নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুপ্রিয় পাঠক পাঠিকা! শিরোনামটি দেখিয়া কিছুটা চটুল চটুল কিংবা ছেলে মানুষি মনে হইলেও দাবিখানা একটু মনোযোগ দিয়া পর্যালোচনা করিয়া দেখুন তো। আমাদের দেশে বিগত কয়েক মাস যাবত শুরু হইয়াছে ‘ফাঁসি চাই’ ‘ফাঁসি চাই’ নামক কালচার। কোন কিছু ঘটিলে, কোন অনাচার হইলেই গগণবিদারী আওয়াজ আসিতেছে অমুকের ফাঁসি চাই, তমুকের ফাঁসি চাই। তবে এই কালচারটা বেগবান হইয়াছে শাহবাগ আন্দোলনের পর হইতে। কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ না হইয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষিত হইলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী কতিপয় স্বঘোষিত সুশীল গান গাহিয়া, ঢোল বাজাইয়া রাস্তা অবরোধ করিয়া বসিল। শাহবাগের রাজপথে বড়সড় একটা মঞ্চ বানাইয়া, জনগণের পথরোধ করিয়া উচ্চরবে উচ্চারণ করিতে লাগিলো “কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই।” কতিপয় মিডিয়ার কল্যাণে ‘ফাঁসি চাই’, ‘ফাঁসি চাই’ রব এতটাই প্রচার প্রচারণা পাইয়া বসিল যে- যে কোলের শিশু ভালো করিয়া কথা বলিতে শিখিতে পারে নাই, পানিকে বলিয়া থাকে ‘মানি’, ছাগলকে বলিয়া থাকে ‘থাগল’, সেই শিশুও বলিতে লাগিলো, “কাদেল মোল্লাল ফাঁতি তাই।”
সুতরাং সংসদে ভোটাভুটি করিয়া নতুন করিয়া আপিল করার আইন পাশ করা হইলো। তবে জাগরণ মঞ্চ যেই কালচার বাহির করিলো তাহা হইতে উহারা অদ্যাবধি বাহির হইতে পারিতেছে না। ইতোমধ্যে আরেকদল নামিলেন শাহাবাগী নাস্তিকবৃন্দের ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই, হঠাৎ ক্যামেরার লেন্স ঘুরিয়া গেল সাভারের দিকে। সাভারে রানা প্লাজা ধসিয়া পড়িল- সাড়ে চারশো শ্রমিক উহাতে চাপা পড়িয়া মারা পড়িল- তিনহাজার লোক আহত হইল, নিখোঁজ রহিয়াছে আরো সহস্রাধিক। এই হত্যাযজ্ঞের দায় পড়িল রানার উপর। সুতরাং স্বভাবসুলভ আওয়াজ উঠিলো ‘সোহেল রানার ফাঁসি চাই।’ জাগরণ মঞ্চ ইদানিং প্রমত্তা নদী হইতে মরা খালের রূপ নিয়া থাকিলেও তাহার যৌবনকালে অনেককেই ফাঁসির ম্যানিলা রোপে ঝুলাইবার দাবী তুলিয়াছে। উক্ত মঞ্চ হইতে রাজাকারদের দোসর আখ্যা দিয়া বিএনপিসহ আঠারো দলেরও চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করা হইয়াছে। তাহাদের উন্মত্ত স্রোতে যখন আবার ভাটা পড়িলো, হেফাজতের উত্থান ঘটিলো, তখন হেফাজত পাল্টা রসুলাল্লাহকে ব্যঙ্গকারী প্রজন্ম চত্তরের নেতৃত্বদানকারী ‘অনলাইল এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম’র নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি চাহিয়া বসিল। অপরদিকে অধুনালুপ্ত আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক যখন তাহার পত্রিকায় ব্লগারদের কূকীর্তি ছাপিয়া তুলিয়া দীর্ঘ প্রবন্ধের অবতারণা করিয়া দেশের আপামর জনতাকে ক্ষেপাইয়া তুলিলেন, গণজাগরণের পিছনে ‘নাস্তিক’ ট্যাগ যুক্ত করিয়া দিলেন- তখন সেই মঞ্চ থেকে মাহমুদুর রহমানেরও ফাঁসি দাবীর আওয়াজ বাহির হইলো। অপরদিকে আদালতের নির্দেশে একাত্তর সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলোয়ার হোসেন সাইদীর ফাঁসির রায় ঘোষিত হইলো। সারাদেশে ইহা লইয়া ব্যাপক দাঙ্গা, হাঙ্গামা, ভাংচুর, গোলাগুলি, অগ্নিসংযোগসহ একদিনে প্রায় অর্ধশতাধিক লোক খুন হইলো, যাহাদিগের মধ্যে ৭ জনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। আহত, বিকলাঙ্গের সংখ্যা হাজার পাঁচেক। এই ঘটনার জের ধরিয়া ভাগ্যের শিকা ছিড়িয়া যদি কোন দিন ক্ষমতায় যাইতে পারে তাহা হইলে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেত্রীকেও বিচার করিয়া ফাঁসির দড়িতে ঝুলাইবার অগ্রিম হুমকি প্রদান করিল জামায়াত। বাদ গেলেন না পুলিশের অভিভাবক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়। উষ্কানী, সম্মতি, লেলাইয়া দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হইলেন অনেক এম. পি মন্ত্রীই। অনেক পুলিসের ছবি চিহ্নিত করিয়া রাখিলো জামায়াত- যাহাতে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাইয়া তাহাদেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো যায়। ইত্যাকার উপায়ে সরকারী দল বিরোধী দলকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলাইতে বলিয়াছেন, বিরোধী দল ক্ষমতায় যাইয়া বর্তমান সরকারের অনুসারীদের ফাঁসিতে ঝুলানোর হুমকি দিয়া রাখিয়াছেন। নাস্তিক বলিয়াছে ধর্মজীবি মোল্লাদের ফাঁসি দিতে আর ধার্মিকরা চাহিয়াছে নাস্তিকদের ঝুলানি। এই বিষয়টা শুধু আমাদের দেশেই ঘটিয়াছে তাহা নহে। