নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকাল রাজনৈতিক সমাবেশগুলিতে দেখি প্রচুর জনসমাগম। জাতীয় পার্টির মিছিলে দেখলাম প্রচুর মানুষ। বিএনপির সমাবেশ দেখলাম লাখে লাখে মানুষ। আওয়ামিলীগের সমাবেশে তাই। জামাআতে ইসলামীর সমাবেশ, তাতেও লোকের কমতি নেই। বামদের সমাবেশে যাবেন, কোন কমতি দেখবেন না। এই সব সমাবেশের নেতৃবৃন্দরা দাবী করেন তাদের গৃহিত সিদ্ধান্ত জনতা সমর্থন করে। শুধু তাই নয়, তারা বলে থাকেন এগুলো তাদের সিদ্ধান্ত নয়, এগুলো জনতারই সিদ্ধান্ত, জনতা এইগুলি চায়। ওদিকে যারা ক্ষমতাশীন দল, তারা দাবী করেন জনতা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সমর্থন দিয়ে তাদের ক্ষমতায় পাঠিয়েছে, সুতরাং জনতার এই দাবী বাস্তবায়ন করা তাদের কর্তব্য। জনতার নামে চলেও তা। অপরদিকে জনতার দাবী বাস্তবায়ন করতে গেলে বিরোধীদলও হরতাল, ভাংচুর, মিছিল মিটিং করে। দাবী, এটাও জনতা চায়। আমরা দেখতেও পাই যে, কথা মিথ্যা নয়। তাদের এই কার্যক্রমে যারা অংশ নেয় তাদের সংখ্যাও কম নয়। সুতরাং যেহেতু জনগণ এটা চায়, সেহেতু এটাও চলছে জনতার নামে।
এইভাবে জনতা যে কতকিছু চাইছে তার কোন হিসাব নিকাশ রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। জনতার নামে এই দাবী দাওয়ার কথা শুনতে শুনতে অস্থির হয়ে পড়ছি। কত মতের কত পথের যে জনতা আছে তা বোঝাও ভারি কঠিন হয়ে পড়েছে। জনতার সিদ্ধান্ত এই অপরাধের বিচার করতে হবে, সেই অপরাধের বিচার করতে হবে। যেহেতু সরকার তাদের নির্বাচনের ইশতেহারে অমুক তমুক অপরাধের বিচার করার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলো এবং তার উপর ভিত্তি করে জনতা তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছে, সুতরাং জনতার সাথে ওয়াদার খেলাপ করা যাবে না, সেহেতু জনতার দাবী মেনে নিয়ে শুরু হলো বিচার কাজ। জনতার দাবীকে বাস্তবায়ন করার জন্য আইন হলো, আদালত বসলো, বিচার হলো। এবার রায় পেয়ে জনতা খুশি নয়। এই জনতাই আবার লাখে লাখে জমায়েত হয়ে দাবী করলো এই রায় মানি না। আবার যাদের বিচার করা হলো তারাও লাখে লাখে সংখ্যার জনতা বলছে তারা বিচারের কিছুই মানে না। এখন আমার প্রশ্ন হলো আসলে জনগণ চায় কি? যারা যা-ই চায় তাদের সংখ্যাও তো কম নয়। দীর্ঘদিন যাবত চলা সমাবেশে লোকের কোন কমতি নাই। আর মাশাআল্লাহ, আমাদের দেশের মিডিয়ার কল্যাণে তাদের পরিমাণ যে কম নয় তার প্রমাইও পাচ্ছি প্রতিনিয়ত। হাজার হাজার সাংবাদিক, মিডিয়া জগতের কর্মী, ক্যামেরা ক্রু, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মীদের আনাগোনা যথার্থভাবেই প্রমাণ করে যে এই রায় সঙ্গত নয়। প্রযুক্তির কল্যাণে লাইভ দেখতে পাচ্ছি ঘরে বসে বসে। যেহেতু জনতা যা চায়, তা করতেও হবে। জনতার নামে সংসদে গিয়ে আইন পাল্টাও। জনতা হচ্ছে সকল ক্ষমতার উৎস। যদি তাই হয় তবে আইনেরই বা দরকার কি, আর বিচারেরই বা দরকার কি আর বিচারকেরই বা কি দরকার? জনতা যা সঠিক মনে করে তাই করে ফেলা উচিৎ। ন্যায় কি, অন্যায় কি, কোনটা সঠিক, কোনটা বেঠিক তা নির্ধারণ করার প্রয়োজন কি? বিধান তৈরীর দরকারই বা কি? ন্যায় অন্যায়ের মানদণ্ড যদি কেউ ঠিক করেও দেয়, জনতার নামে দেখা যাবে কয়েকদিন পর এসে অন্য জনতা বলবে আমরা তা মানি না। সুতরাং কে তাদের ঠিক করে দেবে ন্যায়-অন্যায়, ঠিক-বেঠিকের মানদণ্ড? ন্যায় অন্যায় নির্ধারণ করার ভিত্তি কি? তাদের জন্য কোন চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ আছে কি? বহুমতের জনতা আছে। আগেই বলেছি আওয়ামী জনতা, বিএনপি জনতা, জাতীয় পার্টির জনতা, জামায়াতের জনতা, কারোর সংখ্যাই কম নয়। সরকারী দল ক্ষমতায় যায় কত শতাংশের রায় নিয়ে? বাকীরাও কিন্তু তাদের তুলনায় সংখ্যার দিক দিয়ে অনেক বেশী এগিয়ে থাকে। তারাও কিন্তু জনতা। এইযে এতো রকম জনতা, এত মতের জনতা, এত রকম চাহিদা, এর ফাঁকে পড়ে আজ আমাদের সমাজ, সভ্যতা, আইন, বিচার, বিচারক সবাই প্রশ্নের সম্মুখীন। জাতি আজ এক ভয়ানক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ইতিহাসে এর আগে সম্ভবতঃ এতো বিশৃঙ্খলা আর কখনো দেখা যায় নি।
