নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘোড়া ভালো ডিম ভালো ভালো না ঘোড়ার ডিম

০৫ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:২৭





জসীম উদ্দিন অসীম:

সেই ১৯৯৪ সালে পড়েছিলাম কবি আহসান হাবীবের কবিতা ..‘ঘোড়া ভালো ডিম ভালো ভালো , না ঘোড়ার ডিম..।’ আমার লেখা যাদের ভালো লাগে না , তারাও বলছেন , আমার লেখা ঘোড়ার ডিমের মতোই। কেউ কেউ বলছেন ,পত্রিকা ভালো , অসীমও ভালো ,ভালো না ঐ অসীমের লেখা। আসলে লেখা বিপক্ষে গেলেই লেখা খারাপ হয়ে যায়। আমি বলি কি জানেন? সমালোচনা হবেই। যে লেখার সমালোচনা নেই , সেটা কোনো লেখাই নয়-ব্যালেন্সড লেখা। যে বেগুন পোকায় কাটে না , সেটা বিষাক্ত। কীটনাশকে আচ্ছন্ন।

কেউ কেউ আবার বলেন , আমার অনেক লেখাই তাদের ভালো লাগে। তবে তারা আমাকে খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ লেখা লিখে অস্তিত্বের ক্ষতি করতেও বারণ করেন। আমি বলি বেঁচে থাকার পূর্বশর্তই হলো ঝুঁকি নেয়া। হয় ছক্কা-নয় বোল্ড আউট।তারা বলেন ,খেলার শুরুতেই বোল্ড আউট হলে হবে না। তা অবশ্য ঠিক। এ কথা আমিও মানি।

সাধারণ মানুষ প্রায়ই সস্তা বিনোদনের দিকে বেশি ঝুঁকে । তাই বলে কি সে রকম যৌন উপাদানযুক্ত লেখা উচিত? রেলস্টেশনের বইয়ের দোকানগুলোতে পর্ণো পত্রিকা কম পাওয়া যায়না , সেসবে বাধা নেই। কিন্তু মানুষকে আসলে রাজনৈতিকভাবেই সচেতন করা উচিত। অথচ এমন লেখা লিখলেই বিপদ বেশি। যৌন রোগের চিকিৎসা বিষয়ে রগরগে বিবরণযুক্ত লিফলেট পথেঘাটে বিলি হলে তাই পুলিশ বাধা দেয় না। কিন্তু ওসব প্রচারপত্রের মতো করে যদি রাস্তায় রাস্তায় লোক দাঁড়িয়ে ধর্মও প্রচার করে , তাতেও বাধা আসবে-এবার সেটা যেই ধর্মের কথাই হোক।

অনেকে বলেন , তারা সম্ভব হলে আমার লেখালেখির জন্য পৃষ্ঠপোষকতারও ব্যবস্থা করতেন। আমি বলি , সৎলেখার প্রশংসা এবং বাজে লেখার সমালোচনাই লেখার সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষকতা। আর দারিদ্র? হায়-তপশ্চর্যার পূর্বশর্তই হচ্ছে দারিদ্র। বড় উদাহরণ আমাদের কবি নজরুল।

লেখার সমর্থনও দরকার। লেখকের সফলতার জন্যও সমর্থন দরকার। সমর্থন না পেলে কি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সফল হতে পারতো? একসময় আমি কিছু আঁকাআকিও করতাম। একাডেমিক চর্চা না থাকলেও নন একাডেমিক চর্চা অবশ্যই ছিল। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আঁকাআঁকি একদমই শেষ হয়ে গিয়েছে। একদা আমাকে আঁকাআকির পৃষ্ঠপোষকতার জন্য অনেকে সহযোগিতাও করেছেন।কিন্তু একার সহযোগিতায় , শুধু একজন ব্যক্তির সহযোগিতায় কি শিল্পের চর্চা অব্যাহত রাখা সম্ভব ? রাগে-ক্ষোভে কতদিন ছবি আঁকি না আমি। যদিও জানি , ছবি আঁকার প্রতিভা আমার নেই।

হ্যাঁ-আমি লিখি পরিমাণে বেশি-তাই লেখার মান ভালো নয়। আমার অধিকাংশ লেখা আমারই পছন্দ হয় না। ছাপার মতো লেখা প্রায় লিখতেই পারছি না। মানহীন লেখা তো আর ছাপার যোগ্য নয়। এত চাপের এত তাপের অভিশাপের মধ্যে বসবাস করে কী লেখালেখি করা সম্ভব ?

