নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত বুধবার ও বৃহষ্পতিবার দুই দিন সারা দেশে একযোগে পালিত হলো মহাপবিত্র হরতাল উৎসব। বিগত দিনগুলোতে ২/১দিন পরপর নিয়ম করে জাতির আকাশে হরতালের চাঁদ উত্থিত হলেও গত ২ মাস দেশে কোন হরতাল পালিত হয়নি, যাকে আমাদের দেশের শিশু গণতন্ত্রের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি বলে মনে করছেন কতিপয় গণতন্ত্রের মায়াকান্না করা সুশীল স্তাবকশ্রেণি। গকাল তারা ‘গণতন্ত্রে হরতালের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষত এক গোল টেবিল বৈঠকে বলেছেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রে হরতাল একটি বড় অনুষঙ্গ। হরতাল ছাড়া গণতন্ত্র মা ছাড়া শিশুর মত, ¯্রােতহীন নদীর মত, লবণ ছাড়া তেঁতুলের মত। তাছাড়া আরো মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র এখন তার শৈশবকাল(!) অতিক্রম করছে। শিশুকে যেমন সুস্থভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য খেলাধূলা করার দরকার হয় তেমনি হরতাল গণতন্ত্রকে পুষ্টি যুগিয়ে থাকে। গণতন্ত্রকে সুস্থভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে হরতাল পালন করা অত্যাবশ্যকীয়। কারণ হরতালের রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা।” অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে এক বক্তা আবেগপূর্ণ ভাষায় দর্শক শ্রোতাদের স্মৃতিকাতর করে বলেন, “ভেবে দেখুন তো আমরা সেই কবে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম! এর পরে এই বীর জাতি আর কোন বড় সমরে অংশ নেয়নি। এই অবস্থায় যদি হরতাল, ভাঙচুর, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করার গণতান্ত্রিক এই রেওয়াজ জাতি নিয়ম করে না চালিয়ে যেত তাহলে এই জাতি এতদিনে নিবীর্য ও কাপুরুষ জাতিতে পরিণত হতো। এই সুযোগে বিদেশী শক্তিগুলো আমাদের দেশ দখল করে নিত। সীমান্তের ওপারে যারা আছে তারা তো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমাদের উপর নজর রাখে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিশ্চয় তারা আমাদের হরতালের গণতান্ত্রিক যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা পরিদর্শন করেই। তাছাড়া কাওরান বাজারে আমাদের যে স্যাটেলাই চ্যানেলগুলো আছে তারা তো মানুষের জানালা ভেদ করে পর্যন্ত লাইভ স¤প্রচার করে থাকে। রাজপথের উসবের দৃশ্য তো না দেখিয়ে পারেই না। আর তারা যখন তাদের উচ্চ প্রযুুক্তির ক্যামেরা দিয়ে আমার এই যুদ্ধোন্মাদনা দেখে থাকেন তখন নিশ্চয় তারা আমাদেরকে যথেষ্ট সমীহও করেন। তারা ভাবেন যুদ্ধবাজ এই জাতির সাথে কোনভাবেই যুদ্ধে জড়ানো যাবে না। একবার যদি কোনভাবে তারা আমাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়েই পড়ে তাহলে তারা জানে পরাজয় তাদের নিশ্চিত।” তিনি গর্বসহকারে বলেন, “আসলে তারা কাঁটাতারের বেড়া দেয় আমাদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য, পরে যেন আমরা তাদের দেশ দখল করে না ফেলি এই ভয়ে!” এ সময় তার বুকে যথেষ্ট স্ফীতি লক্ষ করা যায়। এই প্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদক বক্তাকে প্রশ্ন করেন, “তাহলে ঐ দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী মাঝে মাঝে সীমান্ত অতিক্রম করে আমাদের দেশের লোকজনকে ধরে নিয়ে যায় কোন সাহসে?” এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অনুষ্ঠানে