নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[এই লেখার শিরোনামটা দেওয়ার আগে অনেক ভাবলাম। মনের গভীরে অনেক দু:খ এবং কষ্ট। তাই বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ধিক্কার জানালাম আমাদের নেতাদের প্রতি, মুসলমানিত্বের প্রতি। এই ধিক্কারের সাথে প্রকারান্তরে নিজেকেও ধিক্কার দিলাম এই জন্য যে আমিও এই জাতিরই একটা অংশ। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নেতৃস্থানীয় ধর্ম নেতাদের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আমাদের মত সাধারণ মানুষের কোন করণীয় না পেয়ে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আমার আর কিছু করার নাই। প্রসঙ্গটা সিরিয়া এবং এ এলাকায় চলমান য্দ্ধুপরিস্থিতি নিয়ে।]
মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন ছাড়া সিরিয়া সংকটের বর্তমান অবস্থা হচ্ছে ক্ষমতাসীন আসাদ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে বিদ্রোহী বাহিনী গৃহযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে এবং সরকারও তাদের দমনের জন্য দীর্ঘদিন যাবত লড়াই চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে সরকার শিয়াপন্থী ‘মুসলমান’ দাবীদার আবার বিরোধীদলও সুন্নী পন্থি ‘মুসলমান’ দাবীদার। এক দিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল আসাদকে শিয়াপন্থি হেযবুল্লাহ গেরিলারা সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে ময়দানে নেমেছে এবং শিয়াপ্রধান রাষ্ট্র ইরান বহু আগেই সরকারীভাবে সিরিয়ার ক্ষমতাসীন দলকে সমর্থন দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে সুন্নী প্রধান সৌদি আরবসহ অন্যান্য সুন্নীরা বিরোধী জোটকে সমথর্ন দিচ্ছে। খবরে প্রকাশ সিরিয়ায় এরই মধ্যে এই ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধে প্রাণহানী ঘটেছে আশি হাজারের উপরে। আর আহত, উদ্বাস্তু ও শরণার্থী সংখ্যা এর বহুগুণ। মিডিয়ার কল্যাণে যতটুকু দেখা যায়- যুদ্ধের অবস্থা হচ্ছে- উভয় দলই ‘আল্লাহু আকবর’ বলে জেহাদী জোশ নিয়ে শত্রু পক্ষকে হত্যা করছে, গুলি করছে, বোমা মারছে। তাদের একের প্রতি অন্যের ক্ষোভ এতটাই ভয়ঙ্কর যে এর একটা প্রমাণ পাওয়া গেলো কয়েকদিন আগে। জানা যায় একজন বিদ্রোহী সৈনিক সরকার অনুগত একজন সৈন্যকে হত্যার পর তার বুক চিরে কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিলো। কি ভয়ঙ্কর পৈশাচিকতা! ইতিহাসে জানা যায় রসুলাল্লাহর শত্রু আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা রসুলাল্লাহর চাচা বীর হামযা (রাঃ) এর শাহাদাতের পর তাঁর বুক চিরে কলিজা ভক্ষণ করেছিলো। ইতিহাস আবার ফিরে এসেছে আরবের বুকে। তবে ভিন্ন আঙ্গিকে। সে লড়াই ছিলো কাফের শক্তি বনাম মোমেনদের লড়াই। কিন্তু এ লড়াইয়ে উভয় পক্ষয়ই দাবী করে তারা ‘মোমেন’- ‘মুসলমান’। অথচ উম্মাহর ¯্রষ্টা রসুলাল্লাহ বলেছেন, “এক মোমেন আর এক মোমেনের ভাই,” আবার “মোমেনদের মধ্যে কেউ যদি অন্য একজন মোমেনকে হত্যা করে, তবে উভয়ই জাহান্নামী।” এ যুদ্ধের হেতু এবং পরিণতি দুইয়ের কোনটাই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে লাভবান হোচ্ছে কারা?