নিরপেরক্ষভাবে কারা ধরছে ক্যামেরা ও কলম? দালালি আর চাটুকারিতা দেখতে দেখতে দর্শক-শ্রোতা এবং পাঠক এখন খুবই হতাশ। সাহসী কলম কোথায় খুঁজে পাবেন? কলম সাহসী হলে হাত কেটে ফেলা হবে। হাত সাহসী হলে বুকে-পিঠে গুলি করা হবে। কে দেবে আপনাকে নিরাপত্তা ? খুব বেশি প্রভাবশালী লেখক ছিলেন ড. হুমায়ুন আজাদ। খুব সাহসী বক্তা এবং লেখক। ঢাকায় আমি অনেক সেমিনারে তার সাহসী বক্তব্য শুনেছি। বক্তব্যে একধরনের অশ্রদ্ধাবোধ ছিল , কিন্তু যথাসম্ভব সত্য কথা বলতে পারতেন। অশ্লীল শব্দ হয়তো ব্যবহার করতেন , কিন্তু সাহস দেখাতেন অনেক। বুকের পাটা ছিল। এক অনুষ্ঠানে বলে ফেললেন , কবি নজরুল উঁচু মানের কবি নন , ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ উঁচুদরের ভাষাবিদ ছিলেন না , পল্লীকবি জসীম উদ্দিন সমকামী ছিলেন...এমন এমন কথা...কিন্তু কথার সর্বাংশ মিথ্যে তিনি বলতেন না-সাহস করে অনেক দূর সত্য বলে ফেলতেন। পরিণতিটা কী হয়েছে , পাঠক...জানেন। ড. হুমায়ুন আজাদ যখন ‘পাক-সার-জমিন-সাদ-বাদ’ লিখেন , তার পরপরই একজন মন্তব্য করেন , এবার হুমায়ুন খুন হয়ে যাবেন। হলেনও তাই। তবে হুমায়ূন আজাদ উল্লেখিত গ্রন্থে যে ভাষা ব্যবহার করেছেন , তার কঠোর সমালোচনাও করেছেন অনেকে। তবে অনেকে রাজাকার সমালোচনা যতটা করেন , মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যারা ব্যবসা করে বেড়ান , তাদের বিষয়ে কিছু বলেন না। নিরপেক্ষতা তবে থাকলো কোথায়?

