নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিডিয়ার মুখে তালা: সাংবাদিকের হাত বাঁধা

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:১৬

যদি আপনি কাউকে দেখেন গুন্ডামিতে লিপ্ত এবং তার কিছুদিন পরেই যদি তাকে আবার দেখেন সে সমাজের কিংবা কোন দলের বড় নেতা হয়েছে, তাহলে আপনি নিজেকে তখন কী উত্তর দেবেন?
যদি আপনি কোন লোককে চুরি-বাটপারিতে দক্ষতা নিতে দেখেন, তার কয়েক বছর পরেই যদি তাকে আবার কোনো সরকারের মন্ত্রীসভায় দেখেন, তাহলে আপনি নিজেকে তখন কী উত্তর দেবেন?
যদি আপনি দেখেন এস.এস.সি-এইচ.এস.সি পাস করেও অনেক যুবক পেটের দায়ে সাইকেল রিকশা কিংবা ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা অথবা সিএনজি চালিত রিকশা চালায় এবং পক্ষান্তরে যদি আবার অনেককেই সাংবাদিক হিসেবে দেখেন, যাদের এস.এস.সি কিংবা এইচ.এস.সির কোন ডিগ্রীই নেই, তাহলে আপনি নিজেকে তখন কী প্রশ্ন করবেন?
অথচ এসব ঘটনাগুলো সত্য। কিন্তু নাম ধরে সরাসরি আমাদের বলার উপায় নেই। বললে ‘কল্লা’ যাবে। কারণ, কেউই এখন বলতে চায় না। মিডিয়ারও মুখে তালা, সাংবাদিকেরও হাত বাঁধা। জেল খাটতে সাংবাদিকগণ এখন খুবই ভয় পান। তাই অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীর সঙ্গে কম্প্রোমাইজে চলে যান। তারপর তো ‘মাল’ কামানোর খেলা...।
সৎ লোককে অসৎ লোক ল্যাং মেরে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যায়। কিভাবে এগিয়ে যায়, সেই পদ্ধতিটা কেউ আর খোঁজ করে দেখে না। শুধু এগিয়ে যাওয়াটাই বা আর্থিক উন্নতিটাই দেখে। পন্থাটা কেউ আর তলিয়ে তেমন দেখে না। বরং দুর্নীতিগ্রস্থ সেসব পন্থা ওদের দক্ষতা হিসেবেই সমাজে স্বীকৃতি লাভ করে। একজন ফটো সাংবাদিক একবার থানার ওসিকে প্রশ্ন করেন, ‘‘স্যার, ইউ.ডি মামলা কী?’’
ওই ওসি ভদ্রলোক ছিলেন। তাই ওই সাংবাদিককে তিনি ইউ.ডি মামলা কাকে বলে, তা বুঝিয়ে দেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ইউ.ডি [আননেচারেল ডেথ] মামলার নাম যে জীবনেও শুনেনি, সে কিভাবে সাংবাদিক হয়ে যায়?
যদি আপনি দেখেন কোনো লোক নিয়মিত ‘..................’ বিক্রি করার জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট এর হাতে ধরা খেয়ে জেলযাপন করেছে, তারপর যদি দেখেন সেই লোকও সাংবাদিক পরিচয়ে আপনার কাছে ফিরে এসেছে, তখন আপনার কেমন লাগবে?

দেশে এখন পত্রিকার সংখ্যাও অনেকই বেড়েছে। দৈনিক এবং সাপ্তাহিক মিলিয়ে অনেক পত্রিকাই। নিয়মিত এবং অনিয়মিতভাবে এগুলো প্রকাশিত হচ্ছে।
প্রতিটি পত্রিকার সাংবাদিক সংখ্যা মিলে দেশে দেশে এখন হাজার হাজার সাংবাদিক। কিন্তু তাদের রিপোর্ট কোথায়? পত্রিকাগুলো কি পাঠকের পাঠচাহিদা কোনোভাবেই মেটাতে পারছে?
দেশে এই যে সাংবাদিকের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেল, তা কোন দোষের বিষয় নয়। কিন্তু বিষয় হলো পত্রিকাগুলোর গুণগত মান বেড়েছে কী না, তাও বিবেচ্য বিষয়।
অধিকাংশ সাংবাদিকেরই এখন একাডেমিক-নন একাডেমিক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
ঢাকা শহরে যেমন পত্রিকার সংখ্যা বেশি, টেলিভিশনের সংখ্যাও অনেক, তেমনি সাংবাদিকদের পাঠ বা প্রশিক্ষণের জন্য পাবলিক ও সেরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক সংস্থার কর্মসূচিও অব্যাহত রয়েছে।
কিন্তু দেশের জেলা শহরগুলোতে এই প্রশিক্ষণের বিষয়টি প্রায় অনুপস্থিত। জেলা বা উপজেলাগুলোর অধিকাংশ সাংবাদিকেরই ভাবখানা এমন যে,পুলিশ হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন আছে, প্রশিক্ষণের দরকার আছে, আইনজীবি হওয়ার জন্যও শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন রয়েছে, প্র্যাকটিস দরকার আছে, কিন্তু সাংবাদিক হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা- প্রশিক্ষণ-প্র্যাকটিস কিছুই দরকার নেই।
তাই অনেক অযোগ্য লোকও এখন সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র নিয়ে সর্বত্র পরিচয় দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এতে করে প্রকৃত পেশাজীবি সাংবাদিকদেরও যথেষ্ট মানহানি হচ্ছে। কোনো কোনো ফটোগ্রাফার আবার নিজ নেতাদের ছবি তোলাকেই ‘ফটো সাংবাদিকতা’ মনে করে। সমাজের হাজারো সমস্যাকে তারা চোখেও দেখে না। সভ্য সমাজে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সৎ এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকের সংখ্যা যদি হয় 9 জন, সেই হারে 90 জনকেই দেখা যায় সাংবাদিকতাকে পেশার বদলে ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছে।
সাংবাদিকদের অর্থ উপার্জন করাটা জরুরীও। কিন্তু সেটা তার ব্যক্তিত্বকে বাদ দিয়ে অবশ্যই নয়।
বরং মানুষ যে আইনজীবীর কাছে গেলে টাকা দেয়, ডাক্তারের কাছে গেলে টাকা দেয়, আর সাংবাদিকদের টাকা দিতে চায় না, সেটা ওইসব ভন্ডদের কারণেও অনেকটা হয়েছে।
তারা একটি বিজ্ঞাপন কিংবা ধান্দার জন্য তাদের পত্রিকাকে যে পরিমাণ নিচে নামাতে পারে, প্রকৃত সাংবাদিক কি সেই পরিমাণ নিচে নামতে পারবেন? কক্ষনোই নয়।
কারণ, প্রকৃত সাংবাদিক ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে ‘মাল’ কামাতে পারবেন না। আর এসব লিখলে যদি সাংবাদিকদের সঙ্গে বা পত্রিকার মালিকদের সঙ্গেও শত্রুতা বাড়ে, তাহলে সমাধানটা কী? মিডিয়ারও মুখে এমন তালা আর সাংবাদিকেরও হাত এমন বাঁধা অবস্থায় আর কতোকাল দেখবো আমরা? আমাদেরও কি ক্লান্তি বলতে কিচ্ছুটিই নেই?

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০১৮ ভোর ৪:৫২

জসীম অসীম বলেছেন: বাংলাদেশে বেসরকারীভাবেই উন্মুক্ত ট্যারিস্টরিয়াল
টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন দেয়া হোক
জসীম উদ্দিন অসীম:
==========================
বাংলাদেশের টেলিভিশন (বিটিভি)এর তালিকাভুক্ত নাট্যশিল্পী হবো, এমন স্বপ্ন একদা অনেকদিনই লালন করেছিলাম। গত শতকের নব্বই দশকের প্রথম দিকের ঘটনা এটি।বাংলাদেশের প্রকৃত সংস্কৃতি উপস্থাপনে এই চ্যানেলটি একদা বিশাল ভূমিকাই পালন করেছিলো। তখন একমাত্র সংবাদ অনুষ্ঠান ব্যতিত অন্য অনেক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন হয়েও এই টেলিভিশন ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যই হলো নাট্যানুষ্ঠান। বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি বাংলাদেশ সরকারের প্রথম টেলিভিশন। এটি তার প্রথম অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছিলো 1964 সালে। ঢাকার রামপুরাতেই বিটিভি ভবনের একটু দক্ষিণে 1991 সালে বেসরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ‘ইনষ্টিটিউট অব ব্রডকাস্টিং আর্ট (বিবা)।’ আমি ওখানে ‘অভিনয়’ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। ওখানে অভিনয় বিভাগে প্রশিক্ষণের অনেক কাগজপত্র এতোদিনে হারিয়ে ফেলেছি।ওই ‘ব্রডকাস্টিং আর্ট’ সেন্টারের পরিচালক ছিলেন বিটিভি-র সুরকার লোকমান হাকিম। এছাড়াও আমাদের অভিনয় বিভাগের ক্লাস নিতেন তখন বিটিভি-র প্রযোজক সালেক খান, প্রযোজক কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী, অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ, অভিনেতা মোহন খান, আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। উন্মুক্ত টেরিস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক এর ঢাকার রামপুরার এই টেলিভিশনের টাওয়ার তখন দেখা যেতো মাতুয়াইল থেকেও। আমার তখনকার বাসা ছিলো মাতুয়াইলে। বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমেই চলে যেতাম গুলিস্তানে। তারপরে সরাসরিই রামপুরায়। সে সময়ে বিটিভি-র যেই অবস্থান ছিলো, সেই অবস্থান আর বাংলাদেশে কোনো টেলিভিশনই করে নিতে পারেনি, যদিও বিটিভি এখন আর বিভিন্ন কারণে তেমন কেউ দেখেই না। অন্যদিকে বর্তমানে বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ, চ্যানেল আই, এনটিভি, আরটিভি, বাংলাভিশন, বৈশাখী টিভি, দেশ টিভি, মোহনা টেলিভিশন, চ্যানেল নাইন, ইন্ডিপেন্ডন্ট, সময় টিভি, বিজয় টিভি, মাই টিভি, মাছরাঙ্গা টিভি, জিটিভি, একাত্তর টিভি, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর, এশিয়ান টিভি, চ্যানেল সিক্সটিন, যমুনা টেলিভিশন, দীপ্ত টিভি, নিউজ টুয়েন্টিফোর…ইত্যাদি সব টেলিভিশনের আকর্ষনীয় অনুষ্ঠানের চাপে বিটিভি-র আর সেইদিন নেই। প্রতিযোগিতায় হেরে গেছে বিটিভি। অন্যদিকে উন্মুক্ত টেরিস্ট্যারিয়াল সিস্টেমের অভাবে বেসরকারী টেলিভিশনগুলোরও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
1992 সালে বিটিভি-তে আমি প্রথম অডিশন দেই ‘অভিনয়’ বিভাগে। কী যে প্রতিযোগিতা ছিলো তখন বিটিভি-তে। আসলে ওই প্রতিযোগিতার ভিতর দিয়েই বের হয়ে আসতো তখন প্রকৃত প্রতিভা। আর এখন সেই চর্চা কোথায়? প্রতিযোগিতা চর্চার জায়গায় তেমন তৈরি হয়নি। চ্যানেলের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। চর্চা বাড়েনি সেই তুলনায়। রাষ্ট্রীয় অনেক বিধিবিধানকে ও চাপকেও অনেকে আবার দায়ী করেন।যেমন বাংলাদেশ সরকার দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন, সিএসবি নিউজ, চ্যানেল ওয়ানসহ কয়েকটি টেলিভিশনকে বিভিন্ন কারণে বন্ধ করে দিয়েছে। এমন চাপেও নাকি অনেক সময় ভালো কাজ দেয়া যায় না। অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভিও এখন তার অনুষ্ঠানের মান আর ধরে রাখতে পারেনি। এই উন্মুক্ত ট্যারিস্টরিয়াল টেলিভিশনটির একমাত্র সংবাদ ব্যতিত প্রায় সকল অনুষ্ঠানই একদা অনেক জনপ্রিয় ছিলো।ছিলো খুব মানসম্পন্নও। কিন্তু আজ আর বিটিভি-র সেই দিন নেই। বাংলাদেশের বেসরকারী কেবল টেলিভিশনগুলোর চাপে এই উন্মুক্ত ট্যারিস্টরিয়াল টেলিভিশন চ্যানেলটি এখন যেন বড়ই অসহায়। এখন আর পারতপক্ষেই কেউ দেখে না এই চ্যানেলটি। আর বাংলাদেশ টেলিভিশনকে এই প্রথম ধাক্কা মেরেছিলেন সাইমন ড্রিং। ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী এই ইংরেজ সাংবাদিক একজন আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজয়ী বৈদেশিক সংবাদদাতা, টেলিভিশন উপস্থাপক এবং প্রতিবেদন নির্মাতা। তিনি পৃথিবীবিখ্যাত সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে কাজ করে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববাসীর নজর কাড়েন। বিবিসি টেলিভিশনেও তার পারফরম্যান্স অবিস্মরণীয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সাইমন ড্রিং এর সম্পর্ক প্রায় রক্তের। কারণ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি তাঁর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার খবর বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন। অনেক সংবাদপত্রেই তিনি ‘প্রুফ রিডার’ (সম্পাদনা সহকারী) হিসেবে কাজ করেন। তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের এক লগ্নে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের যুদ্ধবিষয়ক সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন। 1971 সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাঁকে জোরপূর্বক দেশ থেকে বের করে দেয়। সাইমন ড্রিং বাংলাদেশের 1ম বেসরকারী টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন চ্যানেল ‘একুশে টেলিভিশন’ এর নেপথ্য কারিগর ছিলেন। আজ যে বাংলাদেশের বেসরকারী টেলিভিশনের যাবতীয় আধুনিকতা, তার অন্যতম নেপথ্য রূপকার এই সাইমন ড্রিং। তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের 1ম বেসরকারী উন্মুক্ত টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন চ্যানেল ‘একুশে টেলিভিশন’ প্রথম রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশন ‘বিটিভি’কে ধাক্কা দেয়। সেই উন্মুক্ত টেরেস্ট্রিয়াল ‘একুশে টেলিভিশন’ এর ‘সংবাদ অনুষ্ঠান’টি যখন সারা বাংলাদেশে প্রায় বিপ্লব সৃষ্টি করতে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময়েই 2002 সালে এই ‘একুশে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ’ সম্প্রচার আইন লঙ্ঘনজনিত কারণে তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তখন সায়মন ড্রিংয়ের ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে তাঁকে অবিলম্বে বাংলাদেশ ত্যাগের আদেশ দেয়া হয়েছিলো। ঠিক তেমনিভাবেই 1971 সালে পাকিস্তান সরকারও তাকে পূর্ব-পাকিস্তান ছাড়তে বাধ্য করেছিলো। ওই ঘটনার পর বিটিভি আর তার কোনো ট্যারিস্টরিয়াল টেলিভিশন ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া দিতে রাজি হয় না। দেশে এখন অনেক বেসরকারী কেবল টেলিভিশন চ্যানেল চালু হলেও বেসরকারী উন্মুক্ত ট্যারিস্টরিয়াল টেলিভিশন আর চালু হয়নি। সরকার আর উন্মুক্ত ট্যারিস্টরিয়াল একুশে টেলিভিশনটির মতো সেই ঝুঁকি নিতে আর প্রস্তুত নয়। কিন্তু আমরা চাই: রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থেকেও যেহেতু উন্মুক্ত ট্যারিস্টরিয়াল টিভি চ্যানেল ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি’ ভালো করতে পারছে না, সেহেতু বেসরকারীভাবেই উন্মুক্ত ট্যারিস্টরিয়াল টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদনও দেয়া হোক। প্রতিযোগিতা তীব্রতর হলে অবশ্যই মেধাবীরা বের হয়ে আসবেন।

