নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হে নেতা নেতৃগণ! আপনাদের আচরণে, কার্যকলাপে আমরা সাধারণ মানুষ খুব ক্লান্ত ও বিতশ্রদ্ধ। আপনাদের কর্মকাণ্ড আমাদের আর ভাল লাগছে না। দোহাই এবার আমাদের মুক্তি দিন। আমরা আর পারছি না। আমাদের সহ্যসীমা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। আমরা আপনাদের উপর বিরক্তও বটে। ‘জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস’ কথাটি যতবার আমরা বিশ্বাস কোরতে চাই, ততবার আমরা একটি করে চপেটাঘাত খাই। প্লিজ! এই মুলাটি আমাদের নাকের সামনে থেকে তাড়াতাড়ি সরান। আমরা এই বিদেশী মুলার মোহে পড়ে বহু নাস্তানাবুদ হয়েছি। দোহাই আপনাদের! আমাদের এবার মুক্তি দিন। গণতন্ত্র নামের এই রণক্ষেত্রে আপনাদের রাজকীয় এবং দলীয় পাণ্ডাদের দাপাদাপিতে আমরা উলুখাগড়ারা জীবন দিয়ে যাচ্ছি অকাতরে। আমরা বোকা। ঘুঁটের পোড়া দেখে গোবর যেমন হাসে, আমরাও অন্যের প্রাণ ঝরে পড়তে দেখে হাসি। আমরা রাজ রাজড়াদের হয়ে মাঠে লড়ি, রাজ রাজড়াদের মান সম্মান, জয় পরাজয়ের অংশীদার হয়ে বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে লড়াই করি, রক্তাক্ত, ঘর্মাক্ত হই। আর আপনারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে দাবার ঘুঁটি চালেন। আপনারা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করে দামী দামী গাড়ি চড়ে রাজা উজির মেরে আসেন, বিশ্বভ্রমণ করেন। আমরা যানজটে বসে ঘণ্টার পর শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ঘামি, বমি করি। জানেন কি না জানি না, এ বমি কিন্তু কিছুটা হলেও আপনাদের গড়া সিস্টেমের প্রতি ঘৃণা থেকেই আসে। আপনারা বলতে পারেন আমরা তো কাউকে জোর করে আমাদের পক্ষে টানি না। কথা সত্য। কিন্তু ঐ যে বললাম আমরা বোকা! আমরা এখনো মনে করি- আপনারাই আমাদের মুক্তি দিবেন। আপনারা ছাড়া আর কেউ আমাদের মুক্তি এনে দেবে তা ভাবতেও পারি না। আপনাদের কথায় আমরা প্রভাবিত হই। আপনাদেরকে বিশ্বাস করি বলেই আজও আমরা নির্বাচন এলে আমাদের সমস্ত বিশ্বাস এবং ভরসা ভোটবাক্সে ভরে দিয়ে আসি। কিন্তু মুক্তি আপনারা আজও আমাদের দিতে পারেন নি। আমাদের বোঝা উচিত ছিল অনেক আগেই যে আপনারা মুখে আমাদের মুক্তির জন্য রাজনীতি করেন বললেও আপনারা মূলত নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত আছেন। যখন যারাই ক্ষমতায় গিয়েছেন, সবাই নিজেরটাই আগে বুঝেছেন। লুটে পুটে খেয়ে, দেশে বিদেশে টাকা পাচার করে আপনারা আপনাদের নিশ্চিত ভবিষ্যত গড়েছেন। দেশে বিদেশে সন্তানদের নাগরিকত্ব নিয়ে দিয়েছেন। আপনাদের সন্তানরা বিদেশে পড়া লেখা করছে। বিয়ে-শাদীও সেদেশেই করছে। অথচ আমরা কিন্তু আপনাদের জন্য স্কুল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুরি মারামারি, পিকেটিং আর বোমাবাজি করি। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাগে পেলে দু’তলা তিনতলার ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করি। ছাত্রাবাসের খাটের তলায়, সান শেডে, গাছের ডালে রাম দা, কিরিচ রাখি। বারুদ রাখি, পাইপগান রাখি। প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাংচুর করি। মারামারি করি। কিন্তু এসব আর ভালো লাগে না। কত মায়ের বুক খালি হতে দেখি, দেখি ভাই হারানোর কান্না। এসব কিন্তু আমরা আপনাদের জন্যই করি। কারণ আপনারা যে সিস্টেম বেঁধে দিয়েছেন, সেই সিস্টেমে টিকে থাকতে গেলে আমাদেরকে তা করতেই হয়। এই সিস্টেমের বাবা-মা আপনারাই। আমরা বোকা মানুষ। এই ধাক্কা সামলাতে সামলাতে বছরের পর বছর শুধু একটা গানই গাই- “মনরে! মনরে!! তুই বড় বোকা! নিজের বুঝ বুঝলি না খাইয়া গেলি ধোকা!”
কিন্তু আমরা মনে করি আপনারা চাইলেই আমাদের জন্য ভালো কিছু করতে পারেন। আপনারা তা না করে কাকে ল্যাঙ মেরে কখন ক্ষমতায় যাবেন তার চিন্তায় ব্যস্ত আছেন। আপনারা কাউকে কেউ ছাড় দিতে রাজী নন। রাজনীতির ময়দানে আপনারা পাশাপাশি বসেন না। কারো মুখ দেখতে চান না। কিন্তু ঠিকই তলে তলে নিজের ছেলেকে দিয়ে অপরের মেয়ে বিয়ে করান, আনন্দ উৎসবের আয়োজন করেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও আপনাদের অনেকেই অংশীদারির ভিত্তিতে বিনিয়োগ করেন। স্থায়ী বিভেদ শুধু রাজনীতিতে। এই বিষময় রাজনীতির কুফল কিন্তু ভোগ করতে হয় আমাদের।
আমরা সত্যি সত্যিই কিন্তু অনেকে মন প্রাণ দিয়ে আপনাদের ভালবাসি। আপনাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করি। সম্প্রতি আপনারা দেশে যে সংকটের আবহ তৈরী করেছেন তাতে আমরা শংকিত। কত প্রাণ এ লড়াইয়ে যাবে তা নিয়ে আমরা উদ্বেগের মধ্যে আছি। কখন কোথায় কিভাবে নিজের পৈতৃক প্রাণটা বেঘোরে চলে যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। শুধু অপেক্ষা করি কখন আমার পালা। হে রাজনীতিকগণ! আপনাদের এহেন কর্মকাণ্ডে আমরা ত্যাক্ত বিরক্ত। আর ভালো লাগে না। আপনাদের এসব রাজসিক কর্মকাণ্ডে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। প্লিজ! এইবার একটু ক্ষান্ত দিন।
©somewhere in net ltd.