নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সম্প্রতি বিবিসি বাংলা ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় সে দেশের উপর যুক্তরাষ্ট্রের ছড়িয়ে দেওয়া বিষাক্ত গ্যাস ডাই অক্সিন এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা যায় যে ঘটনার চার দশক অতিবাহিত হওয়ার পর আজও এই বিষাক্ত গ্যাসের অস্তিত্ব রয়ে গেছে, যার প্রভাবে আজও ভিয়েতনামের শিশুরা জন্ম নেয় শারীরিক বিকলাঙ্গতা নিয়ে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলায় ঐ সময় ৩০ লাখ মানুষ বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়। ভিয়েতনামের সেনাবাহিনীর রসদ নষ্ট এবং উত্তর ভিয়েতনামের সাধারণ মানুষ যারা ব্যাপকভাবে সে দেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছিল তাদের ধ্বংস করাই ছিল এ হামলার লক্ষ্য। শারীরিক বিকলাঙ্গতা নিয়ে জন্ম নেওয়া সেদেশের শিশুদের বেশীরভাগই পঙ্গু, বুদ্ধি প্রতিবন্ধি।
ওয়েসলি মেজামোর (ডবংষবু গবংংধসড়ৎব) নামে একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের দশটি রাসায়নিক হামলার তালিকা প্রকাশ করেছেন যাতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা ও সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে সর্ব প্রথম নাম আসে ভিয়েতনামের। ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে ২০ মিলিয়ন গ্যালন রাসায়নিক পদার্থ নিক্ষেপ করেছে। এতে করে সেখানে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে অথবা অঙ্গহানী ঘটেছে, ৫০ লাখ শিশু জন্ম নিয়েছে যারা জন্মগতভাবেই শারীরিকভাবে ত্রুটিযুক্ত। সেই সাথে ২ মিলিয়ন লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।
২০০৪ সালে ইরাকের ফালুজা নগরীতে বিদ্রোহীদের উপর যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ভয়ঙ্কর দাহ্য রাসায়নিক- ফসফরাস প্রয়োগ করেছে যা মানব দেহ থেকে মাংসকে গলিয়ে দেয়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশ পায় যেখানে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী কিভাবে বৃষ্টির ন্যায় রাসায়নিক পদার্থ বর্ষন করে নারী ও শিশুদের দেহকে গলিয়ে দেয়।
২০০৩ সালে আমেরিকান সৈন্যরা ইউরেনিয়ামের বর্জ্য থেকে উৎপন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক অস্ত্র ছড়িয়ে দেয়। যার ফলে ২০০৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া অর্ধেক শিশুই শারীরিক বিকলাঙ্গতা নিয়ে জন্ম নেয় বলে জানিয়েছেন মেজামোর। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, ১৯৫০ সালের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সেন্ট লুইসের আশপাশে জিংক কেডমিয়াম ছড়িয়ে দেয় যা পরবর্তীতে উদ্বেগজনক সংখ্যক মানুষের ক্যান্সারের জন্ম দেয়। ২০১১ সালে প্রতিবাদী নারী পুরুষ ও শিশুদের দমন করতে তাদের উপর এফবিআই কর্তৃক বিষাক্ত গ্যাস নিক্ষেপ এবং ভাকুতে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের ঘটনার প্রতিও তিনি আলোকপাত করেন।
১৯৪৪-৪৫ সালে জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে আনবিক বোমা হামলার মাধ্যমে বেসামরিক মানুষ হত্যার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই প্রত্যক্ষভাবে দায়ি করা হয়। এছাড়াও ১৯৮৮ সালে ইরাক ইরান যুদ্ধে সিআইএর সহযোগিতায় ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেন কর্তৃক কুর্দিদেরকে রাসায়নিক গ্যাসের মাধ্যমে হত্যা করে। সর্বশেষ ২০০৮-২০০৯ সালে আমেরিকার দোসর ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের উপর সাদা ফসফরাস নিক্ষেপ করে।
ভাগ্যের পরিহাস হচ্ছে সেই আমেরিকাই কি না সিরিয়ায় বিষাক্ত গ্যাস সারিনে আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ি করে হামলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে, যদিও এখনো প্রমাণিত হয়নি ঠিক সিরিয় সরকার এই হামলা করেছে নাকি সরকারকে বিপদের ফেলার জন্য ক্রমাগত পিছু হটা বিদ্রোহী বাহিনী নিজেরাই এই কাজ করেছে। অনুমানের উপর নির্ভর করে কথিত নিজেদের দায় থেকে বিরাট আকারে একটি যুদ্ধের সূচনা ঘটানো কোনমতেই সুস্থ্য চিন্তাধারা হতে পারে না, যেখানে অপর পরাশক্তি রাশিয়ার এবং শিয়া অধ্যুসিত ইরানের স্বার্থ বিদ্যমান। এমতাবস্থায় সিরিয়া আক্রান্ত হলে যুদ্ধের পরিধির ব্যাপ্তি ঘটতে পারে। এতে করে ধারণা করা হচ্ছে যুদ্ধে প্রাণহানী ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। সুতরাং যারা নিজেরাই একই অপরাধে অভিযুক্ত সেই একই অপরাধ (যদিও এখনো প্রমাণিত হয় নি) সিরিয়া করেছে বলে সমরাস্ত্র নিয়ে হামলা করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা এক বিরাট প্রশ্ন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস দমনের কথা যত জোর সোরে বলে আসছে, সন্ত্রাসের অজুহাতে যাকে তাকে হামলা করছে, এই অবৈধ আগ্রাসনে সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে শত্রু সংখ্যা বাড়িয়ে যাবে- সন্ত্রাস প্রশমিত হবে না।
©somewhere in net ltd.