২| ১০ ই মে, ২০১৮ ভোর ৪:৫৮

জসীম অসীম বলেছেন: অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের কথা
-----------------------------------
সাদিয়া অসীম পলি

আমার প্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন হলেন সন্ধ্যা রায়। তার সঙ্গে আমি প্রথম পরিচিত হই সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত ছবির মাধ্যমে।এতো সুন্দর অভিনয় ক্ষমতা তার, না দেখলে শুধু বর্ণনায় তা প্রকাশ করা যাবে না।বিগত 10 বছরের সংসার জীবনে আমি পৃথিবীর এতো ভালো কিছু ছবি দেখেছি এবং এতো বিখ্যাত লেখকদের কিছু গ্রন্থ পাঠ করেছি, তা নিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে করতেই প্রমাণ হয়ে যাবে যে, আসলে আমি আমার জীবনের সময়গুলোকে বৃথা নষ্ট করিনি।
কথা বলছিলাম অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়কে নিয়ে। অশনি সংকেত এর পর আরেকটি ছবিতে দেখেছিলাম সন্ধ্যা রায়কে। তাপস পালের সাথে। সেই ছবিটার নাম ছিল দাদার কীর্তি। তখনও ছবি দেখে ছবির সব তথ্য নোট করার কথা মাথায় আসেনি আমার। সন্ধ্যা রায়ের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তেমনকিছুই জানতে পারিনি এখনো। শুধু এইটুকুই জেনেছিলাম তার পূর্বপুরুষ ছিলেন জমিদার। শারদীয় দেশ অথবা শারদীয় আনন্দলোক ম্যাগাজিনে অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ পড়েছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যা রায়ের কোনো স্মৃতিচারণ কোথাও পড়িনি আমি। কিন্তু তার চমৎকার অভিনয় ক্ষমতা কিংবা অভিনয় কৌশল আরও দর্শকের মতো আমাকেও এতোটাই মুগ্ধ করেছে যে, সন্ধ্যা রায়কে কোনোদিনও ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত ছবির অভিনয়। অনঙ্গ বৌ ববিতার সঙ্গে এতো চমৎকারভাবে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন, যেন বাস্তব জীবন। অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ভক্ত হই আমি প্রথম অপুর সংসার ছবি দেখে। কিন্তু অশনী সংকেত ছবির সৌমিত্র যেন একেবারেই ছিলেন আলাদা। তবে ঘরে বাইরে ছবির সৌমিত্রকে দেখে ছবিতে তার নীতিহীন রাজনীতি দেখে ঘৃণাও শুরু করেছিলাম সেই চরিত্রকে। চরিত্রকে তারা এমনভাবেই ধারন করতেন। তেমনি ব্যতিক্রম এক অভিনেত্রী ছিলেন এই সন্ধ্যা রায়। 1973 সালে নির্মিত এই অশনি সংকেত ছবির কাজ দেখার পর তার অভিনয় দেখলাম দাদার কীর্তি ছবিতে। দাদার কীর্তি ছিল 1980 সালের ছবি। সন্ধ্যা রায় তার জীবনে আরও অনেক অনেক ছবিতেই অভিনয় করেছেন। আমি শুধু তার এই দুই ছবিই দেখেছি। আর এই দুই ছবি দেখেই বুঝতে পেরেছি তিনি ছিলেন এক অসামান্য অভিনেত্রী।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত অশনি সংকেত উপন্যাসও আমি পড়েছিলাম। কিন্তু এতোই আগে যে, কিছুই তেমন মনে রাখতে পারিনি।কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত ছবিটি দেখে আমি অশনি সংকেত উপন্যাসেরও গুরুত্ব অনুভব করতে পারি।এই ছবিতে আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (ছবিতে-গঙ্গাচরণ চক্রবর্তী) এবং ববিতার (অনঙ্গ বউ) পরেই সন্ধ্যা রায়কে স্থান দেই। অবশ্য এই ছবিতে অভিনেতা-অভিনেত্রীও খুব বেশি নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে 1943 সালের বাংলার দুর্ভিক্ষে যে গ্রামেও অভাবের তীব্র লেলিহান শিখা এসে লেগেছিল, এটাই ছিলো এই উপন্যাসের এবং চলচ্চিত্রের মূল বিষয়। এতো জীবন্তভাবেই সত্যজিৎ রায় এই গল্প উপস্থাপন করেছেন, তা বুঝতে হলে মূলত তার ছবিগুলোই দেখতে হবে। আর তার এই নিপুণ ছবি নির্মাণে তাকে সহায়তা করেছেন ববিতা-সন্ধ্যা রায়ের মতো অসামান্য অভিনেত্রীগণই। অশনি সংকেত ছবির ছুটকি চরিত্রে সন্ধ্যা রায় যে অভিনয় করেছিলেন, তা বিশ্বস্বীকৃত। তিনি আসলে অভিনয় শিখেছিলেন মন-প্রাণ-রক্ত দিয়েই। তাই অামি এইসব ছবির জন্য সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে সঙ্গে সন্ধ্যা রায়দের মতো অভিনেত্রীদেরও বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

৩| ১০ ই মে, ২০১৮ ভোর ৫:০৬

জসীম অসীম বলেছেন: অদিতি মহসিনের গাওয়া রবীন্দ্র সংগীত
কেন যে অতিরিক্তই ভালো লাগে
----------------------------------------
জসীম উদ্দিন অসীম
---------------------------------------
কেন আমি রবীন্দ্র সংগীতে ফিরে ফিরে যাই? বা ফিরে ফিরে আসি? রবীন্দ্রসঙ্গীত আমার এতোই প্রিয় যে, পৃথিবীর প্রায় সব সংগীতের সমঝদার শ্রোতা হয়েও আমি আবার ফিরে ফিরে আসি রবীন্দ্র সংগীতেই। কুমিল্লা রেলষ্টেশনের মাহমুদ বুক ষ্টলের ফেরদৌস মাহমুদ মিঠু ভাইয়ের কাছ থেকে একসময় অনেক সংগীতের স্বরলিপির গ্রন্থ ক্রয় করেও হারমোনিয়াম নিয়ে বসি ওই রবীন্দ্র সংগীত গাইতেই। আরেকটি বিষয়: যখন আমার মন বড়ই বিচলিত থাকে, তখন আমি হারমোনিয়াম নিয়ে সচরাচর বসি না। রবীন্দ্রনাথ নিজে হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সংগীত থেকে শুরু করে পাশ্চাত্য সংগীত, লোকসংগীত, শ্যামাসংগীতসহ সব সংগীতেরই মুগ্ধ শ্রোতা এবং গায়ক ছিলেন। আমার কাছে একটি গ্রন্থ ছিল: গায়ক রবীন্দ্রনাথ। 2002 সালে আমার প্রথম সংসার ভাঙ্গনের সময় অনেক কিছুর সঙ্গে তাও হারিয়েছে। ঢাকার শাহবাগের আজিজ মার্কেটে গিয়ে এটি আবার কিনতে চেয়েও পাইনি।
রবীন্দ্রনাথ-নজরুল সম্পর্কে একটি কথা প্রায়ই আমি বলি যে, এই দুই মহান কবি জন্মেছেনও পরাধীন ব্রিটিশ ভারতে এবং মারাও গেছেন ওই পরাধীন ব্রিটিশ ভারতেই। রবীন্দ্রনাথ মারা যান 1941 সালে এবং কাজী নজরুল ইসলাম নির্বাক হোন 1942 সালে। নজরুল যদিও 1976 সালে মারা যান, কিন্তু 1942 সালের পর তিনি কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারেননি। পরাধীন ভারতেই তারা যেসব সৃষ্টি করে গেছেন, আজকে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রে বসেও তা কল্পনা করতে পারি না। কিন্তু আমি কেন কোথাও কখনো রবীন্দ্র সংগীত গাই না? এর অবশ্যই অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত আমি কোনো বাদ্যযন্ত্রই ভালো বাজাতে পারি না। এসরাজ, তানপুরা, পিয়ানো তো দূরে থাক, হারমোনিয়ামও কখনো ভালো করে শিখতে পারিনি। কুমিল্লার সংগীতশিল্পী দুলাল চৌধুরী আমাকে বিনা পয়সায় অনেকবারই শেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি সময়ও তখন বের করতে পারিনি। এমনকি বাঁশি, একতারা, দোতারা, তবলা এসবও শিখতে পারিনি। আমার বাবার বড় ভাই সিরাজ উদ্দিন জ্যাঠা একতারা, দোতারা বাজিয়ে বাজিয়ে এতো ভালো গাইতে পারতেন!অবর্ণনীয়। কিন্তু তাদের গান রেকর্ডের কোনো লক্ষ্যই ছিল না। তারা গান গাইতেন তাদের স্রষ্টাকে কাছে পাওয়ার জন্য। তখন যদি বুঝতাম: বাড়ির কাছে আরশীনগর সেথা এক পড়শী বসত করে, তাহলে তো ওই জ্যাঠার সঙ্গই ছাড়ি না আমি। সিরাজ উদ্দিন জ্যাঠাকে চিনলাম আমি তখন, যখন তিনি আর বেঁচে নেই। আজ যে এতো লেখাপড়া শিখেছি, জ্যাঠার জ্ঞান এবং লক্ষের কাছে অতি তুচ্ছ আমার এ বিদ্যার্জন। আমার বাবাকে তার জীবদ্দশায় আমি তবু কিছুটা চিনেছিলাম। কিন্তু জ্যাঠাকে বিন্দুমাত্রও চিনতে পারিনি। তিনি ছিলেন এক অসম্ভব শক্তিধর সাধক। আমি কিছু লেখাপড়া করেছি বলেই এটা আজ ধরতে পেরেছি। যদি এসব লেখাপড়াও না করতাম, তাহলে কোনোদিন বুঝতেই পারতাম না যে, জ্যাঠা আমার এমন আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
একসময় আমার তবলা শেখার ভীষণই ইচ্ছে হলো।এক গুরুর কাছে শিখলামও কিছুদিন। কিন্তু পরে আবার একই সমস্যা দেখা দিলো। সময় বের করতে পারছিলাম না। আর ততদিনে আবার খোল শেখার নেশায় পেলো। চারণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির এক শিল্পীকে একবার পথসভায় খোল বাজিয়ে গণসংগীত গাইতে দেখলাম । শিল্পীর নাম এখন আর মনে নেই। যেমন ছিল তার খোল বাদন, তেমনি তার গায়কী। সেই থেকেই খোল শেখার নেশায় পেয়েছিল। ওই সময় আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে আমার খালিকণ্ঠে গাওয়া রবীন্দ্র সংগীত শোনালাম। তিনি বললেন, আপনি রবীন্দ্র সংগীত ভালো গাইলেও গণসংগীতই বেছে নেন। কিন্তু আমার মন পড়ে থাকলো রবীন্দ্র সংগীতেই। তাই খোঁজ শুরু করলাম রবীন্দ্রনাথ কী কী গণসংগীত রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’ তো বরাবরই আমার সঙ্গেই থাকতো। তাই রবীন্দ্রনাথের দেশের গানগুলো কণ্ঠে তুলে নিতে লাগলাম। তখনই খোঁজ পেলাম রবীন্দ্রনাথের ‘বিধির বাধন কাটবে তুমি তুমি কি এমনি শক্তিমান’ গানটির।এটি রবীন্দ্রনাথের একটি জনপ্রিয় গান হলেও এটির তখন কোনো স্বরলিপি খুঁজে পেলাম না। একজনের কাছে গেলাম গানটি বাজিয়ে আমাকে শোনানোর জন্য। তিনি ছাত্রদের রবীন্দ্র সংগীত শেখান। কিন্তু আমার মনে হলো তিনি সঠিকভাবে গানটির সুর তুলতে পারছিলেন না। ততদিনে আবার আমার কাছে হারমোনিয়াম নেই।মুক্তাপাল শানু-র একটি হারমোনিয়াম ছিলো আমার কাছে। এটি প্রয়োজনেই নিয়ে গেলেন শানু-র মা মাসিমা। অবশ্য তখন হারমোনিয়ামটির কয়েকটি রীডেই সমস্যা দেখা দিয়েছিল।তিনি কুমিল্লার রানীরবাজারের কামাল ভাইয়ের দোকানে হারমোনিয়ামটি দিলেন টিউন করতে। আমি তখন নাহিদা আক্তার নিঝুমের হারমোনিয়ামটি নিয়ে এলাম। নিঝুম কুমিল্লায় উদীচী করতেন। 2004 সালের আগেই। তারও অনেকদিন পরে দেখলাম রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস অবলম্বনে ছবি সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’। এ ছবিতে রবীন্দ্রনাথের ‘বিধির বাধন কাটবে তুমি, তুমি কি এমনি শক্তিমান’ গানটির যথার্থ ব্যবহার দেখলাম কিশোর কুমারের কণ্ঠে। আমি আবারও এ গানের প্রেমে পড়ে গেলাম। শান্তিদেব ঘোষ -এর গাওয়া রবীন্দ্র সংগীত আমি যেভাবে নিমগ্ন হয়ে শুনতে পারি, অন্য অনেকের গাওয়া তেমন পারিনি অনেকদিনই।কুন্দললাল সায়গলের রবীন্দ্র সংগীতের রেকর্ড নেই আমার কাছে। কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, সুবিনয় রায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, সাগর সেন, আশা ভোসলে, কিশোর কুমার, সাদী মোহাম্মদ, নীলিমা সেন, অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, কবীর সুমন, পাপিয়া সারোয়ারদের দুর্লভ রবীন্দ্র সংগীতের সংগ্রহ আমি হারিয়েছিলাম আমার প্রথম সংসার ভাঙ্গনের সময়। সাগর সেনের গানগুলো আমার ঢাকার বন্ধু আবিদ হোসেন সংগ্রহ করে দিয়েছিল। সাদী মোহাম্মদ/ মহম্মদ সংগ্রহ শুরু করেছিলাম 1993 সাল থেকে। আমার ছোট বোন মনিকারও প্রিয় ছিল সাদী মহম্মদ। কিশোর কুমারের গাওয়া রবীন্দ্র সংগীত সংগ্রহ শুরু হয়েছিল 1994 সাল থেকেই। কিন্তু দুর্লভ এই রবীন্দ্র সংগীতের সংগ্রহ আমি হারিয়েছিলাম। রীতিমত নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম কষ্টে। আমি ভাবতেও পারিনি এ জীবনে এমন আক্রমণেরও শিকার হবো কোনোদিন। আমার বাবা-মা কোনোদিনও আমাকে আমার শিল্পচর্চা কিংবা বাঁচার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি।আমার মেজ আপার হারমোনিয়ামের মাধ্যমেই চর্চা ছিলো 1996 সাল পর্যন্ত। কিন্তু সামান্য টাকার সংকটে পড়ে মেজ আপা একসময় তার এতো ভালো রীডের হারমোনিয়ামটি বিক্রি করতে বাধ্য হলেন।তখন আমি অনেক কষ্টই পেয়েছিলাম।1991 সালে ঢাকায় কাদেরী কিবরিয়ার গাওয়া গানের অডিও ক্যাসেট কিনে 2002 সাল পর্যন্ত রাখতে পেরেছিলাম।আজকাল স্বাগতালক্ষী দাশগুপ্ত, শ্রীকান্ত আচার্য্য, অদিতি মহসিন, মনোময় ভট্টাচার্য্য, শৌণক চট্টোপাধ্যায়, মনীষা ও মনোজ মুরলী নায়ারই অধিকই শোনা হয়। শ্রাবণী সেনও শুনি। যেমন এই মুহূর্তে শুনছি ইমন চক্রবর্তী। 1992 সাল থেকে 2010 সাল পর্যন্ত রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা অনেক শুনেছি।এমনকি তার রবীন্দ্র সংগীতের ভিডিওগুলো পর্যন্ত সংগ্রহ করেছি। কিন্তু আজকাল অদিতি মহসিনের গাওয়া রবীন্দ্র সংগীত কেন যে অতিরিক্তই ভালো লাগে। অকল্পনীয় দরদপূর্ণ তার গায়কী। যেন তিনি স্বর্গ থেকে মর্তে নেমে এসে তার গান শেষ করেন। অথবা যেন তিনি স্বর্গে বসেই নিমগ্ন হোন রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ায়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে তাকে অবশ্যই কোনো না কোনো বর দিতেন: অন্তত এটা আমার মনে হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে না জানলেও এমন মতামত না প্রকাশ করেও পারলাম না। এতে অনেক গুণী রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী মনে কষ্ট পেলে আমি অবশ্যই ক্ষমা চাই কিংবা তাদের অভিসম্পাত থেকে মুক্তি চাই।

