নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগে আপনারা পাবেন কিছু নিম্নমানের সস্তা লেখা। তবে আমি শখে লিখিনা, না লিখলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তাই লিখি। আপনাকে আমন্ত্রণ কিছু অখাদ্য গ্রহণ করার জন্য।

আসিফ মাহমুদ আল শাহরিয়ার

আপাতত স্বল্প করে গল্প লিখি কল্পলোকের

আসিফ মাহমুদ আল শাহরিয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

অরুণিতার চিঠি

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪২

অরুণিতার চিঠি
-আসিফ মাহমুদ
প্রায় একঘন্টা হয়ে গেছে। অরুনিতার চিঠিটা এখনো টেবিলের উপর রাখা। খুলতে ভয় হচ্ছে, উত্তেজনাও কাজ করছে খানিকটা। কি লিখবে? এতদিন পর! আমার ঠিকানাই বা কি করে পেল? চিঠিটা কেমন ভেজা ভেজা। ও কি আবগের জলে সিক্ত করে আমার জন্য চিঠিটা পাঠিয়েছে? নাকি দিঘির জলে ডুব দিয়ে এসে ভেজা চুল নিয়ে লিখতে বসেছিল? চুলের পানি চুইয়ে পড়ে চিঠির কোনা ভিজে গেছে ! চিঠিতে কি ওর চুলের সুরভি মিশে আছে খানিকটা ? কাগজটাও ভীষণ মলিন, না জানি কতটা অভিমান মিশে আছে!
-
-
-নাম কি তোমার ?
-অরুণিতা।
-এর অর্থ কি?
-জানিনা। আমার বাবা রেখেছেন।
-কি করেন উনি?
-সদরে দোকান করেন।
-কি দোকান?
-বইয়ের দোকান।
গ্রামের হাটে বই কতটা বিকোয় তা নিয়ে আমি সন্দিহান। তবে লোকটা বেশ সৌখিন মনে হচ্ছে। অর্থনৈতিক অবস্থার চেয়ে সাহিত্যের কদর তার কাছে অনেক বেশি। গ্রামের অনেকেই আবার তার এসব দিক ভাল চোখে দেখেন না। পেট চালানোই এখানে ধর্ম কিনা! অরুনিতা মেয়েটা ভীষণ রকম সুন্দরি। যদিও ওর সৌন্দর্য সচেতনতা অনেক কম। অধিকাংশ মেয়েই রূপচর্চা ভালবাসে। ঘরের দরজা বন্ধ করে চুপি চুপি বউ সাজে। নিজেকে দেখে, মুগ্ধ হয় এগুলো সহজাত। চোখে কাজল দেয়া, কপালে টিপ, ঠোঁটে লিপস্টিক এগুলো মেয়েদের সাধারন সাজের অন্তর্ভূক্ত। কিন্ত অরুনিতার এসবের প্রতি বিন্দুমাত্র ও আকর্ষণ নেই। আজকে ওকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। সূর্যের আলো মুখের উপর পড়ছে, চোখদুটো খোলা-বন্ধের মাঝখানে আছে। হাত দিয়ে চোখকে সূর্যের আলো থেকে বাঁচাতে চাইছে। এ পরিস্থিতিতে সুন্দরীদের আরো বেশি সুন্দর লাগে। এবার ও আর সূর্যের মাঝখানে আমি এসে দাঁড়ালাম। এবার বেচারি বোধহয় রেহাই পেল।
-আচ্ছা আপনি কি গান গান?
-তুমি কি করে জান?
-কালকে সন্ধ্যায় আপনার দাদুদের ঘরে গিয়েছিলাম। তখন আপনি গান গাচ্ছিলেন।
-তুমি কি আমার গান শুনে নিয়েছো?
-হ্যা। কিন্তু আপনি ভাল গান না। কুমার বিশ্বজিতের গানটাকে আপনি এস আই টুটুলের মত করে গাইছিলেন।