আমার কলম ঠিক ঐ লেখাটিই লিখে ফেলে , যা যথাসম্ভব নিরপেক্ষ। কিন্তু সেই লেখাটি আমি ছাপাতে পারি না। কলম আর ক্যামেরাকে আমি যেভাবে ব্যবহার করতে চাই , সেভাবে ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। ২০০৪ সালে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে আমার একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠত হয়। অর্থাভাবে খুবই দুর্বল প্রদর্শনী। উদ্বোধন করতে এসেছিলেন কুমিল্লার তখনকার জেলা প্রশাসক তারিক-উল-ইসলাম। কিন্তু প্রদর্শনীর আগে প্রদর্শনীর ৫টি ছবি কর্তৃপক্ষ নামিয়ে নেন। প্রথমে আমি ছবি নামাতে রাজি হইনি। পরে জেলা কালচারাল অফিসার বশির-উল-আনোয়ার এবং শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ সেলিমের অনুরোধে ছবি নামিয়েই নেই। আরেকবার প্রদর্শনী করার সময় পুলিশ এসে ২টি ছবি নামিয়ে নিতে বলে। আমি বলি ছবিগুলো সত্য ঘটনার আলোকচিত্র। কেন নামাবো? তখন পুলিশ কুমিল্লার কবি ফখরুল হুদা হেলালকে বলেন , ঐ ফটোওয়ালাকে বলেন ফটোগুলো নামিয়ে নিতে । আরেকবার প্রদর্শনী করার সময় কী কী ছবি আমি দেখাচ্ছি , তা কুমিল্লার তখনকার এসপি আওরঙ্গজেব মাহাবুবকে দেখিয়ে নিতে হয়েছিল-সেটা ২০০৫ সালে। শুধু তাই নয় , অতিরিক্ত ছবি আমি দেখাচ্ছি কী না , তাও খতিয়ে দেখেন তখন পুলিশের এক এসআই লুৎফর রহমান। এভাবে কি প্রদর্শনী হয়? অথচ কী ছিল আমার ছবিতে? তেমন কিছুই নয়। এবার থাকলে হতো কী! তবে কি আমি সৎ ? না। আমি কি দালালী করি না? করি। তখন , যখন না করলে আমি নিজে মারাই পড়বো। সুখের সন্ধানে অনেক চেষ্টা করেছি , পুরোপুরি অসৎ হতে , পুরোপুরি দালাল হতে। কিন্তু আমি সে রকম সুখের পক্ষে নই। কম্প্রোমাইজ পারত:পক্ষে করিনা। শুধু কোকিলই কাকের বাসায় ডিম পেরে কাককে ঠকায় না , অনেক মানুষও নিজের সন্তান মনে করে বোকা কাকের মতো অন্যের সন্তান লালন করে। এসব লিখলে খবর আছে । এত নিখুঁত রিপোর্টিং শুরু হলে আমাদের অনেকের সংসার এবং অনেকের বিশ্বাসও ভেঙ্গে যাবে। হজ্ব করে আসা লোকও কী পরিমাণ নিচে নামতে পারে , আমি তা তখন দেখেছি , যখন লেখালেখির অভিজ্ঞতার জন্য ---। অন্ধকারে প্রবেশ করলেই মানুষের খুনী এবং নগ্নরূপ দেখা যায়। ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে কাজ করতে গিয়েছিলাম একসময়। সঙ্গে ছিল আরেক এলিট ফ্যামিলির মেয়ে। সেই মেয়ের সূত্রে পরিচয় আরেক মেয়ের সঙ্গে। উচ্চশিক্ষিতা। তিনি অনেক চেষ্টার পরও যখন ১০ লাখ টাকার বীমাটা করাতে পারলেন না , তখন পন্থা পরিবর্তন করলেন এবং শেষে বীমাটা করাতেও পারলেন। কিন্তু লেখা কি যাবে? যাবে না। সবাই কি তবে খারাপ? অবশ্যই নয়। তবে খারাপ ব্যক্তিগণ সবার বিশ্বাস ভেঙ্গে দিতে চান।

আমি বিটিভি-তে প্রথম নাটক বিভাগে অডিশন [শিল্পী নির্বাচন পরীক্ষা] দিতে যাই ১৯ অক্টোবর ১৯৯২ সালে। পরীক্ষার্থী হিসেবে আমার ক্রমিক নম্বর ছিল ৪৯৫। তার আগের বছর ১৯৯১ সালে যখন একটি বেসরকারি অভিনয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অভিনয় শিখছি , তখন বাবার সমান বিটিভি-র এক কর্মকর্তার সঙ্গে অভিনয় শিখতে আসা এক যুবতীকে শুয়ে যেতে দেখে খুবই খারাপ লেগেছিল। টেলিভিশন নাটকে চেহারা দেখিয়ে দেবে বলে সেই কর্মকর্তাটি যুবতী মেয়েটির শরীর হরণ করেছিল। সেসব লেখা যাবে না। কিছুদিন আগে আমি একজন খুনির কথা তার ছদ্মনাম ব্যবহার করে লিখেছিলাম , যাকে খুন করতে দেখেছি আমি। খুনিটি আমাকে খবর পাঠিয়েছে , আমার যে এখন সন্তান আছে , সেটা যেন আমি মনে রাখি। তবে বলুন নিরাপত্তা কোথায়? নিরাপত্তা বিষয়টি খুবই আপেক্ষিক। পুলিশ যে আমাকে নিরাপত্তা দেবে , সেই পুলিশের নিরাপত্তা কি বিঘিœত হচ্ছে না? তাছাড়া কোনো খুনি যদি আমাকে দিনের পর দিন ফলো করতে থাকে , ঠান্ডা মাথায় আক্রমণ করবে বলে , সেখানে পুলিশ আমাকে কিভাবে রক্ষা করবে?

