঘোষণা হলো তারা পরকালের জিন্দেগিতে কঠিন আজাবের সম্মুখীন হবে। কুরআনে তাদের মৃত্যুর পর জাহান্নামের ফয়সালার কথা বলা হয়েছে। এরপর মুসলিম আবার দুই প্রকার। যথা- ক) মুমিন মুসলমান খ) মুনাফিক মুসলমান। মৃত্যুর পর পর আল্লাহতায়ালা যত প্রকার আরাম-আয়েশ ও নাজ নিয়ামতের ঘোষণা দিয়েছেন তা কেবল ঐ মুমিন মুসলমানদের জন্য। আর ঐ মুনাফিকদের জন্য মৃত্যুর পরের এক কঠিন আজাবের কথা বলা হয়েছে। এমনকি আল্লাহতায়ালা গোনাহগার মুসলমানদের বিভিন্ন গোনাহ এবং তার পরিণতি সম্পর্কে তার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ঐ মুনাফিক মুসলমানদের শাস্তির কথা আল্লাহাতায়ালা নিজে তার কালামে পাকের মাধ্যমে জানিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা মুনাফিক সম্পর্কে যেসব আজাবের ঘোষণা দিয়েছেন সেটা নিয়ে আলোচনা করা দরকার। যেমন সূরা নিসার ১৪৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের নিম্নস্তরে। আর তুমি কখনও তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না।’ আবার সূরা তাওবার ১০১ নম্বর আয়াতে মুনাফিকদের দ্বিগুণ আজাবের কথা বলেছেন। এরকম প্রায় অর্ধশত প্রত্যক্ষ আয়াত আল্লাহ নাজিল করেছেন মুনাফিকদের জন্য। এছাড়াও আরো প্রায় অর্ধশত আয়াতে আল্লাহতায়ালা পরোক্ষভাবে মুনাফিকদের শাস্তির বর্ণনা করেছেন। সূরা তাওবার ৬৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীদের এবং কাফিদের জন্য দোজখের আগুন তাতে পড়ে থাকবে সর্বদা, সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের প্রতি লানত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী আজাব।
এত আজাবের কথা, আল্লাহতায়ালা এই মুনাফিকদের জন্য ঘোষণা করলেন এদের সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা থাকা দরকার। এদের চরিত্র, কার্যকলাপ আমাদের সকলকে জানতে হবে। জানতে হবে এই জন্য যে, আমরা যাতে মুনাফেকি থেকে বাঁচতে পারি, আল্লাহর ঐ কঠিন আজাব থেকে রেহাই পাই। বুখারী শরীফের ২২৮৮ নং হাদিসে রাসূল (সা) বলেছেন, ৪টি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে সে মুনাফিক অথবা যার মধ্যে এ ৪টি স্বভাবের কোন একটি থাকবে তার মধ্যেও মুনাফিকির একটি স্বভাব রয়েছে যে পর্যন্ত না সে তা ত্যাগ করবে। ১) সে যখন কথা বলে, মিথ্যা কথা বলে, ২) যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে, ৩) যখন সে চুক্তি করে তা লংঘন করে ও ৪) যখন ঝগড়া করে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে। অন্য হাদিসে আরও একটি আচরণের কথা বলা হয়েছে। তা হলো ‘সে আমানতের খেয়ানত করে।’ এখানে একটু আলোচনা দরকার ১) মিথ্যা কথা বলা কাকে বলে আমরা সকলে তা বুঝি, অর্থাৎ সত্যকে গোপন রেখে তার ফায়দা হাসিলের জন্য অন্য একটি বলা। ২) ওয়াদা ভঙ্গ করা অর্থ আমরা বুঝি কাউকে কোন ব্যাপারে কথা দেয়া বা কোন জিনিস দেয়ার ওয়াদা করে তার খেলাপ করা। এছাড়া আরও একটি আচরণ আছে তা হলো আমরা যখন কলেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পড়েছি আমরা মুসলমান হয়েছি। এখানে আমরা ওয়াদা করেছি যে আল্লাহকে ঠিকমত মানব অর্থাৎ তার সমস্ত বিধিবিধান ঠিকমত মানব। আল্লাহর মনোনীত দীনের যত প্রকার আইন- কানুন, ধারা-উপধারা আছে তা এভাবে মানব বা গ্রহণ করব যে, এই দীন ব্যতীত ইহুদিদের দীন বা আইন-কানুন, বিধি-বিধান, কাফেরদের দীন বা আইন-কানুন, বিধি-বিধান, মুশরিকদের দীন বা আইন-কানুন ও বিধি-বিধান আছে তার চেয়ে ভাল তো দূরের কথা সমতুল্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। আমাদের জানা দরকার ইসলাম হলো একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। সর্বপ্রকার শান্তি ও সফলতা নিহিত রয়েছে আল্লাহর মনোনীত দীনের মধ্যে, এটাই সর্বোত্তম জীবন বিধান, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এর কোন ব্যতিক্রম হলে ওয়াদাভঙ্গকারী হয়ে যাবে।
