![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।
জসীম অসীম
কিভাবে ‘সেক্স’ আপনার ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে-সেটা কি আপনি জানেন? বড় কঠিন সময় এখন-সামনে আরও কঠিন সময় এগিয়ে আসছে।
কয়েক যুগ আগেও গ্রামের অবিবাহিত যুবক-যুবতীদের অনেকেই নাকি ‘কনডম’ চিনতেন না। গ্রামের এক বিবাহিত যুবককে নাকি একবার ‘কনডম’ ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছিল-কিন্তু ব্যবহার প্রণালী বলে দেয়া হয়নি। সেই সহজসরল যুবক ‘কনডম’ মুখে দিয়ে চুইংগামের মতো চিবুতে চিবুতে যখন তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করেন-তখনও তিনি বুঝতে পারেননি-যে কী ভুল করেছেন। পরদিন সকালে যখন ‘কনডম’দাতাকে বললেন-কী জিনিস দিলেন ভাই-শত চেষ্টা করেও ওষুধটা [কনডমটা] গিলতে পারলাম না-তখন তো ‘কনডম’ দাতা মানুষটিও অবাক-বলে কী-শালা নাকি ‘কনডম’ মুখে নিয়ে চিবিয়েছে!
আর এখন? এখন আর সে রকম হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনাই নেই। কারণ আমাদের দেশসহ পৃথিবীর দেশে দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ‘কনডম’ কেন-কিভাবে-কারা কখন-কতটি করে ব্যবহার করবে-তার যাবতীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এখন আর গোটা পৃথিবীতেই সম্ভবত সে-রকম বোকালোক আর নেই। বরং এখন ‘কনডম’কে ফুটো করে ব্যবহার করেও অনেকে অনেকের বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতিশোধ নেয়-এমন গল্পও শোনা যায়। পুরুষ-মহিলাদের অনেকেই আজকাল এইডসের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে সার্বক্ষণিক সঙ্গে করে টাকার মতো কনডম বহন করেন। সেই ‘কনডম’ এর পক্ষে ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারনা চালানো হলেও বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে এই প্রক্রিয়া এখনো অনেকদূর পিছিয়ে রয়েছে।
তবে ‘কনডম’-নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে দেশে দেশে-দাতা সংস্থাগুলো-কারণ ‘এইডস’ ঠেকাতে হবে। এই ‘এইডস’ ঠেকানোর প্রক্রিয়ায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ‘কনডম’ এর বিজ্ঞাপন প্রচার-প্রসার-বিতরণ-ব্যবহার ও প্রশিক্ষণের কারণে এইডসের প্রকোপ হয়তো কমেছে-কিন্তু ‘সেক্স’ বিষয়টিও খুব সহজ একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
বিশেষ করে ‘কনডম’ ব্যবহারে গর্ভধারণ হয়না বলে নারী এবং পুরুষের পক্ষ থেকে যৌন মিলনের বিষয়টি একেবারেই সহজসরল হয়ে গিয়েছে। যখনতখন-যেখানেসেখানে-যারতার সঙ্গে যৌন মিলনের ব্যাপারে ‘কনডম’ হলো সবচেয়ে বিশ্বস্ত :
একটি মাধ্যম-কিন্তু এর সুবিধার বদলে একে বাণিজ্যিকভাবে অপব্যবহার করে এসেছে বাজারী বিভিন্ন চক্র। বিজ্ঞানের উপকারিতাকে কল্যাণের ক্ষেত্রে ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যবহার তীব্রতর হয়েছে ব্যবসায়িক স্বার্থে। এ বিষয়টি সবচেয়ে দুঃখজনক।