পত্রিকা করতে এসে সর্বোচ্চ ব্যর্থ একটি পত্রিকা আমি করেছি। আঞ্চলিক সংবাদপত্র কিভাবে পরিচালনা করতে হয় , তা মোটামুটি আমার জানাও আছে। জানা আছে ব্যক্তিগত মালিকানায় কিংবা অংশীদারী মালিকানায় কিভাবে কাগজ চালাতে হবে। জানা আছে সংবাদপত্রের আয় ও ব্যয়ের এবং লাভের অঙ্ক। কিন্তু পত্রিকা পরিচালনা করতে গিয়ে এ কুমিল্লা শহরে যাদের কাছে যেতে হয় , তাদের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে চলতে আমার ভালো লাগে না। যারা আমার হিসেবে লুটেরা-ভন্ড-বাটপার-প্রতারক...তাদের অনেকের টাকা ছাড়া , তাদের সঙ্গে আপোষ করা ছাড়া এ শহরে কাগজ চালানো কঠিন। অথচ আমার হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে চলতে পারে দিনের পর দিন সিরিজ নিউজ। কিন্তু আমি না পারছি তাদের বিরুদ্ধে নিউজ ছাপাতে , না তাদের টাকা খেয়ে তোষামোদী করতে। কারণ আমি একসময় কাজ করেছি কুমিল্লার সাপ্তাহিক আমোদ-দৈনিক রূপসী বাংলা ও দৈনিক শিরোনাম পত্রিকায়। সর্বশেষ আমি কুমিল্লার কাগজ পত্রিকার বার্তা সম্পাদকও ছিলাম। তাই আমি আমার দ্বারা এ অঙ্গনের বিশেষ ক্ষতি করতে চাইনা। ২০০৩ সালে যখন আমি দৈনিক শিরোনাম পত্রিকার চাকুরি ছেড়ে বেকার জীবনযাপন করি , তখন একজন লোক এসে একদিন আমাকে বলেন , আমি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ এন্ড এনালাইসিস উইং -[‘র’] এর হয়ে কাজ করবো কী না , করলে অনেক টাকা পাবো। অভাবে আর বেকারত্বে তখন আমি খুবই হতাশ। একবেলার খাওয়া ৩ বেলায় ভাগ করে খাই , তারপরও দেশবিরোধী কাজে নাম লেখাতে পারিনি। সেই লোক পরে আমাকে তার নাম না বলার শর্ত দেয় এবং বলে তার নাম বললে সে আমাকে খুন করিয়ে প্রতিশোধ নেবে । এ অবস্থায় আমি নিশ্চয়ই আর বলতে পারি না ---। কারণ খুিনকে ধরিয়ে দিতে গিয়ে আমার তো উচিত নয় নিজে খুন হয়ে যাওয়া। গান্ধী অহিংস ছিলেন , ছিলেন রামভক্তও। কিন্তু রাম অহিংস ছিলেন না। তাই গান্ধীর মতো লোককেও নাথুরাম গডসের হাতে সহিংসতা গুলি খেয়ে বলি হতে হয়। নাথুরাম গডসেও রামভক্ত ছিলেন। তারপরও তিনি রামভক্ত গান্ধীকে গুলি করে মারেন। চরম সত্য বলতে গেলে আমার আশেপাশের লোকজনই আমাকে মেরে ফেলবে।

