নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আন্দোলনে হরতাল কার্যকারিতা কি শেষ?
কোনো দাবি আদায় বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে রাজনৈতিক কর্মসূচী হচ্ছে হরতাল। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দোকানপাট, কল কারখানা, পরিবহন ইত্যাদি বন্ধ রাখার নাম হরতাল বলে পরিগণিত হলেও আজকের দিনে হরতালের মূল অনুষঙ্গ গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ এবং ককটেল বিস্ফোরণের মত সহিংস ঘটনা। কিন্তু বর্তমানে এসব কর্মসূচিতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। এটা একারণে হতে পারে যে সাধারণ মানুষ হরতালের উপর ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে পড়েছে কিংবা হরতাল আহ্বানকারী দলগুলো সুনির্দিষ্ট দাবী দাওয়া বা ইস্যু অনুযায়ী হরতাল দিতে পারছে না। এছাড়াও আরেকটি কারণ হতে পারে- রাস্তাঘাটে হরতাল সমর্থকদের উপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর এ্যাকশনমূলক পদক্ষেপ। যার কারণে হরতাল সমর্থকরা হরতাল আহ্বান করে রাস্তায় নামতে পারছে না। কিন্তু মাত্র কিছুদিন আগেও আমরা দেখতে পেয়েছি রাজপথে পুলিশের সাথে হরতালকারীরা ব্যাপক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলো। হতাহত হয়েছে বহু মানুষ। এখন শুধু কোনো গলি থেকে হঠাৎ ৩-৪ জন, ক্ষেত্র বিশেষে ৮-১০ জনের একটি দল ব্যানার নিয়ে বের হয়ে, একাধিকবার স্লোগান দিয়ে, দু‘ একটি পটকা ফাটিয়ে মুহূর্তেই কেটে পড়া। ফলে সারাদিনই অনেকটা অলস সময় কাটে পুলিশ ও সাংবাদিকদের। সাংবাদিকরাও আর কোন নিউজ না পেয়ে বাধ্য হয়েই ওই ব্যানার সর্বস্ব মিছিলটুকুর সংবাদ দিয়ে অন্তত কলামের শূণ্যস্থান পূরণের চেষ্টা করেন। আর কাজ না থাকায় ঝিমিয়ে ঝিমিয়েই সময় পার করেন পুলিশ সদস্যরা। গত কিছুদিন যাবত হরতালে যানবাহন চলে স্বাভাবিক দিনের মতোই, বেসরকারি চাকুরীজীবিরাও চাকরি বাঁচাতে কর্মস্থলে যোগ দেন ঠিক সময়েই। সরকারি চাকুরেদেরও হাজিরা দিতে হয় অফিসে। হরতালে লঞ্চ আর ট্রেন চলে স্বাভাবিক দিনের মতোই। এমনকি আজকাল হরতাল চলাকালীন সময়ে রাজধানীর কোথাও কোথাও যানজট বাঁধতেও দেখা যায়। তাহলে প্রশ্ন আসে রাজনৈতিক দাবী আদায়ে হরতালের দিন কি শেষ হয়ে গেলো? যদি তাই হয় তাহলে বৃথা এই হরতালের মানে কি? এতে করে কি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দেউলিয়াত্বই প্রমাণ হয় না? হরতালের এই সার্বিক চিত্র দেখে কি আমরা বলতে পারি ক্ষমতাসীন সরকার খুব সফল, নাকি এটা সরকারের পেশী শক্তির বহি:প্রকাশ? সচেতন মানুষ মনে করেন এর পেছনে উপরে উল্লেখিত সবগুলো কারণই সত্য। একদিকে বিরোধী শক্তিগুলো সরকারের অনুগত সুশৃঙ্খল ও অত্যাধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর শক্তির সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছে না, তাদের বহু নেতাকর্মীদের অনেকেই বর্তমানে জেলখানায় বন্দী হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে বিরোধীদলগুলোও সামান্য ইস্যুতে অর্থহীন হরতাল ডেকে হরতালের উপর থেকে গণমানুষের সমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। তাহলে আমরা কি একথা বলতে পারি যে আগামী দিনে হরতালের কার্যকরিতা আরো কমে আসবে? অথবা বিরোধীদলগুলো তাদের সংগঠিত কোরে আবার রাজপথ গরম করে তুলতে পারবে কি? কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আপাতত হরতাল মৃয়মান হয়ে গেলেও গণতান্ত্রিক রাজনীতি যেহেতু এটাকে বৈধতা দান কোরেছে সেহেতু এত সহজে হরতাল রাজনৈতিক দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে না। গণতান্ত্রিক নিয়মে হরতাল একটি ‘গণতন্ত্র স্ববিরোধী’ ব্যবস্থা। সুতরাং এর জৌলুস বজায় রাখতে গিয়ে বার বার ফিরে আসবে হরতাল। যদিও সত্যিকার অর্থে হরতাল করে, প্রতিষ্ঠিত সুসংগঠিত বাহিনীর বিরুদ্ধে ককটেল পটকা ফাটিয়ে কোন সময় সরকার পতন করা যায় নি। মাঝদিক দিয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয় রাষ্ট্রীয় সম্পদের, প্রাণহানী ঘটে সাধারণ মানুষের। তাই একে বলা যায় গণতন্ত্রের এক ইদুর বেড়াল খেলা।
©somewhere in net ltd.