নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৪০০ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখের স্মৃতি

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৭



জসীম অসীম

১৪০০ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখ। ১৯৯৩ খ্রীষ্টাব্দের এপ্রিল মাস। আজ থেকে ২০ বছর আগের সেই নববর্ষ উদযাপনের স্মৃতি এখনও মাথায় জীবন্ত হয়ে আছে। এক মানবজীবনে ২০ বছর একেবারেই অল্প সময় নয়।

তখন চোখে স্বপ্ন ছিল অনেক। দেশ-সমাজ-সময় কিংবা রাষ্ট্রের জন্য কিছু একটা করবোই। আমার ঢাকার বন্ধু আবিদ হোসেনের চোখে তখনও সমাজতন্ত্রের অবিরাম শ্লোগান। আবিদ তার চেতনা থেকে আজও পিছপা হয়নি।

যদিও ১৯৯২ সাল থেকে ঢাকার পথে পথে ছবি তুলেছি আমি, কিন্তু ১৯৯৩ সালে এসে থিয়েটার এবং বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্নে আরও বেশি বিভোর ছিলাম।

১৪০০ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখ পালনের জন্য আমি আগেই একটি ফিল্ম কিনে রেখেছিলাম। হায়! তখন আমরা এই যুগের ডিজিটাল ফটোগ্রাফির কথা ভাবতেও পারিনি।

আবিদের বাসায় সকালের পানতা-ইলিশ খাওয়ার মধ্য দিয়েই শুরু হয় আমাদের ফরাসি সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। আমি ফরাসী নাট্যকার মলিয়্যারের ভক্ত ছিলাম তখন। কিন্তু ফরাসী ঔপন্যাসিক বালজাক আর দার্শনিক দেকার্তের বিষয়ে তখনও আমার তেমন জানা ছিল না। জানা ছিল আবিদের। তাই প্রায়ই তার কাছে আমাকে শ্রোতা হয়ে থাকতে হতো। পড়ায় তার সঙ্গে আমি কোনোদিনও পারতাম না। ভল্টেয়ার আর রুশোর মতো বিখ্যাত ফরাসী লেখকদের বইপত্র আবিদের ঘরে তখনও সংগৃহিত ছিল। বাংলা একাডেমীর ত্রৈমাসিক ‘উত্তরাধিকার’-এর অনেক সংখ্যা ছিল তার ঘরে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক পড়ার বিষয় ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’ ছিল বলে এসব সংগৃহ আমাদের খুবই কাজে আসতো।

১লা বৈশাখ উদযাপনের আনন্দ পেতাম বিভিন্ন পত্রিকার ক্রোড়পত্র সংগ্রহ করে। তখন এখনকার মতো অনলাইনের সুবিধা কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুক চালু ছিল না। টেলিভিশন ছিল মাত্র একটি-বাংলাদেশ টেলিভিশন। আর বাংলাদেশ বেতার। আর এখন দেশে কতো বেতার এসেছে। ঢাকার চারুকলা ইন্সষ্টিটিউট, বাংলা একাডেমী, শিশু একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী, ছায়ানট কিংবা উদীচীসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের বর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি ছিল মনে রাখার মতো। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবো-এ নিয়ে খুব হয়রানি ছিল। ১৩৯৯ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখের দিন ঢাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছোটাছুটি করতে করতেই আমার দিন বয়ে যায়। স্থির হয়ে কারোর অনুষ্ঠানই উপভোগ করতে পারিনি।

১লা বৈশাখের দিন আমি কমপক্ষে একটি বাঁশি কিনতামই। শৈশবের ‘পোনরা মেলা’ থেকে বাঁশি কেনার নেশাটা যেন সেদিনই জেগে উঠতো। কিন্তু আমার ঢোল কেনারও শখ ছিল-তবে সেই শখ আজও পূরণ হয়নি। যখন ১লা বৈশাখের র‌্যালীতে চারুকলার ছেলেমেয়েদের হাতে ঢোল-মৃদঙ্গ দেখতাম, তখন মুগ্ধ হয়ে দেখতাম।

১৪০০ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখের দিন আমি আর আবিদ যখন চারুকলা ইনষ্টিটিউটের সামনে দিয়ে টিএসসি-র দিকে যাচ্ছিলাম, তখন কখনো আমি তার ছবি তুলে দিচ্ছি, কখনো সে আমার ছবি তুলে দিচ্ছিলো। আবিদ তখন মুখভর্তি দাড়ি রেখে দিয়েছিল। আর বারবার ঐ বিশ্বের আধুনিক কবিতার জনক ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ার থেকে কবিতার লাইন শোনাতো। বুদ্ধদেব বসু-র অনুবাদ করা বোদলেয়ারের ‘ক্লেদজ কুসুম’ তখনও আমার সবটা পড়া হয়নি।

আমার দু’গালে তখন অনেক ব্রন হতো। মেয়েরা দেখলেই বলতো, শুধু এই ব্রণগুলোর দাগই তোমাকে ‘চাঁদের কলঙ্কে’ রূপান্তরিত করেছে। আমি তাই ব্র“ণ নিয়ে তখন কতো দুশ্চিন্তায় থাকতাম। পরে জেনেছি বয়:সন্ধিকালের পর থেকে এমনটা হতেই পারে। আজ আমার মুখে আর সেই ব্রণ নেই-নেই ব্রণের সেই দুশ্চিন্তাও।

১৪০০ সালের ১লা বৈশাখে আমরা ঢাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘুরে ঘুরে অনেক ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি গান শুনলাম। উত্তরবঙ্গের মহিষপালক মৈষালবন্ধুর গানে গানে ঢাকার শহর সেইদিন যেন অন্য এক ঢাকা ধরা দিয়েছিল। গরু বা মহিষে টানা গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়োয়ান। ভাওয়াইয়া গানে গাড়োয়ান হয়ে গেছে গাড়িয়াল। ১লা বৈশাখে ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই’ গানে ঢাকার দৃশ্য সত্যি পাল্টে যায়। যদিও সবার আগে সব শুরু হতো ছায়ানটের ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো, দিয়ে। ১৪০০ সালের পহেলা বৈশাখে ঢাকার পথে পথে হাঁটতে হাঁটতে মৃৎশিল্পের বিভিন্ন পসরা দেখতে দেখতে আবিদকে আমি একটি প্রশ্ন করেছিলাম-বলেছিলাম, এতো যে জ্ঞান সংগ্রহ করেছ, বলো তো দেখি শখের হাঁড়িতে পানি রাখলে পানি চুঁইয়ে বের হয়ে যায় না কেন? সেদিন থেকে ২০ বছর পরে আজ আর তেমন মনে নেই এই প্রশ্নের ঠিক কী উত্তর দিয়েছিল আবিদ। গত ২০ বছরে এই জীবনে যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন বিষয় এবং চিরতরে হারিয়েও গেছে অনেক অমূল্য সম্পদ-ঠিক আমার বাবা-মায়ের মতোই।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.