নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

হ-ভাত খাইছি-কচু পোড়া দিয়া

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১০



জসীম অসীম

২০০২ সালের এপ্রিল মাস। কুমিল¬া শহরের দৈনিক শিরোনাম এর চাকুরির ফাঁকে ফাঁকে পথে পথে ঘুরি। দেখি মানুষের জীবন। একদিন হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম কুমিল¬া শহরের পূর্ব সীমান্ত সংলগ্ন মনকানগরের দিকে। কুমিল¬া শহরের পূর্ব সীমান্ত সংলগ্ন ধর্মনগর চৌমুহনী পার হয়ে এক চা দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। সামনে এসে হাত পাতলেন এক বুড়ি। বুড়ি তো নয় যেন সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ ছবির ইন্দির ঠাকরুন। সেই ইন্দির ঠাকরুন সামনে এসে হাত পেতে বললেন- একটা টাকা দে না বাপ। আমি বললাম-একটা টাকায় কী করবেন। এক টাকা দিয়ে কিছু কেনা যায়? ইন্দির ঠাকরুন বললেন- বাপরে-এক টাকা চাইবো না তো কী একশ টাকা চাইবো-বুড়া মানুষকে ক্যাডা দেয় টাকা? বুড়া মানুষ কারোর কোন কামে লাগে না। মরলেই সে বাঁচে। আমি বললাম-যদি আমি আপনাকে একশ টাকা দিয়েই দেই-তাহলে কী করবেন? বুড়ি কেঁদে দিয়ে বললেন-কতোদিন রসগোল¬া খাই না আমি। টাকা পাইলে কাউকে দিয়া কিন্যা খাইতাম। বুড়ি এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে দোকানের ৪/৫ জন লোক আমাকে দ্রুত এসে বললো-বুড়ি মিছা কথা কয়। যারে যেমন পারে মিথ্যা বইল্যা টাকা লয়। আমি বুড়িকে বললাম-চলো আমার সঙ্গে-তোমার সঙ্গে কথা বলবো। বলেই দোকানের সীমা থেকে বুড়িকে নিয়ে রাস্তায় চলে এলাম। ফেন্সিডিলের ব্যবসা করে কিংবা ফেন্সিখোর ২/৩ জন যুবক আমার পিছু নেয়। আমি ওদের সঙ্গে আসতে বারণ করলাম। বুড়ি ধীরে ধীরে এগিয়ে এল-একটি ছায়াদার গাছের নীচে আসার পর আমি বুড়িকে বললাম-আমি আপনাকে একশ টাকা দেবো। কিন্তু আপনি কাউকে সে কথা বলতে পারবেন না। বললে ফেন্সি খোররা আপনার টাকা ছিনিয়ে নেবে।

বুড়িকে অবশেষে দিলাম একশত টাকা। মাত্র একশত টাকার একটি নোট। আমি তখন নিষ্ঠুর। টাকা কাউকেই দেই না। মেয়েদের পেছনেও এক পয়সা খরচ করার পক্ষে নই। তবু তাকে দিলাম। বুড়ি আর কথা বলতে পারলেন না। বসে গেলেন মাটিতে। কাঁদতে লাগলেন। সর্বশেষে আমি বললাম , আজ কি ভাত খাইছেন? বুড়ি বললো-হ খাইছি। খাইছি বাপ। ভাত খাইয়াই বাহির হইছি। আমি বললাম-কী দিয়া?-বুড়ি বললেন-কচু পোড়া দিয়া। এ কথা শুনে এবার পারি না যে আমিই কেঁদে দেই। কচু পোড়া দিয়ে মানুষ ভাত খেতে পারে ? বিশেষ করে এ বৃদ্ধ বয়সে? বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের বাস্তবধর্মী উপন্যাস ‘অশনী সংকেত’ অবলম্বণে চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত ছবি ‘অশনী সংকেত’ আমি অসংখ্যবার দেখেছি। সেই দুর্ভিক্ষের চরিত্র কেন এখনও সমাজে খুঁজে পাওয়া যায়? মনকানগরের সেই ইন্দির ঠাকরুনের কথা-যে আমাকে বলেছিল-হ-ভাত খাইছি-কচু পোড়া দিয়া-অনেকদিন সেই কথা আমার কানে বেজেছিল। কেন বেজেছিল? কারণ দালাল হতে গিয়েও আমি পুরোমাত্রায় দালাল হতে পারিনি-তাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.