৪| ১০ ই মে, ২০১৮ ভোর ৫:১১

জসীম অসীম বলেছেন: শিশুর পেটে বিষ ঢুকিয়ে
বাংলাদেশটা লুটেপুটে খাই
------------------------
জসীম উদ্দিন অসীম
------------------------

আমার মা আমাকে বাংলা কিংবা ইংরেজি বর্ণ শেখাতে কী কষ্ট যে করেছিলেন, এখনো আবছা আবছা মনে পড়ে। আজকাল শহরে বর্ণ পরিচয়ের উৎসব হয়। সেখানে ছোট্ট সোনামণিদের হাতেখড়ি দিতে উপস্থিত থাকেন দেশের সেরা লেখকগণও। বাংলা বর্ণে হাতেখড়ি দিতে শহরের অনেক লোক একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে তাদের সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে চলে আসেন। সেই অনুষ্ঠান আবার বিভিন্ন টেলিভিশন সম্প্রচারও করে। কিন্তু আমি এমন বর্ণমালার এবং বর্ণমেলা-র অনুষ্ঠান আমার শৈশবে পাইনি কিংবা যাইনি কোনো হাতেখড়ি উৎসবে। তবে আমার মা একটি কাজ করেছিলেন। আগের যুগের অনেক জমির দলিলে টিপসই বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেখিয়ে বলেছিলেন, যারা লেখাপড়া শিখে না কিংবা নাম লিখতে পারে না, তারা এভাবে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়। আর এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। এখন মোবাইলের সিম রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হয়। মা বেঁচে থাকলে জিজ্ঞেস করতাম, এটা লজ্জার কী না। আজকাল ‘শিশুবর্ধন’ স্কুলের রীতিমত পাঠ্য বিষয়। এমনকি শিশুরা যেন অতিরিক্ত যতœ পায়, সে জন্য ১৭ মার্চ তারিখটিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস বলে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবেও পালন করা হয়। কিন্তু দেশে এখন যে পরিমাণ শিশু হত্যা ও শিশু অপহরণ বেড়েছে, তার সমাধান এ ‘জাতীয় শিশু দিবস’ পালনের মধ্য দিয়ে আসে না। কারণ আমাদের বোধের উন্নতি হয় না। এসব নিয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না। ¯্রফে এক আড্ডায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকের সংগঠন ‘স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)’ এর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ঢাকা শিশু হাসপাতালে অচলাবস্থার কথা বলে তোপের মুখে পড়েছিলাম আমি। শিশির মোড়লের সেই রিপোর্টটি ১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে দৈনিক ‘প্রথম আলো’ পত্রিকা ছেপেছিলো। সব কথা বলা যাবে না। কুমিল্লার টমছমব্রীজের আমার সাংবাদিক বন্ধু মাহবুব কবির একবার আমাকে একটি রিপোর্ট দিয়েছিলেন পত্রিকায় ছাপানোর জন্য। নৈতিক কারণে সেটি ছাপানোর প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু যে কোনো ঝামেলা এড়াতে পরে রিপোর্টটি আমি ছাপিনি। রিপোর্টটি ছিলো শিশুর হাতে ‘হারানো যৌবন পুনরুদ্ধার’ নিয়ে একটি শিশুর হাতে হারবাল কোম্পানীর লিফলেট দেওয়া নিয়ে। আমরা এমনই সমাজে বাস করি, যে সমাজের ‘আশ্চর্য ক্ষমতাধর সেক্সুয়েল ট্রাইগন পাওয়ার অয়েলে’র লিফলেট শিশু-কিশোররাও স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে অনায়াসেই পেয়ে যায়। ডিজিটাল যুগ নিয়ে আর কী বলবো। অথচ আমাদের শৈশবে ঈদের নতুন টুপি ও পোশাক পরে যখন আনন্দে ভেসে বেড়াতাম, তখন এমন ‘দেহের যৌন শক্তি বৃদ্ধির ‘পাওয়ার অব ফাইটার্স’ এর লিফলেট আমাদের হাতে পড়তো না। চিড়িয়াখানায় গিয়ে আমরা তখন যৌনকর্মীদের বেলেল্লাপনা দেখতাম না। আমাদের শৈশবে আমরা ‘কলিকাতা দেব সাহিত্য কুটীর’ কর্তৃক প্রকাশিত ‘ছোটদের বুক অব নলেজ’ পড়তাম। তাই আমরা আমাদের সন্তানদের ‘কিশোর আলো’ পত্রিকা কিনে দেই কিংবা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র-এর সদস্য করে বই পড়তে উৎসাহ দেই। দেখতে দেই ‘মিনা’ সহ অসংখ্য বিশুদ্ধ কার্টুন। কিন্তু এই সমাজটায় নষ্টামীর বীজ ছড়াচ্ছে আসলে কারা? ঠিক তারা, যারা আমাদের শিশুদের শত্রু। যারা আমাদের ভবিষ্যতের শত্রু। অথচ গোটা বিশ্বজুড়েই ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার এখনো ৩০ শতাংশের বেশি নয়। বুকের দুধ ও সঠিক সম্পূরক খাবার খাওয়া নিশ্চিত করতে প্রতিটি দেশে বিকল্প শিশু খাদ্যের ব্যাপারে শক্তিশালী আইন এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। প্রথম বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সম্মেলনেও এ বিষয়ে নীতি বাস্তবায়নের আহবান জানানো হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অনেক বিকল্প শিশু খাদ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অসংখ্য শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে শিশুদের ‘বিষখাদ্য’ খাওয়াতে বাধ্য করে। ওই বিকল্প শিশু খাদ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং ঘুষখোর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ হলো ‘হারে হারামজাদা’। বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের অনেক উপদেষ্টাও এসব হারামজাদাদের হারামজাদি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এই হারামিদের সম্পর্কে শিশুদের সেই বিখ্যাত কবিতাটির প্যারোডি করে বলা যায়: ‘হারামজাদা খাস কি? পানতা ভাত চাস কি? পানতা আমি খাই না। টাকার বস্তা পাই না। একটা যদি পাই, অমনি সেই টাকা দিয়ে শিশুর পেটে বিষ ঢুকিয়ে বাংলাদেশটা লুটেপুটে খাই।’ শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। সকল বঞ্চনা ও প্রতারণা থেকে ওদের রক্ষা করতে হবে। কিন্তু দুঃখের কথা এই: সেই ভবিষ্যৎও ওই ‘হারে হারামজাদা’দের চাপে ও পাপে নিরাপদে নেই। আমাদের অভিশাপে ও প্রতিবাদে যেন একদিন না একদিন এসব অবিচার বন্ধ হয়ই হয় এবং এটা যেন খুব দ্রুতই হয়।