এবারে কুমিল্লা শহরের একটি গল্প বলি। ডকুমেন্টারী গল্প :এ গল্পে পাত্রপাত্রীদের নামের ক্ষেত্রে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র-যার নাম রাজিব [ছদ্মনাম]। তার পিতা একজন সরকারি কর্মকর্তা। রাজিবের মা-ও একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। রাজিব তাদের একমাত্র সন্তান। ভাড়ায় বসবাস করেন কুমিল্লা শহরের একটি এ্যাপার্টমেন্টের ফ্ল্যাটে। খুব গোছানো সংসার। পরিপাটি। পরিকল্পিত।
কিন্তু ইদানীং রাজিবের লেখাপড়ায় তেমন মন নেই। এ নিয়ে রাজিবের বাবা-মা ও গৃহশিক্ষকের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। কেন? ছেলের পেছনে অর্থও কম ব্যয় করা হয় না। ঘরেবাইরে শিক্ষক নিয়োগ রয়েছে। বিনোদনের জন্য কম্পিউটার কিনে দেয়া হয়েছে-অথচ লেখাপড়ায় ইদানীং তার মনযোগের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে...।
সেই রাজিবের [ছদ্মনাম] সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় কুমিল্লা শহরের একটি সাইবার ক্যাফেতে। রাজিব ক্যাফেতে কী করে-কী দেখে? পরিচয়ের পর আমাকে একদিন রাজিব বলে-সারা পৃথিবী বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে কত এগিয়ে গেল-সেসব দেখি...ইত্যাদি।
আমি রাজিবের সঙ্গে মিশতে চেষ্টা করি। কথা বের করি বন্ধুর মতো। আমি যখন কারোর সঙ্গে মিশি তখন এমনভাবেই মিশি যে-সে আর বুঝতেই পারে না যে তার ভেতরের অজানা সব তথ্য বের করে আমি সাহিত্যের গল্প লিখবো।
প্রায় দুই মাস ধরে অনেক চেষ্টার পর আমি জানতে পারি-রাজিব বিভিন্ন সেক্সনির্ভর ওয়েবসাইটে-এক্স মুভি দেখে। কখনো পেনড্রাইভে করে-কখনো সিডি রাইট করে ‘সেক্স মুভি’ বাসায় নিয়েও আসে। বাসায় রাজিবের কম্পিউটার রয়েছে-সেখানে বিভিন্ন ড্রাইভে গোপন কোড নম্বর দিয়ে রাজিব ‘সেসব’ লুকিয়ে রাখে। যখন বাবা-মা বাসায় থাকে না-তখন সে এসব ‘ওপেন’ করে একা একা দেখে। রাজিব মোবাইলও ব্যবহার করে। বাবা-মা ওকে আদর করে ভালো লেখাপড়া করার শর্তে ওসব মোবাইলও কিনে দিয়েছে। রাজিব কখনো কখনো সুযোগ পেলে কুমিল্লার সিনেমাহলগুলোতেও ঢুকে। ওখানে অনেক ভাসমান যৌনকর্মীর আনাগোনা দেখে তার মাথায় আগুন চাপে। কী করে তার শারীরিক সমস্যার সমাধান করবে-ভেবে পায় না। এই বিষয় নিয়ে আলাপ করবে-তেমন কাউকে খুঁজেও পায় না। একদিন সে কৌতূহলের বশেই বাজার থেকে কিছু ‘কনডম’ কিনতে চায়-কিন্তু অনেক সাহস করেও কোনোভাবেই রাজিব ‘কনডম’ কিনতে পারেনা। ‘কনডম’এর ব্যবহার সে দেখেছে বিভিন্ন মুভিতে-সাইবার ক্যাফেতে।
একদিন খুব জরুরী কাজে রাজিবের বাবা-মা তাদের দেশের বাড়িতে চট্টগ্রামে চলে যান। রাজিবের সঙ্গে থাকার কেউ নেই...বাসায় শুধুই কাজের ‘বুয়া’-অবশ্য পরদিন দুপুরেই রাজিবের বাবা-মা আবার কুমিল্লায় ফিরে এসেছেন। কিন্তু তারা কি জানেন গত রাতটা কেমন করে কেটেছে রাজিবের?
সারারাত রাজিব কম্পিউটারে সেক্স ফিল্ম দেখেছে। দেখে দেখে মাথা খারাপ অবস্থা...কী এক অজানা জগৎ তার জানার রাজ্যে চলে এসেছে। কিন্তু এর শেষ কোথায়...?
