নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শাহবাগ আন্দোলন এবং নাস্তিক মুরতাদ হটানোর দাবি নিয়ে উত্থান ঘটানোর মধ্য দিয়ে লাইম লাইটে আসা হেফাজতে ইসলাম শুরুতে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হলেও আগামী নির্বাচনে ৫০ আসনে প্রার্থী ঠিক করে রাজনীতিতে আসছে। শাহবাগ আন্দোলনের হাত ধরে লাইম লাইটে আসলেও প্রকৃতপক্ষে হেফাজতের জন্ম এরও বেশ কিছু আগে। কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক এই দলটির সূচনা ঘটে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধীতা করে। এরপর ২০১১ সালে নারী উন্নয়ন নীতি (২০০৯) এর কয়েকটি ধারাকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক দাবি করে তীব্র বিরোধীতা করে তারা (উইকিপিডিয়া)। হেফাজত একটি অরাজনৈতিক দল হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি কয়েকটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সমন্বিত রূপ। এর মধ্যে অন্যতম দলগুলো হচ্ছে নেজামে ইসলাম পার্টি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, খেলাফতে আন্দোলন, খেলাফতে মজলিস (মাওলানা ইসহাক), খেলাফতে মজলিস (মাওলানা হাবিবুর রহমান), খেলাফত ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোটের দুই অংশ।
তবে সর্বশেষ হেফাজত ব্যাপক আলোচনায় আসে গত ৫ই মে রাজধানীর মতিঝিলে সমাবেশকে কেন্দ্র করে। এ দিন তারা ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সারাদেশ থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে ঢাকা অবরোধের ডাক দেয়। সরকারিভাবে তাদের এই সমাবেশকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও তারা সে সময় অতিক্রম ও সরকারের পক্ষ থেকে বার বার সমাবেশ গুটানোর কথা বললেও তারা তা উপেক্ষা করে তাদের অবস্থান ধরে রাখে। সমাবেশ শুরু থেকেই হেফাজতের কর্মীরা মাইকে উত্তেজিত বক্তব্য এবং রাস্তাঘাটে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে করে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দুই গেট, ফকিরাপুল এলাকা জুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ ও তা-বের সূচনা হয়। এই সংঘর্ষে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়। অবশেষে গভীর রাত পর্যন্ত তারা মতিঝিলকে কেন্দ্র করে রাজপথ দখল করে রাখে। সর্বশেষ রাত ২টার কিছু পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য তাদের উচ্ছেদ অভিযানে নামে। মুহুর্মুহু গুলি, টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের মাধ্যমে এ অভিযানে হেফাজত প্রচুর নেতাকর্মী নিহত হয়েছে বলে দাবি করে। যদিও সর্বশেষ ৬১ জন নিহত হয়েছে বলে ‘অধিকার’ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে সেখানে কতজন নিহত হয়েছিল তা নিয়ে এখনো রহস্য রয়েই গেছে। তবে সরকারিভাবে কখনো কেউ নিহত হয়নি মর্মে এবং কখনো ১৬জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে উদ্ধার করা লাশগুলো দিনের বেলায় সংঘঠিত সংঘর্ষে নিহত হয়েছিল যা তারা রাতে সমাবেশ মঞ্চের নিচে জড়ো করে রাখে। ৫ই মে’র শাপলা চত্তরের ঐ সমাবেশে সর্বশেষ তারা প্রায় বিনা প্রতিরোধে মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সংবাদ মাধ্যমের ছবিতে দেখা যায় তারা কান ধরে লাইন দিয়ে মাঠ ত্যাগ করছে।
এরপরে এ নিয়ে বহু রাজনৈতিক খেলা চলেছে। কতক রাজনৈতিক দল তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে, কতক জানিয়েছে তাদের ঐ দিনের তা-বের জন্য ধিক্কার। এমনকি ঐ দিনের ঐ নারকীয় তা-বের সময়ে পবিত্র কোর’আনের কপি পোড়ানোর অভিযোগও উঠেছে। যদিও এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি ঠিক কারা এই গর্হিত কাজটি করেছে। অনেক জল ঘোলা হলেও অরাজনৈতিক এই দলটি বর্তমান রাজনীতির আকাশে এক বিরাট ইস্যু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশ্লেষকমহল দাবি করছেন আগামী নির্বাচনে তাদের সমর্থন যে দলটি পাবে তাদেরই বিজয় লাভ করাটা এক প্রকারে নিশ্চিত। তাই তারা ভোটের রাজনীতিতে পেয়েছে অসীম গুরুত্ব। গত ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং বিরোধীদলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষ নিয়ে তারা ক্ষমতাসীন দলটিকে তাদের শক্তি দেখিয়ে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়েই এবার তারা জাতীয় নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। যার কারণে সবার কাছেই এখন দলটি কদর বৃদ্ধি পেয়েছে।
এমনকি আড়ালে থাকা কলকাঠী নাড়া বৈদেশিক শক্তিগুলোর কাছেও তাদের কদর যে বৃদ্দি পেয়েছে তার প্রমাণ গত ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের লালখান বাজারে জমিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া নামক একটি মাদ্রাসায় হেফাজত নেতাদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার টিম বলটনিকফের নেতৃত্বে একটি বিশেষ প্রতিনিধি দলের রুদ্ধদ্বার বৈঠক। এ সময় হেফাজতের অন্যতম নায়েবে আমির মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি ইজহারুল ইসলাম, মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, প্রশিক্ষণ সম্পাদক হারুন ইজহার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অস্ট্রেলীয় এই কূটনীতিকের আকস্মিক মাদ্রাসা পরিদর্শনের খবরের পর থেকেই নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক মহলে। ঘটনা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে কেবলই কওমি মাদ্রাসা পরিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এ খবর চাউর হওয়ার পর রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক ঔৎসুক্যের সৃষ্টি হয়। এতদিন রাজনীতিতে আসছেনা বলে জোর গলায় দাবি করলেও এই কূটনীতিকদের মাদ্রাসা পরিদর্শন এবং সাক্ষাতের চারদিন পরই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারে ধর্মভিত্তিক অরাজনৈতিক দাবিদার হেফাজতে ইসলাম। এর জন্য তারা ৫০টি আসনে প্রার্থীও বাছাইয়ের কাজও সম্পন্ন করে ফেলেছে।