তবে হ্যাঁ-একদিন আমি সব লিখে দেব। ছেপে দেবো বই। এখন অপেক্ষা করতে হবে। বলার সময় আসেনি। এই অপেক্ষা বড় বড় লেখকদেরকেও করতে হয়েছিল।চেকোশ্লোভাকিয়াতে ফ্রানৎস কাফকার রচনা কুড়ি বছর ধরে চেপে রাখা হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নে বোরিস পাস্তেরনাকের উপন্যাস নিষিদ্ধ ছিল অনেক কাল। একসময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাশিয়ার চিঠি-তেও অনেক কাটছাট করতে হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে ভারতে পাকিস্তানী ছবি প্রচার নিষিদ্ধ হয়েছিল। দীর্ঘ ৪ দশক পর ভারতীয় হলে পাকিস্তানী ছবি মুক্তি পায়। ছবিটি হল পাকিস্তানের পরিচালক শোয়েব মানসুরের প্রথম ছবি ‘খোদা কে লিয়ে’। ছবিটি নির্মিত হয়েছে ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ এর পর যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের জীবন নিয়ে।

নিষিদ্ধ কোনো কিছুই নিষিদ্ধ থাকে না। এখন আমার লেখাকে অনেকে ভালো চোখে দেখেন না , একসময় আবার লেখার মিত্রদেরও সমর্থন পেতে পারি। এখন যদি মোবাইল কোম্পানীগুলোর বেনিয়াবৃত্তি নিয়ে ভালো রিপোর্ট করা যেত , কিন্তু না। এখন মোবাইলের যুগ। মোবাইল কোম্পানীর ব্যবসায়িক প্রতারণার কথা লেখা যাবে না। ওরা টাকা দেয় , বিজ্ঞাপন দেয় মিডিয়াকে। আমাদের বিজ্ঞাপন দেয় না , কারণ আমরা ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্রতর প্রতিষ্ঠান বলে। কিন্তু যদি তেমন কিছু লিখে দেই রকমারি চাপ আসবে নিশ্চিত। প্রথমেই চাপ আসতে পারে মিডিয়ার লোকদের থেকেই। কারণ মিডিয়ার লোকদের এসব কোম্পানীগুলো যা সুবিধা দিয়েছে , শীর্ষস্থানীয় কোনো কোনো সাংবাদিকের ওরা যেসব মোবাইল গিফট করেছে , তার সুবিধার কথা জানলে আপনিও অবাক হবেন। অথচ একটা সময় পার হলে অনেকেই বলবেন , মোবাইল অনেক ক্ষেত্রে ধূমপানের চেয়েও ক্ষতিকর। বলবেন , মোবাইলের রেডিয়েশন নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি বলেই ব্রেন টিউমার এমন ছড়িয়ে পড়েছে। ইত্যাদি...ইত্যাদি।

এখন চতুর্দিকে যে রকম প্রতিযোগিতা চলছে-ও রকম প্রতিযোগিতায় আমি বিশ্বাসী নই। আমি সাধনায় বিশ্বাসী-প্রতিযোগিতায় নয়। কমিটেড লেখালেখি করে খাওয়া-বাঁচাই কঠিন। তাই এখন অভিজ্ঞতাগুলোকেও লেখা যাচ্ছে না , অনেকের হুমকি পেতে হচ্ছে , যে লেখাগুলো আমার এখনও নিষিদ্ধ হয়ে আছে , সেসব লেখাও একদিন মুক্তি পাবে এবং ---। সেই লেখা তো প্রায় কমপ্লিটই আছে কিন্তু ছাপার সময় আসেনি। আমি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে একদা-গল্প-কবিতা-উপন্যাস-প্রবন্ধ-ছড়া ইত্যাদি লিখেছি অনেক। এখন লিখছি ডকুমেন্টারী লেখা। ঘটনার পাত্রপাত্রীগণ কল্পিত নন। বাস্তব চরিত্র। স্থান বাস্তব। সময় বাস্তব। শুধু যাদের আমরা খুব অমায়িক জানি , তাদেরই অনেকের অদৃশ্য অথবা আড়ালের কিছু চিত্রকল্প-দৃশ্যকল্প থাকছে সেসব লেখায়।

