![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্পর্স করতে চাই তাকে কিন্তু কিছুতেই পারিনা,তবুও আসায় আছি তার পথ চেয়ে।
মুহাম্মদ (সা)এর একাধিক বিয়ে কেন?
বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব,কীর্তিমান পুরুষ জনাব,হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর জীবন ও কর্ম মহান আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত। একথা মুসলমান তথা বিশ্বাসী মাত্রই নি:সংকোচে বিশ্বাস করে থাকেন। পাশাপাশি বহু অমুসলিম বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, পন্ডিত,পুরোহিত, যাজক গণও তাকে শ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে শ্রদ্ধাভরে সমীহ করে থাকেন। এতদসত্ত্বেও, কতিপয় বর্বর,মূর্খ জ্ঞানপাপীরা (বিশেষ করে নাস্তিক্যবাদীরা) তার নৈতিক চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার চরিত্রে কালিমা লেপন করে মূর্খেরা তৃপ্তির ঢেকুর তোলে জ্ঞান-পূর্তি উদযাপন করেন। তাচ্ছিল্যপূর্ণ ও স্পর্ধিত বাক্যবাণে জর্জরিত করেন মুহাম্মদ (সা)-এর সুমহান চরিত্রকে। তারা কথাবার্তা, চাল চলনে তাদের লিখিত বক্তব্যে শ্রেষ্ঠ মানবের চরিত্র চিত্রিত করেন ঔদ্ধত্যপূর্ণ , কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে। এইসকল ইসলাম-বিদ্বেষি পাপিষ্ঠরা রাসূল (সা)-এর যে সমস্ত চরিত্র কে হেয় করতে চায়, তন্মধ্যে একটি হল ; মুহাম্মদ!(তাদের ভাষায়) যদি উত্তম চরিত্রের অধিকারী হবেন, তাহলে বহু-বিবাহ তথা এগারো টি বিয়ে করলেন কেন? এসকল প্রশ্ন তারা করে থাকেন মুসলমান ও ইসলামের নবী (সা) কে প্রতিপন্ন করার মানসে। আমাদের মাঝেও কিছু মুসলিম আছে, যারা আল্লাহ্ ও তার রাসূল (সা) সম্পর্কে বিশ্বাসী। তবে তারা অবিশ্বাসীদের উত্থাপিত এসমস্ত প্রশ্নে সংশয়বাদী। এ সকল বিশ্বাসীরা রাসূল (সা)-এর চরিত্রের প্রশ্নে একটা দোদুল্যমানতার মধ্যে থাকেন। যাইহোক, আজকের এ বক্ষ্যমাণ লেখায় এ সকল বিশ্বাসী সংশয়বাদীদের ইমান উজ্জীবিত করা, ও ইসলাম-বিদ্বেষিদের জ্ঞাতার্থে কিছু বলার চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহুল আজীজ।
(১) খাদিজা (রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহা)
যখন রাসূল (সা)-এর বয়স পঁচিশ, যখন তিনি যৌবনের প্রারম্ভে তখন খাদিজা (রা)-র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু খাদিজা (রা) রাসূল (সা)-এর চেয়ে বয়সে প্রবীণ ছিলেন। খাদিজা (রা)-র সাথে রাসূলের সাংসারিক জীবন ছিল পঁচিশ বছর। তার এ সংসার জীবন কলহমুক্ত,বিশ্বস্ত,সম্প্রীতির রৌদ্রকরোজ্জ্বল আভায় অতিবাহিত হয়েছিল অত্যন্ত শান্তির সাথে। তদানীন্তন ইসলাম-বিদ্বেষি তথা পৌত্তলিকগণ রাসূল (সা)-এর সাথে যে অমানবিক