৫| ১০ ই মে, ২০১৮ ভোর ৫:১৬

জসীম অসীম বলেছেন: কুমিল্লার একজন অবহেলিত ফিল্ম-বোদ্ধা:
জসীম উদ্দিন অসীম।।
জামাল উদ্দিন দামাল-এর
সেলুলয়েডের লাল কবিতা
গ্রন্থ থেকে সংগৃহিত।।
-----------------------------------------
‘পথের পাচালী’ চলচ্চিত্র বিষয়ে একবার একজন বলছিলেন, ঘবাবৎ ও’ষষ ভড়ৎমবঃ ঃযরং ভরষস...’.
সেই ‘চলচ্চিত্র’ এখন পড়ানো হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিয়েও আজকাল চলচ্চিত্র নির্মাণে অনেকে নেমে পড়েছেন। বিষয়টা এতই সহজ নয়। তাদের কোনো ব্যবহারিক কিংবা তাত্ত্বিক শিক্ষা থাকে না বলেই আরও এত জটিলতা সৃষ্টি করে যায়।
কিন্তু কুমিল্লা নিয়ে কাজ করতে মাঠে নেমেছিলেন জসীম উদ্দিন অসীম। কিন্তু যেহেতু তিনি গণ্যমান্য নামধারী জঘন্য ও চতুর কিংবা বাণিজ্যিক লোকদের দালালি করেন না, তাই কুমিল্লার ঐতিহ্য নিয়ে অবাণিজ্যিক বিষয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণে তিনি কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান কিংবা জেলা পরিষদ অথবা জেলা প্রশাসনে অনুদান চেয়েও পাননি। তাই মাঝপথেই থেমে যায় তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে নেয়া এ প্রকল্প। তার সিনেমাটোগ্রাফির কনসেপ্টই ফটোগ্রাফির কনসেপ্টে রূপান্তরিত হয়। তার আলোকচিত্রগুলোই এ সাক্ষ্য দেয়। আজকাল কুমিল্লা শহরে দেখছি ডিজিটাল ক্যামেরার শাটার টিপতে পারলেই ‘প্রেস ফটোগ্রাফার’ হয়ে যায়। বিষয়টা এতই ছেলেখেলা নয়। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত আমার রচিত ‘প্রসঙ্গ :চলচ্চিত্র’ শীর্ষক গ্রন্থে প্রচ্ছদ তৈরী হয়েছিলো জসীম উদ্দিন অসীম-এর ‘গোমতি নদীর এপার-ওপার’ সিরিজের একটি শৈল্পিক ফটোগ্রাফ দিয়ে। সেই গ্রন্থেই তার ‘গোমতি নদীর এপার ওপার’ সিরিজের কিছু সংখ্যক ফটোগ্রাফসহ তারই ফটোগ্রাফি বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ ‘প্রসঙ্গ: ফটোগ্রাফি’ গ্রন্থের একটি বিজ্ঞাপন বের হয়েছিল। দুঃখজনক বিষয়, সেই গ্রন্থ তার একটি পারিবারিক দুর্ঘটনায় সেই প্রবন্ধের পান্ডুলিপিটিও হারিয়ে যায়। এছাড়াও মননশীল চলচ্চিত্র বিষয়ে রয়েছে তার অনেক লেখা, যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বিচ্ছিন্নভাবে ছাপা হয়েছে।
জসীম উদ্দিন অসীম প্রথমে ১৯৮৭ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। চলচ্চিত্র সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন খোকন তাকে চলচ্চিত্রে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে না পেরে ১৯৯২ সাল থেকে ফ্রি-ল্যান্স স্টিল প্রেস ফটোগ্রাফি শুরু করেন। ঢাকায়। পরে একসময় কুমিল্লার পত্রিকা দৈনিক ‘শিরোনাম’-এ তিনি ‘রিপোর্টার কাম ফটোগ্রাফার’ পদে চাকুরিও করেছেন। কিন্তু তার মাথায় বরাবরই ছিলো ফিল্ম নির্মাণের ইচ্ছে। ১৯৯৪ সাল থেকে আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র ম্যাগাজিন ও কুমিল্লার পত্রিকাগুলোতে চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখালেখি শুরু করি। ১৯৯৭ সালে বের হয় আমার প্রথম চলচ্চিত্র বিষয়ক গ্রন্থ ‘প্রসঙ্গ:চলচ্চিত্র’। তখনও এই কুমিল্লা শহরে কেউ ফিল্ম নিয়ে লেখালেখি করছিল না। একমাত্র আমিই ছিলাম এ ব্যতিক্রম বিষয়ের লেখক। বিকল্প ফিল্ম নিয়ে ১৯৯২ সাল থেকে জসীম উদ্দিন অসীম ও তার ঢাকার বামপন্থী বন্ধু আবিদ হোসেনরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-তে নিয়মিত পাঠচক্র করতেন। আবিদ হোসেন প্রতিষ্ঠিত ‘স্বকল্প ধারা’র আয়োজনেই এ পাঠচক্র চলতো। আর ছিলো তাদের ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স ও আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিবলে অংশগ্রহণ। তাদের সংস্পর্শেই আমি এ বিষয়ে লেখালেখি শুরু করি। জসীম উদ্দিন অসীমের মূলত সিনেমাটোগ্রাফির দিকেই মূল নেশা ছিলো। কিন্তু সুযোগ ছিলো না বলেই স্টিল ফটোগ্রাফি বা স্থির আলোকচিত্রের দিকে তার নেশা এসে স্থির হয়। আর সেই সূত্রে তিনি তখন বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন কুমিল্লা জেলা শাখার নির্বাহী সদস্য হন এবং ‘২০০২ সালে এসোসিয়েশনের কুমিল্লা শাখা আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী’তেও অংশগ্রহণ করেন। তখন তিনি ‘প্রদর্শনী সম্মাননা’ও লাভ করেছিলেন। মহান স্বাধীনতা দিবস-২০০৪ উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি কুমিল্লা একটি সরকারি কর্মসূচি হিসেবে ‘গোমতি নদীর এপার ওপার’ শীর্ষক জসীম উদ্দিন অসীমের ৩ দিনব্যাপী প্রথম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন তদানীন্তন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক তারিক-উল ইসলাম। একজন ফ্রি-ল্যান্স প্রেস ফটোগ্রাফার হিসেবে একসময় জসীম উদ্দিন অসীমের ছবি ডেইলি অবজারভার, ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও দৈনিক সংবাদসহ ঢাকার অনেক জাতীয় দৈনিকেও ছাপা হয়েছে। ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের এতবারপুরে গোমতি নদীর বাঁধ ভেঙ্গে জেলার প্রায় ৬টি উপজেলা প্লাবিত হয়। ওই সময়ে তার তোলা বন্যা ও গোমতি নদীভাঙ্গনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি কুমিল্লার দৈনিক ‘রূপসী বাংলা’ ও সাপ্তাহিক ‘আমোদ’সহ জাতীয় অনেক বাংলা-ইংরেজি দৈনিক সংবাদপত্রে ছাপা হয়। এসব সংবাদ-চিত্রেও তার চলচ্চিত্র –-টান অনুভব করা যায়। ছবি আঁকার নেশাও তার রয়েছে। বিভিন্ন সংকলনের প্রচ্ছদচিত্র এঁকেছেন। পত্রিকায়ও কিছু ছাপা হয়েছে। চলচ্চিত্র বুঝতে কিংবা নির্মাণে চিত্রকলার জ্ঞান খুবই অপরিহার্য। তবে বিভিন্ন সময়ে কুমিল্লার পত্রিকাগুলোর মালিকদের সঙ্গে তার মতান্তরের কারণে তিনি প্রায়ই পত্রিকার চাকুরি ছেড়ে দিয়ে তার আলোকচিত্র চর্চাও অব্যাহত রাখেননি। পত্রিকার, পৃষ্ঠপোষক কিংবা মালিকপক্ষের সঙ্গে তার কোনোদিনও বনিবনা হয়নি। ২০০৪ সালে জসীম উদ্দিন অসীম ‘কুমিল্লার কাগজ’ পত্রিকায় ‘বার্তা সম্পাদক’ হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু ২০০৫ সালেই ছেড়ে দেন সেই চাকুরি। ২০০৬ সালে দৈনিক ‘কুমিল্লা বার্তা’ পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে যোগ দেন। কিন্তু সেই বছরের শেষদিকে আবারও সেই চাকুরিও ছেড়ে দেন। ২০০৬ সালের শেষদিকে তিনি ‘বাংলা ভিশন’ টেলিভিশনের প্রোগ্রাম বাংলাদেশ ট্রাভেল গাইড ‘দেশের পথে’র পরিচালক হাসান ইমাম চৌধুরী টিংকু-র সাথেও কিছুদিন কাজ করেন। ২০০৬ সালের ১৮-২০ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে সেই অনুষ্ঠান থেকেই তার একটি সাক্ষাৎকার ‘বাংলাভিশন’ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। ২০০৬ সালের শেষদিক থেকে তিনি কুমিল্লা জেলার ইতিহাসভিত্তিক তথ্যচিত্র ‘কমলাঙ্ক’ নির্মাণ ও উপস্থাপনায় জড়িত হন। শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লা প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ জেলা হিসেবে এ উপমহাদেশে সুপরিচিত। জনশ্রুতি আছে, ‘কমলাঙ্ক’ নাম থেকেই ‘কুমিল্লা’ নামের উৎপত্তি। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে কুমিল্লার রাজনৈতিক নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির সাথে বাংলাকেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দানের দাবি জানান। সমবায় আন্দোলনের ¯্রষ্টা হিসেবে খ্যাত ড. আখতার হামিদ খানের ‘পল্লী উন্নয়ন একাডেমি’-জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লা জেলার গৌরবগাথা কুমিল্লাকে করেছে সমৃদ্ধ। একসময় ব্যাঙ্ক এবং ট্যাঙ্কের শহর নামেও পরিচিত ছিল এই কুমিল্লা শহর। কুমিল্লার খাদি শিল্প আজও স্বকীয়তা বজায় রেখেছে। কুমিল্লার গোমতি নদী-ধর্মসাগর দিঘি-ঐতিহাসিক সুজা বাদশা মসজিদ-শিক্ষা ও সভ্যতার প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন শালবন বিহার-ইটাখোলা মুড়া-রূপবান মুড়া-ইপিজেড-ভিক্টোরিয়া কলেজ-জগন্নাথ মন্দির-বাখরাবাদ গ্যাস-ময়নামতি রানীর বাংলো-কুমিল্লার ধর্মসাগর দিঘি সংলগ্ন রানীর কুঠি-লাকসাম নবাব ফয়জুননেসার বাড়ি ও তার শিক্ষা-সাহিত্যে-জনসেবায় অবদান, শচীনদেব বর্মণের বাড়ি-চন্ডীমুড়া মন্দির-লালমাই ময়নামতি পাহাড়, আনন্দবিহার-আনন্দদিঘি,ভোজবিহার, কুমিল্লা সেনানিবাস-ওয়ার সিমেট্রি, বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন...ইত্যাদি বিষয়ে এ ‘কমলাঙ্ক’ তথ্যচিত্রে রয়েছে ভিস্যুয়্যাল নান্দনিক ফিচার। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ প্রকল্পের আওতায় মাত্র এক ঘন্টার তথ্যচিত্র নির্মাণ কাজ শেষ হলেও অর্থাভাবে থেমে যায় বাকি তিন ঘন্টার তথ্যচিত্র নির্মাণ কাজ। এমনকি দুই ঘন্টার ভিডিও ফুটেজ অর্থাভাবে সম্পাদনার অভাবে ঢাকার একটি ভিডিও ফার্মের কাছে আটক থেকে নষ্ট হয় কিংবা হাতছাড়া হয়ে যায় তার। এ সময়ের মধ্যে তিনি একাধিক অডিও রেকর্ডিং স্টুডিও-তেও কিছু কাজ করেন। এরই মাঝে মাসে ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা বেতনে কুমিল্লা বিভাগের মুখপত্র ৬ জেলায় প্রচারিত দৈনিক ‘ডাক প্রতিদিন’ পত্রিকায় চাকুরি নেন। কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত ঢাকা থেকে মুদ্রিত ব্রডশিট এ কাগজটি তখন কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-চাঁদপুর-নোয়াখালী-ফেনী-লক্ষীপুর জেলার মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হতো। পত্রিকাটির ‘বার্তা সম্পাদক’ হিসেবে যোগদান করে ২০১৪ সালের জুন মাসে এবং পত্রিকার মালিক পক্ষের সঙ্গে মতান্তর-পথান্তরের কারণে আবার চাকুরি ছেড়ে দেন ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসেই। ২০০৮ সাল থেকে জসীম উদ্দিন অসীম কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ উল্লাহ প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক ‘নিরীক্ষণ’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ পত্রিকায়ও ‘জার্নালিজম অ্যান্ড কাউন্টার জার্নালিজম’ বিষয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করেছেন তিনি। ফলে তার অবস্থা ক্রমাগত আরও খারাপ হয়ে যায়। এমনকি তিনি কুমিল্লার সাংবাদিক-সম্পাদক-প্রেসক্লাব-এম.পি-মন্ত্রী-মেয়র-ডিসি-এস.পি-পুলিশ বিভাগ-এনজিও-র‌্যাব...এমনকি নিজের বিরুদ্ধেও কলম চালাতে থাকেন। আর এসব লেখা তাঁর প্রচলিত রিপোর্ট ফর্মেও ছিল না, ছিল ‘ব্যক্তিগত দিনলিপি’ ফর্মে। ফলে বিভিন্ন সময়ে ঝড়ের মুখোমুখি হন তিনি। সাংবাদিকদের সংগঠনে যাবেন না, প্রেসক্লাবে যাবেন না, মন্ত্রী -মেয়র-এমপি-ডিসি-র নিউজ ছাপাবেন না। স্থানীয় পত্রিকায় র‌্যাব কিংবা সরকারবিরোধী নিউজ ছেপে দেবেন...এগুলো প্রচলিত কোনো পন্থা হতে পারে না। বিকল্প পন্থা, যা তিনি বিকল্প চলচ্চিত্র চর্চা থেকেই দুই যুগ আগে পেয়েছেন। সাংবাদিকতার পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে তিনি বিভিন্ন সময়ে ‘কুমিল্লা বার্ড-এডাব-রাড্ডা বার্নেন-পি আই বি-বিসিডিজেসি-ক্যাম্প ও নিউজ নেটওয়ার্কসহ আরও অন্যান্য প্রশিক্ষণ সংস্থা আয়োজিত প্রিন্ট-অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেও তার মনে সুপ্ত ছিল চলচ্চিত্র-চর্চা। পৃথিবীর সকল শিল্প-চলচ্চিত্র তিনি অনেক আগেই দেখে ফেলেছেন। ১৯৯১-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সময়ে জসীম উদ্দিন অসীম ঢাকায় থিয়েটার করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি-তে প্রেক্ষাপট থিয়েটারে ও পরে দুর্বার নাট্যচক্রে প্রায় দুই বছর কাজ করেন। ১৪৮ মিটফোর্ড রোডের ‘দুর্বার নাট্যচক্রে’র প্রতিদিন রিহার্সাল হতো তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকাতেই। দুর্বার-এর নাট্যকর্মী হিসেবেই তিনি প্রথম ঢাকার বেইলী রোডের ‘গাইড হাউস-মহিলা সমিতি’ মঞ্চে পারফর্ম করেন। এ সময়ে তিনি আবার দেশের নামকরা অভিনেতা-অভিনেত্রী ও নাট্যকর্মীদের দ্বারা পরিচালিত থিয়েটার বিষয়ক অনেক কর্মশালায়ও অংশগ্রহণ করেন। অবশ্য তারও আগে ১৯৯১ সালে ৩৬১ ডিআইটি রোড পূর্ব রামপুরা ঢাকায় অবস্থিত ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্রডকাস্টিং আর্ট’ থেকে ‘অভিনয়’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সে সময়েই, ১৯৯২ সালের অক্টোবর মাসে তখনকার দেশের একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’ (বিটিভি)-এ নাট্যশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য ঢাকার রামপুরা টেলিভিশন ভবনে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তারপর তিনি নিজেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি এলাকায় গড়ে তুলেন থিয়েটার স্কুলের সিলেবাসভিত্তিক নাট্য সংগঠন ‘পেরিস্কোপ নাট্য অধ্যয়ন চক্র’। পরে সেটি ফিল্ম অধ্যয়ন চক্রে রূপান্তরিত হয় এবং তারই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লাতেও ২০০৪ সালে গঠন করেন চলচ্চিত্র সংগঠন ‘দি সিনেমা’। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূলতায় ও কখনো কখনো ষড়যন্ত্রের কারণেও তিনি সরলরৈখিকভাবে তার চর্চা ধরে রাখতে পারেননি। মুক্ত চলচ্চিত্র চর্চা কিংবা বিকল্প চলচ্চিত্র পাঠের ফলাফলে যেহেতু তিনি বারবারই প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছেন, সুতরাং তার জন্য বিভিন্ন অর্থদাতা গোষ্ঠির আনুকূল্যপ্রাপ্তিও ছিলো অধিকাংশ সময়েই অসম্ভব। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে কুমিল্লা টাউনহলে (বীর চন্দ্র নগর মিলনায়তন) ‘বন্যা: নদীমাতৃক রাক্ষস’ শীর্ষক তিনদিনব্যাপী তার তৃতীয় একক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)-এর তখনকার পরিচালক (প্রশাসন) এম খায়রুল কবীর। সেসব লগ্নে তার প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনোভাবের জন্য প্রদর্শনী করাকালে পুলিশ প্রশাসন তার কিছু ছবিও নামিয়ে নেয়, যেসব ছবি পত্রিকাতেও কখনো ছাপানো যায়নি । অবশেষে তখনকার কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারকে সব ছবি দেখিয়েই প্রদর্শনী করার অনুমতি মেলে। চলচ্চিত্র বুঝতে হলে কবিতা বুঝতেই হবে। এর কোনো বিকল্পই নেই। জসীম উদ্দিন অসীম কবিতায় রাজ্যেও অনাগত নন। ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে তিনি নিজের লেখা ‘বাংলা কবিতা’ দিয়ে তিনটি কবিতার সংকলন বের করেন। [১] চাঁদের জ্যোৎস্না খসে গেছে [২] স্বপ্নের মালা গাঁথার স্বপ্ন [৩] তুমি এখন আকাশবাসী। তবে তাঁর সব কবিতাই মূলত আজ অবধি অপ্রকাশিতই রয়েছে। গল্প-উপন্যাসও তার রয়েছে অনেক, যদিও অর্থাভাবে তা ছাপা হয়নি। এই বাণিজ্যের যুগে প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনোভাবাপন্ন লোকের পেছনে অর্থ বিনিয়োগ কে করবে! সুস্থ চলচ্চিত্রের যেমন আর্থিক অনুদান পাওয়া বিরল ঘটনা, ব্যক্তি হিসেবে তার অবস্থাও তেমনি। অথচ ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ কিংবা বুঝতে হলে যত বিষয়ে দক্ষতা দরকার, তার সব বিষয়েই তিনি এক প্রকার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তারপরও তার জন্য প্রতিনিয়তই প্রতিকূলতা বিরাজমান। জসীম উদ্দিন অসীম বর্তমানে একজন মুক্ত পেশার মানুষ। তার এক অর্থে কোন ‘উপাধি’ই নেই, স্থায়ীভাবে কোনো পত্রিকায় কিংবা টেলিভিশনে চাকুরি করলে যেটা থাকা সম্ভব ছিল। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা-স্নাতক [সম্মান- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়] হওয়ার পরও তার অবমূল্যায়ন অনেক। তার প্রসঙ্গে দৈনিক ‘কুমিল্লার কাগজ’ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয় একবার বলেন, “জসীম উদ্দিন অসীম কুমিল্লার কাগজে অনেকদিন ‘বার্তা সম্পাদক’ ছিলেন। তিনি তখন দিনরাত খেয়ে-না খেয়ে কুমিল্লার কাগজে শ্রম-মেধা খরচ করেছেন। অনেক রাত অসীমকে সব কাজ দিয়ে আমরা সবাই চলে গেছি। সে সময়ে নিজের পত্রিকার মতো মনে করে ‘কুমিল্লার কাগজ’কে তিনি পাঠের উপযোগী করে তুলেছিলেন। অসংখ্য খবর লিখেছেন। তার লেখার কারণে অনেকদিন পর কুমিল্লার মানুষ তখন গুণী ব্যক্তিত্ব প্রফেসর লায়লা নূরের খবর জানতে পেরেছিলেন। এই খবর পড়তে গিয়ে পাঠক মূলত কুমিল্লার কাগজই পড়েছেন।” [সম্পাদকের জবানবন্দি: পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিশেষ সংখ্যা ২০০৯: আবুল কাশেম হৃদয়: দৈনিক কুমিল্লার কাগজ: কুমিল্লা] কুমিল্লার কাগজ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয় তার প্রতি সদয় হয়েই এমন স্বীকৃতির কথা লিখেছেন। অথচ তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি শ্রম তিনি কুমিল্লার আরও পত্রিকার জন্য বছর বছর দিয়েছেন। কিন্তু স্বীকৃতি দূরে থাক, উল্টো তিনি ‘অস্থির’ বলেই তার নামে বদনাম রটিয়েছেন। সময় একদিন নিশ্চয়ই প্রকৃত সত্য তুলে ধরবে। তার যদি যোগ্যতাই না থাকে, তাহলে কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে মাস্টার্স করেও নীতিশ তার ‘শিরোনাম’ পত্রিকা দৈনিক করার প্রতিযোগিতার লগ্নে জসীম উদ্দিন অসীমকেই নিয়োগ দিলেন। কুমিল্লায় কি তখন আর কোনো দক্ষ সাংবাদিক ছিলেন না? আসলে জীবনের প্রথমদিকে ডান রাজনীতি এবং পরে বাম রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তিনি মূলত আজও কোনো সামাজিক-রাজনৈতিক অব্যবস্থার সাথে আপোষ করেননি। তার জীবনযাপন, তার সমবয়সী অন্য অনেকজনের জীবনের চেয়ে নি:সন্দেহে ব্যতিক্রম। তাছাড়া এখন কুমিল্লায় একশ্রেণির অসৎ –অযোগ্য লোক গণমাধ্যমের মালিক অথবা কর্মী পরিচয় দিচ্ছেন। সাংবাদিক নামধারী এসব অগা-মগা-বগাদের কোনো প্রকারেরই লেখাপড়া নেই। টাকা দিয়ে œ ‘সাংবাদিক পরিচয়পত্র’ কেনা এসব টাউটের কাছ থেকে তিনি আর কী ই বা মূল্যায়ন পাবেন। আমার বিবেচনায় জসীম উদ্দিন অসীম একজন সুস্থ ফিল্ম-পাগল মানুষ। পৃথিবীর সেরা ছবিগুলো দেখা এবং এসব বিষয়ে পাঠ ও লেখালেখি করা তার নিয়মিত একটি কাজ। পৃথিবীর প্রায় সব চলচ্চিত্র নিয়েই তিনি অনর্গল বলতে পারেন। আর এসব তার ফিল্ম বিষয়ে পাঠেরই ফলাফল।
জসীম উদ্দিন অসীম বলেন, জীবনে চলচ্চিত্র দেখা শুরু হয় বাণিজ্যিক ছবি দিয়েই। ফখরুল হাসান বৈরাগীর ‘রাজিয়া সুলতানা’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৪ সালে। সে বছরই দেখেছিলাম এ ছবি কুমিল্লার ‘দীপিকা’ সিনেমা হলে। সিনেমাহলে এটাই আমার দেখা প্রথম ছবি। ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৪ সালেই। ইবনে মিজানের এ রঙিন ছবি দেখে আমি তখন অভিভূত হই যেহেতু শিশু ছিলাম। পরে বুঝেছি, এসব ছবিতে তেমন কমিটমেন্ট ছিল না। সবই ছিল বাণিজ্যিক ধারার ছবি। তবে ছবি দেখে ছবির পুরো কাহিনী, পরিচালকের নাম, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম, কোন হলে দেখেছি-কবে দেখেছি, সেই তারিখ এবং টিকেটের ক্লাসভিত্তিক টাকার পরিমান ডায়েরীতে লিখে রাখতাম।
রহমানের ‘দরশন’ পাকিস্তান আমলের ছবি। ১৯৬৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল। এ ছবির গান কখনোই ভোলার নয়। ১৯৮৫ সালে শক্তি সামন্ত ও সৈয়দ হাসান ইমামের ‘অবিচার’ ছবি মুক্তি পায়। সেই ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তীর অভিনয় দেখে মনে হয়েছিল তারা আসলে অভিনয়ের জন্যই জন্মেছেন।
সে সময়টায় আসলে বাণিজ্যিক ধারার ছবিগুলোতেও একটা কমিটমেন্ট ছিল। আবুল খায়ের বুলবুলের ‘শাহীকানুন’-নূর হোসেন বলাইয়ের ‘ইন্সপেক্টর’ কামাল আহমেদের ‘আওয়ারা’ আজিজুর রহমানের ‘রঙিন রূপবান’-শামসুদ্দীন টগরের ‘নকল শাহজাদা’ ইবনে মিজানের ‘রাজকুমারী’ শহিদুল আমিনের ‘রামের সুমতি’ মতিউর রহমানের ‘সাথী’ কামাল আহমেদের ‘মা ও ছেলে’-রাজ্জাক-শাবানা অভিনীত ‘মহানগর’-মাসুদ পারভেজের ‘এপার-ওপার’-‘দস্যু বনহুর’ দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘সালতানাৎ’ অশোক ঘোষের ‘হিম্মতওয়ালী’ ইবনে মিজানের ‘পুনর্মিলন’ গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘শাস্তি’ আজিমের ‘গাদ্দার’ দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘নাগরানী’-এ.জে মিন্টুর ‘চ্যালেঞ্জ’ রূপ সনাতনের ‘দয়াল মুর্শিদ’ মমতাজ আলীর ‘রক্তাক্ত বাংলা’ সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ চাষী নজরুলের ‘ওরা এগারজন’ জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ মিতার ‘নীল আকাশের নীচে’-ইত্যাদি ছবিগুলো আমি শৈশবেই দেখে ফেলি। তবে এসব ছবির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না অর্থ অপহরণ। ওসব ছবি না দেখলে বুঝতে পারা যাবে না বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অনেক প্রতিভাবান কুশলীদের কাজ।
মিতার ‘নীল আকাশের নীচে’ প্রথম মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালে। এ ছবিটি আমার মায়ের ভালো লাগা একটি ছবি। আমার বাবা-মা যখন পাকিস্তান আমলে ঢাকায় ছিলেন, তখনই তারা এ ছবি দেখেছিলেন। আমার জন্মেরও আগে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর এ ছবি আবার দেখে মা বলেছিলেন, হায় কখন যে বুড়ো হয়ে গেলাম। খান আতার ‘জোয়ার ভাটা’ প্রথম মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালে। আমার বাবার ভালো লাগা ছবি এটি। আমি দেখি ১৯৮৭ সালে।
এছাড়াও গাফ্ফার খানের ‘প্রেমনগর’-মাসুদ পারভেজের ‘নাগপূর্ণিমা’-এমএ মালেকের ‘শাহী চোর’-খান আতার ‘আরশীনগর’-এফ কবীরের ‘আবে হায়াৎ’ এফ কবীর চৌধুরীর ‘সওদাগর’ দেওয়ান নজরুলের ‘ওস্তাদ সাগরেদ’ শেখ নজরুল ইসলামের ‘এতিম’ আবদুস সামাদের ‘সূর্য সংগ্রাম’ ছবিগুলোর কথা এখনো মাথায় ভাসে। জীবনে কতো হলে যে এসব ছবি দেখার জন্য গিয়েছি, আর কতো সময় খরচ করেছি, হিসেব করা যাবে না। ছুটির ঘন্টা-ছবি অবশ্য হিন্দিটা দেখেছি আগে। বাংলা ছবিটা দেখার সুযোগ হয়েছে পরে।
‘অবিচার’ ছবি দেখতে চলে গিয়েছিলাম কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জে। হলের নাম ছিল ‘পূর্ণিমা’। বোম্বের মিঠুন চক্রবর্তীর বিপরীতে বাংলাদেশের রোজিনার অভিনয় সত্যি সত্যি মনে রাখার মতো। সোহেলরানা-অঞ্জু-ইলিয়াস কাঞ্চন-রানী-দিলারা-প্রবীরমিত্র-রাজ-রাজিব-দারাশিকো অভিনীত ‘শাহী খান্দান’ ছবিটি দেখি কোম্পানীগঞ্জের ‘লাকী’ সিনেমা হলে। এ ছবিতে শরীরের অশ্লীল উপস্থাপনা দেখে দীর্ঘদিন মনের দুঃখে হলমুখো হইনি আর। আলমগীর-শাবানা অভিনীত ‘শশী-পুন্নুু’ ছবিটি দেখি কুমিল্লা শহরের ‘মধুমতি’ সিনেমাহলে। ১৯৮৬ সালে। তবে এসব ছিলো ১৯৯০ সালের আগের ঘটনা। ১৯৯২ সাল থেকেই আমি মূলত পৃথিবীর সেরা চলচ্চিত্রকারদের নান্দনিক ও পলিটিক্যালি কমিটেড ফিল্মগুলো দেখতে থাকি।
চলচ্চিত্রের ইতিহাসে লাল অক্ষরে লেখা রয়েছে ফরাসী দুই ভাইয়ের নাম। অগুস্ত লুমিয়ের এবং লুই লুমিয়ের। ১৮৯৫ সালের ২৮ নভেম্বর এ দুই ভাই প্যারিসে আর্কল্যাম্প প্রজেক্টর দিয়ে নিজেদের তৈরি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন। আমরা দুই ভাইও ১৯৯০-এর দশকের প্রথম থেকেই ভীষণভাবেই চলচ্চিত্রভাবনায় জড়িয়ে পড়েছিলাম। কিছু দুর্ভাগ্য, কিছু চক্রান্ত এবং অর্থাভাবে বারবার আমরা পিছিয়ে পড়ি। জসীম উদ্দিন অসীম তখন অনেক চিত্রনাট্যও রচনা করেন। তার পাখি বিষয়ক অনেক গল্পের। তার কাছেই প্রথম পড়তে পাই মার্কিন চলচ্চিত্রকার ডেভিড ওয়ার্ক লিউলিন গ্রিফিথ বিষয়ে। গ্রিফিথ চলচ্চিত্রকে একটি শিল্পভাষা হিসেবে অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছিলেন। ১৯১৫ সালে তিনি আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পটভ’মি নিয়ে তৈরি করেন ‘দি বার্থ অব নেশন’। তারপর পড়লাম সের্গেই মিখাইলোভিচ আইজেনস্টাইনের ১৯২৫ সালে নির্মিত ‘ব্যাটলশিপ পটেমকিন’ নিয়ে। এ ছবিটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ছবি। তারপর বার্গম্যান এবং অন্যান্য সেরা চলচ্চিত্রকারদের নিয়ে। সত্যজিতের ছবি বিষয়ে জসীম উদ্দিন অসীম একবার তার এক লেখায় বলেন, ‘ছবি দেখছিলাম ‘পথের পাঁচালী’। বিভূতির লেখায় সত্যজিৎ রায়ের ছবি। ভাবতে পারিনি, মানুষও কিভাবে শিল্প সৃষ্টি করে ঈশ্বর হয়ে উঠেন। মূল উপন্যাস ছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কতোবার যে পড়েছি এ উপন্যাস। অমর ছবি নির্মাণ করেছেন সত্যজিৎ রায়। ছবি দেখেছি তার প্রায় সবগুলোই। সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নষ্টনীড়’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত। গল্পটি আমাদের সাহিত্যের ক্লাশে পাঠ্য ছিল। সে এক বেপরোয়া প্রেমের নান্দনিক গল্প। সত্যজিতের বিকল্প আর হবে না ভারতে। তিনি আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্রে সব দেখা সম্ভব। এক জীবনে যত জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়, চলচ্চিত্রে তত জায়গা দেখা সম্ভব। এক জীবনে যত যুগে যাওয়া সম্ভব নয়, চলচ্চিত্রে তত যুগে যাওয়া সম্ভব। সুতরাং বলা যায়, জীবনের সন্ধানে চলচ্চিত্র দেখার বিকল্পই নেই। তবে তা চলচ্চিত্র নামের অপদার্থ চলমান বাণিজ্যিক নারীদেহনির্ভর চিত্র যেন না হয়। শিল্পমান বিবর্জিত চলমানচিত্র কখনোই চলচ্চিত্র হতে পারেনা। তাই সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক কুমার ঘটক , মৃণাল সেন, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, উজ্জ্বল চক্রবর্তী, অপর্না সেন, অশোক বিশ্বনাথন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, অনিরুদ্ধ ধর, শেখ নিয়ামত আলী, মসিউদ্দিন শাখের, কবির আনোয়ার, আমজাদ হোসেন, আতাউর রহমান, চাষী নজরুল ইসলামসহ যারা বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন, তাদের ধারার বাইরের বাণিজ্যিক ও ভ্রষ্ট চলচ্চিত্রগুলো পরিত্যাগ করাই উচিত । সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’, ১৯৮০ সালে নির্মিত মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র ‘আকালের সন্ধানে’ ও ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ অনেক ছবির গল্প ও নির্মাণকৌশল তিনি জীবনেও ভুলবেন না বলে জানান। ‘আকালের সন্ধানে’ ছবিতে দেখানো হয়েছিল একটি চলচ্চিত্র কলাকুশলীদলের একটি গ্রামে গিয়ে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের উপর একটি চলচ্চিত্র তৈরির কাহিনী। কিভাবে ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের কাল্পনিক কাহিনী মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সেই গ্রামের সাধারণ মানুষদের সাথে, সেটাই ছিল এই চলচ্চিত্রের সারমর্ম। সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ এবং মৃণাল সেনের ‘আকালের সন্ধানে’ দুভিক্ষ নিয়ে ছবি।
জসীম উদ্দিন অসীমের কাছেই জীবনের প্রথম দিকে আমি নিয়েছিলাম চলচ্চিত্রের প্রথম পাঠ। তখন আমাদের প্রায় প্রতিদিনকার পাঠের বিষয় ছিলো পুদোভকিনের ‘মাদার’, ‘ইন্ড অব সেন্ট পিটার্সবার্গ’, আইজেনষ্টাইনের ‘অক্টোবর’, চার্লি চ্যাপলিনের ‘গোল্ডরাশ’, মৃনাল সেনের ‘ইন্টারভিউ-কলকাতা-৭১ ও পদাতিক ট্রিলজি’ কিংবা সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু ট্রিলজি’ ফিল্মগুলো বিষয়ে। ‘পথের পাচালী’র ইন্দির ঠাকুরনের মুখের গঠনে, বচনে, বসনে, তাঁর গল্প বলার ঢঙ্গে, গ্রামীণ পথপরিক্রমায় সত্যজিৎ কী নিখুঁত কাজ করেছেন এসব নিয়ে আমাদের বাসায় তখন একদিন আলাপ না হলে আমাদের পেটের ভাত হজম হতো না। কুমিল্লা শহরের অনেক শিল্প-বোদ্ধা তখন আমাদের বাসার সেসব আড্ডায় শরিক হতেন। আর সৎ শিল্পকে জনপ্রিয় করা যেমন কঠিন কাজ, তেমনি আমাদের সেসব আড্ডা কিংবা চর্চাও পায়নি যথাযথ মূল্যায়ন। তখন আমার মনিকা আক্তার কনিকা আপা নিয়মিত গল্প-প্রবন্ধ লিখতেন কুমিল্লার বিভিন্ন পত্রিকায় এবং ছোটভাই গিয়াস উদ্দিন পিয়াস আঁকতো জলরঙে অসংখ্য ছবি। পিয়াস ছবি আঁকায় তখন অনেক পুরস্কারও পেয়েছিল। কিন্তু এখন যুগটা চলে গেছে স্টার প্রথা আর বাণিজ্যের দিকে, যাকে আমরা শুরু থেকেই ঘৃনা করতাম। কুমিল্লায় যেদিন থেকে ডিজিটাল ফটোগ্রাফির নামে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেধাহীন বাণিজ্যিক প্রেস ফটোগ্রাফির শুরু হলো, জসীম উদ্দিন অসীম তখন থেকেই ছেড়ে দিলেন তার সিনেমাটোগ্রাফির কনসেপ্ট থেকে পাওয়া স্টিল আর্ট অ্যান্ড প্রেস ফটোগ্রাফির চর্চাও। সম্মানে আঘাতে এলেই তিনি যেমন বারবার ছেড়ে দিয়েছেন তাঁর পত্রিকার চাকুরি। সময় নিশ্চয়ই আসবে একদিন, যেদিন প্রমাণ হবে, কমপক্ষে এটা প্রমাণ হবে যে, জসীম উদ্দিন অসীম কী মানের একজন ফিল্ম-বোদ্ধা ছিলেন।