একজনকে বাংলাদেশী বলে একদা আমি চিনতাম । বাড়ি গোমতি নদীর উত্তরপাড়ের একটি গ্রামে বলেই সে পরিচয় দিতো । কুমিল্লা শহরে তাকে কত জায়গায়ই না দেখেছি তাকে। পরে দেখলাম সেই লোক ভারতীয়। আরও পরে জানলাম সীমান্তের কাঁটাতারের কাছাকাছি জিরো পয়েন্টের সঙ্গেই তার আছে গাঁজার বিশাল চাষাবাদ এবং ধর্মনগর এলাকা দিয়ে সে বাংলাদেশের মেয়েদের কিভাবে সোনামুড়া নিয়ে যায় এবং আবার পৌঁছে দেয়। সেই বাংলাদেশী কাম ভারতীয় ব্যক্তিটিকে যারা বন্ধু কিংবা আত্মীয় বলে পরিচয় দিয়েছে , আমার লেখায় থাকছে সে রকম লোকদের বিবরণও। কেন তাকে শেল্টার দিতো-তারও ব্যাখ্যা থাকছে। একসময় স্পষ্টবাদী ছিলাম। অস্তিত্বের প্রশ্নে ক্রমাগত দালাল হচ্ছি এখন। কিন্তু একদিন মুখ খুলবো। ফাঁস করে দেবো-অনেক কিছু। সময় আসুক। সময়ের আগে সেটা করা ঠিক হবে না। ডিম-কলি কোনো কিছুই সময়ের আগে ফুটে না। ফুটলেও কাজে লাগে না। বইয়ের আর অভিজ্ঞতার বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। বই বিক্রি করে আর ভাষণ দিয়ে আজ যে বিল ক্লিনটন আর হিলারী ক্লিনটন অনেক আয় করছেন , তার জন্য তাদেও অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছে। বিল ক্লিনটনের ‘মাই লাইফ’ এবং হিলারী ক্লিনটনের ‘লিভিং হিস্ট্রি’ গ্রন্থের রয়ালটি হিসেবে তারা যে আজ কোটি কোটি ডলার পাচ্ছেন , তার জন্য তারা কত অপেক্ষা করেছেন। সবাইতো আসলে মানুষের ভালো চেহারা নিয়ে লিখে। আমি না হয় খারাপ চেহারা নিয়েও লিখবো। মানুষের গোপন চিত্র দেখতে এবং উপস্থাপন করতে আমার ভালো লাগে। কারণ সামাজিক মানুষ অনেকটা ছদ্মবেশী। সমাজ থেকে মুক্তি পেলে সে হয়ে উঠে আদিম স্বভাবের মানুষ। মানুষ দেখার এ কৌতূহল আমার অনেক দিনের। আমাদের সমাজে এক পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকে। কিন্তু এক নারীর একাধিক স্বামীর বিষয়টি সমাজ-ধর্ম কেউ স্বীকার করেনা। তাই বলে কি এক নারীর একাধিক স্বামী থাকে না? আমি এমনই একটি মেয়েকে একবার খুঁজে পেয়েছিলাম , যার ছিল দুই স্বামী। সেই মেয়ের একটি গন্ডগোলের বিচারে আমি নিজেও উপস্থিত ছিলাম। মেয়েটির এক স্বামী সেই মেয়েটিকে ভালোবেসে তার মায়ের সব স্বর্ণালংকার দিয়ে হা-হুতাশ করছিল।

