নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, আওয়ামীলীগ-বিএনপি ও নির্বাচনকামী দলগুলির বক্তব্য বিবৃতিতে নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসমূলক কথা বেরিয়ে আসছে। গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে পৃথিবী জুড়েই একটি নতুন ধারা শুরু হয়েছে। আর তা হোল পরিবর্তনের রাজনীতির কথা। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাচনের সময় এই স্টাইলটি টনিকের মত কাজ করেছে। এর অনুসরণে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গৃহিত হচ্ছে এই তত্ত্বটি। বাংলাদেশে গত নির্বাচনের সময় আওয়ামীলীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে শ্লোগান শুরু করেছিল- তখন তা গৃহিত হলেও সময়ের ব্যবধানে তাদের ব্যর্থতার ফলে এখন মানুষ একে নিয়ে রীতিমত ব্যঙ্গ করছে।
এদিকে দিন যতই যাচ্ছে নির্বাচনের সময় ততই কাছে চলে আসছে। আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ঝরে পড়া আরম্ভ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে বিএনপি নতুন ধারার রাজনীতির ছক ও চিন্তা-কৌশল প্রকাশ করে রাজনীতির মাঠে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। যদিও বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বি দলগুলো এই পরিবর্তন নিয়ে পরিহাস করতে ছাড়ছে না।
বাস্তবতা হচ্ছে মাঠে-ঘাটে জনগণ এখন পরিবর্তন চাচ্ছে, রাজনৈতিক এই হানাহানি, হিংসা আর হরতাল ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনৈতিক কালচার থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজছে। জনগণ এখন আর মারামারি, কথায় কথায় হরতাল আর রাস্তা-ঘাট অবরোধ করে ধ্বংসের রাজনীতি চায় না। কিন্তু তারা বিকল্প পথও খুঁজে পাচ্ছেনা, পাচ্ছে না কোন বিশ্বস্ত প্লাটফর্ম। মাঠের একবারে প্রান্তিক জনগণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, আধা-মধ্যবিত্ত, স্বল্প মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত, সমাজের উঁচু তলার মানুষ, রাজনীতি করেন এমন কর্মী সমর্থক ও নেতা সকলেই কিন্তু রাজনৈতিক এই হিংসার কালচারের পরিবর্তন চান। তাই যে দলই পরিবর্তনের কথা বলে তার দিকে মানুষের আগ্রহ বাড়ে। কিন্তু প্রচলিত ধারার নির্বাচন পদ্ধতিতে দলগুলোর কাছ থেকে এর বেশী কী ই বা আশা করা যায়? কারণ, রাজনীতি এখন ব্যবসার উত্তম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন করতে দলগুলোর প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। ক্ষমতার জন্য লালায়িত নেতাগণও মনোয়ন নিতে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেন, ক্ষমতার যাওয়ার পর যা সুদে আসলে তুলে আনেন এবং এর মাধ্যমে আজীবন বসে খাওয়ার চিন্তা করেন। রাজনীতিতে এই সংখ্যাটাই এখন বেশী। রোগটি এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। তাই মানুষ নতুন ধারার রাজনীতি, পরিবর্তনের রাজনীতিকে নতুন ধারার ফাঁদ বলে অভিহিত করতেও দ্বিধাও করছে না। এর যৌক্তিক কারণও রয়েছে। কারণ দলগুলোর চরিত্রে তেমন কোন পরিবর্তন এখনও চোখে পড়ছে না। কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, হিংসাত্মক কথা বার্তা, ঘৃণার রাজনীতি, দোষারোপের রাজনীতি একটুও কমে নি। তাই তাদের কথায় বিশ্বাস না আনাটাই স্বাভাবিক। রাজনীতিবিদদের অতীত চরিত্রও মানুষ ভুলে যায় নি।
অন্যদিকে ভাল মানুষও রাজনীতিতে যেতে ইচ্ছুক নয়। কারণ, পরাজয় জেনেও লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার কোন অর্থ থাকতে পারে না। এ ব্যবস্থায় কালো টাকা ও পেশী শক্তির কাছে তারা কেউই পেরে উঠবেন না এবং দলীয় শক্তির কাছে ও টাকার কাছে তারা পরাভূত হয়ে যাবেন- এটাই স্বাভাবিক। তাই মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে ছাকুনি পরিবর্তন করা। মানদ- পরিবর্তন করা। প্রচলিত ধারার ছাকুনিতে ক্ষমতার আসনে অধিকাংশই উঠে আসছে পয়সাওয়ালা, ব্যবসায়ী মানসিকতার নীতিহীন ব্যক্তিরা। যদিও এই মুহূর্তে খুবই কঠিন, তবুও মানুষকে এই মানদ- পরিবর্তনের জন্য পরিষ্কার কোন একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমুল পরিবর্তনের। এ জন্য তাদের নতুন কোন একটা প্লাটফর্মে দাঁড়াতে হবে। যে প্লাটফর্মে থেকে মোকাবেলা করা সম্ভব নীতি নৈতিকতাহীন, পরকালীন ভয়শুন্য ও ভোগবাদী মানসিকতার এই রাজনীতিকে। নতুবা ঐক্যহীন, মারামারি-হানাহানিতে লিপ্ত একটি জাতি বেশী দিন টিকে থাকতে পারে না। বৈদেশিক ঋণ, রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি ইত্যাদি কারণে এমনিতেই রাষ্ট্রের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। সামনে অপেক্ষা করছে সরকার পরিবর্তনকালীন এক ভয়াবহ রাজনৈতিক ঝড়ের আশংকা। এ থেকে উত্তরণের কোন পথ এখনও বের হয় নি। তাই সময় ফুরিয়ে আসছে অতি দ্রুত। সিদ্ধান্ত নিতে হবে মানুষকেই- ঝড় থামানো যায় কি করে!
©somewhere in net ltd.