নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈশপের গল্প ও একবাটি রাজনৈতিক গরম স্যুপ

২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫৭

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আমার কোন আশাবাদ নেই। রাজনীতিবিদদের চরিত্রে পরিবর্তন আসতে পারে তা আমি ভাবতে পারি না। এ জন্য আশাবাদীরা মানুষ আমাকে হতাশাবাদী আখ্যা দিতে পারেন। আর এ আখ্যায় আমি নিজেকে একটুও দোষী মনে করব না। কিংবা দুঃখও পাব না। তবে রাজনীতিবিদদের এ আচরণ দেখে আমি দুঃখ পাই। ভীষণ দুঃখ পাই। এরা ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলছে। অন্যদিকে কথিত ‘সর্বময় ক্ষমতার উৎস’ জনগণ জালে আটকা পড়ে কি করুণ দাপাদাপিটাই না করছে! তাদের এ অবস্থা দেখে মনে দুঃখ লাগলেও মনকে এই বলে প্রবোধ দেই যে, এটাতো তাদেরই কর্মফল, তাদের অহঙ্কারী মনোভাবের পরিণতি। এরাইতো আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কেড়ে নিয়ে সার্বভৌমত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে। এদের নেতারা না হয় তা তাদের হাতে কুক্ষিগত করে চোরের উপর একটু বাটপারী করেছে!





যাই হোক, দেশের সা¤প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে কেন জানি আমার ইশপ ফেবলের জন্মদাতা ইশপের গল্পের কথা বার বার মনে পড়ছে। হায় ইশপ! তোমার গল্প এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে মঞ্চায়িত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সচেতন পাঠক নিশ্চয় ধরে ফেলেছেন কোন গল্পটির কথা বলছি। উহু! ভূমিকা খোলা না করলে এত সহজে ধরতে পারবেন না। একটু খোলাসা করি।





২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রীম কোর্টের এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেন। এর পর থেকেই ১৮দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনার দাবী উচ্চারিত হয়ে আসছিল। অপরদিকে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বার বার এ দাবীকে নাকচ করে দেওয়া হচ্ছিল। এটাকে কেন্দ্র করেই এদেশের সা¤প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাস রচিত হয়েছে।



অনুষঙ্গ হিসেবে হরতাল, মিছিল-মিটিং, ঘেরাও, ভাংচুর ছিল অব্যাহত। অপরদিকে সরকারের পক্ষ থেকে একটি তৃতীয় বিশ্বের কথিত গণতান্ত্রিক দেশের পক্ষ থেকে যা করণীয় তাই করা হচ্ছিল। কিন্তু সর্বশেষ বিরোধীদল আগামী ২৫ অক্টোবরকে শেষ সময়সীমা বেধে দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের জন্য। দাবীতে তারা রাজধানীতে বৃহত্তর সমাবেশের ডাক দেয় এবং এ সমাবেশ থেকে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের ঘোষণা উঠে আসার সম্ভাবনা ছিল। সরকার তা বুঝতে পেরে পাল্টা সরকারী দলের পক্ষ থেকেও একই দিনে সমাবেশের ডাক দেয়। অতএব সংঘাতের আশংকা শতভাগ ফুটে উঠে। ঠিক ঐ মুহূর্তেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দান করেন। এরপরই আমার কেন জানি বার বার ঈশপের সেই গল্পটি মনে হচ্ছিল। যাক এবার গল্পটি মনে করিয়ে দেই। শেয়াল আর বকের মধ্যে বন্ধুত্ব হলো। তাই একদিন শেয়াল বককে দাওয়াত করলো। কিন্তু চালাক শেয়াল স্যুপ রান্না করে বড় একটা চ্যাপ্টা থালায় স্যুপ ঢেলে তার বন্ধু বককে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলো । বকের লম্বা ঠোট। অতএব বক কিছুতেই ঠোট ডুবিয়ে স্যুপ খেতে পারলো না।





অন্যদিকে শেয়াল আরামসে জিহ্বা দিয়ে চেটে সবটুকু স্যুপ খেয়ে নিল। বক মনে দুঃখ পেলো। কিন্তু যাবার আগে বক শেয়ালকে দাওয়াত দিতে ভুল করলো না। নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যথারীতি শেয়াল বকের বাসায় গেলো। বক তার বন্ধুকে সাদর-আমন্ত্রণ করতে ভুল করলো না। চোঙ্গায় ভর্তি করে নিয়ে এল স্যুপ। এবার সেই চোঙ্গায় মুখ ঢুকিয়ে শেয়াল স্যুপ খেতে পারলো না। অন্যদিকে বক অনায়াসে ঠোট ডুবিয়ে দিয়ে চোঙ্গার সবটুকু স্যুপ অনায়াসে খেয়ে নিল। আর শেয়াল খেতে না পারায় শেয়ালের জন্য বক দুঃখ করলো।





প্রধানমন্ত্রী সুন্দর ভাষায় বিএনপিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে তাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদের নাম প্রস্তাব করতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু তিনি খোলাসা করলেন না সেই সরকারের প্রধান কে হবেন। আর তিনিই যে প্রধান হচ্ছেন তা বুঝতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এখানেই তো বিএনপির আপত্তি।



অবশ্য প্রধামন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ.টি ইমাম বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হচ্ছেন শেখ হাসিনা। অতএব আওয়ামীলীগের দেওয়া স্যুপ গিলতে ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপি। কিন্তু ভয় হচ্ছে আওয়ামীলীগের জন্য বিএনপি এবার স্যুপ কোন পাত্রে উপস্থাপন করবে! আরো ভয় হচ্ছে এই স্যুপ খাওয়া-খাওয়ি যদি তাদের নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে আমাদের অত কিছু চিন্তা করার ছিল না। কিন্তু এরা স্যুপ খেতে না পেরে কিংবা অন্যের স্যুপ খাওয়ার দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে যদি স্যুপের পাত্র উল্টে ফেলে দেয় তাহলে আমরা সাধারণ আমজনতা সেই গরম স্যুপের তাপে পুড়ে মরবো। এখানেই আমাদের সবচেয়ে বড় ভয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.