মত ও পথের কোন অভাব নেই। সমর্থকেরও অভাব নেই। বিচারক যদি জনগণের মতের ভিত্তিতে বিচার করেন তাহলে তার দরকার থাকে না। আইন রচনা করতে জনগণের প্রতিনিধিরা অহেতুক সংসদে হাজির হয়ে কেন সময় নষ্ট করবেন? কেন জনতার টাকায় এই সব কাজ করে বেহুদা টাকার অপচয় করা? জনগণ যা উচিত মনে করে তাই করে ফেলুক। খামোখা বিচারের দরকার কি? যেহেতু বিচার করলেও জনতা তা মানছে না।
অপরাধীকে ধরে প্রায় ‘জনতা’ গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলে, মাত্র কিছুদিন আগে এক প্রতিবন্ধী মেয়েকেও মারা হল ঠিক যেভাবে পাগলা কুকুর মারা হয়। সেই নির্মম দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করল জনতা, জাতীয় পত্রিকায় ছবি এলো সেই মেয়েটির। এমন হয় প্রায়ই, কিন্তু কোন মামলা হল না, বিচার হয় না। কার বিচার হবে? জনতা করেছে, সুতরাং তা জায়েজ। ফ্রান্সের জনগণ রায় দিয়েছে সমকামীতা জায়েজ। আইন পাস হয়ে গেছে, সমকামীতা সেখানে বৈধ। এই যে জনতার নামে সব কিছু চলছে, জায়েজ হয়ে যাচ্ছে- এর পরিণতি কি? এর পরিণতি হচ্ছে মানবজাতির মধ্যে বিরাজ করা অন্যায়, অশান্তি, হাহাকার আর নৈরাজ্য, যা দিন দিন চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলছে। কোন ধরণের স্থায়ী সিদ্ধান্তের মালিক নেই। জনতা যা চাইছে তাই হচ্ছে। এ এক চরম অরাজকতা।
মুক্তির পথ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কার মত বাদ দিয়ে আপনি কার মত রাখবেন, তা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কোন অবসান নেই। কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায় তা নির্ধারণ করার বা চূড়ান্ত রায় দেয়ার নির্ধারিত কোন কর্তৃপক্ষ বলতে কেউ নাই। এই রকম কর্তৃপক্ষবিহীন অবস্থায় দেশ ও সমাজ আজ চূড়ান্ত হুমকির মুখে। জাতি আজ ধ্বংসের দোড়গোড়ায়। শেষ পর্যন্ত বলা যায় এটাও চলছে জনতার নামে।
গুরুজনদের কাছ থেকে শুনতাম যেটা ন্যায়, সেটা ন্যায়ই। সারা দুনিয়ার মানুষ এর বিরুদ্ধে গেলেও সেটা ন্যায়। আবার যেটা অন্যায় বা অনৈতিক, সারা দুনিয়ার মানুষ এর পক্ষে থাকলেও সেটা অন্যায় বা অনৈতিকই। কিন্তু এটাতো শাশ্বত বাণী বা শাস্ত্রের কথা। রাজা বাদশাহরাও যদি কখনো শাস্ত্রকে লঙ্ঘন করতেন প্রজারা তার বিদ্রোহ করে তাকে হত্যা করতো। প্রশ্ন হলো আজকের যুগে শাস্ত্রের কথা শুনে কে? এখন জনতাই সব, জনতাই জনতার এলাহ, জনতাই নিজের প্রভু। জনতা যদি বলে এখন থেকে সব হোটেল রেস্তোরায় গোবর পরিবেশন করতে হবে, তাহলে দেখছি তাই করতে হবে। কারণ, দেখতে পাচ্ছি যেখানে স্রষ্টা বিধান দিয়েছেন নারীপুরুষ তার জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিপরীত লিঙ্গকে বিয়ে করবে, সেখানে জনতা তা না করে সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ের দাবী তুলেেেছ। আর সরকারগুলো তার অনুমোদনও দিচ্ছে। জনতা যা চাইছে তা করছে। কারণ জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। তা না করেও উপায় নেই। ভালো কি মন্দ, কল্যাণ কি অকল্যাণ, রুচিশীল না অরুচিকর, সভ্যতা না অসভ্যতা তা নির্ধারণ করছে নিজেদের জন্য তারা নিজেরাই। তাদের উপর সর্বময় কর্তা কেউ নাই, কেউ একবার বলছে না যে জনতা তো এটা চায়, কিন্তু যিনি মানবজাতির স্রষ্টা, সবকিছুর স্রষ্টা তিনি কোনটা চান? আমি তাই এই অবস্থা দেখে আশঙ্কিত, আতঙ্কিত। বহু মতবাদে বিভক্ত জনতার এই সর্বময় প্রভু হয়ে যাওয়ার ভয়াবহ বিষময় ফল যখন বের হবে তখন বোঝা যাবে এর ‘ঠ্যালা’। কারণ যে বীজ আপনি আজ রোপন করছেন, কয়েকদিন পর তার ফল আপনাকেই ভোগ করতে হবে। আর এই ফলই হচ্ছে চূড়ান্ত পরিণতি।
২| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০০
উড়োজাহাজ বলেছেন: হেঃ হেঃ বুইজ্জা ফালায়ছেন?
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৫
বিজয় বেষ্ট বলেছেন: ভাই তারা সবায় বাংলাদেশের জনসংখ্যার ফায়দা লুতটাছে।