মোবাইলে ইদানীং দু’তিনজন মেয়ে বন্ধুর নম্বরও সংগৃহিত হয়েছে-ওদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগও করেছে সে। কিন্তু...। একদিন কাজের ‘বুয়া’র যুবতী মেয়েটা রাজিবদের বাসায় এসেছিল। রাজিব তার দিকে যেমন চোখে তাকিয়েছে-সে চোখ নির্মোহ ছিল না। বিকেলে যুবতী মেয়েদের-গৃহবধূদের দেখবে বলে কুমিল্লার ধর্মসাগর পশ্চিমপাড়ে তার কয়েকজন দুরন্ত বন্ধু নিয়ে আড্ডা দেয় রাজিব। কিছু বিষয় নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলাপও করে। এক বন্ধু তার ফেন্সিডিল খাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে। একসময় কয়েকজন যৌনকর্মী কাছে দিয়ে হেঁটে গেলে আরেক বন্ধু ধীরকণ্ঠে বলে ওঠে-‘ওরা সবার স্ত্রী-শুধু টাকা লাগে।’ রাজিবের মাথায় কথাটি আটকে যায় এবং এর ব্যাখ্যা জানতে চায়। ইদানীং সে মায়ের চাপে না পড়লে নামাজও পড়তে চায় না। এরই মধ্যে রাজিবের এক মামাতো বোন ঢাকা থেকে কুমিল্লায় ওদের বাসায় ২/৩ দিনের জন্য বেড়াতে আসে। রাজিবের সঙ্গে মামাতো বোন অমৃতার [ছদ্মনাম] পূর্ব থেকেই ভালো সম্পর্ক ছিল-কিন্তু সেই ভালো সম্পর্কে পবিবত্রতা ছিল। অমৃতা ঢাকার ইডেন কলেজে অনার্স পড়ছিল।
অমৃতার সঙ্গে রাজিবের এবারকার সম্পর্কটা অনেকটাই ভিন্নরূপী ছিল। রাজিব ‘সেক্স ফিল্ম’ দেখে দেখে পাগল হয়ে আছে-আর অমৃতার ‘এখন যৌবন যার-যুদ্ধে [সেক্স?] যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ ঠিক তখনই একদিন কাজের ‘বুয়া’ হালিমার মা খুব জ্বরে পড়লো-অন্যদিকে সরস্বতী পূজার ছুটি পড়লো স্কুলে। অমৃতা আর রাজিব বাসায় বসে কম্পিউটারে হিন্দী ছবি দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ ছবি দেখার পর অমৃতা রাজিবের কম্পিউটারের বিভিন্ন ড্রাইভের কোথায় কী আছে-সেগুলো সার্চ শুরু করে। কিন্তু এ কী-? অনেক ফোল্ডার আর ফাইল-ই অমৃতা ওপেন করতে পারছে না। কম্পিউটার কোড নম্বর চাচ্ছে। কী আছে ওসব ফাইলে? অমৃতা জানতে চায় রাজিবের কাছে। রাজিব ওসব ফাইল ‘ওপেন’ করতে চায় না। অমৃতা জোর খাটায়। রাজিব বলে তার প্রেমিকাকে লেখা চিঠি আছে সেসব ফাইলে। কিন্তু রাজিবের কথা বলার ধরন দেখে অমৃতার সন্দেহ হয়। জোর করে ফাইল ‘ওপেন’ করায় রাজিবকে দিয়ে। কিন্তু এ কী...ফাইল ভর্তি ‘সেক্স ফিল্ম’। ‘ক্লিক’ করতেই অমৃতার মাথা খারাপ হয়ে যায়। বলে-তুই ক্লাশ ‘টেন’ এ পড়েই এত পেকে আছিস-তোর বাবা-মা কিছু জানে না? রাজিব বলে-বাবা-মা কখনো কম্পিউটারে বসে না। বাবা কখনো বসলেও কম্পিউটারে ‘তাস’ খেলা নিয়ে পড়ে থাকে। অমৃতা বলে-আজ আমি সব ফাঁস করে দেবো। তোর বাবা-মায়ের কাছে সব বলে দেবো। এ কথা শুনে আৎকে উঠে রাজিব। অমৃতার পায়ে পড়ে ক্ষমা চায়। অমৃতা বলে একশর্তেই তোকে আমি ক্ষমা করতে পারি...যদি তুই ওসব ফিল্মের মতো আমার সঙ্গে ...। রাজিবের শরীর ভয়ে ঘেমে উঠে এবং তারপর...।
