নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাঙ্গালী জাতি. মোসলেম জাতি চিরদিন মাথা উচু করা জাতিই ছিল। এদেশের সবুজ শ্যামল মাঠ-ঘাট, প্রকৃতি তাদের উজার করে দিয়েছে ফল ও ফসল। প্রাচীনকাল থেকে এদেশে জন্মাত সোনালী আঁশ- পাটের মত অর্থকরী ফসল। এদেশে জন্ম নিত মসলিন, জামদানী তৈরি করার মত কারিগর। দেশে উৎপাদিত খাবার, মসলা ইত্যাদি নানাবিধ পণ্য বাইরের দেশে বিক্রি করে তারা সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। তাই ধনে-জনে সমৃদ্ধ এই জাতিটির প্রতি প্রত্যেক দিগি¦জয়ী জাতির ছিল প্রবল আকর্ষণ। প্রাচীন হিন্দু শাসন আমল থেকেই তারা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ছিল। মুসলিম শাসন আমলে তার আরো ব্যাপক উন্নতি হয়।
কিন্তু সর্বশেষ মুঘল স¤্রাটদের ব্যর্থতা এবং দুর্বলতার সুযোগে এদেশে ব্যবসা করার সুযোগ পায় বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। ধুরন্দর এ জাতিটি ধীরে ধীরে ছলে বলে কৌশলে এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়। লুটপাট করে শূন্য করে দেয় আমাদের ধন-ভা-ার। আমরা হয়ে পড়ি তাদের ক্রীতদাস, গোলাম। তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এক সময় আমরা আমাদের অতীত ভুলে যাই। আমরা দিনে দিনে তাদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ি, নিজেদের অতীত সম্বন্ধে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকি। তাদের তৈরি শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করে আমরা তাদের চাকুরি করাতে মনোযোগ দেই। তাদের শিক্ষা “লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে” গ্রহণ করে আমরা আমাদের আগের স্বাবলম্বিতা ত্যাগ করে চাকুরিতে মনোযোগ দেই। সেই ইংরেজ প্রভুদের অধীনে কোন মতে একটা চাকুরি বাগাতে পারলেই জীবনটাকে ধ্যন মনে কোরতাম।
তার ধারাবাহিকতা আজও চলছে। আজও আমাদের দেশের নাগরিকরা চাকুরির জন্য সরকারের কাছে ধর্ণা দেয়, চাকুরির জন্য দাবি দাওয়া পেশ করে। ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিলে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি তুষ্ট হয়ে আমরা তাদের ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠাই। কিন্তু ভেবে দেখিনা যে- সরকারই বা এত চাকরি দেবে কোথা থেকে! কাজেই সরকার চাকুরি দিতে ব্যর্থ হোলে রাস্তা অবরোধ , হরতাল, ভাংচুর জ্বালাও পোড়াও শুরু হয়ে যায়। এমনকি আমাদের মানসিকতা এতদূর পর্যন্ত গিয়েছে যে, চাকুরি হলনা কেন, এই দুঃখে রাজপথে আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে। হায়রে গোলামী! গোলামী মানুষকে কোথায় নিয়ে যায় তা ভাবতেই গা শিউরে উঠে।
সবাই যদি চাকুরি করি তাহলে পণ্য উৎপাদন করবে কে, ফসল ফলাবে কে? বাঙ্গালী শিক্ষিতের সারা জীবনের স্বপ্ন থাকে লেখা-পড়া শেষে একটা চাকুরি। লেখাপড়ার মূল উদ্দেশ্যই থাকে একটা চাকুরি যোগাড় করতে পারা। আমরা চাকুরি করে নিরাপদ এবং আয়েশী জীবন আশা করি এবং চিন্তা করি একটি চাকুরি পেলে সারা জীবন সুখে কাটিয়ে দিতে পারব। সাধের চাকুরির জন্য অনেকেই গরু বাছুর, জমি-জমা বিক্রি করে ঘুষ দেয়। তাদের মন-মগজে ঢুকে গেছে যে চাকুরিতে সম্মান বেশি। দু’লাইন পড়ালেখা শিখতে পারলে আর আমাদের দেশের কৃষকের ছেলে বাবার সাথে মাঠে নেমে কাজ করে না, তাকে আর সহযোগিতা করে না। সেই সাথে যারা মাঠে নেমে কাজ করে তাদের মনে করে নি¤œশ্রেণির মানুষ, তারা অবজ্ঞার পাত্র।
