নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আরেকটি মে দিবস পালিত- অর্জন কতটুকু?

০১ লা মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৩



সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় আজ পালিত হলো মে দিবস। তবে এবারের মে দিবস তথা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ছিলো শ্রমিকদের দ্রোহ আর শোকে ভরা। একদিকে সাভারে ৪শ’য়ের বেশী শ্রমিকের মৃত্যুর দগদগে ক্ষত আর অন্যদিকে নিরাপদ কর্মস্থলের দাবীতে রাজপথে জোর আওয়াজ। অনেক অনেক দাবীতে আজ রাজধানী ঢাকার রাজপথ কাঁপিয়েছে শ্রমিকের এই উচ্চ কণ্ঠ। শুধু রাজধানী শহর ঢাকাই নয়, সারা দেশেই উচ্চারিত হয়েছে শ্রমিকদের এই দাবী। একদিকে চলেছে বিদ্রোহী পদযাত্রা, অন্যদিকে ভাঙ্গা কংক্রিট, ইট-বালুর স্তুপ ঘেটে শ্রমিকের লাশের সন্ধান। বছর ঘুরে এমনি করে আসে মে দিবস- আর মর্যাদা আদায়ের জন্য হয় প্রাণপন চেষ্টা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কি মুক্তি মিলে তাদের? মর্যাদা কি পায় যারা শাবল, হাতুড়ি পেটানো মানুষ, যারা ভাঙছেন-গড়ছেন, বানাচ্ছেন আকাশ ছোঁয়া ভবন, সুরম্য অট্টালিকা, যারা সূঁই-সূতায় ফোঁড় তুলে গড়ছেন মানুষের পরিচ্ছদ, ভোরের আলো ফোটা আগে যাদের হাঁকডাক কিংবা চায়ের কাপ ধোয়ার শব্দে ঘুম ভাঙ্গে নগর সভ্যতার ধারক, বাহকদের? সত্যিকার সম্মান কি পায় সেই কৃষক যে ভোরের আযানের সময় লাঙ্গল গরু নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মাঠে? মধ্যদুপুরে যিনি সূর্য্যের দাপটকেও পরাজিত করে অব্যাহত রাখেন তার কাজের ধারা? যিনি মানুষের আহার যোগান অটল অধ্যবসায়ে? না, মে দিবসের ইতিহাস ১২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও প্রতিষ্ঠিত হয় নি তাদের প্রকৃত দাবী দাওয়া। আমরা দিতে পারিনি তাদের সঠিক প্রাপ্য। মে দিবসের সেদিনকার দাবী ৮ঘন্টা কর্মদিবস হলেও আমাদের কৃষক ঘড়ি দেখে কাজ করেন না। সব মানুষের খাবার যোগাতে তারা দিনে রাতে পরিশ্রম করেন। তাই সেই ফসলের দিকেই তার আকর্ষণ, ফসলের সাথেই তার প্রেম। যখন সোনালী ধানের ভারে শীষগুলো নুয়ে পড়ে, বাতাসে দোল খায়- সে সময়ে তাজমহল বানানো সম্রাট শাহজাহান যতটা না তার স্ত্রী মমতাজকে ভালোবাসতো- সে ভালোবাসাও ছাড়িয়ে যায় সেই কৃষকের। কিন্তু সেই কৃষককে ঠকাতে আমাদের একটুও বিবেকে বাধে না। সঠিক মুল্য না পেয়ে, ফড়িয়া-দালাল আর সরকারী অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে- আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিয়ে মুষড়ে পড়ে সেই কৃষকের হৃদয়। কিন্তু সত্যিকার প্রেমিক যেমন কোন কিছুতে হার মানে না, তেমনি কৃষক ভোলেন না ফসলের প্রেম। আবার গাই গরু বিক্রি করে রচনা করেন তার মাঠ কাব্য। কি মূল্য দেই তার, কতটুকু মূল্য পায় তারা আমাদের মত শহুরে বাবুদের কাছ থেকে? আমরা চাই শিল্প-কারখানা। আমরা চাই সুরম্য প্রাসাদ। চাই কায়িক শ্রমহীন আয়েশী জীবিকা। কিন্তু যাদের শ্রমে তা অর্জিত হয় তাদের কোন সম্মান আমরা দিতে পারি নি আজও। যখন দিবস আসে তখন সভা- সমাবেশে- শোভাযাত্রায় কোন ঘাটতি হয় না। টিভি ক্যামেরা, পত্রিকার পাতা জুড়ে সাময়িকীও বের হয় ভুরি ভুরি। লোক দেখানো অনেক অনুষ্ঠানমালাও হয়। ক্যামেরার সামনে ফটোশ্যুট কোলাকুলিও হয় মালিক আর শ্রমিকে। কিন্তু আর সারাটি বছর পার হয় মালিক-শ্রমিকের ঠেলাঠেলিতে, কর্মবিরতি, লকআউট, ধর্মঘট ইত্যাদির মধ্য দিয়ে। আজও বিশাল জমায়েত হয় সারা বিশ্বে সরকারের ব্যয় সঙ্কোচনের জন্য শ্রমিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদে। মুহুর্মুহু শ্লোগান, মিছিলে প্রকম্পিত হয় আকাশ বাতাস। অপরদিকে যাদের ঘামে ঘোরে কলের চাকা, যাদের ঘামে গড়ে উঠে বিশাল প্রাসাদ, যাদের ঘামে ঝলমল করে সুন্দর নগরী- যাদের তৈরী পোশাকে সজ্জিত হয়ে শাসকেরা বসেন ক্ষমতার চূড়ান্ত আসনে- তাদেরই অনুগত বাহিনীর জলকামানের ছোড়া গরম পানিতে ভেসে যায় শ্রমিকের সকল দাবী দাওয়া। শ্রমিকেরা কাজ না করে যাবে কোথায়? রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের এমন শিকলে জর্জরিত করেছে যে উদরের চিন্তা করতে করতে তাদের দিন পার। তাই তারা বাধ্য ক্রীতদাস যুগের সেই শোষণনীতিকে মেনে নিতে। তারা আজও স্বেচ্ছায় কল কারখানায় কাজ করে ৮ ঘন্টার বদলে ১৫ থেকে ১৮ ঘন্টা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করে ফায়দা লুটে ঠকবাজ শ্রমিক নেতা আর রাজনৈতিক ধান্ধাবাজরা। মৃত্যু মিছিল বাড়ে শ্রমিকের লাশে। মালিকেরা আইন আদালত ম্যানেজ করে ছিড়ে বেড়িয়ে যান আইনের জাল। বিভিন্ন মতবাদের কর্মীরা বুলি ছোড়ে রাজনৈতিক মঞ্চে। জনসমাগম দেখানোর জন্য ভাড়া করে আনা হয় কিছু লোক সাময়িক সময়ের জন্য। তাই প্রতারণার এই যুগে আজও অধরা শ্রমিকের প্রকৃত দাবী। আজও অধরা শ্রমিকের মুক্তি- শ্রমের মূল্যায়ন। এমনি অবস্থায় পার হলো আরও একটি মে দিবস। প্রতিটি রাষ্ট্রযন্ত্র যদি সত্যিকার অর্থে শ্রমিক ও শ্রমের মূল্যায়নে এগিয়ে আসে তাহলেই স্বার্থকতা পেতে পারে মে দিবসের দাবী। আর তাদের সঠিক মূল্যায়নের মধ্য দিয়েই হতে পারে সভ্যতার বৈধতা।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.