আমি রীতিমত অবাক হলাম। মেয়েটি এতটা স্পষ্টভাষী এটা আমাকে অবাক করেনা, আমাকে অবাক করে মেয়েটির সংগীত জ্ঞান।
-তুমি গান শুনো?
-হুম শুনি।
-কোথায় শুনো?
-আমাদের টেপ এ। অনেক ক্যাসেট আছে আমাদের ঘরে।আপনি কাল যে গান টা গাইছিলেন সেটা আমি প্রায়ই শুনি, আমার খুব পছন্দের।
-আর কি কি পছন্দ তোমার? গান বাদে।
-সদরের বাতাসা। আমি যখনি সদরে যাই, বাবাকে নিয়ে গিয়ে বাতাসা কিনি।আপনি যাবেন সদরে? আমি আপনাকে ও বাতাসা খাওয়াবো।
সত্যিই বাচ্চামি ! এমন করে আমায় বাতাসা খাওয়ার লোভ দেখাচ্ছে। অথচ সেই বাচ্চামি তে আমি মুগ্ধ হচ্ছি। হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে, চোখ বড় করে আমাকে বাতাসার গুণাগুণ বিবরণ দিয়ে চলেছে অরুণিতা। আর আমি সেই বাতাসা প্রিয় মেয়েটার চোখের মায়ার সাগরে পাগলের মত এপাশ ওপাশ করছি, এবার তো তুলে নাও, ডুবে না মরি।
-দেরি হয়েছে অনেক। এখন আসি, মা খুঁজবে।
হাসিমুখে বল্লাম এসো। অথচ ইচ্ছে করছে জাপটে ধরে বলি, এখনো তো নামেনি আধার, ভয় কিসের? এখনি কেন যাবে চলে? অরুণিতা চলে গেল। আমার ও যেতে হবে। গান টা ঠিক করতে হবে। সত্যিই কারো প্রিয় গান ভুল গাওয়া অন্যায়। কাল সকালে একবার সদরে যাব, বাতাসা কিনতে।
-
-
-
-
অরুনিতাদের বাড়ি বেশ সুন্দর সাজানো। ওদের পরিবার স্বচ্ছল নয়। তাই খুব বেশি ঝাকঝমক নেই। দৌচালা টিনের ঘর, ছোট্ট উঠান, ঘরের সামনে অনেকগুলো ফুল গাছ প্রায় বাগানই বলা চলে। গাঁদা ফুলের বেশ প্রাধান্য এই বাগানে। সন্ধ্যার কারণে বেশ খানিকটা ঠাহর করতে পারছিনা।
-আপনি! এই সন্ধ্যেবেলা !
-তোমার কাছে ক্যাসেট চাইতে এলাম, তোমার প্রিয় গানের ক্যাসেট টা।
-সকালে দেখা হলে বলতে পারতেন তো।
-নাহ।
-ধূর! আপনি না....
আমার হাতটা ধরে টেনে দিঘির পাড়ে নিয়ে এল অরুনিতা। দিঘিটা ওদের বাড়ির এতটা কাছে জানতাম না। দিঘিটা ছোট নয়, বেশ বড়। দিঘির পানিগুলো স্বচ্ছ। সন্ধ্যার নিভু নিভু আলোতেও বোঝা যাচ্ছে। এখন দিঘির সৌন্দর্য ছাপিয়ে অনন্য এক সৌন্দর্য আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হালকা বাতাসে চুলগুলো উড়ছে ওর। সামান্য কিছু চুল আমার মুখটাকেও ছুঁয়ে যাচ্ছে। ঐ চুলে এক আশ্চর্য সুরভি। মুহূর্তেই মন স্থির হয়ে যায়, এই সুরভি আপন করতে চাই, এই নরম হাতের মুঠোয় বাধতে চাই নিজেকে সারাজীবনের জন্য।
-আপনি এখানে দাঁড়ান, আমি নিয়ে আসছি ক্যাসেট টা।
-অরুনিতা !
এই প্রথমবার আমি ওর হাত ধরলাম। যেতে গিয়ে থমকে গেল।
-আমি কাল ঢাকায় চলে যাব।
অরুনিতার মুখ কেমন সাদাটে হয়ে গেল হঠাৎ। মৃদু আলোতে ওর মুখের ফ্যাকাসে ভাবটা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি।