কিন্তু মোসলেম জাতির এই অবস্থা ছিল না। মোমেন, মোসলেম জাতির কাছে কোন শ্রমই ছোট নয়। মোমেন মোসলেম জাতির দিকে তাকালে আমরা খুব কমই দেখি যারা চাকুরি করেছেন। চাকুরি করাকে ইসলাম প্রকারান্তরে নিরুৎসাহিত করেছে। উৎসাহ দেওয়া হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও খাদ্য শস্য উৎপাদনের প্রতি। মহানবী ব্যবসায়ীদের প্রতি ঘোষণা করেছেন, সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের হাশর হবে শহীদ ও সিদ্দিকদের সাথে (হাদিস)। খুবই গুরত্বপূর্ণ বিষয়, সন্দেহ নেই। দীন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে প্রাণ বিসর্জনকারী শহীদদের সমান, অর্থাৎ ইসলামে যাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার তাদের সমান মর্যাদা দেওয়া হোয়েছে সৎ ব্যবসায়ীদের। তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প উৎপাদনে ইসলাম কি উৎসাহ দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অথচ সেই স্বাধীনচেতা জাতি আজ চাকুরি ছাড়া কিছুই বোঝে না। এই মানসিকতা সৃষ্টির কারণ হোচ্ছে দীর্ঘ দাসত্ব-যুগ। যারা চাকুরি করে তারা মূলতঃ তার প্রভুর দাস হয়ে যায়। চাকুরের মেরুদ- বলে কিছু থাকে না। চাকুরি বাঁচানোর জন্য সে কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। সব সময় তার প্রভুর প্রতি ‘জ্বী হুজুর’, ‘জ্বী হুজুর’ করে যেতে হয়। সাহস করে প্রভুর সামনে সত্য কথাটিও বলতে পারে না। পুরো জাতিরই যখন এই মানসিকতা হয়ে যায় তখন সেই জাতির মনুষ্যত্ব বলে কিছু থাকে না। এই দাসত্ব আমাদের কি দিয়েছে? এই দাসত্ব আমাদের দিয়েছে মানসিক, আত্মিক এবং এমন কি দৈহিক গোলামী। মানসিক ও আত্মিক গোলামীর পরিচয় আমরা রাখছি পূর্ব প্রভুদের সকল আইন কানুনকে ¯্রষ্টার দেওয়া আইন কানুন থেকে উৎকৃষ্ট জ্ঞান করে। অন্যদিকে আমাদের প্রত্যক্ষ গোলামী যুগ কিংবা তারও আগে জাতীয়ভাবে আমাদের কোন ঋণ ছিলো না। কিন্তু গোলামী যুগের অবসান হতেই বাড়তে লাগলো আমাদের ঋণের বোঝা। এখন জন্ম মাত্রই একটি শিশুর ঘাড়ে এসে পড়ে বিশাল ঋণ। ঋণগ্রস্থ খাতক মহাজনের সামনে যে আচরণ করে, প্রভু রাষ্ট্রের সামনে আমাদের আচরণ কখনোই যে তার চাইতে ভাল হবে না তা সাধারণ জ্ঞান। আমরা আপাদমস্তক গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয়ে আছি।
আমি সাহিত্যিক নই, আমার ভাষায় এত সৌন্দর্যও নেই। তাই দ্বারস্থ হোচ্ছি আমাদের জাতীয় কবি, চেতনার কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাছে। তিনি তার তীক্ষè ও অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে তুলে এনেছেন গোলাম জাতির এই চাকুরি প্রিয়তার বাস্তব চিত্র। তিনি তার “আমাদের শক্তি স্থায়ী হয় না কেন” নামক প্রবন্ধে বলেছেন, “ এ প্রশ্নের সর্ব প্রথম উত্তর, আমরা চাকুরিজীবী। মানুষ প্রথম জন্মে তাহার প্রকৃতিদত্ত চঞ্চলতা, স্বাধীনতা ও পবিত্র সরলতা লইয়া। সে-চঞ্চলতা চির-মুক্ত সে স্বাধীনতা, অবাধ-গতি, সে-সরলতা উন্মুক্ত উদার। মানুষ ক্রমে যতই পরিবারের গ-ি, সমাজের সঙ্কীর্ণতা, জাতির -দেশের ভ্রান্ত গোঁড়ামি প্রভৃতির মধ্য দিয়ে বাড়িতে থাকে, ততই তাহার জন্মগত মুক্ত প্রবাহের ধারা সে হারাইতে থাকে, ততই তাহার স্বচ্ছপ্রাণ এইসব বেঁড়ীর বাঁধনে পড়িয়া পঙ্কিল হইয়া উঠিতে পারে, কিন্তু পরাধীনতার মত জীবন-হননকারী তীব্র হলাহল আর নাই।
