নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৩০ বছর চাকরি করেছি; অবসর নিয়েছি কর্নেল পদবীতে ২০০৬ সালে। এরপর এযাবৎ প্রিন্সিপাল হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে; এখন অর্কিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা-তে। ‘স্কুল সাইকোলোজি’ নিয়েও কাজ করছি।

আশরাফ আল দীন

কবি, শিক্ষাবিদ ও প্যারেন্টিং এক্সপার্ট

আশরাফ আল দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লকডাউন কীভাবে সফল হবে?

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:১৩

আজ সমগ্র বিশ্বব্যাপী #যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে #করোনাভাইরাস নামের এক #মহামারীর বিরুদ্ধে। অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশ সরকারও #লকডাউন ঘোষণা করেছে ২৬শে মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত। দেশের সব কাজকর্ম বন্ধ রেখে লকডাউন ঘোষণা করলেই কি #কোভিট-১৯ #ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যাবে? না। এই 'লকডাউনে'র সময় প্রত্যেক নাগরিককে কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে। তা না হলে এই 'লক ডাউন' ব্যর্থ হয়ে যাবে এবং তা হবে ভবিষ্যতের জন্য একটি মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টির কারণ।

এ বিষয়ে সতর্কতামুলক অনেকগুলো কথা বলা দরকার। যেমন, যুদ্ধটা কিভাবে করতে হবে? লক ডাউন-এর সময় আমরা নাগরিকরা কি করবো? #পজিটিভথিংকিং নিয়ে কথা, #মেন্টালহেলথ আর ফিজিক্যাল হেলথ নিয়ে কথা, অযথা #প্যানিক না হয়ে যথেষ্ট #সর্তকতা অবলম্বন নিয়ে কথা এবং সবচেয়ে বড় কথা হলোঃ #কোয়ারেন্টাইন কি, কিভাবে করবো এবং কেন করবো? ইত্যাদি।

যুদ্ধের প্রথম কথা হচ্ছে আপনাকে শত্রুর ক্ষমতা সম্পর্কে, শত্রুর অবস্থান সম্পর্কে, এবং তার শক্তি সম্পর্কে জানতে হবে। এরপর নিজের শক্তিকে বৃদ্ধি করে প্রয়োজনীয় কৌশল অবলম্বন করে তার বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে হবে। এখানে অস্থিরচিত্ত বা প্যানিকড হওয়ার কোন উপায় নেই। সুস্থিরভাবে বুঝে শুনে যুদ্ধে জয়লাভের জন্য এগোতে হবে। সঙ্গতভাবেই, অত্যন্ত কঠিন এ কাজ।

শুরুতেই একটি কথা জেনে নেওয়া আবশ্যক যে, 'কোভিড-১৯' এর ভাইরাস বাংলাদেশের কোথাও জন্ম নেয়নি। এটা ডেঙ্গু অথবা ম্যালেরিয়ার মতো আমার-আপনার ঘরে বা ঘরের আশেপাশে জন্ম নিচ্ছে না। এটা এসেছে বিদেশ থেকে এবং অত্যন্ত দ্রুত সংক্রমিত হয়ে প্রসারিত হচ্ছে মানুষের মধ্যে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অনেকগুলো সরকারের ব্যর্থতা হলো প্রথমেই তারা এই বিষয়টির গুরুত্ব ও ভয়াবহতা বুঝতে পারেনি এবং বিদেশ থেকে "সম্ভাব্য ভাইরাস বহনকারী লোকজন"কে নিজের দেশে ঢুকতে দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৬শে মার্চ ২০২০ তারিখ পর্যন্ত ১৯৭ টি দেশ/ এরিয়া/ টেরিটোরি-তে এই ভাইরাস স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী মৃত্যু হয়েছে ১৮,৫৮৯ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৪,১৬,৬৮৬জন।

এ মুহূর্তে আমাদের বাংলাদেশে এই ভাইরাস বহনকারী লোক নেই, এ কথা বলার উপায় নেই। সুতরাং আমাদেরকে যা করতে হবে তা হলো, প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে কার কার শরীরে এই ভাইরাস আছে! তার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছেঃ কোয়ারেন্টাইন। কারণ, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, এই ভাইরাস যদি কারো শরীরে সংক্রমিত হয় তাহলে ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে তার শরীরে এই রোগের লক্ষণ দেখা যাবে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কেউ ১৪ দিন নিজেকে সম্পূর্ণভাবে অন্যদের থেকে মুক্ত রাখার পর দেখেন যে তার মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা দেয় নি তাহলে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেন যে তার মধ্যে এই ভাইরাস নেই। সেজন্যেই প্রশ্ন এসেছে অন্তত ১৪ দিন নিজেকে নিজে কোয়ারেন্টাইন (সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন) করে রাখার। তাছাড়াও, যদি তিনি দুর্ভাগ্যক্রমে ভাইরাস বহনকারী হোন তাহলে এই সময়কালের মধ্যে তিনি নিজের অজান্তে এই ভাইরাস দিয়ে অন্যকে সংক্রমিত করবেন না।