এদিকে এ যুদ্ধকে ঘিরে অস্ত্র বেনিয়াদের মধ্যে শুরু হয়েছে তুমুল প্রতিযোগিতা। বহু শকুনের দৃষ্টি পড়েছে এই ভুমির উপর। কয়েকদিন আগে বৃটেন বিদ্রোহী বাহিনীকে কোটি কোটি টাকার অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ বৈধভাবেই করা হয়েছে। যদিও প্রশ্ন থেকেই যায়- একটা ক্ষমতাসীন এবং ‘সার্বভৌম’ সরকার থাকতে কিভাবে এবং কোন আইনে সরকার- বিরোধী বাহিনীকে সামরিক অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা যায়? সভ্যতার ‘বিবেক’ ও ‘রক্ষক’ দাবীদার ইউরোপ আমেরিকা ইতিমধ্যে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বাশার সরকারকে উচ্ছেদ করতে বিদ্রোহী বাহিনীকে সব ধরণের সহযোগিতা করবে তারা। ইতিমধ্যে তারা বিদ্রোহীবাহিনীর নেতাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েও দিয়েছে। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত তারাই সিরিয়াকে অন্য কেউ যেন অস্ত্র সাহায্য কোরতে না পারে সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারী কোরে রেখেছিলো। কিন্তু বেনিয়াদের ব্যবসা হবে কি করে তাহলে? কেননা অপর মেরু- সিরিয়াকে সাহায্যের নামে রাশিয়াও অস্ত্র বিক্রির জন্য বেকুল হয়ে আছে। অস্ত্র বিক্রি করতে না পারায় এই নিয়ে দুই শক্তির চলছিলো ঠা-া লড়াই। এখন আর সে নিষেধাজ্ঞা নেই। এর মধ্য দিয়ে এবার ‘কোল্ড ওয়ার’ থেকে সুনিশ্চিতভাবে ‘শ্যুটিং ওয়ার’র জন্য ময়দান নির্ধারিত হলো ‘হতভাগা সিরিয়া’। আর এর ফল কি? জাতিসংঘ বহু আগে থেকে জানিয়ে দিয়েছে সিরিয়ার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ভয়াবহ যুদ্ধে সেদেশের জনগণ মানবেতর জীবযাপন করছে। বহু নারী সেখানে ধর্ষিত হয়েছে, বহু সন্তান হারিয়েছে তার পিতা-মাতা, বহু মানুষ ভয়ে ঘর বাড়ি ত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে, বহু মানুষ সীমান্তে অপেক্ষা করছে পালানোর আশায়। বড় বড় বোমার আঘাতে দেশের অবকাঠামো ভেঙ্গে ল--ভ-। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। এখানে সেখানে বড় বড় বোমার বিকট আওয়াজ।
প্রশ্ন হলো কেন এই যুদ্ধ, কি নিয়ে এই যুদ্ধ? সামান্য ক্ষমতা? কিন্তু এর পরিণতি কি দাঁড়িয়েছে? মুসলমান দাবীদার শিয়া সুন্নি নিজেরা নিজেদের মধ্যে শুরু করেছে মুখোমুখি লড়াই। এক আল্লাহ বিশ্বাসী, এক কোরানে বিশ্বাসী, এক রসুলে বিশ্বাসী, একই ক্বাবার দিকে যারা মুখ রাখে, যে আরব ভুমিতে মহামানব শেষ রসুল (সঃ) এবং তাঁর প্রাণপ্রিয় হাজার হাজার আসহাবদের পবিত্র জীবন কোরবান করেছিলেন, সেই ভুমিতেই তারা আল্লাহ রসুলের নাম নিয়ে, মুসলমান দাবী কোরে ঝাপিয়ে পড়ছে একে অন্যের উপর। তাই বলি ধিক তোমাদের মত মুসলমানদের, ধিক তোমাদের জেহাদে, ধিক তোমাদের ঈমানের উপর, ধিক তোমাদের মুসলমানিত্বে, ধিক তোমাদের নামাযে, ধিক তোমাদের হজ্বে, ধিক তোমাদের সমস্ত আমলে।