আগত প্রধান অতিথি ‘ইয়ে বা’, ‘ইয়ে বা’ বা করতে বলেন যে, “আসলে আপনার প্রশ্নের যথাযথ উত্তরটা আমরা অনুষ্ঠানের মধ্য বিরতির পর দেওয়ার চেষ্টা করবো বলেই অন্য প্রশ্ন আহ্বান করেন।” এসময় ইয়েবাকে ইয়াবা মনে করে অনুষ্ঠানের দর্শক সারিতে প্রবল হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। দারুণ ঔৎসুক্যের সাথে দর্শক অপেক্ষা করতে থাকেন এখন হয়তো বক্তা ইয়াবা প্রসঙ্গে কোন অমূল্য বক্তব্য রাখতে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি হাস্যরসে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, এ জন্যই সাংবাদিকদেরকে প্রশ্ন করতে দেওয়া উচিত নয়। তারপরও একজন সহ সাংবাদিক গণতন্ত্র তিনশ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও তাকে শিশু গণতন্ত্র বলা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে প্রধান আলোচক বলেন,“ এই প্রশ্নের উত্তর আসলে আমরা এখনো জানি না। তবে আমাদের দেশের বিদেশী কূটনীতিকদেরকেই এই কথাটি প্রায়ই বলতে শুনি। এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এরপরেই অনুষ্ঠানের পরিচালক সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বন্ধ করে একতরফাভাবে তাদের অতিথিদের বক্তব্য চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। একজন অতি উৎসাহী বক্তা তার নোট দেখে দেখে বক্তব্য চালিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি বলেন, “ আমরা আসলে লাইনচ্যুত হয়ে গেছি। আজকের সভায় আমাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে গণতন্ত্রে হরতালের প্রয়োজনীয়তা।” তিনি বলেন, “আমার পূর্ববর্তী বক্তা যা বলে গেছেন আমি তার সাথে কথার সাথে সম্পূর্ণ একমত। সেই সাথে আমি আরো যোগ করতে চাই, হরতাল না থাকলে, প্রতিবাদ মিছিল আর মুহুর্মুহু ককটেলের আওয়াজ থাকে না। এসব না থাকলে আমরা যে বীরের জাতি তা মাঝে মাঝে আমরা ভুলতে বসি। আপনারা জানেন আমাদের দেশের পুলিশের হাতে যেসব অস্ত্র আছে তা অনেক পুরনো। মাঝে মাঝে এ থেকে গুলি না বের করলে জং ধরে যেতে পারে, বসে যেতে পারে। এছাড়াও আপনারা জানেন বর্তমানে আমাদের দেশের সিনেমা হলগুলোতে মানুষ সিনেমা দেখা বাদ দিয়েছে। তারা ঘরে বসে বিদেশি চ্যানেলে হলিউডের ঢিসুম ঢিসুম মার্কা ছবি দেখে। গ্রাম বাংলার সিনেমা তারা পছন্দ করে না। এটা খুবই ভাল লক্ষণ। আগামী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই গণতান্ত্রিক চেতনা খুব কাজে আসবে। সিনেমা বিমুখ দর্শকদের আকৃষ্ট করতে আমরা মাঝে মাঝে পিকেটার এবং পুলিশকে দিয়ে লাইভ সিনেমার আয়োজন করি। থ্রিডি শো দেখতে যেমন আলাদা চশমা লাগে তেমনি এই শো দেখতে হয় ঘরে জানালায় দাঁড়িয়ে। না হলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা থাকে। মাঝে মাঝে আমাদের গুলিতে অনভ্যস্থ পুলিশ ভাইদের গুলি লক্ষ্যবস্তু থেকে কয়েক ডিগ্রি ঘুরে যায়। এতে জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা দুয়েকজন দর্শকও মারা পড়েন। এতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। একে তো আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে যান, তাছাড়া জাতীয় স্বার্থে দুএকজনকে প্রাণ বিসর্জন দিতেই হয়। আপনারা জানেন, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা বহু কঠিন। কিন্তু আপনাদের আরো জানার কথা স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে আমরা ১৯৭১ সাথে ত্রিশ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছি। কিন্তু এখন স্বাধীনতা রক্ষা করতে গিয়ে দু’একজনের প্রাণ গেলেই আমরা উচ্চবাচ্য করি। আসলে এটা আমাদের যুদ্ধবিমুখ ও কাপুরুষতার লক্ষণ। যা হোক হতাশ হলে চলবে না। হতাশা আসলে হরতালের দিন গণতন্ত্রের সৈনিক পিকেটার ও পুলিশের কুচকাওয়াজ দেখুন। হতাশা কেটে যাবে। তবে একটা বিষয় মনে হয় হরতাল আহ্বানকারীরা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আমি যতটুকু বুঝি গরমের দিনে হরতাল কিছুটা অসুবিধাজনক। শীতের দিনে হরতাল দিলে গাড়ি পোড়া আগুনে গরীব দুঃখী শীতার্ত মানুষের সমূহ উপকার হতো। গায়ে কিছুটা উত্তাপ জড়িয়ে নিতে পারত। কিন্তু সমস্যা হলো বেরসিক দমকল বাহিনী। তারা এসে দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে। হরতালের আরো একটি দিক হচ্ছে আমাদের দেশে হরতালবিহীন দিবসগুলোতে যে পরিমাণে রাস্তায় গাড়ি নামে, গাড়ির জ্যাম হয় সেদিন তা থেকে বেশ কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। তাছাড়া জ্যামের কারণে কত কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় তার পরিসংখ্যানও নিশ্চয় আপনারা জানেন। অথচ হরতালের দিন জ্যামের কারণে কোন কর্মঘণ্টাই নষ্ট হয় না! বেড়ে যাওয়া প্রাইভেট কার কমাতেও হরতালের ভাঙচুর বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই হরতালের প্রচার এবং প্রসারে বুদ্ধিজীবী ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের বিশেষ ভূমিকা পালন অতীব জরুরী।” এই গুরুগম্ভীর আলোচনায় দর্শকদের এক অংশ কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েন। অনুষ্ঠানের পরিচালক তার দূর-দৃষ্টি দিয়ে তা বুঝতে পেরে হঠাৎ হরতালের উপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রজেক্টরে চালিয়ে দেন। এতে পুলিশ ও পিকেটারদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং উচ্চগ্রামে বাজানো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে দর্শকদের মধ্যে চাঞ্চল্য ফিরে আসে। মুহুর্মুহু গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। উত্যেজনায় নিজেদেরকে তারা ধরে রাখতে না পেরে এক সময় চেয়ার টেবিল ভাঙচুর শুরু করে দেয়। কিছুক্ষণ পর তাদের তাদের মধ্যে ব্যাপক জোশ এসে যায়। তারা অতিথিদেরকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে মুহুর্মূহু ইটপাটকেল, ভাঙ্গা চেয়ার টেবিলের টুকরা নিক্ষেপ করতে থাকে। জবাবে অতিথিরাও তাদের উপর চড়াও হয়ে কাচের গ্লাস, হ্যান্ডমাইক ছুড়ে মারে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে উক্ত সেমিনার হল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ওদিকে কে বা কারা যেন ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে দাঙ্গা পুলিশ এসে প্রথমে লাঠিচার্জ ও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট বর্ষন করে। পরে আগত অতিথি, সাংবাদিক ও দর্শকগণ মিলিত হয়ে পুলিশকে ধাওয়া করে তাদেরকে পুলিশের সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেয়। জবাবে পুলিশের অতিরিক্ত বাহিনী এসে পাল্টা ধাওয়া দেয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। প্রতিবেদক কোনমতে পালিয়ে এসে সংবাদটি আমাদের কার্যালয়ে জমা দিয়েই বেহুশ হয়ে গেছেন। তার অবস্থা বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত।
©somewhere in net ltd.