৬| ১০ ই মে, ২০১৮ ভোর ৫:২১

জসীম অসীম বলেছেন: হ্যাকশ রিজ - যুদ্ধ নিয়ে অসম্ভব এক ছবি
জসীম উদ্দিন অসীম:

অভিনেতা ও পরিচালক মেল গিবসন! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি সত্য ঘটনা নিয়ে পরিচালক মেল গিবসন বানালেন ছবি: হ্যাকশ রিজ - যুদ্ধ নিয়ে অসম্ভব এক ছবি। এ ছবির জন্য তিনি বেছে নিলেন ব্যাটেল অফ ওকিনাওয়া ( Battle of Okinawa ) এর বীরত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। বীরের নাম ডেসমন্ড ডস। মারণাস্ত্র স্পর্শ না করেই যিনি হয়েছিলেন যুদ্ধের মহাবীর। সিনেমাঃ হ্যাকশ রিজ। পরিচালকঃ মেল গিবসন। অস্কার নমিনেশনঃ বেস্ট পিকচার, বেস্ট ডিরেক্টর, বেস্ট এক্টর, বেস্ট ফিল্ম এডিটিং, বেস্ট সাউন্ড এডিটিং, বেস্ট সাউন্ড মিক্সিং।
অ্যামেরিকার যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত অন্যান্য ছবিগুলোও আমি দেখেছি। তবে এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানীদের আমেরিকার পার্ল হারবার বন্দরে আক্রমণ নিয়ে পার্ল হারবার ছবিটিই বেশি ভালো লেগেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসীদের দ্বারা স্টেলিনগ্রাড আক্রান্ত হওয়ার ওপর ছবি নির্মিত হয়েছে: এনেমি ইন দ্য গেটস। গেরিলা যুদ্ধের অবিস্মরণীয় নজির। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে পৃথিবীর প্রায় সেরা মুভিগুলো আমি দেখে ফেলেছি। কিন্তু অভিনেতা ও পরিচালক মেল গিবসন-এর ডেসমন্ড ডসের বীরত্ব গাঁথা নিয়ে নির্মিত হ্যাকস রিজ অতুলনীয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত সেভিং প্রাইভেট রায়ান, দ্যা পিয়ানিস্টও দারুণ ছবি। তবে আমার স্ত্রী সাদিয়া অসীম পলি-র কাছে সেভিং প্রাইভেট রায়ান মুভিটা অন্যতম সেরা মুভি। তার বিবেচনায় এটা মাস্টার পিস সিনেমা। কিন্তু হ্যাকশ রিজ দেখার পরে আমি রীতিমত তাজ্জবই হয়ে গেলাম। মাস্টারপিস মুভি বলতে যা বুঝায়, আমার বিবেচনায় এটি সেই রকমই একটি মুভি বা ছবি।
যুদ্ধ মানেই ধ্বংস। নৃশংসতা আর নির্দয়তা। আর ওই বিবেচনায় হ্যাকশ রিজ যুদ্ধের নৃশংসতার মাঝে মানবতারই ছবি। ব্যাটেল অফ ওকিনাওয়া ছিল মূলত সম্মুখ সমরেরই এক ইতিহাস। হয় মারো। নয়ত মরো! এখানে গেরিলা যুদ্ধের সুযোগই নেই তেমন। হ্যাকশ রিজ মুভির মূল চরিত্র ডেসমন্ড ডস মনে করেন: পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাপ হচ্ছে মানুষ হত্যা করা। এমন বিশ্বাসে বিশ্বাসী কোনো মানুষ কি আবার যুদ্ধ করতে পারে! কিন্তু নিজের ছোট বেলায় মায়ের কাছ থেকে পাওয়া সেই মহৎ শিক্ষাকেই যুদ্ধের ময়দানেও নিজের বিশ্বাসে পরিণত করেছিলেন ডস। ডসের এ যুদ্ধ ভীষণতর কঠিন ছিল। কারণ সৈনিকের জীবন বরণ করে কিংবা যুদ্ধে এসে কেউ যদি রক্তপাতে নিজেকে বিশ্বাসী নয় বলে, তাহলে তাকে নিজ পক্ষের সৈনিকরাও কাপুরুষ বিশেষণে বিশেষায়িত করবে, এ আর বিচিত্র কী! কিন্তু এতেও হতাশ হননি ডেসমন্ড ডস। কোর্ট মার্শালের সম্মুখীনও হতে হয় ডেসমন্ড ডসকে! তবু ডস না স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনীর চাকুরি ত্যাগ করলেন কিংবা না নিজের হাতে অস্ত্রও তুলে নিলেন। দৃঢ়প্রত্যয়ী ডস আমাদের সবার জন্যই এক ব্যতিক্রমী অথচ এক প্রাসঙ্গিক উদাহরণ।
গিবসন এ মুভির শেষ অংশটিকেই সবচেয়ে বেশি বাস্তবিক করে নির্মাণ করেছেন। কারো ভাবতে ঠিক কষ্টই হবে যে, তিনি কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে আছেন নাকি ছবি দেখছেন। ব্যাটেল অফ ওকিনাওয়ায় যখন জাপানিজ সৈন্যদের প্রতিরোধের মুখে এক এরপর এক অ্যামেরিকান সৈন্য আহত কিংবা নিহত হচ্ছিল, তখন পিছু হটতে বাধ্য হয় অ্যামেরিকান সৈন্যরা। কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে রয়ে গেলেন ডেসমন্ড ডস! যাকে কাপুরুষ হিসাবে গণ্য করা হয়েছিল। সেই কাপুরুষই এবার হয়ে গেলেন বীর পুরুষ। কারণ কোনো অবস্থাতেই ডস যুদ্ধ থেকে পিছু হটলেন না। রয়ে গেলেন যুদ্ধাহত সৈন্যদের সেবায়। এমনকি শত্রুপক্ষের দখলকৃত এলাকাতেই। আশ্চর্যজনক হলো ডেসমন্ড ডসের সেবা শুধুমাত্র নিজ সৈন্যদলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। জাপানিজ আহত সৈনিকদেরও সেবা করেছিলেন ডস। এটা ছিলো অবিশ্বাস্য। কিন্তু ভীষণই বাস্তব। হ্যাকশ রিজ: এ মুভিটির কথা আমার অনেককালই মনে গেঁথে থাকবে। যেমন একদা মনে গেঁথে ছিল গ্ল্যাডিয়েটর-ট্রয়-হেলেন অব ট্রয়-ক্লিওপেট্রা...ইত্যাদি ছবিগুলোও।

