নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কথিত রহিয়াছে রাজনীতি আর ‘‘পলিটিকস’’ এর মধ্যে তফাৎ বহু বহু যোজন। আরো কথিত রহিয়াছে রাজনীতিতে যখন ‘‘পলিটিকস’’ প্রবেশ করিয়াছে তখন হইতে রাজনীতি থেকে সত্য দূরীভুত হইয়াছে। রাজনীতি শব্দের অর্থ হইলো রাজাদের নীতি বা রাষ্ট্রীয় রীতি-নীতি, কর্মপদ্ধতি। আর ইংরেজি ‘‘পলিটিকস’’ শব্দের অর্থও ঐ একই। দুইটি শব্দ সমার্থক হইলেও বাস্তবতা ভিন্ন। কারণটা এই যে- ‘‘পলিটিকস’’ বিষয়টি ইদানিং পঙ্কিলতা এবং শঠতার সহিত মিশিয়া গিয়াছে। ‘পলিটিকস’ বলিতে বোঝায় শয়তানী বুদ্ধি, কূটকৌশল, ছলচাতুরি, ধোকাবাজী ইত্যাদি। কেহ যদি কাহারো ক্ষতি করিতে চায় তাহা ইইলে ‘‘পলিটিকস’’ এর আশ্রয় নেয়। তাই পলিটিশিয়ানদেরকে মানুষ বক্র দৃষ্টিতে দেখিয়া থাকে। মানুষ তাহাদের বিশ্বাস করে না। তাহাদের সকল কাজে, সকল কথায় মিথ্যার গন্ধ খুঁজিয়া থাকে। পলিটিশিয়ানগণ যতটা বলেন তাহার খুব অল্প অংশই মানুষ গ্রহণ করিয়া থাকে।
এর একটি কারণ এই যে- কথায় আছে বক্তা যাহা বলেন তাহা বাস্তবে যদি নিজে না আমল করেন তাহলে নাকি শ্রোতার মধ্যে তাহার তাছির হয় না। হইবে কিভাবে? এই ধরুণ, যখন আমাদের বিভিন্ন দিবস, ঈদ-উৎসব বা বিভিন্ন পর্ব আসে তখন আমাদের পলিটিশিয়ানরা একে অপরকে শুভেচ্ছা বাণী জানাইয়া থাকেন, কার্ড পাঠান। কিন্তু আমরা বাস্তবে কি দেখি! বাস্তবে দেখি মাইক ফাটাইয়া, কণ্ঠনালীর শিরা ফুলাইয়া, ঠোট কাপাইয়া, চোখ রক্তবর্ণ করিয়া একে অপরের বিরুদ্ধে মাঠে-ময়দানে, টিভি পর্দায়, টকশোতে সমালোচনা করিয়া থাকেন। একে অপরের প্রতি এতটাই ঘৃণা ও বিদ্বেষপোষণ করিয়া থাকেন যে বছরের পর বছর ধরিয়া একে একে অপরের মুখ পর্যন্ত দর্শন করেন না। কোথাও বা যদি তাহাদের দৈবক্রমে একই অনুষ্ঠানে দাওয়াত পড়িয়া যায়, তাহা হইলে প্রতিদ্বন্দ্বি উপস্থিত হইবে বলে কোনমতে জানিতে পারিলে আর ঐ অনুষ্ঠানে পদধূলি দেন না। প্রশ্ন হইলো এতই যদি ঘৃণা থাকে, এতই যদি বিদ্বেষ থাকে তবে কাগজে ছাপানো কার্ডে শুভেচ্ছা পাঠান কিভাবে? ইহা কি প্রপঞ্চকতা নহে? ভাগ্যিস যুগটা কলিকাল! সত্য যুগ হইলে নিশ্চিত এই ঘৃণা, অপরের প্রতি অমঙ্গল কামনা- অভিশাপ লাগিয়া শত্রু ভষ্মীভূত হইয়া যাইত। ভাগ্য ভাল বলিয়া তাহারা এখনো বহাল তবিয়্যতে আছেন।
পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাগণ মাঠে ময়দানে যতদূর মিথ্যাচার করিয়া থাকেন, আদালতে অপরাধ প্রমাণীত না হইলেও বিপক্ষকে অপরাধী বলিয়া গলা ফাটান, আইন আদালতকে চ্যালেঞ্জ করেন, তাহাতে তেমন কিছু যায় আসে না। এমন কি মানহানী মামলাও খুব একটা হয় না। ধরিয়াই নেওয়া হইয়াছে যে তাহাদের বেশিরভাগ কথা ধর্তব্যের বাইরে- ওসব রাজনৈতিক কথা বার্তা, ওসব বরং আমলে আনিলেই সমস্যা। এই ধরুন না, এমনকি ফৌজদারী অপরাধের সাথে জড়িত হইলেও নিজদলের নেতাকর্মীদের নামে থাকা মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা হইয়া থাকে। সহযোগী একটি সংবাদপত্রে প্রকাশ হইয়াছে যে, প্রায় সাড়ে তিনশ ‘অরাজনৈতিক মামলা’ রাজনৈতিক বিবেচনায় আনিয়া প্রত্যাহার করিয়া নেওয়ার তোড়জোড় চলিতেছে। ইহা ছাড়াও প্রায় চারিশত বিভিন্ন দণ্ডবিধির মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রতাহারে সুপারিশের প্রস্তুতি চলিতেছে। চলতি মাসে কিংবা আগামী মাসে এই সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রহিয়াছে। এরা যে পার পাইয়া গিয়াছে তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। এই যে রাজপথে মানুষ পোড়াইয়া, পিটাইয়া মারিয়া, গাড়ি ভাংচুর করিয়া, বোমা ফাটাইয়া, পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই করিয়া যদি সেই মামলা ‘রাজনৈতিক কোটায়’ প্রতাহৃত হইতে পারে, তাহা হইলে সাধারণ ভুক্তভোগী মানুষ এই ব্যবস্থাকে কিভাবে ভালবাসিতে পারে? কিভাবে ভালবাসিতে পারে এই পলিটিশিয়ানদের?
শুধু ইহাই নহে, সমস্ত কিছুতেই এখন রাজনীতি তথা ‘‘পলিটিকস’’ প্রবেশ করিয়াছে। ধর্মও ইহা হইতে বাদ যায় নাই। রাজনীতিকরা এখন রাজনৈতিক ধর্মও পালন করেন, রাজনৈতিক হজ্ব করেন, রাজনৈতিক এফতার মাহফিলে অংশ নেন, রাজনৈতিক পীর-মুরিদী করেন, এমন কি রাজনৈতিক জানাজাও আছে- লাশ লইয়া মিছিলও হয়। ভোটের সময় আসিলে হজ্বের মৌসুম না থাকিলেও ঘন ঘন ওমরাহ হজ্বের আনাঘোনা বৃদ্ধি পায়, যাহারা হেযাবে বিশ্বাসী নন, তাহারাও মাথায় ঘোমটা পরিধান করেন, পুরুষ হইলে পায়জামা, পাঞ্জাবী ও টুপি পরিধান করা শুরু করেন, চাষাভূষার সাথে কোলাকুলি করেন। প্রশ্ন হইল, সবকিছুর সাথে যদি এইভাবে রাজনীতির মিশিয়া পলিটিক্যাল হইয়া যায়, তাহা হইলে সততা কিভাবে মঞ্জুরিত হইবে, সুন্দর কিভাবে আলো ছড়াইবে? ‘‘পলিটিকস’’ তো দেখিতেছি অন্ধকারের চাদর দিয়া সারা ভুবন আচ্ছাদন করিয়া ফেলিতেছে! যেইখানেই এই পাশ্চাত্য সভ্যতার ‘পলিটিকস’ প্রবেশ করিয়াছে সেইখানেই এইভাবে মানুষের আত্মাকে জ্বালাইয়া দিয়া অন্তঃসারশূন্য করিয়া ফেলিয়াছে। আত্মাকে, আধ্যাত্মিকতাকে বিদায় দিয়া তাহারা এখন উদ্ভ্রান্তের ন্যায় জীবন-যাপন