![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আপাতত স্বল্প করে গল্প লিখি কল্পলোকের
কিছুদিন হল বাবা ফেসবুক আইডি খুলেছেন। অফিস থেকে নাকি তাগাদা আছে ফেসবুক আইডি খোলার জন্য। খুলে দিতে হল আমাকেই। আইডি খোলার দিনই আমি দ্রুতবেগে গিয়ে নিজের আইডি থেকে বাবার আইডি ব্লক করে দিই। এদিকে বাবা ফেসবুক আইডি খোলার পর থেকে আমাকে কলুর বলদের মত খাটাচ্ছেন। হোম পেজ ঘুরতে গিয়ে যখন কারো ছবি চলে আসে তখন তিনি তাড়াতাড়ি ডেকে আমাকে বলেন, “দেখতো, ATO সাহেব আমাকে উনার বউয়ের ছবি কেন পাঠিয়েছেন?”
-বাবা, উনি আপনাকে ছবি পাঠাননি, এটা উনি উনার প্রোফাইলে দিয়েছেন।
-তাহলে আমি আমার প্রোফাইলে যা যা দিয়েছি সেগুলো সবাই দেখবে?
-হ্যাঁ। কেন? কি দিয়েছেন আপনি?
-আমার আইডি কার্ড, নিবন্ধন, ব্যাংক একাউন্ট নম্বর, কোড সব ওখানে লিখে রাখছি যেন ভুলে না যাই।
বাবার এমন কাণ্ড দেখে আমি হাসব কি কাঁদব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আর এদিকে বাবা পুনরায় এরকম কোন কিছু না করে ফেলেন তার সতর্কতাস্বরুপ বাবাকে আনব্লক করে রাখলাম। এদিকে আনব্লক করার দুঘণ্টার মাথায়ই বাবা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিলেন। রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করা ছাড়া উপায় ছিল না। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েই ক্ষান্ত হলেন না, আমার টাইমলাইনে বাবা তার তোলা সেলফি পোস্ট করলেন সাথে টাইটেল “Asif It’s me” সেই ছবিতে পাঁচশত রিয়েক্ট পড়ল যার মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশ হাহা রিয়েক্ট। বাবা নিজেও নিজের ছবিতে লাইক দিয়েছেন। আর এদিকে বাবা আমার সব বন্ধুকে রিকোয়েস্ট পাঠাতে লাগলেন। আমার বন্ধু মহলের সবচেয়ে শয়তান বন্ধু হচ্ছে নিয়ন। বাবার সাথে ফ্রেন্ড হবার পর থেকে তার রোজকার দায়িত্ব হচ্ছে ফোন করে আমাকে বাবার পোস্টের আপডেট দেয়া। নিয়নের ফোন আসলেই বুঝে যাই, বাবা নতুন কোন পোস্ট দিয়েছেন।
-আঙ্কেল আজকে ইসলামের প্রথম মসজিদের ছবি শেয়ার করেছেন, দেখেছিস?
-তুই আমাকে আর কোন কাজে ফোন করতে পারিস না ভাই?
-আরে মজার কথা শোন। কাল আংকেল এক গ্রুপে আমিন না লিখে যাবেননা পোস্টে কমেন্ট ও করেছেন।
-রাখলাম। বাই।
এসব শুনতে শুনতে তিক্ত হয়ে গেছি। বাবা বিশেষ বিশেষ অদ্ভুত ধরণের পোস্ট শেয়ার করেন। সেদিন দেখলাম এক্টর রুবেল নামক ট্রল পেজটার একটা পোস্ট শেয়ার করেছেন। বহু কষ্টে উদ্ধার করলাম লিখাটা শেয়ার করার কারণ, পোস্টের নিচে লিখা আছে “শেয়ার বাটনে ক্লিক করেই দেখুন ম্যাজিক!” এতেই প্রলভিত হয়ে বাবা পোস্ট শেয়ার করে ফেলেছেন। কিন্তু শেয়ারের পর ম্যাজিক না দেখে নিশ্চই খুব হতাশ হয়েছিলেন।
সেদিন বাবা পোস্ট করলেন, “Hi friends, How are u?” পোস্টে বারটি লাইক পড়ল। কেউ কমেন্ট করল না। কয়েক ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর বাবা নিজেই নিজের পোস্টে কমেন্ট করলেন, “No comments friends?” সে কমেন্টে নিয়ন লাইক দিলো। বাবা নিজেই নিজের কমেন্টেই রিপ্লে দিলেন, “Hi Nion! I heard your father was suffering from serious constipation. How is he now?” বাবার এই রিপ্লে তে আমি লাভ রিয়েক্ট দিলাম। সেদিনের পর থেকে নিয়ন বেচারা আমাকে আর কোনদিন বাবার পোস্টের আপডেট দেয়নি।
বাবা ফেসবুক নিয়ে মেতেছেন, এতে আমার কোন সমস্যা ছিলনা। কিন্তু সমস্যা শুরু হল অন্য জায়গায়। বাবা এখন অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ও আমাকে ফোন করে না বলে ফেসবুকে বলেন। এটিও সমস্যা হত না যদিনা বাবা আমাকে মেসেজ না দিয়ে টাইমলাইনে পোস্ট করতেন। বাবা আমাকে বাজারে পাঠালেন সেদিন। বাজার করে আসার পথে ফেসবুকে ঢুকে দেখি দশ মিনিট আগে বাবা আমার টাইমলাইনে পোস্ট দিয়েছেন, “টমেটো এক কেজি নিয়ে আসিস। মাছ আনার দরকার নেই, নাহয় পরশু দিনের মত পঁচা মাছ নিয়ে আসবি”। এ পোস্টে হাহা রিয়েক্ট পড়ল দু’শ। যথারীতি এবারো বাবা নিজের পোস্টে লাইক দিয়েছেন।
বাবার ফেসবুকীয় অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। বাবা প্রতিদিন মুসলমান হলে শেয়ার করুন পোস্টে টাইমলাইন ভরিয়ে ফেলছেন, বন্ধুদের পোস্টে কমেন্ট করে হালচাল জিজ্ঞেস করছেন, আমার টাইমলাইনে “মেট্রিল একটা খেয়ে দেখ। পায়খানা বন্ধ হয়ে গেলে আর খাওয়ার দরকার নেই” লিখে পোস্ট করেছেন। এসব সহ্য করতে করতে অসহ্য হয়ে বাবাকে নিয়ে একদিন বসলাম। বসে ফেসবুকের যাবতীয় জিনিস বুঝিয়ে দিলাম, ফিচার গুলো শিখিয়ে দিলাম। বাবা বেশ মনোযোগ সহকারে শিখেছেন। আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম, যাক এবার অন্তত শান্তি!
একদিন বাবা মায়ের ভীষণ ঝগড়া হল। বাবা মন খারাপ করে ফোন হাতে নিয়ে বসে আছেন। আমি কৌতুহল বশত ফেসবুকে ঢুকলাম। ঢুকেই আমার চোখ ছানাবড়া। বাবা স্ট্যাটাস দিয়েছেন, “রিলেশনশীপ স্ট্যাটাসঃ It’s complicated”
#রম্যগল্প
#ফেসবুকে_বাবা
©somewhere in net ltd.