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায় হেফাজত সরাসরি ভোটের রাজনীতিতে না আসলেও তারা কৌশলে ঠিকই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী আরো জানা যায় হেফাজতের অন্তর্ভূক্ত অন্তত ছয়টি ইসলামি দল সংগঠনের ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজ দলের ব্যানারে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর এক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলামের দুই শীর্ষ নেতার কোনো নির্দেশনা বা নিষেধাজ্ঞা নেই বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান (একাংশ) মুফতি ইজহারুল ইসলাম বলেন, ‘হেফাজতের ব্যানারে সরাসরি কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না। যদি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে হেফাজতভুক্ত সমমনা দলগুলো নির্বাচনে প্রার্থী দেবে। ১৮ দলের জোটভুক্ত দল হিসেবে চট্টগ্রামের বাঁশখালী আসন থেকে আমি নির্বাচন করবো।’
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, হেফাজতের ব্যানারে কেউ নির্বাচন করবে না। হেফাজতভুক্ত সমমনা ইসলামি দলের নেতারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। প্রাথমিকভাবে তারা নীতি আর্দশের সঙ্গে কিছুটা মিল থাকায় ১৮ দলভুক্ত হওয়ার চিন্তা করছেন। ইতিমধ্যে কেউ কেউ সেদিকে যোগাযোগও রক্ষা করছেন।
তবে ভোটের রাজনীতির হিসাব অনুযায়ী, হেফাজতভুক্ত দলগুলোকে ১৮ দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোটে অন্তর্ভূক্ত করা হবে কি না তা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে কিছুই জানানো হয়নি। এরপরও দেশের কোন কোন আসনে প্রার্থী দেয়া যায় তা জরিপ করতে ইতিমধ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। আপাতত তারা ৫০টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে সাতটি আসনে হেফাজতভুক্ত দলগুলো প্রার্থী দেয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে হঠাৎ অস্ট্রেলীয় কূটনীতিকের মাদ্রাসা পরিদর্শন এবং সাক্ষাৎ পরবর্তী নির্বাচনমুখী আচরণের ফলে সচেতন মহল দাবি করছেন হেফাজতকে কৌশলে গণতন্ত্র গেলানো হচ্ছে। গণতান্ত্রিকভাবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধসহ হেফাজতের দাবিকৃত ১৩ দফার অন্যান্য দফার সাথে গণতন্ত্র বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত না মিললেও এখন দেখা যাচ্ছে বৈদেশিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে তারা তাদের সাথে গাঁটছড়া বাঁধতে যাচ্ছে। এমনিতে হেফাজতে ইসলাম গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না হলেও এর পেছনে বৈদেশিক শক্তিগুলোর কোন দূরভিসন্ধি থাকতে পারে বলে মনে করছেন সচেতনমহল। কারণ অতীতে আমরা দেখেছি সা¤্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো উদীয়মান কথিত ইসলামি শক্তিগুলোর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে পরে তাদের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নিয়ে নিয়েছে। আলকায়েদা তার অন্যতম। আলকায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনের উত্থান হয়েছে মূলত সা¤্রাজ্যবাদী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সিআইএ’র হাত ধরে। আফগানিস্তানের তালেবানদের উত্থানের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা, পোশাক-আশাক, সংস্কৃতি এবং নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়ে তারা তালেবানদের মতই। একবার হেকমতিয়ারদের দমন করার জন্য তালেবানদের উত্থান ঘটানো হয়েছে, আবার উগ্র জঙ্গিবাদ আখ্যা দিয়ে সেই তালেবানদেরই দেশসুদ্ধ ধ্বংস করা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও যদি তারা তাই করে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তখন তা একদিকে যেমন হেফাজতীদের জন্য সুখকর হবে না, তেমনি ধর্মনিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামিলিগের জন্যও সুখকর হবে না। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জন্যও যে ভাল হবে না তা সহজেই অনুমেয়।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৫
উড়োজাহাজ বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ অনিক ভাই।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৯
উড়োজাহাজ বলেছেন: আগামীকালের দৈনিক নিউজ পত্রিকাটি সম্ভ হলে পড়বেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫৬
খাটাস বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন আতাহার ভাই। পোস্ট পড়ে ভাল লেগেছে।
শুভ কামনা।