তারপর... এ গল্প আরও এগিয়ে যায়। রাজিব এবং অমৃতার পরিণতি আরও ভয়াবহ রূপ লাভ করে। এ বাস্তব গল্পটি আমি রাজিবের কাছ থেকে বয়সের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও যেভাবে সংগ্রহ করতে পারি-রাজিবের বাবা-মা সে বিষয়টি সেভাবে জানতে পারেনি কিংবা জানতে চেষ্টাও করেনি। কারণ রাজিবের সঙ্গে তার বাবা-মায়ের সম্পর্ক বন্ধুত্বের নয়। এই যে সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের দূরত্ব-এই দূরত্বকে ব্যবহার করে করেই ‘সেক্স মার্কেট’ ঢুকে পড়েছে রাজিবের জীবনে। তাই সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত-খোঁজ রাখা উচিত সবকিছুর। শুধু অর্থ নয়-সন্তানের উপর সার্বিক নিয়ন্ত্রণ না থাকলে এই ডিজিটাল যুগে সন্তানকে মানুষ করা সম্ভব নয়। শেষ প্রশ্ন হলো-এই যে রাজিব এবং অমৃতার পরিণতি-তার জন্য কি কেবল ওরাই দায়ী? আমাদের সমাজ-সংসার-বাস্তবতা-পরিবেশ-সাংস্কৃতিক আবহ কি কোনোভাবেই দায়ী নয়? আর ঐ যে শহরের সাইবার ক্যাফেগুলো-ওখানে কি কোনো নিয়ম রক্ষা করে ‘কাস্টমার’ ঢোকানো হয়? সিনেমাহলে কি সুস্থ ছবি চলে? দেশে কয়টি সুস্থ ছবি তৈরি হচ্ছে। অসুস্থ ছবি চালানো ওসব সিনেমা হলে ঢুকতে টিকেটওয়ালার বয়স কি দেখা হয়? ওসব প্রতিষ্ঠান হয়তো বলবে-আমাদের এসব দেখলে হবে না-আমাদের দেখতে হবে ‘ব্যবসা’। কিন্তু এই ‘ব্যবসা’ কি জীবনের শেষ কথা? রাষ্ট্র কি এসব শতভাগ ব্যবসা মানসিকতা-পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা নিতে পারেনা? এ রকম চলতে থাকলে একসময় গিয়ে রাষ্ট্রের পরিণতি কী হবে? এসব কথা বলা কি অন্যায়? বললেই চতুর্মুখি তোপের মুখে পড়তে হয়। নিজ পেশার লোকসহ সরকারি-বেসরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন লোকের রকমারি প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত হতে হয়-বিব্রতবোধ করতে হয়। অথচ এই অবস্থার যে পরিবর্তন প্রয়োজন-এটা যেন কেউই স্বীকার করতে চায় না? দালালদের কথা বাদ দিলাম-বিবেকবান মানুষও কি এই অসুস্থধারার বিপক্ষে দাঁড়াবেন না? একজন মানুষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যৌন শিক্ষার বদলে যৌন অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এই ব্যবস্থাকে ডিজিটাল ব্যবস্থা বলা যায় না। ডিজিটাল সিস্টেম কী জিনিস সেটাকে বুঝতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাও হাতে রাখতে হবে। সবকিছু না বুঝে একজন লোক যদি ‘নগ্ন’ হয়ে নিজেকে ‘ডিজিটাল মানুষ’ দাবি করে এ দাবিকে আমরা কোনভাবেই সভ্য দাবি বলে গণ্য করতে পারিনা।
©somewhere in net ltd.