নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গণতন্ত্রে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মানবাধিকার ইত্যাদি কথাগুলো বহুল উচ্চারিত শব্দ। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে এই বিষয়গুলো বর্তমানে শুধু কিছু কিছু ক্ষেত্রে একপেশেভাবে ব্যবহৃত হয়। কখনো বা কোথাও দেখা যায় আক্রান্ত মানুষ বা কোন ভূ-খণ্ড যদি একপেশেভাবে গণতন্ত্র তথা পশ্চিমা সভ্যতার প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি হয় তখনই পশ্চিমা রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে সংবাদ মাধ্যমগুলো এ নিয়ে হৈ চৈ শুরু করে। কখনো কখনো মানবাধিকার কিংবা সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের দায়ে তারা সামরিক হস্তক্ষেপ পর্যন্ত করে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় পশ্চিমারা খুব দয়ালু, খুব নীতিবান। সিরিয়ায় রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে গণহত্যার ঘটনায় তারা বলেছে, “এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধে আমাদের দায় রয়েছে। সিরিয়াকে এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।” এসব দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই, উৎসাহিতও হই। ভাবি, ‘দুনিয়ায় বিচার নেই’ এ কথাটা মিথ্যা। পাকিস্তানের কিশোরী মালালা ইউসুফজাইয়ের কথাই ধরুন। ধর্মান্ধ তালেবানরা তাকে হত্যার জন্য যখন গুলি করে তখন আহত মালালাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোজা ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া হয়। সুস্থ হলে তাকে ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কারসহ নানাভাবে সম্মানিত করা হয়। বড় বড় অধিবেশনে বিশ্বের দাপুটে নেতাদের পাশাপাশি সেই কিশোরীকে দিয়ে বক্তব্য বিবৃতি দেওয়ানো হয়। এসব অনুষ্ঠানে যখন মালালা নারী উন্নয়নের কথা বলেন, নারী শিক্ষার কথা বলেন তখন আমরা অনুপ্রাণিত হই। কিন্তু যখন আমরা দেখি মালালার মতই আরো হাজার হাজার কিশোরী ধর্ষিতা হচ্ছে, ধুকে ধুকে মরে বিশ্বের নানা প্রান্তে, তাদের দিকে সেই পশ্চিমা অভিভাবক রাষ্ট্রগুলির কোন ভ্র“ক্ষেপ নেই, তখন আমরা মর্মাহত হই। আমরা আরো মর্মাহত হই যখন দেখি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে প্রায় প্রতিদিন সাধারণ বাংলাদেশীরা প্রাণ হারায়, গুলি খেয়ে ফেলানীরা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে; অথচ বিচার চেয়েও বিচারের নামে প্রহসন দেখতে হয়, ফিলিস্তিনে প্রতিবছর ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের সৈন্যদের হাতে প্রাণ হারায় ফিলিস্তিনি নিষ্পাপ শিশুরা (এটা নাকি এক ধরনের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি), আফগানিস্তান, ইরাক কিংবা পাকিস্তানে নির্বিচারে ড্রোন হামলার শিকার হয় সাধারণ নিরীহ নাগরিকগণ। কিন্তু কই কোথাওতো দেখি না তারা এসব ব্যাপারে ঐ স্বঘোষিত ‘দায়িত্বশীলরা’ কোন উচ্চবাচ্য করেছে। বরং যখন এসব নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয় তখন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকারের ঠিকাদার রাষ্ট্রগুলি তাতে ভেটো দেয়। মিশরে তাদের গণতান্ত্রিক ‘জাতভাই’ ইখওয়ানের নেতা মুরসি যখন সামরিকবাহিনীর হাতে উৎখাত হয় তখনও তারা এগিয়ে আসে নি।
আমরা দেখি কথিত ঈশ্বর-প্রতিনিধিদের দয়া উথলে উঠে ক্ষেত্রবিশেষে। কোথাও তাদের দরদ জাগে আবার কোথাও তারা মৌন সমর্থন দিয়ে জায়েজ করে দেন এসব অন্যায়কে। আবার কোথাওবা তারা নিজেরাই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকেন, সেগুলিকে ন্যায়সঙ্গত বলে তাদের রাষ্ট্রপ্রধানরা বিবৃতিও দেন। দু’একটি ক্ষেত্রে মৌখিক ক্ষমা প্রার্থনা কিংবা যুদ্ধের আনুষঙ্গিক ক্ষয়-ক্ষতি বলে তারা দায় সারেন। কিন্তু এসবের পুনঃসংঘটন বন্ধ হতে দেখি না।
তাদের এসব কাণ্ডকারখানা দেখে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, কথিত মানবাধিকার, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব একটি আপেক্ষিক বিষয়। স্বার্থই হচ্ছে এগুলোর ব্যারোমিটার। এসব বিষয় সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়। তাই নিজেদের স্বার্থ থাকলে তারা অন্যের সীমান্ত, আকাশ পথ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনকে কোন অনৈতিক ব্যাপার নয় বলে মনে করেন, এ ব্যাপারে কোন দ্বিধাবোধ করেন না। এমনকি তাদের তৈরি নিজস্ব আইনকানুনকেও তারা তোয়াক্কা করে না। ২০০৩ সালে জাতিসঙ্ঘের অনুমোদনকে উপেক্ষা করে ইরাক হামলা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ইরাকে এই অবৈধ হস্তক্ষেপের কারণে আজ ইরাক এক মৃত্যু-উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। অথচ একনায়ক সাদ্দাম হোসেন যত কুখ্যাত শাসক হয়েই থাকুন না কেন, তিনি ঠিকই অরাজকতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলেন। ১০ লক্ষ মানুষ মেরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ফোরামভুক্তরা কাদের উপরে গণতন্ত্র কায়েম করল? তাই বলি এসব সুশীল শব্দ নিজেরাই যখন মানেন না তখন আমাদের কানের কাছে এসব মন্ত্র জপে কী লাভ? আপনাদের হাতে ক্ষমতা আছে, সেই ক্ষমতাই প্রয়োগ করুন! এত আবরণের দরকার কী? সবাই ক্ষেপে যাবে এই ভয়? আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে পারি- এই জাতিকে যেভাবে আপনারা মগজ ধোলাই করে আপনাদের গোলামে পরিণত করেছেন, এরা আর কোন দিন আপনাদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হতে পারবে না। সুতরাং মনে যা পোষণ করেন তাই বলুন, তাই করুন। তাহলে অন্তত নিজেদের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকতে পারবেন, কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি পাবেন। আপনাদের সৈন্যদের আত্মহত্যার হার কিছুটা হলেও কমে আসবে।
©somewhere in net ltd.