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে ফাঁসিতে ঝুলাইবার ইস্যু খাড়া রহিয়াছে। অন্যদেশে হয়তো ফাঁসি নহে, প্রাণদণ্ড চাহেন, ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করিতে চাহেন, বিষাক্ত ইনজেক্শনে মৃত্যু কার্য্যকর চাহেন। অর্থাৎ যে কোন উপায়েই হউক একে অপরের ধ্বংস কামনা করিয়া থাকেন। বাগে পাইলে কেউ কাহাকে ছাড়িয়াও দেন না, ঠিকই ঝুলাইয়া দেন। ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট মহামতি (!) সাদ্দাম হোসেনকে গুহা হইতে টানিয়া বাহির করিয়া আদালত নামক প্রহসন মঞ্চ বসাইয়া ফাঁসিতে ঝুলানো হইলো। ওসামা বিন লাদেনের মস্তক উড়াইয়া দেওয়া হইলো। বিয়াল্লিশ বছরের শাসক মুয়াম্মার আল গাদ্দাফীকে পিটাইয়া মারা হইলো। আল কায়েদা মার্কিন এবং ইউরোপিয়ানদের ভষ্মীভূত করিবার লক্ষ্যে অনবরত হামলা করিয়া যাইতেছে। মার্কিনিরা তাহাদের উগ্র সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়া তাহাদের মস্তকের জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করিতেছে। ফিলিস্তিনিরা অর্ধ শতক ধরিয়া ইট পাথর ছুড়িয়া ইসরাইলের ট্যাংকের জবাব দিতে চাহিতেছে। অপরদিকে ইসরাইল বোমা দ্বারা ইটের জবাব দিতেছে আর ফিলিস্তিনীদের জন্মভূমি হইতে ভাগাইয়া বীর বিক্রমে আগাইয়া যাইতেছে। পুলিস চাহিতেছে তস্কর মরিয়া বিনাশ হোক, আবার তস্কর চাহিতেছে পুলিস নামক জীব ধরণীর বুক হইতে নাই হইয়া যাউক। এইভাবে দেখা যাইতেছে যে এই ধরণীর বাসিন্দারা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিয়া ভরিয়া ফেলিয়াছে। আদালতে মামলার জট বাধিয়া নথিপত্রের গোডাউন হইয়া গিয়াছে। ১৯৮৪ সালের দাঙ্গায় শিখ হত্যার বিচারের রায় বাহির হইলো ২০১৩ সালে। যে কোন পক্ষের কথা শুনিতে যান- যাহাদের গর্দান উড়াইয়া দেওয়ার দাবী করা হইতেছে, ফাঁসির দড়িতে ঝুলাইবার কথা বলা হইতেছে- মনে হইবে তাহাদের দাবী সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত। যে যাহাকে অপছন্দ করেন তাহারই ফাঁসি চান, ধ্বংস চান, উচ্ছেদ চান, চিরতরে নির্মূল করিয়া দিতে চান। টিভি দেখিয়া, পত্র পত্রিকা পড়িয়া তাহাদের এই ব্যধি আমার মধ্যেও কিছুটা সংক্রমিত হইয়াছে। আমিও দেখিলাম, এমতাবস্থায় আসলেই ফাঁসি না হইলে ন্যায় বিচার হইবে না। সুতরাং যেহেতু পুরো সভ্যতার সকলেই একে অপরের ফাঁসি চাহিতেছে, সেহেতু সকলের দাবিই পূরণ করা হউক। এর মধ্যে দিয়া বিনাশ হোক পুরো সভ্যতারই। কারণ, এই অবস্থা সৃষ্টি করিয়াছে এই সভ্যতা, টিকাইয়া রাখিয়াছেও এই সভ্যতা। সুতরাং এই সভ্যতাকে ম্যানিলা রোপ দিয়া ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাইয়া এক নতুন সভ্যতা আনয়ন করা হউক। এই সভ্যতা থাকিলে মানুষ থাকিবে না, সকলেরই ফাঁসি হইয়া যাইবে। আর মানুষ বাঁচিয়া থাকিতে চাহিলে, ফাঁসির হুমকি হইতে রক্ষা পাইতে চাহিলে সভ্যতাকে আর টিকাইয়া রাখা যাইবে না। ফাঁসি হউক চরম অসভ্য এই তথাকথিত সভ্যতার। তাই আসুন অন্তরীক্ষ ভূমণ্ডল প্রকম্পিত করিয়া এই আত্মবিনাশী সভ্যতার ফাঁসি চাই।
২৬ শে মে, ২০১৭ রাত ২:১৩
উড়োজাহাজ বলেছেন: @খেয়া ঘাট- দীর্ঘ দিন থেকে লগইন করতে পারছিলাম না। অনেকদিন পর এলাম। তাই উত্তর দিতে দেরি হলো। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:২০
খেয়া ঘাট বলেছেন: তাই আসুন অন্তরীক্ষ ভূমণ্ডল প্রকম্পিত করিয়া এই আত্মবিনাশী সভ্যতার ফাঁসি চাই- দারুন লিখেছেন আতাহার ভাই।