এ ব্যাপারে হেলাফেলা করার বা ব্যাপারটাকে হালকাভাবে নেওয়ার কোন উপায় নেই। কারণ, আমাদের সামনে রয়েছে ইতালির অভিজ্ঞতা। মাত্র ২ মাস আগে ইতালিতে দুই-একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। সে দেশের সরকার বিষয়টাকে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে গুরুত্ব না দেওয়াতে, এখন মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তারা "এতগুলো লাশ কোথায় স্থান দেবে!" তা নিয়ে অস্থির হয়ে গেছে! একই ঘটনা যদি আগামী দুই মাস পর বাংলাদেশে ঘটে, আর আমাদের জাতির প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় "এতো লাশ দাফন করব কোথায়?" তাহলে আমরা সামাল দিতে পারব না! কারণ, ইতালির মতো অতটা ধনী এবং উন্নত দেশ আমরা নই। অস্থির বা প্যানিকড হওয়ার জন্য এসব কথা বলছি না; বলছি সাবধান হওয়ার জন্য, অন্তত মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য।

কোয়ারেন্টাইন নিয়ে কথা বলার শুরুতেই এইটুকু বলে রাখি যে, 'কোয়ারেন্টাইন', 'আইসোলেশন', এবং 'সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং' এই শব্দগুলোর আলাদা আলাদা ডাক্তারি ব্যাখ্যা আছে। কথাটাকে সহজ করার জন্য আমি বরং বলবো, আমাদের মূল কাজ হচ্ছেঃ নিজেকে মানুষের সংস্পর্শ থেকে আলাদা করে রাখা, যাতে করে আমার মধ্যে যদি ভাইরাস থেকে থাকে তাহলে তা যেন অন্যের কাছে সংক্রমিত না হয়, আর যদি না থাকে তাহলে যেন অন্যের নিকট থেকে তা আমার কাছে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ না পায়।

বাস্তব অবস্থা হচ্ছে কোভিড-১৯র প্রাদুর্ভাবের পর গত তিন /চার মাসে বিদেশ থেকে অনেক বিদেশি ও বাংলাদেশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসেছে যাদের মধ্যে অনেকেই এই ভাইরাস বহন করছিল বলে প্রতীয়মান হয়। এই ক'দিনে তারা আরো অনেক লোকের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত করে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। ইতোমধ্যে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরো অনেককে চিহ্নিত করা গেছে আক্রান্ত রোগী হিসেবে। যারা রোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে আইসোলেশন রাখতে হবে, এটা সমস্যা নয়! আসল সমস্যা হলো, বাকি জনগণের মধ্যে কারা কারা ভাইরাস বহন করছে এবং অতি শিগগিরই রোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে এই হিসাব কে দেবে? এটা কারো পক্ষেই দেয়া সম্ভব নয় বলেই প্রত্যেক মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে 'সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন' করে দেখতে হবে তিনি নিজে ভাইরাস আক্রান্ত কিনা।

শুধুমাত্র এই কাজটা করার জন্যই সমূহ ক্ষতির কথা জেনেও অন্যান্য দেশের মতো আমাদের সরকারকেও সকল প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়ে "লক-ডাউন" ঘোষণা করতে হয়েছে। এটা করা হয়েছে প্রত্যেক নাগরিক যেন সেল্ফ-কোয়ারান্টাইন করতে পারে অর্থাৎ নিজেকে সবরকম সংস্পর্শ থেকে মুক্ত রেখে নিজেকে নিজেই পরীক্ষা করে নিতে পারে যে তার মধ্যে ভাইরাস নেই।