৭| ১০ ই মে, ২০১৮ ভোর ৫:২৮

জসীম অসীম বলেছেন: আমার জীবনের গল্প:
জসীম উদ্দিন অসীম
--------------------
আমি গল্প লিখি। কিন্তু আমার কোনো গল্পগ্রন্থ নেই। আমার জীবনের গল্পগুলোও বেশ রোমাঞ্চকর। আর লেখার বিষয়ে আমি অধিকাংশ সময়েই অহিংস নই। সহিংস তো বটেই, কোনো কোনো স্থলে নৃশংসও। তাই কিছু কিছু লোক এবং প্রতিষ্ঠান সর্বদাই আমার ক্ষতিতে লিপ্ত থাকে। ফলে আমার শৈশবে পাঠ্য সেই তৈলাক্ত বাঁশের বানরের গণিতের মতো পাঁচ হাত উপরে উঠলে তিন হাত আমাকে নামিয়ে আনে আমার বিভিন্ন পর্যায়ের শত্রুরা। এতো কিছুর পরেও আমি আজ অবধি অহিংস হতে পারিনি। এমনকি লেখার বিষয়ে আমি অন্যকে তো আক্রমণ করিই, নিজের বিরুদ্ধেও লেখা লিখে যাই। কখনো বা প্রকাশও করি। এ স্বভাব রীতিমত আত্মঘাতী। আমার লেখা গল্পগুলো নিয়েও অনেক গল্প রয়েছে। কোনো কোনো গল্প একেবারেই বাস্তবের সমান্তরাল। কিন্তু সেসব বলার এখনও সময় আসেনি। কারণ সংখ্যায় আমার গল্প এতো বেশি যে, এর মাত্র কয়েকটিই বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। আমার জীবনের বাস্তব গল্পগুলোকেই নান্দনিক করে লেখার পরামর্শ দেন কুমিল্লার গল্পকার কাজী মোহাম্মদ আলমগীর। কিন্তু আমার নান্দনিক গল্প লেখা আর হয়ে ওঠে না। তবু এই নিজ জীবনের গল্প থেকেই লেখা হয়েছে আমার অনেকগুলো গল্প। আমার অনেক আগের গল্পগুলোতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হিন্দুদের জীবনযাপন নিয়ে অনেক গল্পই রয়েছে। গল্পকার কাজী মোহাম্মদ আলমগীর এসব গল্প নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে লেখার পরামর্শ দেন। যেন তা কালোত্তীর্ণ, মানোত্তীর্ণ, শিল্পোত্তীর্ণ হয়। কিন্তু আমি বাংলাদেশের হিন্দুদের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের এবং জীবনযাপনের গল্পগুলো প্রায় হিন্দুদের দৃষ্টিতেই দেখে দেখে লিখতে থাকি। এর প্রেক্ষাপটও গভীরতর। একদা আমার অনেক হিন্দু মেয়ে বন্ধুও ছিলো। যারা আমাকে অর্থবিত্তহীন একজন যুবক জেনেও শুধু লেখার-আঁকার-ছবি তোলার-গান গাইতে পারার বিন্দুমাত্র প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে মিশে চলার অবাধ স্বাধীনতা দেয়। আমার শুধু এই বিন্দুমাত্র প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ এক স্বচ্ছল হিন্দু দম্পতি একবার তাদের একমাত্র সুন্দরী কন্যাকে আমার কাছে পাত্রস্থ করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে অবশ্য শুধু ধর্মীয় বাধার কারণে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তহীন হয়ে পড়েন। আমার হিন্দু বন্ধু ও বান্ধবীরাও এ কথা জানেন। বাংলাদেশের মুসলমানের মুখে মুখে বাংলাদেশেরই হিন্দুদের কুসংস্কারের অনেক গল্পই আমি শুনেছি। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক হিন্দু পরিবারের সাংস্কৃতিকবোধ অধিকাংশ সময়েই আমাকে মুগ্ধ করেছে। তারা যাকে বিশ্বাস করে, দেবতাজ্ঞানে তাকে সম্মানও করে, ¯েœহও করে। আমি তাদের সঙ্গে মিশে তাদের ভিতরকার অনেক সমস্যাকেও খুব কাছে থেকেই দেখেছি। অবশ্য আমার দেখার দৃষ্টিভঙ্গি নিরপেক্ষ নাও হতে পারে। এমনই খুব কাছের কমপক্ষে দশটি পরিবারকে আমি বিভিন্ন যাতনা ভোগ করে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতেও যেতে দেখেছি। তারা যাওয়ার পর তাদেরকে অনেকে গালমন্দ করলেও কেন তারা গেলেন, সেটা আমি ভালো করেই জানি। এদের মধ্যে এমন অনেক হিন্দু পরিবারও ছিলো, যারা শুধু ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত হয়ে রাষ্ট্র কিংবা প্রশাসন তো তো দূরে থাক, নিজেদের আত্মীয়স্বজনের কাছেও ঘটনা খুলে বলে যাননি। নির্যাতিত এসব পরিবারের পাশে একাধিক মুসলিম পরিবারও দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তারা অনুভব করেন যে, মন্দ লোকের কাছে কোনো হিন্দু-মুসলিম বলে কিছুই থাকে না। সেই ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরা বেশিই তোপের মুখে, তাপের মুখে থাকেন। তাই তারা আর বাকি ঝুঁকিটুকু নিতে চাননি। আমি জীবনে যতবারই বিপদগ্রস্থ হয়েছি, তার অধিকাংশ সময়ে বাংলাদেশের হিন্দুদের কাছেই বিভিন্নভাবে আশ্রয় পেয়েছি। আমার বাবার সবচেয়ে কাছের বন্ধুরাও ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী। শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে আমি তাদের কাছ থেকে কখনোই কোনো বাধার মুখে পড়িনি। আমার প্রথম সংসার যখন ভাঙ্গে, আমার কুমিল্লার বামপন্থী বন্ধু এডভোকেট অশোক কুমার দেব জয় আমাকে অর্থ দিয়ে, বাসায় আশ্রয় দিয়ে, খাবার দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তার সঙ্গে আমার রক্তের কিংবা ধর্মীয় বন্ধন ছিলো না। কিন্তু দুর্যোগে সঙ্গে ছিলেন। ঘরে সুন্দরী যুবতী বোন থাকার পরও একবিন্দু সংকোচ তাদের দেখিনি। এই যে সম্পর্ক, তা কক্ষনোই ধর্মীয় নয়। আত্মিক এবং সাংস্কৃতিক। বিপদগ্রস্থ মানুষকে আশ্রয়দানের এতোটা উচ্চতর সংস্কৃতি আমি আজও লালন করতে শিখিনি।
এ জীবনে যত লেখা লিখেছি, বিভিন্ন অস্থিরতায়, অনিশ্চয়তায় এবং দুর্ঘটনায় তার অধিকাংশই হারিয়েছি। তবু অনেক লেখাই আবার বিভিন্নভাবে সংরক্ষিতও হয়েছে। প্রায় সব ধরনের লেখাই আমি লিখেছি। পরিমাণে সে লেখা বিশাল...বিশালতর। আর আর আমি বিশ্বাস করি, লেখার গুণগতমান নিরূপণ করবে সময়। পরিমাণে বিশালতর আমার লেখা। গল্পের সংখ্যাও শতাধিক। এসব লেখা নিয়ে ১৯৯৬ সাল থেকেই আমি গ্রন্থ প্রকাশের জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও আর্থিক অভাবে এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতায় কখনোই কোনো গ্রন্থ প্রকাশে সফল হইনি। ১৯৯৭ সাল থেকে ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’ শীর্ষক আমার গল্পগ্রন্থের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হলেও সেই গ্রন্থ আর প্রকাশিত হয়নি। পেশাগত অস্থিরতা ও আর্থিক অনিশ্চয়তায় আমার জীবন বারবারই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে।
২০০০ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লার গল্পকার কাজী মোহাম্মদ আলমগীরের ‘পরাগ ও পালকের গল্প’ শীর্ষক গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পর আমার প্রথম স্ত্রী ফারজানা কবির ঈশিতা আমার সব গল্প নিয়ে ৩০০ পৃষ্ঠার একটি ‘গল্পসমগ্র-১’ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়। কুমিল্লা শহরের ভিক্টোরিয়া কলেজ রোডের ‘অন্বেষা বাণিজ্যিক সংস্থা’য় কম্পোজও হয়েছিল আমার সেসব গল্প। কিন্তু আমার টাকার অভাবে তা আর ছাপা যায়নি। ঈশিতা তখন তার বাবার দেওয়া দামী দামী আসবাবপত্রগুলো বিক্রি করেই সেই গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিলে আমি সম্মতি দেইনি। তার অনেকদিন পর যখন আমাদের সংসারই ভেঙ্গে যায়, তখন আর কে রাখে কার গল্পের খবর। তখন তো আমরা নিজেরাই এক ধরনের গল্পে পরিণত হয়েছি।
আমার বর্তমান স্ত্রী সাদিয়া পলি-র সঙ্গে বিগত ১০ বছর ধরে সংসার করছি আমি। সংসারের শুরু থেকেই সে আমার প্রায় সকল লেখাই সংরক্ষণের কাজে হাত দেয়। সঙ্গে সঙ্গে গল্পগুলোরও অনুলিখনের কাজ প্রায় সমাপ্ত করে। একসময় আমার অনেক অনেক গল্পেরই এমন অনুলিখনের কাজ করে রেখেছিলো ফারজানা কবির ঈশিতা। ঈশিতার অনুলিখন করা সেই গল্পগুলোও সংগ্রহ করে কম্পোজ করেছে আমার বর্তমান স্ত্রী সাদিয়া পলি। পলি আমার গল্পগুলোকে অনুলিখন, সংরক্ষণ ও কম্পোজের কাজ করেছে ঠিক তখন, যখন আর আমার লেখার জন্য সেই আগের আবেগই নেই। কারণ এখন আমি জীবন সংগ্রামেই বেশি ব্যস্ত। স্ত্রী সাদিয়া অসীম পলি কুমিল্লার ‘নিরীক্ষণ’ পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহর বড় কন্যা। একদা সে তার সব ছেড়েই চলে এসেছিলো আমার কাছে। মোহাম্মদ উল্লাহর রক্ত তার শরীরে তীব্রভাবেই বহমান। প্রবাহমান। তার পাঠের নেশা আমাকে ভীষণই অবাক করে। তার সাংস্কৃতিকবোধ আমাকে ভীষণই মুগ্ধ করেছে। তার পিতার জ্ঞানের এবং রক্তের যথার্থ উত্তরসূরী সে। তার পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রম। যে আমাকে অর্থবিত্তহীন এক যুবক জেনেও শুধু লেখার-আঁকার-ছবি তোলার-গান গাইতে পারার বিন্দুমাত্র প্রতিভা যদি আমার কিছু থাকে, তার স্বীকৃতি স্বরূপ ভালোবেসে বিয়ে করে সংসারে মগ্ন হয়েছে। এই কুমিল্লা শহরে আমি হতাশায়, সিদ্ধান্তহীনতায়, আপোষ করতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে পত্রিকার চাকুরি ছেড়ে বেকার অবস্থায় বাসাবাড়ি ছাড়াও বছর বছর কাটিয়েছি। একবার এমনই এক মধ্যরাতে আমি সারা শহরে হাঁটছি আর বৃষ্টিতে ভিজছিলাম। আমার তখন এ শহরে থাকার কোনো জায়গাও ছিলো না। ঠিক ওই মুহূর্তেই আমার দেখা হয় এনামুল করিমের সঙ্গে। তিনি তখন কুমিল্লা শহরের তার ঠাকুরপাড়া মদিনা মসজিদ রোডের ম্যাসের নির্ধারিত এক সিটেই আমাকে থাকার জায়গা দিয়ে নিজে থাকার জন্য অন্য কোথাও জায়গা খোঁজ করতে চলে যান। এনামুল করিমের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায়। তিনি এখন সরকারি চাকুরি করেন। ওই বাউন্ডুলে জীবনযাপন করার সময়েও আমি আমার আরও লেখা হারিয়েছি। আমার স্ত্রী সাদিয়া পলি আমার এই বাউন্ডুলে জীবনের সঙ্গে জড়িত না হলে এটা হয়তো আর কোনোদিনও প্রমাণ হতো না যে, আমি কখনো লেখার জন্য এতোটা আত্মত্যাগ করেছিলাম। তার ঋণ কোনোদিনও শোধ হওয়ার নয়। তার আর আমার বয়সের বিশাল পার্থক্য (২০ বছর) উভয়ের সম্পর্কে কখনোই কোনো বাধা হতে পারেনি। কিন্তু টাকা ঠিক কিভাবে করতে হয়, ধরতে হয়, এ বিদ্যায় আমি আজও ভীষণতর দুর্বল। আর আমার যে আর্থিক অভাব, আমি বিশ্বাস করি এতো অভাবের ঘরে কোনো নারীই তার সংসার করতে পারে না।
এই কুমিল্লা শহরে আমার অনেক বন্ধু রয়েছেন। তাদের ঋণ কোনোদিনও ভুলে যেতে পারবো না আমি। আমার বন্ধু ও দৈনিক ‘কুমিল্লার কাগজ’ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয়ের পক্ষে কথা বলেছি কোথাও, এমনটি আমার মনে পড়ে না। লেখায়ও তার অনেক সমালোচনা করেছি। হৃদয়ের বিপক্ষে কড়া সমালোচনা করে করে আমি বরাবরই বিভিন্ন আড্ডায় অনেকেরই মধ্যমণি হয়ে থেকেছি। কিন্তু আবার দুঃসময়ে পড়ে দেখেছি, তিনি আমার রক্তেরও অধিক আপন। অনেক পুরনো বন্ধু ‘হৃদয়’ আমার। যে বন্ধু কখনো কোনোদিনও করেনি প্রবঞ্চনা, করে না প্রবঞ্চনা।