১৯৮৯ সালে আমি ঢাকায় গেলাম পুথিঘর-মুক্তধারার প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহার কাছে। চিত্তরঞ্জন সাহার জন্ম ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলায়। ১৯৪৮ এ তিনি বিএ পাস করেন। তাদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল সুদের। কিন্তু ঐ ব্যবসা তাকে তৃপ্তি দেয়নি। ১৯৫১ সালে শুরু করেন পুথিঘর। একসময় পুথিঘরের নোটবই সারাদেশে পরিচিত ছিল। তার বইয়ের ব্যবসায় একবার আগুনও লেগেছিল। এসব আমি জানতাম ১৯৮৭ সাল থেকেই।

১৯৫৬ সালে ঢাকার পাটুয়াটুলিতে দোতলায় ঘরভাড়া করেও তিনি বইয়ের ব্যবসা করেন। পরে ঢাকার ফরাশগঞ্জে ৪৫ কক্ষের একটি তিনতলা বাড়ি তিনি ভাড়া নেন। পরে এটিই হয় পুথিঘর লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়। ১৯৬৭ সাল থেকে ঢাকায় এসে এ বাসার তিনতলাতে তিনি থাকা শুরু করেন। আমি ১৯৮৯ সালে তার সঙ্গে দেখা করতে সেই বাড়িতেই গিয়েছিলাম মোহাম্মদ জহির এমদাদুল হক নাম নিয়ে। অষ্টম শ্রেণী পাশ বলে চাকুরি নিয়েছিলাম। তখন আমি চিত্তরঞ্জন সাহার বাসার পানিও টেনেছিলাম। আমার সঙ্গে ছিল চারটি উপন্যাসের পান্ডুলিপিও। ভিলেজ পলিটিক্স-যৌতুকের ফল-স্বাধীনতার মর্যাদা এবং আমার মায়ের সুখ কিছু নেই। পরে চাকুরি ছাড়লাম এবং দুই বছর পর ১৯৯১ সালে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবারও গেলাম মুক্তধারা লাইব্রেরীতে। এবার পরিচয় দিলাম জসীম উদ্দিন অসীম নামে। শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ এবং বিএ [সম্মান] শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। এবারে আমার দাম গেল বেড়ে। শিক্ষার কারণে। এই আমি যে সেই আমিই ছিলাম-জহির এমদাদ নামে , তা তারা ধরতে পারলেন না। কিন্তু ততদিনে আমার কৌতূহল শেষ। আহা হলুদ-মরিচ ভাঙ্গানোর গন্ধ পার হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীরপাড়ে ফরাশগঞ্জের সেই বাড়িতে গেলে এখন আর চিত্তরঞ্জন সাহাকে পাওয়া যাবে না। তিনি এখন পরলোকে। ছিলেন নিঃসন্তান। স্ত্রী বিজলী প্রভা সাহা। বিজলী প্রভাসাহার সঙ্গেও আমার কথা হয় ১৯৮৯ সালেই। বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের ইতিহাসে চিত্তরঞ্জন সাহার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। যেভাবে আমি সেই শৈশবে ছদ্মনামে চিত্তরঞ্জন সাহার বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলাম , এমন আরও বিশিষ্টজনের বাড়িতেও ঢোকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ কৌতূহল এখনও যায়নি আমার। লক্ষ্য অভিজ্ঞতা লাভ এবং শেষে লেখালেখি করা। কিন্তু এই লেখালেখির ফলটা সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক নয় বরং অধিকাংশই নেতিবাচক। তবে সেসব লেখা এই এখনি যদি ছাপানো শুরু করি , তবে খবর আছে আমার। তাই অপেক্ষা করছি , সেই সুদিনের , যেদিন সব লেখাই মুক্তি পাবে আমার। কারো নাম বদল না করেই , স্থান বদল না করেই শত বাধার মুখেও একদিন ছেপে দেবো সব লেখা , সেই আশাই করছি। একজন সৎ আর সাহসী লেখকের মর্যাদা কি অল্প হবে তখন?





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.