নির্যাতন,নিন্দাবাদ,অপবাদ স্তূপীকৃত করেছিল তার একমাত্র সঙ্গী সমব্যথী ছিলেন খাদিজা (রা)। যখন রাসূল (সা) নবুওয়াত প্রাপ্ত হলেন তখন তার এই নয়া ধর্ম সর্বপ্রথম গ্রহণ করেছিলেন খাদিজা (রা)। ইসলাম বিরোধীদের সীমাহীন মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে যখন ইসলামের নবী (সা) পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে বন্দেগী করতেন,তন্ময়তার সাথে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। সেই দুর্গম পাহাড়ের পাদদেশে খাবার নিয়ে যেতেন রাসূলের প্রথম বিবি খাদিজা (রা)। আর তাকে উৎসাহিত করতেন নয়া ধর্ম প্রচারের জন্য। খাদিজার (রা) মৃত্যুকালে মুহাম্মদ (সা)-এর বয়স হয়েছিল একান্ন বৎসর। তার বিরোধীরা এ দীর্ঘ সাংসারিক জীবনে একটি কলংকও দেখাতে পারবেননা। খাদিজার (রা) জীবদ্দশায় রাসূল (সা) অন্য কোন বিবাহ করেননি। যদিও তিনি পছন্দ করলে জনমত অন্য বিয়ের অনুমোদন করত। তিনি গোষ্ঠীগত-প্রথানুসারে বিয়ে করেও স্ত্রীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।সীমাহীন দারিদ্র্যতার মধ্যেও তিনি স্ত্রীর ভরণপোষণ দেখভাল করেছেন যোগ্য অভিবাবকের মতই। সংসার জীবনে হয়েছিলেন আত্মোৎসর্গকারী।
(২) সওদা (রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহা)
খাদিজার (রা) মৃত্যুর কয়েক মাস পর এবং তায়েফ থেকে অসহায় ও নির্যাতিত হয়ে প্রত্যাবর্তনের পর সাকরান (রা)-এর বিধবা পত্নী সওদাকে বিবাহ করেন মুহাম্মদ (সা)। সাকরান (রা) পৌত্তলিকতা ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং পৌত্তলিকদের নিদারুণ নির্যাতন এড়ানোর জন্য আবিসিনিয়ায় পলায়ন করতে বাধ্য হন। সাকরান (রা) নির্বাসিত অবস্থায় ইহলীলা সংবরণ করেন এবং তার স্ত্রী সওদা সহায় সম্বলহীন অবস্থায় পতিত হন। তদানীন্তন প্রথানুসারে বিবাহই ছিল একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে ধর্মগুরু ও তার অনুসারীরা বিধবাকে নিরাপত্তা ও সাহায্য করতে পারতেন। উদারতা ও মানবিকতার প্রত্যেকটি মূলনীতি অনুসরণ করে রাসূল (সা) শান্তির সমাজ নির্মাণে নিরন্তর কাজ করেছেন। তার স্বামী নতুন ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দান করলেন,গৃহ ত্যাগ করে উদ্বাস্তু হলেন। তিনিও (সওদা রা) স্বামীর সাথে গৃহ ত্যাগ করে আবিসিনিয়ায় বাস্তুহারা হয়েছিলেন। নির্বাসনে স্বামীর মৃত্যুর পর গৃহহীনা,দীনহীনা, সহায়-সম্বলহীনা নি:সম্বল অবস্থায় সওদা (রা) মক্কায় প্রত্যাবর্তন করলেন। দীনহীনা স্ত্রী লোকের একমাত্র সাহায্য করার উপায় বিবাহ হওয়া (তদানীন্তন সমাজ অনুসারে)। দৈনন্দিন জীবন নির্বাহের ব্যয় অত্যন্ত সংকুচিত হওয়া সত্ত্বেও রাসূল (সা) সাকরান (রা)-এর বিধবা স্ত্রী সওদা (রা) কে বিবাহ করেন !