৩) আমানতের খেয়ানতকে আমরা বুঝি যে, কেউ কারো নিকট কোন জিনিস আমানত রাখলে সময়মত তা তাকে না ফিরিয়ে দেয়া। এটাতো আছেই, এছাড়া ইসলামের মত দৌলত আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের কাছে আমানত রেখেছেন। এ আমানত রক্ষা করার দায়িত্ব আমার, আপনার, সকল মুসলমানের। ইসলামের মহব্বত, ভালোবাসা আমার মধ্যে না থাকলে আমি এ আমানত রক্ষা করতে পারব না। এসব আলোচনা থেকে মুনাফিক সম্পর্কে একটা ধারণা আমাদের হয়েছে।
এবার আমরা রাসূল (সা) এর জিন্দেগিতে ফিরে যাই। সেখান থেকে আরও মুনাফিকদের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি জানতে পারব। রাসূল (সা) এর সময় মদিনার জীবনে কিছু মুনাফিক ছিল তাদের কার্যকলাপের ওপর ভিত্তি করেই উল্লিখিত আয়াতগুলো আল্লাহতায়ালা নাজিল করেন এবং রাসূল (সা) হাদিস বয়ান করেন। তখনকার সময়ের সেই মুনাফিকদের সরদার ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই। তাদের জীবনের গতিধারা কুরআন ও হাদিসের আলোকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, উল্লিখিত আচরণগুলো তো তাদের মধ্যে পুুরোপুরি ছিল, এ ছাড়া আরও একটি আচরণ ছিল তা হলো তারা প্রায়ই গোপনে ইসলামের শত্রু কাফের, মুশরিক, ইহুদি ও নাসারাদের সাথে বৈঠক করত। এমনকি কাফির মুশরিকদের সাথে বসে ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করত। ইসলামবিরোধী এই সব দলের সাথে তাদের বন্ধুত্ব ছিল। অথচ আল্লাহতায়ালা সূরা নিসার ১৪৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিনদের ত্যাগ করে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তোমরা কি (তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে) এইরূপ চাও যে, নিজেদের (দোষী হওয়ার) ওপর আল্লাহর স্পষ্ট প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করে নাও। তারা কিন্তু রাসূল (সা) এর পেছনে মসজিদে নব্বীতে নামাজ আদায় করত।
তারা হজ করত, রোজা রাখত, যাকাতও দিত, তবে তারা জিহাদ বা ইসলামী আন্দোলনে তেমন যোগদান করত না। যদিও কোন জিহাদে তারা যোগদান করত তখন সেখানে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করত। এমনকি তাবুকের যুদ্ধেও কোন মুনাফিক যোগদান করেনি, যে যুদ্ধ ছিল সবচাইতে বড় যুদ্ধ। এই জিহাদে সব চাইতে বেশি সংখ্যক সাহাবা যোগদান করেন। এই সময় মদিনায় শুধুমাত্র মহিলা, শিশু ও কিছু অচল লোক ছিল। কিন্তু মুনাফিকরা এ জিহাদে যোগদান করেনি। মুনাফিকরা ইসলামবিরোধী দলের সাথে মহব্বত রাখত বিধায় আল্লাহতায়ালা এক আয়াতে বলেছেন, দুনিয়াতে যার সাথ যার মহব্বত থাকবে কিয়ামতে তাকে তার সাথে হাজির করা হবে। আর এক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘মুমিন ভালবাসবে আমাকে, আমার প্রেরিত নবীকে আর অন্য মুমিনকে।’ এসব সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন আল্লাহতায়ালা শুধুমাত্র মুনাফিকদের জন্য।
এমনকি আল্লাহতায়ালা মুনাফিকদের জন্য দোয়া করতে রাসূল (সা) কে নিষেধ করেছেন। আল্লাহতায়ালা মুনাফিক মুসলমানদের ওপর যে কত নারাজ তা উল্লিখিত বর্ণনা থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। রাসূল (সা) এর ওফাতের পর সাহাবা হুযাইফা ইবেন ইয়ামান (রা) বলেন, বর্তমান যুগের মুনাফিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের মুনাফিকদের চেয়েও জঘন্য। কেননা সেই যুগে তারা (মুনাফিকরা) মুনাফিকি করত গোপনে আর বর্তমানে করে প্রকাশ্যে। (বুখারী : ৬৬১৫)
এমতাবস্থায় আমাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সকলের একটু চিন্তা করা উচিত। উল্লিখিত মুনাফিকদের চরিত্র যদি আমাদের মধ্যে থেকে থাকে তবে আগে সেটা ত্যাগ করা প্রয়োজন। আল্লাহর দরবারে মুমিনের তালিকাভুক্ত হতে হবে তারপর যে আমলই করি না কেন সেটা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে কবুল করুন, আমিন । (সংগৃহিত)
©somewhere in net ltd.