-আবার কবে আসবেন?
-জানিনা। আর আসার সম্ভাবনা নেই। দাদুকেও নিয়ে যাচ্ছি ঢাকায়। অরুনিতা ছলছল চোখে তাকাল। এই পরিস্থিতিতে আমার কি বলা উচিত? আমি কি ওকে কঠোর হয়ে কিছু বলে বিদায় হব? নাকি ওর এই আবেগপূর্ণ অবস্থাকে উসকে দিব ! আমি ওর জন্য প্রতি সপ্তাহে সব কিছু ফাঁকি দিয়ে গ্রামে আসতে রাজি আছি। কিন্তু ওর মুখ থেকে একবার শুনতে চাই 'আপনি আসবেন, আপনাকে আসতে হবে, আমার জন্য '
-আর আমার গানটা?
-ওটা থাক। আমার গাওয়া ভুল গানটা তোমার স্মৃতিতে থাকুক।
-আচ্ছা আসি। মা ডাকবে।
অরুনিতার হাটায় দ্রুততা। আমাকে খুব দ্রুত এড়িয়ে যেতে চায় বোধহয়। অন্ধকার নেমে এসেছে, বেশি দূর পর্যন্ত দেখা যায়না। কিন্তু দিঘির স্বচ্ছ পানি গুলো এখনো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ছোট্ট একটা বিরহের তরংগ এপার থেকে ওপারে বয়ে গেল।
-
-
-
-
-
-এটা কি?
-দেখে নিয়েন গিয়ে।
কাগজে মোড়ানো কিছু একটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অরুনিতা। ওকে বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। হাসি হাসি মুখ।
-কাল বিকেলে সদর থেকে এনেছিলাম।
ব্যাগ থেকে পেপারে মুড়িয়ে রাখা বাতাসা গুলো ওর হাতে দিলাম। কিছুই বলল না, মুচকি হাসল। ঐ হাসিতে আপন আপন ভাব। 'আপনি আবার আসবেন তো? আমার জন্যে' কানের মধ্যে এই কথাটা বাজছে কেন জানি। তবে কি ও আমাকে মনে মনে এ কথাই বলতে চাইছে? আমরা গাড়িতে উঠে গেলাম। গাড়ি পেরিয়ে এল অনেকটা দূর। একটা মেয়ে তখনো দাড়িয়ে আছে। হাতে কাগজে মোড়া বাতাসা, মুখে হাসি হাসি ভাব।
-
-
কিন্তু চিঠির মধ্যে ওই হাসি হাসি ভাবটা নেই। থাকারও কথা না। গ্রাম থেকে ফেরার পর এক বছর পেরিয়ে গেছে। আর একদিনের জন্য ও গ্রামে যাওয়া হয়নি। অরুনিতার কাগজে মুড়িয়ে দেয়া ক্যাসেট টা রোজ শুনি, ভুল করে গাই ওর প্রিয় গান টা। ঢাকা শহরের গলিগুলো ঘুরে ঘুরে বাতাসা খুঁজে আনি। কিছু বাতাসা এখনো পড়ে আছে টেবিলের উপরে, তার পাশে চিঠিটা। চিঠিতে বেশি কিছু লেখা নেই। ছোট্ট কয়েকটা লাইন,
"কাল আমার বিয়ে, আপনি আসবেন তো? আপনাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। আসার সময় সদর থেকে বাতাসা আনবেন। আপনার দিয়ে যাওয়া বাতাসা গুলো চিড়ে পড়া বাতাসা। ভাল দেখে কিনবেন এবার। "
তারিখটা দেখলাম, তিনদিন পুরোনো। ঘড়ির দিকে তাকালাম। ঘড়িটা উল্টো ঘুরছে। সাউন্ডবক্সে কুমার বিশ্বজিতের গানটা বাজছে। কুমার বিশ্বজিৎ এস আই টুটুলের মত করে গাইছে।
-সমাপ্ত-

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.