অধীনতা মানুষের জীবনী-শক্তিকে কাঁচাবাঁশে ঘুণ ধরার মত ভূয়া করিয়া দেয়। ইহার আবার বিশেষ বিশেষত্ব আছে, ইহা আমাদিগকে একদমে হত্যা করিয়া ফেলে না। তিল তিল করিয়া আমাদের জীবনী-শক্তি, রক্ত-মাংশ-মজ্জা, মনুষ্যত্ব, বিবেক, সমস্ত কিছু জোঁকের মত শোষণ করিতে থাকে। আখের কল আখকে নিঙড়াইয়া পিষিয়া যেমন শুধ তাহার শুষ্ক ছ্যাবা বাহির করিয়া দিতে থাকে, এ অধীনতা মানুষকে- তেমনি করিয়া পিষিয়া তাহার সমস্ত মনুষ্যত্ব নিঙড়াইয়া লইয়া তাহাকে ঐ আখের ছ্যাবা হইতেও ভূয়া করিয়া ফেলে। তখন তাহাকে হাজার চেষ্টা করিয়াও ভালমন্দ বুঝাইতে পারা যায় না। আমাদেরও হইয়াছে তাহাই। আমাদিগকে কোন স্বাধীন চিত্ত লোক এই কথা ব্ঝুাইয়া বলিতে আসিলেই তাই আমরা সাফ বলিয়া দিই, “এই লোকটার মাথা গরম।”
সারা বিশ্বে বাঙালীর এই যে সকল দিকেই সুনাম, কিন্তু তবুও আমরা কেন এমন দিন দিন মনুষ্যত্ব বর্জিত হইয়া পড়িতেছি? কেন ভ-ামী, অসততা, ভীরুতা, আমাদের পেশা হইয়া পড়িয়াছে? কেন আমরা কাপুরুষের মত এমন দাঁড়াইয়া মার খাই? ইহার মূলে ঐ এক কথা, আমরা অধীন- আমরা চাকুরীজীবী। দেখাইতে পার কি, কোন জাতি চাকুরি করিয়া বড় হইয়াছে? আমরা দশ-পনর টাকার বিনিময়ে মনুষ্যত্ব, স্বাধীনতা অনায়াসে প্রভুর পায়ে বিকাইয়া দিব, তবু ব্যবসা-বাণিজ্যে হাত দিব না, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াইতে চেষ্টা করিব না। এই জঘন্য দাসত্বই আমাদিগকে এমন ছোট হীন করিয়া তুলিতেছে। যে দশ টাকা পায়, সে যদি পাড়াগাঁয়ে গিয়া অন্তত: মুদি, ফেরিওয়ালার ব্যবসা করে, তাহা হইলেও সে বিশ-পঁচিশ টাকা অনায়াসে উপার্জন করিতে পারে। ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়, আদতে আমরা ইচ্ছাই করিব না, চেষ্টাই করিব না, হইবে কোথা হইতে? যে জাতির মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, যত বেশি সে জাতির মধ্যে অধিকাংশেরই চিত্ত স্বাধীন, সে জাতি বড় না হইয়া পারে না। ব্যষ্টি লইয়াই সমষ্টি।
আমরা আজ অনেকটা জাগ্রত হইয়াছি, আমরা মুনষ্যত্বকে এক আধটু বুঝিতে পারিতেছি, কিন্তু আমাদের এই মনুষ্যত্ববোধ, এ শক্তি স্থায়ী হইতেছে না, শুধু ঐ চাকুরিপ্রিয়তার জন্য। সোডা-ওয়াটারের মত আমাদের শক্তি, আমাদের সাধনা, আমাদের অনুপ্রাণতা এক নিমিষে উঠিয়াই থামিয়া যায়, শোলার আগুনের মত জ্বলিয়াই নিভিয়া যায়। আমরা যদি বিশ্বে মানুষ বলিয়া মাথা তুলিয়া দাঁড়াইতে চাই, তবে আমাদের এ শক্তিকে, এ সাধনাকে স্থায়ী করিতে হইবে, নতুবা “যে তিমিরে সেই তিমিরে।”এবং তাহা করিতে হইলে সর্বপ্রথমে আমাদিগকে চাকুরি ছাড়িয়া পর-পদলেহন ত্যাগ করিয়া স্বাধীনচিত্ত উন্নত-শীর্ষ হইয়া দাঁড়াইতে হইবে, দেখিয়াছ কি চাকুরিজীবীকে কখনও স্বাধীন-চিত্ত সাহসী ব্যক্তির ন্যায় মাথা তুলিয়া দাঁড়াইতে? তাহার অন্তরের শক্তিকে নির্মমভাবে কচলাইয়া দিয়াছে, ঐ চাকুরি, অধীনতা, দাসত্ব। আসল কথা, যতক্ষণ না আমরা বাহিরে স্বাধীন হইব, ততক্ষণ অন্তরের স্বাধীন শক্তি আসিতেই পারে না।”
২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:০৪
কষ্টবিলাসী বলেছেন: good post....different angle....
১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০৯
উড়োজাহাজ বলেছেন: থ্যাঙ্কু
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৫০
াজ বলেছেন: ভাই আমার http://www.only71.com এই সাইটে যান। আপনাদের ভালো লাগবে আশা করি। আপনার চাইলে লিখতেও পারেন।