নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সিরিয়ার উপর সম্ভাব্য হামলায় আমেরিকার পাশে থাকতে পারলো না ব্রিটেন। বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের পার্লামেন্ট এ অভিযানের বিরোধিতা করেছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, এটি স্পষ্ট যে পার্লামেন্ট কোনো ধরনের অভিযান চায় না। আর তাই পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবে সরকার। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন যেকোনো ধরনের আক্রমণের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বাতিল হয়ে গেল। প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকা একাই সিরিয়ায় হামলা চালাবে বলে অটল সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা এককভাবে সিরিয়ায় হামলার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চান। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সম্ভাব্য এ হামলা থেকে লন্ডনকে বিরত থাকতে বলার পর ওয়াশিংটন থেকে এ তথ্য এল।
এদিকে ব্রিটেনের পাশাপাশি জার্মানিও সিরিয়ায় আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বৃহস্পতিবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ওই আলাপে মার্কেল বলেছেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের অবসান হতে হবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে।
সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র যুক্তরাজ্য সরে যাওয়ার পর এবার এ ব্যাপারে সুর নরম করলো ফ্রান্সও। শুক্রবার ফরাসি দৈনিক লা মাঁদ’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের কণ্ঠে নমনীয়তার ইঙ্গিতই পাওয়া গেল। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে সিরিয়ায় অভিযানের বিষয়টি নাকচ হয়ে যাওয়ায় ফ্রান্স আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে না দাবি করলেও ওঁলাদে বলেন, সামরিক হস্তক্ষেপের সবগুলো পথই খোলা। তবে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে সরকারি বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া ছাড়া এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। এছাড়া, আগামী বুধবারের আগেই সম্ভাব্য হামলার সিদ্ধান্ত এখনও বাতিল করা হয়নি বলে জানান ওঁলাদে। প্রেসিডেন্টের বক্তব্য অনুযায়ী, রাসায়নিক অস্ত্র হামলায় আসাদ বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না গেলে হামলা চালাবে না ফরাসি বাহিনী। অথচ জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনের অপেক্ষা না করে বৃহস্পতিবারই অভিযানের ইঙ্গিত দিয়ে ভূমধ্য-সাগরের সিরীয় উপকূলে রণতরী পাঠিয়ে দিয়েছিল দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
পাশাপাশি ন্যাটোর প্রায় ১০টি দেশ আসন্ন সিরিয়া হামলায় অংশ নেবে না বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ২৮টি দেশ নিয়ে গঠিত এ সামরিক জোট আফগানিস্তান ও ইরাকে হামলার বিষয়ে যে সমর্থন দিয়েছিল এবার আমেরিকা সে ধরণের সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। সিরিয়ায় কথিত রাসায়নিক হামলার অভিযোগ তুলে আমেরিকা ও তার মিত্ররা দামেস্কের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন চালানোর হুমকি দিলেও ন্যাটো জোটের অন্যতম মিত্র ইতালি সম্ভাব্য হামলার বিরোধিতা করেছে।
কানাডাও এ হামলায় যোগ দেবে না বলে এরইমধ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, তার দেশ সিরিয়ায় পশ্চিমা জোটের হামলা সমর্থন করবে কিন্তু তাতে সরাসরি অংশ নেবে না।
এদিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কোনো ধরনের প্রস্তাব পাস হতে দেবে না বলে জানিয়েছে রাশিয়া। রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী গেন্নাদি গাতিলভ শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “সিরিয়ার বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের সম্ভাব্য সামরিক হামলার বিষয়ে আমাদের বিরোধিতা রয়েছে এবং সে কারণে সামরিক হামলার জন্য কোনো ধরনের প্রস্তাবকে আমরা সমর্থন করব না।” গাতিলভের বরাত দিয়ে রুশ বার্তা সংস্থা ইতার-তাস এ খবর জানিয়েছে। সামরিক আগ্রাসন চালানোর জন্য গত বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে ব্রিটেন একটি প্রস্তাব তোলে। কিন্তু চীন ও রাশিয়ার দূতদের ওয়াকআউটের কারণে সে প্রস্তাব পাস হতে পারেনি। এরপর বৃহস্পতিবার আবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য বৈঠক বসে, তবে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। এদিকে ইরান বলেছে, ওয়াশিংটন বহু আগে দামেস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছিল।
এখন রাসায়নিক হামলার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ওই পরিকল্পিত যুদ্ধ শুরু করার অজুহাত মাত্র। ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার ড. আলী লারিজানি গতকাল তেহরানে এ সম্পর্কে বলেছেন, “সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত চলতি সপ্তাহে নেয় নি আমেরিকা। যুদ্ধবাজ দেশটির এ সিদ্ধান্ত বহু দিনের।”
সবদিক বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে আপাতত আমেরিকার প্রত্যক্ষ বন্ধুর সংখ্যা কমে এসেছে। ইরাক এবং আফগানিস্তানে পরিচালিত যুদ্ধের খেসারত থেকে একমাত্র আমেরিকা ছাড়া আর সবাই কিছু না কিছু শিক্ষা গ্রহণ করেছে। আমেরিকার একগুয়েমী এবং আগ্রাসী স্বভাবের দরুন দেশটিকে যুদ্ধের ভয়াবহতা, নিরীহ-নিরপরাধী মানুষের মৃত্যু মোটেও বিচলিত করে না। তাদের সব সময় চাই যুদ্ধোন্মোদনা। তাদের দাবি তারা মানবতার জন্য এ লড়াই করে। অথচ মানবতার নামের মোড়কে তারা নিজেদের সা¤্রাজ্যবাদী নীতিকেই বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই দখল কাজে যারাই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তারাই তাদের শত্র“তে পরিণত হয়।
মানবতা, গণতন্ত্র তাদের মুখোশমাত্র। মুখোশের নিচেই তাদের বিমান বহর, ক্ষেপনাস্ত্র, গোলাবারুদ। তাই আগ্রাসী আমেরিকা একা হলেও, তাদেরকে কেউ সমর্থন না করলেও,দুনিয়া জোড়া সবাই তাদেরকে সবাই ঘৃণা করলেও এ অভিযান তারা বন্ধ করবে কি? লক্ষণ দেখে তো তা মনে হয় না। এমন কি তাদের অতীত ইতিহাসও তাই বলে। যদি জাতিসংঘের তদন্তে বাশার সরকার নিরপরাধী প্রমাণও হয়, তবুও তারা সিংহের ন্যায় খরগোশকে খাওয়ার ছুতা খুঁজে বের করবেই।
©somewhere in net ltd.