কেননা তোমাদের মত নামধারী মুসলমানদের ভ্রাতৃঘাতী হানাহানি ও অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে একসময় বৃটিশ খ্রীস্টান বেনিয়ারা কয়েক’শ বছর তোমাদের দাস, গোলাম করে রেখেছিলো। তবু তোমাদের আজও হুশ হলো না। একই দৃশ্য দেখেছি ইরাক ইরান যুদ্ধে, একই দৃশ্য দেখেছি ইরাক কুয়েত যুদ্ধে, একই দৃশ্য দেখেছি দুই পাকিস্তানের যুদ্ধে। তোমরা পারলে না ব্যক্তিগত হীন, ক্ষূদ্র স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে জাতীয় কল্যাণে এক হতে। এ কারণে আজ সারা পৃথিবীতে অন্য মুসলমানরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। অন্য জাতির হাতে সারা দুনিয়ায় তারা মার খাচ্ছে, অপমানিত হচ্ছে, লাঞ্চিত হচ্ছে। তোমাদের যদি ঐক্য থাকতো, তাদের গায়ের আঘাতকে যদি নিজেদের গায়ে আঘাত মনে করতে, তাদের উপর নির্যাতন হলে একসাথে মিলে প্রতিবাদ করতে, জবাব দিতে- তাহলে এই পৃথিবীর বুকে কারো সাহস হতো না এই জাতির উপর চোখ তুলে তাকাতে। মিয়ানমারে স্বদেশের বৌদ্ধদের হাতে নির্যাতিত হয়ে সাগরে অনাহারে, অর্ধাহারে থেকে, ছোট্ট নৌকায় ধারণ ক্ষমতার অধিক আরোহণ করে ডুবে মরতে হতো না, আফগানিস্তান আর ইরাককে হতো না এমনভাবে ধুলিষ্মাত হয়ে মিশে যেতে, বসনিয়া, চেচনিয়ার মুসলমানদের এমনভাবে জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন হতে হতো না। তোমাদের অর্থের তো অভাব ছিলোপ না, সংখ্যারও অভাব ছিলো না। তাই বলতে হয় তোমাদের মত মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকা আর না থাকা অর্থহীন। বরং থাকাই বিপদজনক। রসুলের পবিত্র ভুমি আকড়ে থেকে তোমরা তাঁর আদর্শ আর শিক্ষাকে অপমান করছো। কোন অধিকার নেই তোমাদের এই পবিত্র মাটি আকড়ে থাকার। যে ইসলামের ঐক্য নষ্ট করার জন্য চোখের ঈশারাও কুফরি সেখানে তোমরা শিয়া সুন্নি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গুলি করে, বোমা মেরে, মসজিদের ভেতর আত্মঘাতি হামলা করে পরস্পরকে হত্যা করছো, আবার মুখে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে জেহাদের কথা বলছো! কি নির্লজ্জ বেহায়া তোমরা! নিজ দেশের সাধারণ জনতার রক্ত চোষা অর্থ আর অধিকার লুণ্ঠন করে অকল্পনীয় ভোগ বিলাসে ব্যয় করো পশ্চিমা দেশগুলিতে গিয়ে, আবার তাদেরই পদলেহন করো ক্ষমতায় থাকার জন্য, বাকী জীবন শাদ্দাদ, নমরুদের মত ভোগ করার নিশ্চয়তার সাথে জীবন পার করার ইচ্ছায় অগাধ অর্থ জমাও তাদেরই ব্যাংকগুলিতে, তাদের থেকেই পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনে গুলি চালাও নিজের দেশের জনতার বুকে। তবুও তোমরা মুসলমান! সত্যি বিচিত্র তোমাদের ধারণা! কিছুতেই তোমাদের মুসলমানিত্ব যায় না। দাবী করো ক্বাবার রক্ষক! তাই ধিক তোমাদের এই অস্তিত্বকে, ধিক তোমাদের অহংকারে। জাত গৌরব আর যে আরব অনারবের ব্যবধান উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে গেছেন, তা