নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আতাহার হোসাইন

উড়োজাহাজ

ফেসবুক প্রোফাইল-https://www.facebook.com/ataharh

উড়োজাহাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা সব ভুলে যাই- আমরা ভুলে যাওয়া জাতি

২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৩৬

জাতি হিসেবে বাঙ্গালিদেরকে প্রায়ই গোল্ডফিসের সাথে তুলনা দেওয়া হয়। বাঙ্গালি নাকি গোল্ডফিসের মত সব ভুলে যায়। অবশ্য গোল্ডফিসের স্মৃতি ভুলে যাওয়া নিয়ে মতান্তর রয়েছে। অনেকে বলেন খামোখাই গোল্ডফিসকে স্মৃতি ভুলে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়। তারা বলেন গোল্ডফিসেরও নাকি স্মৃতিশক্তি যথেষ্ট ভাল। যাই হোক, এ ব্যাপারে বিতর্ক থাকলেও বাঙ্গালির ভুলে যাওয়া রোগ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। এরা যে কতবার কত জনের হাতে মার খেল তার কোন ইয়ত্তা নেই। বৃটিশরা আসার আগে বিভিন্ন দিগি¦জয়ী বহু বীরদের হাতে মার খেল, ব্রিটিশদের হাতে মার খেল একাধারে একটানা প্রায় দুইশত বছর। সেখান থেকে ভাগ্যক্রমে দয়া করে দেওয়া স্বাধীনতা পেয়ে পড়ল পাকিস্তানিদের হাতে। অতপর ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক খেলায় কোনমতে উদ্ধার হলেও এবার গণতন্ত্র আমদানি করে নিজেরাই নিজেদের হাতে মার খাওয়ার সমস্ত বন্দোবস্ত করে নিয়েছে। তাই স্বাধীনতার পর থেকে এরা একে অপরকে মেরেই চলেছে। আজ পর্যন্ত থামেনি মারামারির এই ইতিহাস। তারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নিজেদের মধ্যে মহা রাজনৈতিক জোট তৈরি করেছে। প্রতিপক্ষও কম যায় না। তারা আরো বৃহৎ জোট গঠন করেছে।



তবে এবারে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে তা সম্ভবতঃ অতীতের যে কোন সময়কে পার করে দিয়েছে। ক্ষমতায় যাওয়ার আশায় দুটি দল জনগণকে বৃহৎ দুটি শিবিরে বিভক্ত করে যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে ২৫ শে অক্টোবরকে ঘিরে বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা। ঈশপের গল্পের শেয়াল আর বক পরস্পরকে দাওয়াত দিয়ে স্যুপ খাওয়ানোর মত এক দলকে আরেক দল একটার পর আরেকটা প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। যদিও কারো পক্ষেই ঐ রাজনৈতিক প্রস্তাব (স্যুপ) গলধকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।



অপরদিকে দেশের মিডিয়াগুলো গুঞ্জন তুলে দিয়েছে নির্বাচনী হাওয়ার। তাদের আচরণে মনে হচ্ছে দু’দিন পরেই বুঝি নির্বাচন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এখন পর্যন্ত দু’টি দলই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছে না ঠিক কোন পদ্ধতি এবং কার অধীনে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার জরিপ প্রকাশ করে এগিয়ে দিচ্ছে কোন একটি দলকে। ঘটনা সত্যও হতে পারে। অথচ তাই যদি হয় তাহলে বলতে হয় এ দলটিকেই তো গত নির্বাচনে মানুষ সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিদেশে টাকা পাচার, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটানোর দায়ে চরমভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল। এরই শোধ নিতে ক্ষমতায় বসিয়েছে আগের টার্মের একই রকম দুর্নীতি ও অপশাসন আর বিরোধীদলে থাকাকালীন অবস্থায় হরতাল, সহিংস আন্দোলনে ডুবন্ত একটি দলকে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এবারেও ক্ষমতাসীন সরকারকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য মানুষ তৈরি হয়ে আছে। অন্তত গত ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে আমরা তাই দেখেছি। কিন্তু বাংলার মানুষ তাদের স্বভাব-সিদ্ধ রীতি অনুযায়ী ভুলে গেছে যাদেরকে ক্ষমতায় আনতে যাচ্ছে তাদের গত টার্মের ইতিহাস। ভুলে গেছে ঠিক কি কারণে সে দলটিকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল। সেই সাথে ভুলে গেছে কী কারণে দেশে ওয়ান ইলেভেনের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তাও। কেন রাজপথে নিরীহ মানুষকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে পৈশাচিকভাবে খুন করা হয়েছে। আর এ বিশ্লেষণ যদি ভুলও হয় তাহলেও যাদের পুনরায় ক্ষমতায় নিয়ে আসা হবে তারা হচ্ছে একমাত্র বর্তমান ক্ষমতাসীন দল। যদিও এদেশের নির্বাচনী ইতিহাস তা বলে না। কারণ ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার ‘গণতান্ত্রিক’ এবং স্থায়ী সরকারের ইতিহাস এ দেশে নেই।



আর যদি এরই ধারাবাহিকতা ভেঙ্গে ক্ষমতাসীন সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসে তাহলে প্রমাণ হবে এ জাতির ভুলে যাওয়া রোগ আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আগে তারা পাঁচ বছরের আগের কথা ভুলে যেত আর এখন সাথে সাথে ভুলে যাচ্ছে।



এর পেছনে আমাদের দেশের বিতর্কিত মিডিয়াগুলি ব্যাপক ভূমিকা কাজ করে। তাদের মধ্যে চাটুকার এবং স্বার্থান্বেষী মহল এসব দুর্নীতিবাজ নেতাদের হয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলে। ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে তারা রাজনীতির অতীত অপকর্ম ভুলিয়ে দেয়। গণতন্ত্রের এত ব্যর্থতার পরও তারা শ্লোগান তোলে ‘তবুও গণতন্ত্র চাই’। পাশ্চাত্যের একমুখী শিক্ষার প্রভাবে তারা গণতন্ত্র ছাড়া তাদের চোখের সামনে আর কিছু দেখতে পায় না।



আর গোল্ডফিস মেমোরি সম্পন্ন বাঙ্গালি জাতি মিডিয়ার এই তৎপরতায় যথারীতি তা ভুলেও যায় অনায়াসে। কিন্তু এ ভুলে যাওয়া এবং ভুলিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতি সুখী, সুন্দর ও মর্যাদার সাথে বসবাস করার পক্ষে কতটা যৌক্তিক? আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি এভাবেই বড় হবে, এভাবেই চরম উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে তাদের জীবন পার করবে? এর কী কোন শেষ নেই? শেষ হবে না বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা মেধাবী ছাত্রটির ঘৃণ্য ছাত্র-রাজনীতির শিকার হয়ে লাশ হয়ে ঘরে ফেরার পালা? বন্ধ হবে না গরীবের দেওয়া ট্যাক্সের টাকার রাষ্ট্রীয় মদদে হরিলুট? না বন্ধ হবে না রাজনৈতিক দাঙ্গা-হাঙ্গামা, চাঁদাবাজিসহ সমস্ত প্রকার অন্যায়-অশান্তির কালো থাবা? এভাবেই কি তারা অনন্তকাল ধরে জনগণকে সিস্টেমের জালে জিম্মি করে শোষণ করে যাবে? মানুষের কি হুঁশ ফিরে আসবে না? তারা কি বার বার নেতাদের কথায় বিগলিত হয়ে তাদের ভোটের বাক্স পূর্ণ করে প্রতারিত হতেই থাকবে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.