করিতেছে। তাহাদের পারিবারিক ব্যবস্থা ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে। মানুষ মননশীলতাকে হারাইয়া পশুতে পরিণত হইতেছে। যান্ত্রিকতা তাদের মানবিকতা কাড়িয়া নিয়াছে। এমতাবস্থায় আমরাও এই ‘পলিটিকস’ আচরিত করিয়া দিনকে দিন নিচে নামিয়া যাইতেছি। কেহ কাহাকেও সম্মান করিতেছি না, ভণ্ডামীতে আমরা পটু হইয়া উঠিয়াছি।
এখন বাকী শুধু স্রষ্টাকে বোকা বানাইয়া ধোকা দেওয়া। কিন্তু একমাত্র তাহাই পারিতেছি না। নির্ধারিত কর্মের ফল আমাদের ভোগ করিতেই হইতেছে। আর তাহা হইল দুনিয়াতে অন্যায়, অশান্তিময় এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি আর সামনে রহিয়াছে পরকালীন জাহান্নামের আযাব।
সুতরাং এই ফন্দি ফিকির করিয়া কি লাভ হইলো? কি লাভ হইল ঠকবাজী করিয়া? কাহার সাথে আমরা প্রতারণা করিতেছি? মানুষকে ঠকাইয়া, জ্বালাইয়া, পোড়াইয়া কি নিজের ক্ষতিই করিতেছি না? শত্রুকে আঘাত করিয়া কি নিজের উপর আঘাতকেই লিখিয়া লইতেছি না? সুতরাং, আসুন বন্ধ করি এই আত্মপীড়ণ, বন্ধ করি অন্যের পায়ে কুড়াল মারা। কারণ এই কুড়াল কিন্তু আমার পায়েই মারা হইতেছে। এর জন্য সর্বপ্রথম আমাদেরকে রাজনীতির মত সমষ্টিগত জীবন নির্ধারণকারী ব্যবস্থা হইতে ‘পলিটিকস’কে বিদায় জানাইতে হইবে। আসুন সত্যের চর্চা করি, সত্যের প্রকাশ ঘটাই- পাপকে বিদূরিত করি। তাহা হইলেই মানব জীবনের স্বার্থকতা লাভ করা সম্ভব হইবে- আল্লাহর প্রকৃত এবাদত করা হইবে। আর ইহাই আল্লাহর পক্ষ হইয়া খেলাফত করা।
সুত্র: আসুন সিস্টেমটাকেই পাল্টাই ও দৈনিক নিউজ
১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৮
উড়োজাহাজ বলেছেন: কেমনে কি? বুঝিয়ে বলুন!
২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:২১
আলমগীর_কবির বলেছেন: লেখার ভিতরে পলিটিকস না থাকলে বলব লেখাটা খুব ভাল হয়েছে।
১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৩৬
উড়োজাহাজ বলেছেন: পলিটিকস নাই, তবে রাজনীতি আছে। স্বার্থহীন রাজনীতি। নতুন পৃথিবীর কথা আছে। আগামী কাল দৈনি নিউজে সম্পাদকীয়তে পাবেন।
৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৩২
গ্রেগরী বলেছেন:
১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৩৬
উড়োজাহাজ বলেছেন: মানে কি?
৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৩২
গ্রেগরী বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৬
ঢাকাবাসী বলেছেন: কঠিন বিশ্লেষন আর আরও জটিল সিদ্ধান্ত।