৩) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহা)
ইসলামের প্রথম খলিফা আবুবকর (রা)-এর নাম আমরা কমবেশি সকলেই জানি। তিনি রাসূলের (সা) একান্ত অনুগত,বাধ্যগত একজন সাহাবী ছিলেন, তিনি রাসূলের (সা) প্রত্যেকটি কথা কাজ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বাস্তবায়ন করেছেন। যারা সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছে তন্মধ্যে আবুবকর (রা) অন্যতম। রাসূল (সা)-এর প্রতি ছিল তার তীব্র অনুরাগ। তার আয়েশা (রা) নাম্নী অল্পবয়স্কা এক কন্যা ছিল। তার জীবনের এক মহান বাসনা ছিল, যিনি তার জীবনের সমস্ত অজ্ঞতা ও আঁধার দু'হাতে সরিয়ে আলোর পথে চালিত করেছেন,তার সাথে সম্পর্ক চিরস্থায়ী করা আত্মীয়তার মাধ্যমে। মুহাম্মদ (সা)-এর প্রতি তার যে তীব্র অনুরাগ বিদ্যমান, সেই অনুরাগকে তিনি চিরস্থায়ী বন্ধনে বেঁধে দিবেন মুহাম্মদ (সা)-এর সঙ্গে তার কন্যাকে বিবাহ দিয়ে। তখন কন্যার বয়স মাত্র সাত বৎসর ; তবে দেশের প্রথানুসারে এধরনের বিবাহ, বৈধ স্বীকৃত ছিল। ভক্তের ঐকান্তিক আগ্রহ অনুরোধের ফলে নাবালিকা কুমারী হজরত (সা)-এর স্ত্রীত্বে বরিত হয়।
(৪) হাফসা (রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহা)
যারা আরবদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য --অহংকার, যুদ্ধপ্রিয়তা,বিশেষ সম্মানবোধ, অদ্ভুত ক্ষমতার প্রতি প্রতিহিংসা পরায়ণতা, ধৈর্য সম্পর্কে অবগত আছেন তারা বিষয়টি পূর্ণ উপলব্ধি করতে পারবেন। বাটন বলেছেন,এমনকি এখনও"ব্যক্তির মাঝে কথা কাটাকাটি বেদুঈনদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট"। ওমর ইবনুল খাত্তাব, যিনি পরবর্তীকালে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হয়েছিলেন, তার একটি কন্যা ছিল নাম ছিল হাফসা (রা)। এই সদাশয়া, ধর্মপ্রাণা মহিলা বদরের যুদ্ধে বিধবা হন। তার মেজাজ ছিল তার পিতার মতই উগ্র। রাসূলের (সা) অনুসারীদের মধ্যে যারা বিবাহ ইচ্ছুক ছিলেন তারা সবাই তাকে এড়িয়ে চলত,তার রুক্ষপ্রকৃতির জন্য। একারনে তার আর বিবাহ হয়নি। এটা কন্যার পিতার উপর প্রত্যক্ষ অবমাননার শামিল। এ থেকে নিষ্কৃতিলাভের জন্য তিনি, আবু বকর ও উসমান (রা)-কে তার কন্যার পাণি গ্রহণ করার প্রস্তাব দিলেন। তারা দু'জনই অসম্মতি জ্ঞাপন করলেন,এটা কন্যার পিতার উপর চরম কটাক্ষ। উমর (রা)-এই নিন্দা থেকে মুক্তি পাবার জন্য এবং তার সম্মানের অনুকূলে একটা মিমাংসার জন্য রাসূল (সা)-এর কাছে গেলেন। কিন্তু আবুবকর (রা) ও উসমান (রা) কেউই হাফসার (রা) মেজাজ সহ্য করতে রাজি ছিলেন না। এ বিবাদ আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে যতই হাস্যকর মনে হউক না কেন, তখন তা বিশ্বাসীদের এই ক্ষুদ্র দলটিকে বিভ্রান্তির আবর্তে টেনে এনে লন্ড ভন্ড করার জন্য যথেষ্ট ছিল। এই সংকটাবস্থায় মুসলিম জাতির প্রধান রাসূল (সা) কন্যাটিকে বিবাহ করে পিতার ক্রোধ প্রশমিত করেন। সাহাবীদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরোও সুদৃঢ় করেন। এ বিবাহ শুধু জনগণ (সাহাবীরা রা) অনুমোদনই করেনি,তারা আমোদিত, আনন্দিত, উৎফুল্লিতও হয়েছিল।