আমার সাংবাদিক বন্ধু মাহবুব কবির অনেক বছর ধরেই বাস করেন কুমিল্লা মহানগরীর টমছনব্রীজ পোস্ট অফিস কলোনীতে। তার সঙ্গে আমার প্রায়ই আলাপ হয় সংবাদ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তিনি আমার কতোটা বন্ধু, আমার দুঃসময় জানে। আর আমার সাংবাদিক বন্ধু কুমিল্লা শহরের বাগিচাগাওয়ের মাহাবুব আলম বাবু, যিনি সন্ধ্যার পর প্রায় নিয়মিতই কুমিল্লা ক্লাবে বিলিয়ার্ড খেলায় মগ্ন হোন...তিনি প্রায়ই আমাকে খুঁজে বের করবেন এবং কুমিল্লা ক্লাবের বিলিয়ার্ড কক্ষে বসিয়েই খেলার ফাঁকে ফাঁকে খাওয়াবেন, গল্প করবেন আর বিলিয়ার্ড খেলবেন। তারপর আমার সকল নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই বাসার জন্য একটি খাবার প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দেবেনই। এটা মাহাবুব আলম বাবু-র একটি নিয়মিত কর্মযজ্ঞ। আর আমার যখন পকেট একেবারেই শূণ্য হয়ে যায়, তখন একটি লোকের ওপর চড়াও হই আমি। রীতিমত হামলা দিয়েই টাকা নিয়ে আসি। সে হলো আমাদের ছোটভাই দৈনিক কুমিল্লার কাগজের নির্বাহী সম্পাদক হুমায়ুন কবির জীবন। সে কোনোদিনও আমাকে বলেনি যে, তার কাছে টাকা নেই।
কুমিল্লার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইকবাল আনোয়ার এতো ব্যস্ততার মধ্যেও আমার পাখি বিষয়ক গল্পগুলো পড়েছেন। তার বাসার প্রকৃতি দেখলেই আমার ছেলে কফিল মোহাম্মদ অপূর্বের অসুখ অর্ধেক ভালো হয়ে যায়। তার এ ‘ডাক্তার নানা ভাই’ ইকবাল আনোয়ার আমাকে নির্মোহ হয়ে লেখার পরামর্শ দিলেও আমি তা করতে পারিনি। আমার পাখি বিষয়ক গল্পগুলো কবি ইসহাক সিদ্দিকী-র বিন্দু পরিমাণে হলেও ভালো লেগেছে। এটা আমার জন্য অনেক পাওয়া। আমার ছোটবোন মনিকা আক্তার কনিকা-র দুই ছেলে কৌশিক ও শৌভিকও এসব গল্পের পাগল। আর আমার অনেক গল্পেরই প্রশংসা পাওয়া যাবে ‘সময়ের পথ’ পত্রিকার সম্পাদক বাচ্চু বকাউলের সহধর্মিনী মেহেরুননেছা রুমা ভাবীর মুখে। কুমিল্লার বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ আমার গল্পগুলো এতোদিন পাঠের সময়-সুযোগ না পেলেও আগামীতে পড়বেন বলেই আমার বিশ্বাস। একদা আমার স্ত্রী সাদিয়া পলিকে যখন আরও পাঁচজন সরকারি ডাক্তার বাঁচানো যাবে না বলেই ঘোষনা দিয়েছিলেন, ঠিক তখন থেকেই তিনি পলি-র চিকিৎসা শুরু করেন। তিনি পলি-র বাবা মোহাম্মদ উল্লাহরও খুব কাছের একজন বন্ধু। তার আন্তরিকতার পরশ না থাকলে হয়তো আমার ছেলেকে বাঁচানোই কঠিন হতো। পৃথিবীর যাবতীয় বিষয় নিয়ে আমার প্রায়ই আড্ডা আর গল্প হয় সিয়ামুসসালামের সঙ্গে। তিনি কুমিল্লা-৬ সদর আসনের সংসদ সদস্য আ. ক. ম বাহাউদ্দিন বাহারের ভাতিজা বলে অনেকেই তাকে স্যালুট করেন। কিন্তু তার সঙ্গে আমার সম্পর্কের মূল কারণ তার অর্জিত জ্ঞান। ইংরেজি ভাষায় লেখা আমার অনেক গল্প বিচ্ছিন্ন সব পাতা থেকে সুন্দর একটি ডায়েরিতে তুলে দিয়েছিলেন ¯িœগ্ধা রায়। খাতাটি আর খুঁজে পেলাম না। আমার ‘শিকারি বাঘ’ গল্পটি বিগত ১৬ বছর ধরে মুখে মুখে শুনে এসেছিলেন গল্পকার কাজী মোহাম্মদ আলমগীর।
১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে যখন আমি ‘শিকারি বাঘ’ গল্পটি প্রথম লিখি, তখন আমার ২১ বছর বয়স। গল্পটির সারবস্তুটি আমার মায়ের কাছ থেকে নেয়া। তখনও আমি স্বপ্ন দেখছি শুধুমাত্র একজন লেখকই হওয়ার। সে সময়ে আমরা কুমিল্লা শহরতলীর পশ্চিম চানপুর এলাকার গয়ামবাগিচা রাস্তার পাশের একটি বাসায় ভাড়া থাকি। যখন আমি এ গল্প লিখি, এখনও মনে আছে, আমার মা একটু পর পর চা-বিস্কুট-চানাচুর-শেমাই... ইত্যাদি করে করে খাওয়াচ্ছিলেন। কয়েকদিন লেগেছিল এ গল্প দাঁড় করাতে। আমাকে এভাবে লেখায় মগ্ন দেখলে বাবা ক্ষেপে যেতেন কখনো কখনো। বলতেন, ওর পরীক্ষা শেষ। এতো কী লেখালেখি ওর। মা বলতেন, অনেকের ছেলেমেয়ের বাজে বাজে নেশা থাকে। আমার ছেলের লেখার নেশা। ক্ষতি কী। লিখুক। বাবা শুধু আমার পেশার চিন্তায় দুশ্চিন্তা করতেন। আজ এতো বছর পর যখন বাবা-মা আর কেউই বেঁচে নেই, আমার মনে হচ্ছে, আমার মা ছিলেন লেখক হতে গেলে যেমন মা হওয়া দরকার, ঠিক তেমনই একজন মা । আর বাবা কেন যে লেখার পেশাতে আস্থা রাখতেন না, তাতো আমার নিজের জীবন দিয়েই পদে পদে উপলব্ধি করছি এখন।
শুরুতে ‘শিকারি বাঘ’ গল্পের নাম ছিল ‘আইসক্রীমওয়ালা’। নামটি ছিল আমার মায়েরই দেয়া। পরে ১৯৯৬ সালে এ গল্পের নাম দেই ‘সার্কাস’। এ নামটি আবার বাবার পছন্দের ছিল। বাবা বললেন, একজন রাজাকারের ছেলে ‘আইসক্রিমওয়ালা’ হয়ে মুক্তিযোদ্ধার শিশু সন্তানকে ‘সার্কাস’ দেখানোর কথা বলে চিরতরে অপহরণ করে। সে তো আসলে শিশুটিকে সার্কাস দেখায় না। সার্কাস দেখায় সবাইকেই। তাই এ নামই থাকা উচিত। কিন্তু আমার প্রথম স্ত্রী ঈশিতা এ নাম পছন্দ করেনি। যেসব মেয়েদের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তাদের একজনের নাম ছিল ঈশিতা। পরিচয় ১৯৯৩ সালে এবং প্রেম হয় ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে আমার সঙ্গে কুমিল্লার সংরাইশের এ ফারজানা কবির ঈশিতার বিয়ে হওয়ার পর সে এই গল্প পড়ে ভীষণই মুগ্ধ হয়।
২০০১ সালে কুমিল্লার গল্পকার কাজী মোহাম্মদ আলমগীর আমাকে বলেন, আইসক্রিমওয়ালা কেন আহত একজন মুক্তিযোদ্ধার একমাত্র শিশু সন্তানকে অপহরণ করে নেবে, গল্পে তার ব্যাখ্যা থাকা উচিত। তারপরই এ গল্পে রাজাকার গণি মোল্লার চরিত্রটিকে স্পষ্ট করি আমি। এ গল্পের চিত্রনাট্যরূপও দিয়েছিলাম। কিন্তু মতান্তর-পথান্তরের কারণে ঈশিতার সঙ্গে আমার ২০০২ সালে সংসার ভাঙ্গনের সময় অনেক লেখা হারানোর সঙ্গে সেই চিত্রনাট্যও হারিয়েছি। চিত্রনাট্যের রূপদানে আমি তখন কুমিল্লার সংগীতশিল্পী দীপা সিনহাকে ‘কমলের মা’র মুখাবয়বে কল্পনা করেছিলাম। চিত্রনাট্যরূপ দিয়েছিলাম গল্প লেখার ৮ বছর পর ১৯৯৯ সালে। তাই গল্পের চেয়ে চিত্রনাট্যরূপটিই অসাধারণ হয়েছিলো। এ গল্পের মূল চরিত্র শিশু ‘কমল’ আকাশে যখন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে, তখন সেই ঝাঁকের দিকে তাকিয়ে আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে উড়ন্ত পাখির মতোই ঝাঁকের পিছু পিছু দৌঁড়ায়। কাঁটা কম্পাস নিয়ে জ্যামিতির চিত্র আঁকছিল কমল। হঠাৎ খোলা জানালা দিয়ে চোখ চলে যায় জানালার পাশের ডালিম গাছে। ডালিম গাছের এপাশ ওপাশ উড়ে বেড়ায় একটি হলদে পাখি। জ্যামিতির চিত্র আঁকা ভুলে পাখির দিকে তাকিয়ে থাকে কমল। তারপর পাখি উড়ে গেলে সাদা কাগজে সুন্দর একটি পাখির ছবি আঁকায় মনোযোগ দেয় কমল। এমন অসংখ্য সিকোয়েন্সে ভরপুর ছিল সেই চিত্রনাট্য। গল্পটি আমার বর্তমান স্ত্রী সাদিয়া পলি’রও অসম্ভব প্রিয়। আমার ছেলে কফিল মোহাম্মদ অপূর্ব এতোদিন আমার সব গল্পের ভক্ত ছিলো। এখন সে বলে, তোমার গল্পে শুধুই দুঃখ। এই দুঃখের গল্প আমি আর শুনবো না। তুমি যদি পারো তো হাসির গল্প লিখে আমাকে শোনাবে। আমি এমন দুঃখের গল্প পছন্দ করি না। অপূর্বের কথা মেনে হয়তো আমাকে হাসির গল্পও অনেক লিখতে হবে।
‘বাংলাদেশের তুলসী গাছেরও জল চাই আজ’ গল্পটি আমি লিখেছিলাম আমার জীবনেরই এক ধরনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে। পরে কমিউনিস্ট রাইটার সোমেন চন্দের জীবনের কিছুটা ছায়া অবলম্বনেই এর অন্য একটি রূপ নির্মাণ করি। এ লেখাটি প্রথম পাঠ করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, কুমিল্লার একটি সাহিত্য পাঠের আসরে। সেই সাহিত্য পাঠের আসরে ফারজানা কবির ঈশিতাও উপস্থিত ছিল। সভায় ঈশিতা সেদিন এসেছিল স্বরচিত কবিতা পাঠ করতে। কিন্তু অনুষ্ঠানে আমার এ গল্পটি পাঠের পরপরই বিরূপ সমালোচনার মুখে পড়লাম আমি। কুমিল্লার তখনকার সাহিত্যবোদ্ধারা আমাকে অনেক জ্ঞানই দিলেন। ভাগ্য ভালো কুমিল্লার সাহিত্যিক আহাম্মেদ কবীর ও গল্পকার কাজী মোহাম্মদ আলমগীরও সে সভায় উপস্থিত ছিলেন। তারাই শুধু এ গল্পের পক্ষে কিছু কথা বললেন। পরে সাহিত্যিক আহাম্মেদ কবীর একবার আমাকে বলেছিলেন ‘ময়নামতি’ নামে তিনি একটি সাহিত্যপত্রিকা বের করবেন এবং সেখানে তিনি এ গল্পটি ছাপাবেন। কিন্তু সেই পত্রিকা আর বের হয়নি। আর আমার এ গল্পটিও কোথাও মুদ্রণের মুখ দেখেনি। তবে বর্তমানে এটিকে আমি এক ধরনের লেখা মনে করলেও ঠিক পরীক্ষানিরীক্ষানির্ভর কোনো গল্প মনে করছি না। আমার ছেলেবেলার শিক্ষক আমার পরম গুরু এ. কে. এম মনিরুজ্জামান স্যারের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। জীবনে কতোবার যে আমি লেখাপড়া ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম, তিনি আমার লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটতে দেননি। সম্পর্কে তিনি আমার কাকা হলেও তিনি আমার পরম প্রিয় একজন শিক্ষক। আমার সারা শৈশব তার বিভিন্ন অবদানে সিক্ত। তার সান্নিধ্য না পেলে আমার অসাম্প্রদায়িক চিন্তা পুষ্ট হতো না। আমার মালয়েশিয়া প্রবাসী কাকা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম আমার গ্রন্থ প্রকাশিত হলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন। তার কাছ থেকে কতোবার যে গ্রন্থ প্রকাশ করবো বলে টাকা নিয়ে আমি জীবন বাঁচিয়েছি, ঠিক মনে নেই। তিনি আমাকে কোনোদিনও বলেননি যে ‘তোমার গ্রন্থ কোথায়’! সেই শৈশব থেকেই আমি তার কাছে বিশেষভাবে ঋণী। আমার কুমিল্লার বামপন্থী বন্ধু মুবিনুল ইসলাম তানভীরের অসাম্প্রদায়িক চিন্তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। কমিউনিস্ট পার্টির কুমিল্লার নেতা পরেশ রঞ্জন কর আমার গল্প কিংবা অন্যান্য লেখার চেয়ে বেশি আমাকেই ¯েœহ করেন। আমি যেন নিজের প্রতি আরও মনোযোগ দেই, বরাবরই সেই পরামর্শ দেন কুমিল্লার বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ ও সাংবাদিক দিলীপ মজুমদার। দিলীপ মজুমদারের বাগানের মতো সংসার আমাকে দারুণ মুগ্ধ করে। তার সংসারধর্ম নিয়ে আমার লেখা গল্পও রয়েছে। কুমিল্লা শহরের ঠাকুরপাড়ার বাগানবাড়িতেই সেই বাগান-সংসার তার। তার ছেলে অতনু এক পলকেই যে কোনো মানুষকে আপন করতে জানে। এমন অসংখ্য মানুষের গল্পে আমার জীবন ও গল্পগুলো রসসিক্ত। জীবনের সব গল্প আমার লেখা গল্পেও জায়গা করে নেয়। আমার ছোটভাই গিয়াস উদ্দিন পিয়াস কিংবা কুমিল্লার কবি আরিফ হাসান অথবা সংযুক্তা ভৌমিকদের গল্পসহ আরও অনেক অনেক গল্প তাই আর বলা হয় না আমার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.