নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের শাসকরা আমাদের বলে থাকেন আমাদের দেশ ও সভ্যতার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। যদি তাদের প্রশ্ন করা হয় কোন দিক দিয়ে উন্নতি হয়েছে, তবে তারা বলে থাকেন এই যেমন ধরুন আগে আমাদের দেশের রাস্তাঘাটগুলো এত উন্নত ছিলো না, মানুষ পায়ে হেটে চলাচল করতেন, আজকের একদিনের পথ পাড়ি দিতে বহুদিন পার হয়ে যেত, রাস্তাঘাটের অবকাঠামোগত অনুন্নয়নের কারণে তাদেরকে কষ্ট করতে হতো, এতো ব্রীজ কালভার্ট ছিলো না, নদী নালা থাকার কারণে চলাচল বিঘিœত হতো, মানুষ পড়া লেখা করার জন্য দূর দূরান্তের পথ অতিক্রম করতো, কিন্তু আজকের দিনে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় কাছাকাছি সব জায়গায় থাকার কারণে তাদের এই বিঘœতা পোহাতে হচ্ছে না। শহর বন্দর দূর দূরান্তে থাকার দরুণ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ক্রয় বিক্রয় করতে যাওয়া ছিলো কষ্টকর। অথচ আজ সভ্যতার উন্নতির কারণে হাট বাজার দোকানপাট হাতের নাগালে। ভালোমানের বাসগৃহ, ঘরবাড়ি না থাকায় মানুষ রোদ, বৃষ্টি, ঝড়- ঝঞ্জার কারণে সীমাহীন কষ্ট করতো। কাঁচা, আধা কাঁচা ঘরবাড়ির পরিবর্তে বড় বড় প্রাসাদোপম ইমারত নির্মাণ করে মানুষ আজ আরাম আয়েশের ভেতর দিয়ে জীবন যাপন করতে পারছে। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে তাদের চলাচল আরামদায়ক করতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি ব্যবহার করতে পারছে। আগে যেখানে দূর দূরান্তের পথ অতিক্রম করতে বহু সময়ের প্রয়োজন হতো, সময়ের ব্যবধানে আজ হাওয়াই জাহাজে করে অল্প সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করা যায় । তাদের এই কথা না হয় মানলাম। না মেনে উপায়ও নেই, অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু আপনার দাদা যদি আজকে বেঁচে থাকেন, তাহলে তিনি নিশ্চয় বৃটিশ শাষন দেখেছেন এবং আপনার বাবাও হয়তো পাকিস্তান আমলের শাসন দেখেছেন, আর আপনিও যদি আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে বাংলাদেশের অবস্থা দেখে থাকেন তাহলে নিচের কয়েকটা বিষয় খেয়াল করে দেখনু তো :
ক) চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, খন, গুম, দূর্নীতি ইত্যাদি আগের তুলনায় ক্রমাগত কমেছে না বেড়েছে?
খ) সরকারগুলির উপর তাদের জনসাধারণের ভালোবাসা, আস্থা, বিশ্বাস কমেছে না বেড়েছে?
গ) আপনার দৈনন্দিক জীবনে পরিচালনা করার জন্য আগের চেয়ে আপনাকে কম থাকতে হয় বেশী অস্থির বা টেনশনে থাকতে হয় না কি?
ঘ) ভেজাল মিশ্রিত, দূষিত, বিষাক্ত খাদ্য এবং পুষ্টিহীন খাবার পূর্বের চাইতে কম খেতে হয় নাকি বেশী খেতে হয় নাকি?
ঙ) রোগ শোক, মানসিক চাপ, কষ্ট, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, আতংক ইত্যাদি আগের চাইতে কি কম পোহাতে হয় বেশী পোহাতে হয়?
চ) মানুষ মানুষের জন্য দয়া, মায়া-মমতা, সহযোগিতা, সহমর্মীতা, সাহায্য-সহানুভূতি বেশী না কম? যদি কম হয় তাহলে কতটুকু কম?
ছ) ছোট বড়, ছাত্র শিক্ষক, পিতা মাতা, সন্তান, মালিক কর্মচারী এদের মধ্যে পারস্পরিক ভক্তি, শ্রদ্ধা, বিনয়, নম্রতা, আনুগত্য ইত্যাদি বেড়েছে না কমেছে?
জ) পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশৃঙ্খলা দূনীতি ঘুষ, অন্যায় ষড়যন্ত্র, চালবাজী, প্রতারণা, কূটকৌশল ইত্যাদি কমেছে না বেড়েছে?
ঝ) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিজেদের ভেতর অসন্তোষ কমেছে না বেড়েছে?
ঞ) প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন বন্যা, খরা, ঘুর্ণিঝড়, নিুচাপ, সুনামী, ভুমিকম্প ইত্যাদি আগের চেয়ে কমেছে না বেড়েছে?
ট) আমাদের দেশের বৈদেশিক ঋণ আগের তুলনায় কমেছে না বেড়েছে? বাড়লে কি পরিমাণ বেড়েছে?
ঠ) পারিবারিক বন্ধন আমাদের মধ্যে আগের চেয়ে বেড়েছে না কমেছে?
ড) রাস্তাঘাটে সড়ক দূর্ঘটনা তুলনামুলকভাবে কমেছে না বেড়েছে?
আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে কোন পরিসংখ্যান দেখলে প্রমাণ হবে উপরের সবগুলি দফায় মানুষের অধগতি সর্বনিু পর্যায়ে। যদি তাই হয় তাহলে আমাদের আরাম আয়েশ, ভোগ বিলাস, সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পেয়ে লাভ কি হলো? মানুষ হিসাবে আমাদের অর্জনটা কতটুকু এটা আজ আমাদের বড় এক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের এই দেহ সর্বস্ব, ভোগবাদী, বস্তুবাদী, স্রষ্টাহীন সভ্যতা মানবজাতিকে সবদিক দিয়ে হীনতার চূড়ান্ত পর্যায়ে, এক কথায় পশুতে পরিণত করেছে। এখন শুধু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পালা। এ থেকে বাঁচার উপায় কি?
©somewhere in net ltd.