(৫,৬,৭) হিন্দ উম্মে সালমা, উম্মে হাবিবা,জয়নব উম্মুল মাসাকীন(রাযি'য়াল্লাহু তাআলা আনহুন্না)
মুহাম্মদ (সা)-এর এই তিন স্ত্রীও বিধবা ছিলেন ; তারা পৌত্তলিকদের চরম শত্রুতার ফলে তাদের স্বাভাবিক সংরক্ষকদের হারিয়েছিলেন। এবং তাদের আত্মীয়স্বজন হয় তাদের তত্ত্বাবধানে অক্ষম ছিলেন নয় অনিচ্ছুক ছিলেন। এটাই সত্যাশ্রিত প্রকৃত ইতিহাস
(৮) জয়নব (রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহা)
মুহাম্মদ (সা)-তার অনুরক্ত বন্ধু ও মুক্ত-দাস জায়েদ(রা) কে বিবাহ দিয়েছিলেন আরবদের দু'টি সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত উচ্চ শ্রেণীর মহিলা জয়নবের সঙ্গে। উচ্চ বংশে জন্ম ও খুব সম্ভব সৌন্দর্যের জন্য মুক্তদাসের সঙ্গে তার বিয়েতে তিনি খুশি হতে পারেননি। পারস্পরিক বিতৃষ্ণা শেষ অবধি ঘৃণায় পর্যবসিত হয়। সম্ভবত স্বামীর দিক থেকে এই বিতৃষ্ণা বৃদ্ধি পেয়েছিল, জয়নবকে একবার দেখে মুহাম্মদ (সা)-এর মুখ থেকে নি:সৃত কয়েকটি কথা বারবার উচ্চারণের ফলে, যা নারীদেরই জানা আছে কিভাবে তা করতে হয়। তিনি কয়েকবার জায়েদের বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং জয়নবের (রা) অনাবৃত মুখ-দর্শন করে আজকের মুসলমানেরা কোনো সুন্দর ছবি ও প্রস্তর মূর্তি দেখে যেরূপ বলে থাকে তেমনি স্বোচ্ছ্বাসে বলেছিলেন,"হৃদয়ের অধিপতি আল্লাহর জন্য সর্ববিধ প্রশংসা।"
যে শব্দটি স্বাভাবিক প্রশংসার খাতিরে বলা হয়েছে তা জয়নব তার স্বামীর কাছে প্রায়ই উচ্চারণ করেছে এটা প্রতিপন্ন করার জন্য যে, এমনকি হযরত (সা) ও তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছেন এবং স্বাভাবিকভাবে তা তার মনস্তাপ বৃদ্ধি করেছে। অবশেষে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তিনি আর তার স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করবেন না ; আর এই দৃঢ় সংকল্প নিয়ে তিনি হযরত (সা)-এর সমীপে গমন করলেন এবং তার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করার সংকল্পের কথা জানালেন। হজরত (সা) তাকে প্রশ্ন করলেন, "তুমি কি তার মধ্যে কোন ত্রুটি দেখতে পেয়েছ?" জায়েদ (রা) উত্তর করলেন, "না। কিন্তু আমি আর তার সঙ্গে বসবাস করতে পারব না।" হযরত (সা) তাকে আদেশের সুরে বললেন," বাড়িতে ফিরে গিয়ে তোমার স্ত্রীকে দেখাশুনা কর,তার সঙ্গে ভাল আচরণ কর এবং আল্লাহ্ কে ভয় কর,কারণ আল্লাহ্ বলেছেন ' তোমাদের স্ত্রীদের 'প্রতি সদাচরণ কর,আর আল্লাহ্ কে ভয় কর।" কিন্তু জায়েদ (রা) তার সংকল্পে অবিচল এবং হজরত (সা)-এর আদেশ সত্ত্বেও তিনি জয়নবকে পরিত্যাগ করলেন, জায়েদের (রা) আচরণে মুহাম্মদ (সা) দু:খিত হয়েছিলেন, বিশেষ করে তিনিই এ দু'টি প্রতিকূল আত্মার মধ্যে বিবাহ-বন্ধনের ব্যবস্থা করেছিলেন।
জয়নব (রা) জায়েদের (রা) নিকট থেকে তালাক সংগ্রহের পরে থেকে তাকে বিবাহ করার জন্য মুহাম্মদ (সা) কে সানুনয় অনুরোধ চালিয়ে যেতে লাগল,আর যতদিন পর্যন্ত সে হজরত (সা)-এর অন্যতম মহিষীতে পরিণত না হলো ততদিন পর্যন্ত শান্ত হলো না।