অমান্য কোরে তোমরা নিজেদের ভাবো শ্রেষ্ঠ মুসলমান। আর বাকী দুনিয়ার সবাই মিসকিন। আল্লাহর দান তেলের খনির উপর বোসে আরাম আয়েশে বসবাস করে, সোনার গাড়ী, সোনার বাথরুম ব্যবহার করে নিজেদের মনে করেছ তোমরা উৎকৃষ্ট। তাই মিসকিনরা (!) যখন ইসলামের শত্রু পশ্চিমা শক্তির হাতে নিশ্চিহ্ন হয় তখন তোমরা তোমাদের অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে তাদেরই তাবেদারী করে যাচ্ছো। কিন্তু আজ সেই অহঙ্কারের পতনের সময় এসেছে। তোমাদের নারীরাও ভোগের শিকার হচ্ছে এবং হবে, তোমাদেরকেও গর্ত থেকে বের করে এনে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অপমানজনকভাবে হত্যা করা হবে। বেয়াল্লিশ বছর ক্ষমতায় থাকলেও তোমাদের রাজপথে গণধোলাই খেয়ে মরতে হবে। লৌহ কঠিন ত্রাসের শাসন ভেঙ্গে পড়ে দাঁড়াতে হবে অপমানজনক বিচারের কাঠগড়ায়। আজ তোমাদের যতই ক্ষমতার দাপট থাকুক, যতই তোমাদের আরামে বসবাস করার উপকরণ থাকুক, দেশে বিদেশে তোমাদের সম্পদ জমা থাকুক, সময় বেশী দুরে নয় যখন তা অর্থহীন হয়ে যাবে। কালো ছায়া এরই মধ্যে পড়ে গেছে তোমাদের উপর। কারণ, যে জাতির ঐক্য নাই সে জাতি দূর্বল শক্তির কাছেও পরাজিত হবে- এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। অপরদিকে তোমাদের শত্রুরা দূর্বল নয়। তাদের স্বার্থে তারা সবাই একতাবদ্ধ। আপাতত তোমাদের সাহায্যের আশ্বাস দিলেও তারা মূলত নিজেদের স্বার্থ চিন্তায়- এক। এই সাহায্যের আশ্বাস শুধুমাত্র একে অন্যের বিরুদ্ধে ইন্ধন যোগানো, সামরিক রসদ বিক্রির উপায়, একের বিরুদ্ধে অন্যকে লেলিয়ে দেয়া। সময় শেষে তোমাদের উচ্ছেদ করে ভাগাভাগি করে হাতিয়ে নেবে তারা তোমাদের সব। তাই ধিক্কার জানাই তোমাদের রাজত্বের উপর, শত ধিক্ তোমাদের ক্ষমতার অহঙ্কারে! তোমাদের এই কর্মের জন্যই আল্লাহর ভাষায় তোমাদের প্রতি লানৎ আল্লাহ, তাঁর রসুল, সমস্ত মালায়েক ও সমস্ত মানবজাতির পক্ষ থেকে (আল কোরআন- সূরা বাকারা, আয়াত-১৬১-১৬২, মায়েদা-আল এমরান-৮৬-৮৯ )।
০৪ ঠা জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪
উড়োজাহাজ বলেছেন: আমি তাদের মাঝে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হউক তা চাই না। আমি চাই তাদের মাঝে প্রকৃত ইসলাম কায়েম হউক।আমার খুব দরকার আছে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ ভোর ৪:১২
পাস্ট পারফেক্ট বলেছেন: এত উথালী পাথালী করার দরকার দেখি না। কোন এক কারণে মুসলমান দেশ গুলাতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে নাই (মালায়শিয়া, তার্কি, ইরান সহ কিছু বাদে) - যার ফলে স্বচ্ছাচারিতা দূর্নীতিতে এইসব দেশের শাসক শ্রেনী নিমজ্জিত। জনগনের আশা আকাঙ্ক্ষার তোয়াক্কা না করে তারা পশ্চিমের দিকে আশায় চেয়ে থাকে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। এখন কে সাচ্চা মুসলিম কে উম্মত সেটা আর বের কইরা লাভ কি?