এ সময় আমরা কি করবো? সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনকে অর্থাবহ করার জন্য আমাদেরকে কিছু শৃঙ্খলা কড়াকড়িভাবে মেনে চলতে হবেঃ
১. প্রত্যেকটি ঘরকে এমনভাবে আলাদা করে ফেলতে হবে যে ঘরের সদস্যরা কেউ বাইরে যাবে না এবং বাইরে থেকে কেউ ঘরের ভেতর আসবে না।
২. ঘরের সদস্যরাও প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলবে এবং গা ঘেঁষাঘেঁষি করবেনা।
৩. একই ঘরের ভিতর যেহেতু অনেক সদস্য এবং কার শরীরে ভাইরাস আছে তা অন্যরা জানেনা তাই ঘরে ব্যবহার্য জিনিসকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যেমনঃ দরজার নব, হ্যান্ডেল, রেলিং, অন্যান্য নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র এমনকি রিমোট, মোবাইল ফোন ইত্যাদিও।
৪. প্রত্যেকের জামাকাপড় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং ঘরের ভেতরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যাতে ভাইরাস ছাড়াও ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার মত রোগের প্রাদুর্ভাব না হয়।
৫. কোন বহিরাগত এলে তাকে ঘরের বাইরে নিরাপদ দূরত্বে রেখেই মৌখিকভাবে কাজ শেষ করতে হবে এবং বাকি কাজ ই-মেইল, মোবাইল ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে শেষ করতে হবে।
৬. কেউ কোন প্যাকেট বা কার্টুন দিতে এলে তা ঘরের বাইরে রেখে দিতে হবে, অন্তত ২৪ ঘন্টার জন্য, কারণ ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ওই ভাইরাস মৃত্যুবরণ করবে। যদি তা সম্ভব না হয়, প্যাকেটটিকে ঘরের কোণে রেখে দিতে হবে ২৪ ঘন্টার জন্য।
৭. যদি অনিবার্য কোন কারনে ঘরের কোন সদস্যকে বাইরে যেতে হয় তিনি বাইরে যাবেন হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক, সম্ভব হলে মাথায় টুপি পরিধান করে। কোথাও খুব বেশি মেলামেশা না করে বা আড্ডা না দিয়ে যথাসম্ভব দ্রুত সময়ে কাজ শেষ করে, গণপরিবহন ব্যবহার না করে, সত্ত্বর ঘরে ফিরে আসবেন। দরজার বাইরে মাস্ক এবং গ্লাভস ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন। ঘরে প্রবেশ করেই জামা কাপড় গুলো ওয়াশিং মেশিন বা কাপড় ধোয়ার স্থানে রেখে দেবেন। নিজে ভালো করে গোসল করে নেবেন, তারপর পরিবারের অন্যদের সাথে মেলামেশা করবেন।

পুরো পরিবার এইভাবে দীর্ঘদিন কর্মহীনতার মধ্যে থাকা খুব সহজ ব্যাপার নয়। তাই সময়টাকে গঠনমূলকভাবে পরিকল্পিতভাবে শৃংখলার সাথে কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। কাজটা খুব সহজ নয়! হঠাৎ করে নতুন অভ্যাস গড়ে তোলা যেমন কষ্টকর অনেকটা সেরকমই। অধিকাংশ সময় টিভি সিরিয়াল দেখে অথবা রুমের ভেতর সেলফোনে বা কম্পিউটারে খারাপ জিনিস দেখে সময় কাটানোর মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। আমরা অসহায় ভাবে বিপদজনক অবস্থার মধ্যে আছি এবং সামনে রমজান মাস আসছে। এইসব দিককে বিবেচনায় রেখে, আল্লাহর প্রতি বিণীত থেকে, আমরা সময়কে গঠনমূলকভাবে ব্যবহার করতে পারি। আমাদের পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা প্রত্যেকেই অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ। এই সুযোগে পরবর্তী প্রজন্মগুলোর সাথে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতাকে শেয়ার করতে পারি, মনোরম গল্পের ও আলোচনার মাধ্যমে।

দুর্ভাগ্যক্রমে যদি দুই/এক জনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয় তাকে কঠোরভাবে 'আইসোলেশন'এ রাখতে হবে। একটি রুমে তাকে পৃথক করে রাখতে হবে এবং তার কাছে কেউ যাবেনা। তাকে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে হবে এবং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এই রোগে খুব কম সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রাম নিতে হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ফলমূল খাওয়া ছাড়াও নিয়মিত গরগরা করা সহ গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এই ভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকলেও নিয়ম মেনে বিশ্রাম করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

উপরের নিয়মগুলো মেনে চলা খুব সহজ কাজ নয়। কিন্তু তা না করলে 'লকডাউন'- এর লক্ষ্য অর্জিত হবে না। মনে রাখতে হবেঃ একটি বেলুনের সব বাতাস বের করে দেয়ার জন্য একটি মাত্র ছিদ্রই যথেষ্ট। সুতরাং 'সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন' করতে হবে অত্যন্ত কঠোরতার সাথে, আমাদের নিজেদের এবং অন্যদের মঙ্গলের কথা বিবেচনায় রেখে।

মিরপুর, ঢাকা; রাত ২৬/০৩/২০২০

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: যখন দরিদ্র মানূষের ঘরে খাবার থাকবে তখনই লকডাউন সফল হবে।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫১

আশরাফ আল দীন বলেছেন: সেই ব্যবস্থা সরকারের মাথায় প্রথমে আসেনি। এখন যখন সাহায্যের ব্যবস্থা করেছে ওরা করছে দলবাজি!
তবু হাল ছেড়ে দেয়ার উপায় নেই।
বেসরকারী উদ্যোগে গরীবের ঘরে খাবার পৌছে দিতে হবে। কাজ থেমে নেই।

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.