(৯) জুয়াইরিয়া (রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহা)
হজরত (সা)-এর অপর স্ত্রীর নাম ছিল জুয়াইরিয়া (রা)। সে বনি মুস্তালিক গোত্রের প্রধান হারিসের কন্যা। তাদের বিদ্রোহ দমন করার জন্য পরচালিত অভিযানকালে তাকে বন্দী অবস্থায় আনয়ন করা হয়। সে তার গ্রেফতারকারীর সঙ্গে একটি চুক্তি করল নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে তার স্বাধীনতা কিনে নেওয়ার জন্য। সে মুহাম্মদ (সা) কে তার নির্দিষ্ট অর্থ হিশেবে আবেদন করল ও তৎক্ষণাৎ তার আবেদন মঞ্জুর হয়ে গেল। এই করুণার স্বীকৃতি ও তার স্বাধীনতা দানের জন্য কৃতজ্ঞতার প্রকাশ হিশেবে সে মুহাম্মদ (সা) কে বিবাহ করার প্রস্তাব দিল এবং বিবাহ হয়ে গেল। যখন মুসলমানেরা এই সম্বন্ধের খবর শুনতে পেল তখন তারা তাদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল যে, বনি মুস্তালিক এখন হজরত (সা)-এর আত্মীয় এবং তাদের সঙ্গে তদ্রুপ আচরণ করব। প্রত্যেক বিজয়ী তাদের বন্দীদের মুক্তি প্রদান করল,এরূপে শত শত পরিবার তাদের স্বাধীনতা ফিরে পেল এবং মুহাম্মদ (সা)-এর সঙ্গে জুয়াইরিয়ার (রা) বিবাহকে মুবারকবাদ জানালো।
উল্লেখ্য, সে যুগে যুদ্ধ পরাজিতরা জয়ীদের দাস নিযুক্ত হত।
(১০) সফিয়া (রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহা)
ইহুদি রমণী সফিয়া (রা) কে খয়বারের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় মুসলিমেরা বন্দী হিশেবে এনেছিল। তাকেও মুহাম্মদ (সা) উদারতার সঙ্গে মুক্ত করে দিয়েছিলেন এবং তার সনির্বন্ধ অনুরোধের জন্য তাকে স্ত্রীত্বে বরণ করেছিলেন।
(১১) মায়মুনা (রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহা)
মায়মুনা (রা)- কে মুহাম্মদ (সা) মক্কায় বিবাহ করেছিলেন। তিনি ছিলেন তার আত্মীয়া ও পঞ্চাশের ঊর্ধে ছিল তার বয়স। এই বিবাহ দীন আত্মীয়ার অবলম্বন হিশেবেই শুধু কাজ করেনি, অধিকন্তু এ ইসলামের জন্য লাভ করেছিল দু'জন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব --- ইবনে আব্বাস (রা) ও ওহুদের দুর্ভাগ্যজনক যুদ্ধে কোরাইশ অশ্বারোহী দলের সেনাপতি ও পরবর্তীকালে গ্রিক -বিজেতা খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা)-এর মত ঘোর বিরুধীদেরকেও।
উপর্যুক্ত অত্যন্ত সংক্ষেপিত আলোচনার মাধ্যমে এটাই প্রতিয়মান হয় যে রাসূল (সা) ছিলেন একজন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। এ মর্মে কুরআনেও একখানি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, ওয়া ইন্নাকা লা আলা খুলুকিন আজীম। হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনি উত্তম চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত।(সূরা :৬৮ আয়াত : ৪) এগুলো সবই ধর্মীয় গ্রন্থ পাক কুরআনের সনদ। তবে আজকে আমরা যা বললাম তার সবকিছুই ঐতিহাসিক সত্য দ্বারা সত্যায়িত। রাসূলের (সা) যে বহু বিবাহ নামক অকথ্য প্রচারণা রয়েছে তার কারন উল্লেখ করে সত্য জানার চেষ্টা করলাম। দ্ব্যর্থহীনভাবে আমরা এটা বলতেই পারি,রাসূল (সা)-এর প্রত্যেকটি বিয়ে ছিল অপরিহার্য, তাৎপর্যপূর্ণ, ইসলামের জন্য কল্যাণকর। সামাজিক প্রেক্ষাপট, সাহাবীদের উত্তম প্রতিদান, রাজনৈতিক সিদ্ধিলাভ(প্রচলিত অর্থে নয়), মানবতার উত্তম প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন সহ বিভিন্ন কল্যাণকর দিক ওতপ্রোতভাতে জড়িত। যদি কোন বিয়েতে রাসূল (সা)-এর স্বার্থ জড়িত থাকত, তবে তার অনুসারীরা তাকে পরিত্যাগ করত বিনা প্রশ্নে।।কারন তারা(সাহাবীগণ রা) প্রত্যেকেই ছিল জ্ঞানী। তারা তাকে পরিত্যাগ না করে পরন্তু তার প্রত্যেকটি কাজে তারা সন্তুষ্ট থেকেছেন, এবং তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। দীক্ষা নিয়েছেন অন্ধকারময় অসভ্য সমাজে আলো জ্বালবার। তার আদর্শ বাস্তবায়ন করেছেন তাদের জীবনের প্রতি পরতে পরতে আর সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। উল্লেখ্য, রাসূল (সা) এমন এক যুগে আগমন করেছিলেন। যেখানে সমাজের সর্বত্রই নারীরা ছিল সবদিক থেকেই পশ্চাতে, বহু-বিবাহ ছিল পূত-পবিত্র,নারী দাসী ছিল আরব্য সমাজে গৌরবের বিষয়,কন্যা সন্তান জন্ম দেয়া ছিল পাপ, কন্যা সন্তানকে দেয়া হত জীবন্ত কবর,কন্যা দায়গ্রস্ত অভিবাবক ছিল সমাজের অভিশাপ, বিধবা বিবাহ ছিল অকল্পনীয়, নারীরা ছিল শুধু সম্ভোগ পণ্য। এমন যুগে রাসূল (সা) নারীর সমানাধিকার দিয়েছেলেন, দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ সম্মান। 'সতীদাহপ্রথা' ও 'বিধবা-বিবাহ' আইন প্রণয়নের জন্য, আজকের দিনে রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কে নারীর নতুন জীবনদাতা হিসেবে মান্য করা হয়। এবং বিভিন্ন ভূয়সী প্রশংসা করে প্লাবিত করা হয় এ দু'জন মান্যবর কে। আমরাও এ দু'জন ব্যক্তি কে অন্তর থেকেই শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি তাদের মানবতার উন্নয়নের জন্য। নারীদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু, রাসূল (সা)-এর সেই যুগ আর এই নারীবাদী দুই দিকপালের যুগকে সত্যাশ্রিত ইতিহাসের আলোকে মূল্যায়ন করলে তার অবদান ধ্রুবতারার মত জ্বলে উঠবে আপনার সামনে। তবে সেটা বিশ্বাসী পাঠকের উপলব্ধি, অনুভূতি সাপেক্ষে। তর্ক করে এ সমস্ত বিষয়ে আদৌ সন্তুষজনক উত্তর ও যৌক্তিক অবস্থানে আসা নিতান্তই দুরূহ ব্যাপার। কথিত আছে,রাসূল (সা)-এর নাকি কিছু রক্ষিতাও ছিল। যদি রাষ্ট্র,সমাজ,পরিবার স্বীকৃত বিয়ে করা স্ত্রী যদি স্বামীর জন্য রক্ষিতা হয়। তাহলে অবশ্যই রাসূলের (সা) রক্ষিতা ছিল এটা ধ্রুব সত্য। অবশ্য এ সমস্ত গর্হিত কথা প্রচার করে একদল নামধারী বুদ্ধিজীবী (প্রকৃতপক্ষে মূর্খ)ঘোর ইসলাম-বিদ্বেষিরা। এদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে ইসলাম বিমুখ করে গোমরাহ করা, ও ইসলামের নবীর (সা) সুমহান পবিত্র চরিত্রকে কলুষিত করা। বটতলার বাজে উপন্যাস আর চেরাগ আলীর পুঁথিসাহিত্য পড়ে কোনো পন্ডিত যদি মনে করে,আমি বিশ্ব-সাহিত্য জেনে ফেলেছি, তাহলে, সে যেমন পন্ডিতম্মন্য নির্বোধ বোকা। তেমনি রাসূল (সা) এগারো বিয়ে করেছেন এর প্রকৃত ইতিহাস না জেনে তার সম্পর্কে চরিত্র হননমূলক বাজে কথাবার্তা বলা ব্যক্তি ঐ মূর্খ পন্ডিতের চেয়ে শত সহস্র কোটি গুন বেশী নির্বোধ, আহাম্মক, গন্ডমূর্খ ও বোকা। রাসূল (সা)-এর চরিত্র কতটা মহান ছিল, কতটা উচ্চমার্গীয় ছিল তা জানার জন্য সমগ্র কুরআন, পূর্ণ হাদীস গ্রন্থ, স্বীকৃত মুসলিম ব্যক্তিত্ব প্রণীত বই ও পক্ষপাতিত্বহীন অন্য ধর্মাবলম্বী মনীষীদের গ্রন্থগুলোও দেখে নিতে পারেন স্ব -আগ্রহে। তাতে ইসলাম-বিদ্বেষিরা জবাব পেয়ে যাবেন আর মুসলিম সংশয়বাদী গণ ঈমান পাকাপোক্ত করার খোরাক পেয়ে যাবেন। পরিশেষে, আসুন আমরা সবাই শেখ সাদীর বিখ্যাত কবিতা পরমানন্দে অন্তর দিয়ে গুনগুন করি----
সুখ্যাতির ওই শীর্ষশিরে উঠেছিলেন মোদের নবী
মানবগুণের পূর্ণতায় তিনি ধরার ধ্যানের ছবি।
চরিত্রের মাধুরিমায় জুড়ি তাঁর নাইকো কোথাও
তাঁর নুরের রৌশনীতে জমাট আঁধার হলো উধাও।
আসুন সেই নবীর' পরে আমরা সবাই দরুদ পড়ি
তাঁর জীবনের আলোকেতে আমরা মোদের জীবন গড়ি।
আল-আমীন ইবনে শফিক
২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫২
লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস বলেছেন: নবীজির বিবাহগুলো পর্যবেক্ষণ করলে বুঝা যায়, সম্পর্কের ক্ষেত্রে বয়স কোন বাধা না। মিল মহব্বত থাকলে বয়সে বড় স্ত্রীর সাথেও ঘর সংসার করে সুখী হওয়া যায়। তবে বিয়ের ক্ষেত্রে বংশ মর্যাদা অনেক গুরুত্ব পেয়েছে।
৩| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৫২
নিষ্কর্মা বলেছেন: এ কথা অনস্বীকার্য যে নবী করিম (স) রাজনৈতিক কারণে অনেক বিবাহ করেছিলেন। বা করতে বাধ্য হয়েছিলেন! আমি একজন যুদ্ধবন্দিনীর দিক থেকে ব্যাপারটা দেখার চেষ্টা করব, সেই সময়ের প্রেক্ষিতে, যে সময়ে সভ্যতা বলে কিছুই ছিল না। যুদ্ধবন্দী মানেই দাস-দাস পাবার এক সহজপন্থা। সেই আমলে একজন বন্দীনী যদি নিজেকে বিজেতার কাছে সমর্পন করে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে পারেন, তাহলে তার সামাজিক অবস্থানের অনেক উন্নতি হবে বলেই ধরে নেওয়া যায়। ঠিক তেমনটা যে কেউ কেউ করেন নাই বিভিন্ন যুদ্ধের পরে, তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? বরঞ্চ, এই সব ঘটনা তেমন বিভিন্ন ঘটনার প্রতিই ইঙ্গিত করে।
সে আমলে বিজেতা সব পেয়ে যেত। মৃত সৈন্যদের সাথে থাকা তাদের স্ত্রীদের, সেনাপতির পুরো পরিবারকে পেত দাসী বা যৌন দাসী হিসাবে। এমন চল ছিল বলেই ইসলাম সেই বিষয়গুলোকে হয়ত আরো মানবিক করার চেষ্টা করেছে। তারপরেও আমরা দেখি যে অনেক যুদ্ধের পরে মুসলমান সৈন্যরা পরাজিতদের দলের সাথে থাকা মহিলাদের সাথে জোর করে যৌন সংসর্গ করেছে। আর তা একজনের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকত, তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে কোন ঐতিহাসিক দলিলে? বরঞ্চ অনুমান করা যায় একটি মহিলাকে অনেক পুরুষের লালসা চরিতার্থ করতে হত।
ভাবুন একবার, সেই মহিলার হয়ত স্বামী বা পুত্র যুদ্ধে মারা গেছে। সেই ভগ্ন ও হতাশ মহিলার উপরে এই নির্যাতন কেমন ঠেকত? নির্মম ও অমানবিক এই নির্যাতন থেকে বাচার জন্য হয়ত অনেকেই কারো স্ত্রী হবার জন্য নিজেকে সঁপে দিত, যাতে ওমন নির্যাতন সইতে না হয়!
আমি মানুষের চিরন্তন ভাবনা থেকে দেখি ব্যাপারগুলোকে। এর সাথে ধর্মকে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন। আমি কিন্তু বলেছি, ইসলাম এই ব্যাপারগুলোতে অনেক মানবিক গুণাবলি সংযুক্ত করেছে, কিন্তু তারপরেও পরাজিতদের মহিলাদের এমন ভোগ্যবস্তু হিসাবে দেখা আজও বন্ধ হয় নাই। এইটাই মানুষের চিরন্তন ভাবনা। আইএস ঠিক এই কাজটাই করেছে।
৪| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৭
বাঘ মামা বলেছেন: মানব জীবনের সংবিধান হলো কোরাআণ, আর নবীজির জীবনি হলো মানবের যাপিত জীবনের সমস্যার সমধান যা পরক্ষ ভাবে আল্লাহ থেকে জিব্রাইল আঃ এর মাধ্যমেরই এসেছিলো। নবীজি তার জীবন সময়ে সকল সমস্যা গুলোর জন্য সব সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন। তাই বলতে পারি নবীজির জীবনটাও আসছে লক্ষ কোটি বছরের পৃথিবীর মানুষের জন্য একটা ড্যামো। নবিজী এসেছিলেন ১৪০০ বছর আগে, এই সময় পৃথিবী বদলে গেছে, বদলে গেছে মানুষ জীবন যাত্রা ভাবনা সহ অনেক কিছু, এভাবে এই পৃথিবী আরো লক্ষ কোটি বছর হয়তো থাকবে, আসবে মানুষ , বদলাবে মানুষের জীবন যাত্রা ভাবনা। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন সমস্যা ,এসব সমস্যার সমাধান মানুষকে কোরাণ এবং নবিজীর জীবনী থেকেই দিতে হবে,,এই লক্ষ কোটি বছরে পৃথিবী তথা মানুষের সমস্যার সমাধান নবিজী তার ৬৫ বছরের ছোট্ট জীবনী দিয়ে সব এক সাথে দেখিয়ে গেছেন বলে কিছু কিছু কাজ আমাদের বর্তমান সময়ে কারো কারো কাছে অসঙ্গত মনে হচ্ছে,হয়তো এই দুনিয়াতে এমন কিছু ব্যপার ঘটবে সেই সময়ে তা আর এমন অমানবিক মনে হবেনা, বিশেষ করে যদি আমি বিয়ের কথাই বলতে যাই, যেমন ধরুন ইহুদিদের তোরাহতে পড়েছি, মুসা আঃ এর সময়ে শুধু কানান শহর দখল করতে গিয়ে অনেক গুলো যু্দ্ধের মধ্যে শুধু একটা যুদ্ধে এক সাথে ৩ লক্ষ মানুষ মারা গেছে এক গ্রামে। সেখানে প্রায় ২ লক্ষ নারী বিধবা হয়েছে। ঐ শহরে ২ লক্ষ বিধবা নারীর কি হাল হয়েছিলো সেই সময়ে এবং সেই সময়ে পুরুষরা নারী থেকে পালিয়ে থাকা সহ আরো অনেক অবর্ণনীয় ঘটনা ঘটে, যা তোরাহতে পড়েছি।
পুরুষ তখন এবং এখনো যুদ্ধ সহ নানা ঘটনা দুর্ঘটনায় মরছে নারীর চেয়েও বেশি।যদিও এখনকার সময় এখনো নারী পুরুষ ভারসাম্য মন্দের দিকে যায়নি তাই কেউ যদি নবীজির বহু বিয়েকে সুন্নত বলে একাধিক বিয়ে করে তাহলে সেই ব্যক্তি নিয়ে সন্দেহ সমালোচনা স্বাভাবিক, তবে খুব করে চাই এমন সময় পৃথিবীতে না আসুক, একটা নারী পুরুষের জীবনে একাধিক নারী পুরুষ না আসুক, এটা অনেক বড় যন্ত্রণার, একটা নারী বলতে পারবে এটা কত কষ্টের যদি পুরুষ স্বামীটি নিছক খেলার ছলে কিংবা সুন্নতের ছলে একাধিক নারী ঘরে আনে।
আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক
শুভ কামনা সব সময়
৫| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:৪৭
সিকদার বাড়ীর পোলা বলেছেন: অসাধারণ
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৩
পুকু বলেছেন: die hard follower of muhammad!!!! no logic please!!!!